
কবিতা- আগামী পৃথিবীর সংকেত
আগামী পৃথিবীর সংকেত
-সুনির্মল বসু
সমুদ্র ও পাহাড় যেখানে এক সঙ্গে মিশেছে, সেইখানে দিনান্তে লাল সূর্য
বহতা জলে ছায়া ফেললে, আমার কথা কি তোমার মনে পড়বে,
পাকা রাস্তায় সড়ক পথে দাঁড়িয়ে বনফুল দেখতে দেখতে তুমি কি আমার সঙ্গে হাঁটবে,
যদি হাঁটো, তখন কি কথা হবে আমাদের,
তুমি বলবে, কতদিন একসঙ্গে হাঁটছি,
আমি বলবো, মনে হয় যেন, পেরিয়ে এলাম অন্তবিহীন পথ,
তুমি বলবে, বাস্তবের অভিঘাতে সব সময়টা সুখের ছিল না, তবু আমরা একসাথে ছিলাম,
আমি বলবো, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছি,
তুমি বলবে, চলার পথে অনেক সুন্দর স্মৃতি ছিল,
আমি বলবো, কষ্ট ছিল অনেক,
তুমি বলবে, স্বার্থপরের মতো একা একা বাঁচি নি,
আমি বলবো, আমাদের কুঁড়েঘরে জ্যোৎস্নার আলো এসে পডতো,
আমাদের উঠোনে শিউলি ঝরে পড়তো, সকালবেলায় চন্দ্রমল্লিকা আমাদের দিকে ফিরে তাকাতো,
প্রজাপতির রঙিন ডানায় রোদ্দুরের রঙ লেগে থাকতো,
তুমি বলবে, কত স্বপ্নের দিন পেছনে ফেলে এসেছি,
জীবনটাকে মাখামাখি করে ভালোবেসেছি,
আমি বলবো, কি পেয়েছি, কি পাইনি, আজ আর ভাবি না,
তুমি বলবে, একটা মুগ্ধ আচ্ছন্নতার মধ্যে দিনগুলো কেটে গেল,
তখন আকাশে একটা দুটো তারা ফুটে উঠল। পাখিরা ঘরে ফিরছে। চরাচর জুড়ে নীরবতা।
সেগুন মঞ্জরী পেরিয়ে দূরের পাহাড়কে সাক্ষী রেখে
দেবদারু বনের আলো-অন্ধকারে তুমি আর আমি হেঁটে চলেছি,
কত রাত হোলো, কত রাত হোলো,
একা প্রহর জাগার বেদনা নিয়ে আমরা হাঁটছি,
পৃথিবীর উপর দিয়ে কত লক্ষ বছর আমরা হাঁটছি,
আর আমাদের মতো
কত কতজন ভালোবেসে পৃথিবীর ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে,
এই চলা যেদিন শেষ হবে, সেদিন জীবন অস্তগামী,
সেদিন আমাদের কথাগুলো, স্মৃতি হবে,
স্মৃতিগুলো হবে ইতিহাস,
ভাবীকালের কোন প্রেমিক প্রেমিকা
আমাদের ভালোবাসার গল্প নিয়ে উপন্যাস লিখবে,
পৃথিবী অনেক বদলে যাবে,
শুধু মানুষের ভালবাসার পৃথিবীটা কোনো দিন বদলাবে না।

