কবিতা

কবিতা – মুক্তির পথে

মুক্তির পথে
-সুমিতা পয়ড়্যা

 

 

“এই আকাশে আমার মুক্তি
আলোয় আলোয়…………”

না আলো নয়; শুধু মুক্তি ছিল!
আর ছিল তমসাচ্ছন্ন বাইশে শ্রাবণ
ভরা শ্রাবণ মাস। জলজ মেঘ,
কখনো মুষলধারায় বৃষ্টি তো কখনো ছিপছিপে
চারিদিকে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ!
বর্ষার সঙ্গে এক মোহময় মায়া জড়িয়ে আছে বাঙালির মনে।
বাঙালি কেন সমগ্র পৃথিবীবাসীর মনে!
শ্রাবণ মাসের বাইশ তারিখ।
এক বিরাট আকাশের এক নক্ষত্র পতন।
মেঘলা দিনে মেঘলা আকাশে রবি আজ অস্তমিত।
বিভিন্ন পত্রিকায় সমাচার,
একেলা পথচলার পথিক এগিয়ে চলেছেন একা একাই।
এক ঝাঁক বিষন্নতা শ্রাবণের আকাশে বাতাসে।
যে ঠাকুর ছিল অতল গভীরে, শিহরণে,
অভিসারে, সমগ্র সত্তার দিগ্বিদিকে,
যিনি মানবতার নিবিড় ধারার মাঝে প্রবলভাবে রয়েছেন;
যিনি মৃত্যুকে বন্দনা করেছেন—

“মরণ রে,
তুঁহুঁ মম শ্যামসমান।
মেঘবরন তুঝ মেঘজটাজূট,
রক্ত কমলকর, রক্ত অধরপূট,
তাপবিমোচন করুণ কোর তব
অমৃত অমৃত করে দান।
তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান।।”

যে ঠাকুর প্রয়াত হওয়ার আগেই উপলব্ধি করেছেন নানাভাবে
মানুষের প্রতিটি আবেগে, অনুভবে, অনুভূতিতে জড়িয়ে আছে
তিনি আর কেউ নন—–
তিনিই প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যে ঠাকুর মানবতার সংকটে কাঁদেন
যে ঠাকুর মানবতার জয়ের আস্থা রাখেন
যে ঠাকুর মানবতার হৃৎস্পন্দনে শিহরণ জাগায় (কাব্য সাহিত্য সৃষ্টি তাঁর ধর্ম)
জীবনের মহাযজ্ঞে যাকে বাদ দিলে অস্তিত্বহীন হতে হয়
সেই ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আজ তার মহাপ্রয়াণ দিবস।
কালের অমোঘ নিয়মে নিত্য আসা- যাওয়া।
আর তাই বাইশে শ্রাবণ মানে বিষাদে বিমর্ষ হওয়ার দিন।
জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
দুঃখ থেকে উত্তরণের পথের সন্ধান যার কুক্ষিগত
তাকে আর কে ভাসাবে!
বাইশে শ্রাবণ আবার আসবে; বারবার আসে
তবু তার অমরত্ব বিলীন হবার নয়।
কখনো হবে ও না।
তিনি আছেন সব সময় আমাদের মাঝেই।
বর্ষার শ্রাবণে জীবনের পরিসমাপ্তি হয় তো ঘটেছে
কিন্তু তাঁর আলোকোজ্জ্বল সত্তার জয় চিরন্তন সত্য।
আর তখনই সমগ্র মানবজাতি তাঁর কথায় ও সুরে গিয়ে ওঠেন—–

“তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমায় নিশীথিনী সম……..।”

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page