কবিতা -চালচিত্র

চালচিত্র
-সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

আমি কিছুতেই ছবি আঁকতে পারি না।
যারা ক্যানভাসে রঙ ছুঁইয়ে খেয়াল খুশির ছবি আঁকে তাদের দেখলে আমার বড়ো হিংসে হয়।

ছোটোবেলায় মা’কে দেখতাম
সাদা আর্ট পেপারের ওপর ঝুঁকে পড়া আত্মমগ্ন মুখ।
হাতের এইচ-বি পেন্সিলটা মায়ের সঙ্গে কথা বলতো।
ছবিগুলো মা খুব যত্ন করে রাখতো একটা ফিরোজা রঙের কভার ফাইলে।
মা’কে ছবি আঁকতে দেখলে সবচেয়ে খুশি হতো বাবা।

রবিবারের দুপুরে দুই বোনের মাঝখানে শুয়ে বাবা নভেম্বর বিপ্লবের গল্প শোনায়।
ঠিক গল্প নয়–
কালো ক্যানভাস জুড়ে
সাদায়- লালে ছবি আঁকতো বাবা।
খুন-খারাবি লাল নয়–
লকলকে আগুনের মতো
প্রথম সূর্যের মতো।
বাবার চোখে আমি ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পেতাম।
সেই থেকেই তুলি আর জলরঙের প্রতি কি অদম্য টান আমার।
অথচ–

দিনকয়েক আগে দেখলাম
মায়ের ছবিগুলো কেমন যেন হলদেটে হয়ে গেছে।
পেন্সিলের রেখাগুলোও অস্পষ্ট।
ফিকে হয়ে গেছে বাবার দেওয়াল লিখন।
বাবা, তুমি এখনও বিপ্লবের স্বপ্ন দেখো!
মুঠো শক্ত করে বলো–
“বিপ্লব আসবেই, আসতেই হবে।
চিরস্থায়ী শান্তি বলে কিছু নেই যে।”
কি জানি–
তোমার ছবির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়েও তোমার চোখে আর কোনো ছবি দেখতে পাই না।

তবু আজকাল চারপাশে কত ছবির ভিড়।
রঙের ওপর রঙ চড়িয়ে দিলে একেকটা ছবি হয়ে যায়।
নীল সবুজে ঢেকে যায় আর্ট গ্যালারি।

অথচ আমি!
এতো বড়ো হলাম–
আজও একটা ছবি আঁকতে পারলাম না।

Loading

Leave A Comment