Site icon আলাপী মন

গল্প- চৌকাঠ পেরিয়ে

চৌকাঠ পেরিয়ে
-রীণা চ্যাটার্জী

ধীরে ধীরে হেঁটে আসে চৌকাঠের কাছে সৌদামিনী। চোখের দৃষ্টি মেলে দেয় দূরে যতটা চোখ যায়- সতৃষ্ণ দৃষ্টি। আজ আসবে সে.. সেই কবে, কতদিন হয়ে গেল পেরিয়ে গেছিল এই চৌকাঠ অভিমান, একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে। বলে গেছিল, আবার যেদিন তোমাদের প্রশ্নের, তোমাদের সমাজের সবার প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো, সেইদিন এই চৌকাঠে পা দেবো আবার।

ঘড়ির কাঁটা ঘুরেছে, দিন-রাত, মাস-বছর পেরিয়েছে..রাগ গলে জল হয়ে গেছে সবার কিন্তু তার অভিমান মেটে নি- চৌকাঠ পেরিয়ে আসেও নি মধুজা। এই বাড়ির সবার আদরের মণি।

তিন পুরুষের পর বংশে একটি মেয়ে- ঠাকুমা নাম রেখেছিলেন মধুজা। ভীষণ চঞ্চল, প্রাণবন্ত ছোট্ট থেকেই। মুখে সবসময় হাসি। হামাগুড়ি থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা- চৌকাঠ পেরিয়ে পা রাখতে শিখলো হাত ধরে ধরে। প্রথমবার বাইরে পা দিয়ে কি নিষ্পাপ আহ্লাদী হাসি মেয়ের। আরো বড়ো হলো, স্কুলে ভর্তি হলো। চৌকাঠ পেরিয়ে- টা টা.. সৌদামিনী কাজের ফাঁকে ফাঁকে খালি তাকাতেন- কখন আসবে মণি। কাজের মাসি চৌকাঠের ওপার থেকে এপারে মধুজাকে ঢুকিয়ে, ‘বৌদি, মণিকে দিয়ে গেলাম..’বলেই চলে যেত। আধো আধো কথা-হাসিতে মুখর হয়ে উঠতো বাড়ি তখন। স্কুলের বন্ধুদের কথা, ম্যামের কথা কথা তো ফুরোতেই চায় না মেয়ের। আরো একটু বড়ো হলে আঁকা, তারপর নাচ। নাচে ভর্তির সময় অবশ্য একটু বেগ পেয়েছিল সৌদামিনী। ‘ধিনধিন‌ করে নেচে বেড়াতে হবে না, ভদ্রঘরের মেয়ে বৌদের ওইসব মানায় না..ধিঙ্গিপনা’ মধুজার ঠাকুমা বলেছিলেন। শাশুড়ির কথায় চোখে জল এসেছিল সৌদামিনীর। তাঁর ভীষণ শখ- নাচের ছন্দে যে তাঁর শরীর এখনো আলোড়িত হয়। স্বামী দেবেশের কাছে গিয়ে সম্মতি চেয়েছিলেন। ক্ষণিকের খেয়াল, কদ্দিন আর করবে এইসব ভেবে স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে মা’কে রাজী করিয়েছিলেন দেবেশ। তারপর কচি কচি পায়ের নুপূরের বোল বাড়িতে সবার মন কেড়ে নিয়েছিল, সৌদামিনীর শরীরে আলোড়ন, চোখ জুড়ে স্বপ্ন- তিনি যা পান নি, তাঁর মণি তো পাচ্ছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ শেষে ভার্সিটি, শেষে চাকরি। এর মধ্যে আঁকা, নাচ সব কিছুতেই পারদর্শী মধুজা। বাড়িতে বিয়ের কথা চলছে। পাত্র-অখিলেশ মধুজার নিজের নির্বাচিত। ডাক্তার, পরিবার ভালো। দু’ বাড়িতে কারোর কোনো অমত ছিল না। বিয়ের দিন ঠিক হবে, আলোচনা চলছে।
এইসবের মাঝে একটি অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে হঠাৎ মত পরিবর্তন মধুজার- আগামী জীবন নাচের ছন্দে ভরিয়ে তুলবে। নেশায় মিশিয়ে নেবে পেশা। গতানুগতিক চাকরি আর ভালো লাগছে না।

সংসারে অশান্তির ঝড় উঠলো- মেয়ের এই শখ তো মেনে নেওয়া যাবে না। মধুজার ঠাকুমা সোজাসুজি আঙুল তুললেন সৌদামিনীর দিকে- ‘মায়ের শখ মেয়ে নাচ শিখবে..বিষ গাছ, চারায় তুলে ফেলতে হয়। প্রথমেই বলে ছিলাম, সামলাও এবার, আমি থাকতে এই অনাসৃষ্টি চলবে না সংসারে, এই কথা মনে রেখো। নতুন কুটুম বাড়িতে যেন এইসব কথা না পৌঁছায়, তার আগেই বিষ ঝেড়ে দিতে হবে- বুঝিয়ে দিও তোমার মেয়ে বৌ’কে।’ ছেলে দেবেশকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। সেদিন কিন্তু স্ত্রী-মেয়ের পাশে দাঁড়ান নি দেবেশ বাবু। রক্তচক্ষুই দেখিয়েছিলেন মেয়ের সিদ্ধান্তে।
-‘এখানে যা বলার বলেছো, এই কথা যেন এই বাড়ির চৌকাঠের বাইরে না যায়। ভুলে যাও পাগলামী.. জীবনটা ছেলেখেলা নয়।’

সৌদামিনীর দাদা বলেছিলেন- ‘তোর জেদ, সেই এক জেদ তোর মেয়ের। নিজের হাতে মেয়ের জীবন নষ্ট কর.. নাচের শখ..দেবেশ যে তখন কেন মেনে নিয়েছিল.. এদিকে বিয়ের যোগাড়.. এখন বেচারার হলো জ্বালা.. যত্তসব ফালতু আহ্লাদ..’

“বেচারা..ফালতু আহ্লাদ.. অনাসৃষ্টি.. বিষগাছ” মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে সৌদামিনীর। একটাই আশা, অখিলেশ- আজকের প্রজন্ম, আধুনিক মনস্ক। মধুজা ওর ভালোবাসা- নিশ্চয়ই পাশে দাঁড়াবে। মধুজার স্বপ্নে সাথী হবে।

নাহ্-তাই হয় নি। খবরটা শুনতেই যেন আকাশ থেকে পড়লো অখিলেশ- ‘নাচ পেশা করবে? মানে.. মঞ্চে নাচবে সবার সামনে! তার থেকে উপার্জন! অসম্ভব.. এইসব পাগলামি ছাড়ো।’

-‘পাগলামি! তোমার এটা পাগলামি মনে হলো?’ মধুজা বলেছিল।

-‘পাগলামি ছাড়া কি? ভদ্রঘরে এইসব হয় না কি? আমার একটা সম্মান নেই? সমাজের লোক কি বলবে?’

-‘আমার স্বপ্ন.. ইচ্ছে তোমার কাছে পাগলামি! ভদ্রঘর, ভদ্রলোক বারবার শুনছি..বলতে পারো মানে কি ভদ্রতার! তোমার বন্ধুমহল থেকে আত্মীয় সবার কাছে হাসি হাসি মুখে তো বলো-আঁকা জানে, নাচেও খুব সুন্দর। কেন বলো? সম্মান- অসম্মান! কি থাকে তখন!’

-‘সে আলাদা মধু..কিন্তু তুমি হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে নাচ নিয়ে পড়লে কেন? শখের নাচ দু’ একদিন নাচবে, ওতেই হবে। জেদ করো না। আমার কথাটা ভাবো একটু..’

-‘কি ভাববো? সমাজের কথা! না তোমার সম্মানের কথা! না কি নিজের স্বপ্নের কথা? তুমি তো আমার কথা বুঝলে না, আমি কি করে ভাববো.. এবার তো আলাদা করেই ভাবতে হবে। তুমি তোমারটা.. আমি আমারটা।’

-‘এইসব কি বলছো! তোমার নাচ আজ আমাদের সম্পর্কের থেকেও বেশী হলো তোমার কাছে?’

-‘তোমার কাছে তো তোমার সম্মান, তোমার সমাজ বড়ো হলো আমার থেকে.. আমার ভালোলাগার থেকে। ঠিক আছে সম্মান না অসম্মান, তোমাদের প্রশ্নের জবাব সময় দেবে। খুব ভালো হলো- আগেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল। আমার শখ বা ইচ্ছে যে স্বাধীন না- এটা বুঝতে ভুল হয়েছিল। আধুনিকতার মুখোশটা অন্তত খুলে গেল- বিয়েটা হয়ে গেলে হয়তো ভুল হতো।’ চোখের জল চেপে বলে মধুজা।

-‘কেন জেদ করছো? এতো কথা, এতো তর্ক? সবার যেখানে অমত, সেখানে তোমার একার জেদ..’

-‘জেদ নয় আত্মসম্মান। হ্যাঁ, তোমাদের সম্মান, আমার আত্মসম্মান।’ আর দাঁড়ায় না মধুজা বেরিয়ে আসে ক্যাফেটেরিয়া থেকে। এরপর থাকলে অভিমানের জল আসবে চোখে- অখিলেশের সামনে সেটা আর নয়।
সৌদামিনী তাকিয়ে ছিলেন উদগ্ৰীব হয়ে চৌকাঠের দিকে- কখন বাড়িতে আসবে মণি! ঝড় বয়ে গেছে মেয়েটার ওপর দিয়ে, তার আঁচ এই বাড়িতেও পড়েছে- ফোন করেছিল অখিলেশ দেবেশ বাবুকে। শ্বাশুড়ি-স্বামীর তর্জনে-গর্জনে বুঝতে পেরেছিলেন সৌদামিনী তাঁর মণির স্বপ্নে সাথী নয় অখিলেশ।
মণি নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই বাড়িটা দু’পক্ষে ভাগ হয়ে গেছে, মা-ছেলে আর মা-মেয়ে। একপক্ষ নীরবে লড়াই করছে আর এক পক্ষের হুঙ্কার আর হুমকির সাথে। পরিবেশ বদলে গেছে বাড়ির।
থমথমে মুখে বাড়িতে এলো মেয়ে- মুখটা দেখে একটা বোবা কান্না গিলে নিলেন সৌদামিনী।
বাড়িতে পা রাখতেই বসার ঘর থেকেই দেবেশ বাবু ডাকলেন- ‘মণি এদিকে এসো।’
মায়ের দিকে একবার তাকিয়েই বসার ঘরে এগিয়ে গেল মধুজা।
-‘অখিলেশ ফোন করেছিল.. তোমাকে তো বারণ করা হয়েছিল, ওই সব পাগলামীর কথা যেন বাইরে না যায়। তুমি কি কোনো কথাই শুনবে না? অখিলেশ ওর পরিবারে কথাটা এখনো জানায় নি। তোমাকে বোঝাতে বলেছে..’ দেবেশ বাবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মধুজার ঠাকুমা বলে ওঠেন, ‘কেমন বুদ্ধিমান ছেলে, সব শুনেও বলছে- তার পরিবারের কেউ জানার আগে যেন আমরা মেয়েকে বুঝিয়ে নিই। শোনো মণি তুমি এই জেদ ছেড়ে দাও, তোমার কোনো কিছুতে তো আমরা কোনোদিন বাধা দিই নি। শুধু এই কথাটা- অখিলেশ তো তোমার নিজের পচ্ছন্দের, সেটাও তো ভাবো। জেদ আর জীবন এক নয়..’

-‘আমি তো জেদ করি নি ঠাম্মি। আমার ইচ্ছের কথা- স্বপ্নের কথা জানিয়েছি। আর আমাকে তোমরা কোনো কিছুতে বাধা দাও নি নয়, আমি এতোদিন তোমাদের কথা মতো চলেছি- তোমাদের অসুবিধা হয় নি। আজ একটা ইচ্ছের কথা জানিয়েছি তোমাদের অসুবিধা হচ্ছে.. কিন্তু বিশ্বাস করো ঠাম্মি এটা আমার উপলব্ধি। শুধু বুঝতে পেরেছি অনেক পরে। দেরী হয়ে গেছে অনেক- আর দেরি করলে আমি নিজের কাছে জবাব দিতে পারবো না..’

-‘সেই এক জেদ! আমি বেঁচে থাকতে এই বাড়িতে..’

-‘জানি ঠাম্মি, এই বাড়ির সম্মানে আঘাত আনবো না। যদি সম্মান নিয়ে আসতে পারি, সেদিন ভাববো আবার।’

-‘সেদিন আসবো মানে? কি করবে তুমি! কোথায় যাবে? প্রশ্ন করেন দেবেশ বাবু।

-‘আপাতত তোমাদের সম্মান রাখতে এই বাড়ি থেকে চলে যাব। ব্যবস্থা করে নেবো- ঠিক কিছু একটা..’

-‘তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে? সব তোমার মায়ের মদত.. এতো সাহস? সৌদামিনী.. কোথায় তুমি? সামনে এসো.. দেখো মেয়েকে কেমন শিক্ষা দিয়েছো..বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে!’ দেবেশ বাবু চিৎকার করে বলেন।

বসার ঘরে অপরাধীর মতো দাঁড়ান এসে সৌদামিনী। মেয়ে বাড়ি থেকে চলে যাবে! কি বলবেন? একদিন তো তিনিও তাই ভেবেছিলেন যখন তাঁর ইচ্ছের গলা টিপে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল পরিবারের সম্মানের দোহাই দিয়ে-পারেন নি। ঠাকুমা-বাবার রক্তচক্ষু অগ্ৰাহ্য করে, কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো মেয়ে। দু’হাত দিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো- ‘ভাগ্যিস তুমি আমার মা..কথা দিলাম তোমাকে, তোমার চুপ করে থাকার জবাব আমি দেবো। এখন আমাকে বাধা দিও না..’
দু’ চোখ বেয়ে জল নেমে আসে সৌদামিনীর। এক লড়াই চলছিল সে তবু মেয়েটা চোখের সামনে ছিল.. চোখের আড়ালে একদম একা! তবুও ওইটুকু মেয়ের মনোবল দেখে অবাক হয়ে যান। ভুল-ঠিকের দ্বিধায় দগ্ধ হতে থাকেন।

পরের দিন সকালে মধুজা আবার এই বাড়ির চৌকাঠের বাইরে পা রাখে নিজের ঠিকানা খুঁজে নিতে। গঞ্জনা, আর সমালোচনার ঝড় রেখে যায় মায়ের জন্য।
প্রতিটা দিন, মুহূর্ত মেয়ের জন্য চিন্তা আর সংসারের অশান্তি সৌদামিনীকে ঝাঁঝরা করে দেয় তিলে তিলে।

খবর অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি কানে আসে। ভালো খবর বা খারাপ-ছড়াতে দেরী হয় না। সেইরকম মধুজার উত্তরণের খবরও আসে। গর্বে বুকটা ভরে ওঠে- তিনি পারেন নি, তাঁর মেয়ে পেরেছে। এ যেন দ্বিগুণ প্রাপ্তি।

বছর পাঁচেক পর মধুজা যখন নৃত্য জগতে উদীয়মান নাম- তখন ওর ঠাকুমার হঠাৎ করে স্ট্রোক হলো। ছেলেকে বললেন- ‘এবার মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে আয়, আমাদের অহঙ্কার আর সম্মানের ধারণা যে কতো ভুল ছিল ও তো প্রমাণ করে দিয়েছে। ওর নামে তো আমাদের আজ গর্ব। ওদের মা-মেয়ে দুজনের সাথেই অনেক অন্যায় করেছি। শেষ বেলায় ক্ষমা চেয়ে যাই ওদের কাছে.. নিয়ে আয় ওকে..’

দেবেশ বাবুও মনে মনে তাই চাইছিলেন। নিজে গেলেন মেয়েকে নিয়ে আসতে। সৌদামিনী ব্যাকুল হয়ে আছেন- মেয়ে আসবে- তাঁর মণি। সেই ছোট্ট বেলার মতো কথায়- হাসিতে ভরিয়ে তুলবে বাড়ি। ঠাকুর ঘরে পুজো সেরে এগিয়ে এলেন পায়ে পায়ে চৌকাঠের কাছে। চালের পিটুলির বাটিটা নিয়ে, আলপনায় সাজিয়ে দেবেন চৌকাঠ- সাজিয়েও তুললেন। মধুজা- তার কোজাগরীর আল্পনা, কোজাগরীর প্রদীপ, বড়ো মিঠে অনুভূতি- কিন্তু আর যেন তর সয় না। অস্থির হয়ে উঠছেন, আরো কতো দেরী! চোখের দৃষ্টি আবার ছড়িয়ে দিলেন রাস্তার দিকে। গাড়ির আওয়াজ.. জানলায় বড়ো প্রিয় মুখটা দেখতে পেলেন। আসছে তাঁর মণি সম্পূর্ণ ‘মধুজা’ হয়ে। এতো আনন্দ.. এতো আবেগ..হঠাৎ করে মাথাটা ঘুরে গেলো.. আজকাল প্রায়শই এমন হয়। মাথাটা হেলিয়ে দিলেন দরজায়.. চোখের সামনেটা অস্পষ্ট হয়ে আসছে ক্রমশঃ.. মণির মুখটা আবছা..রাতের অন্ধকার হয়ে এলো দিনের শুরুতেই।

দূর থেকে দেখেছে মা দাঁড়িয়ে দরজায়। মধুজা নামলো গাড়ি থেকে। ও কি! মা যেন পড়ে যাচ্ছে! দৌড়ে এসে মা’কে ধরলো, দেবেশ বাবুও দৌড়ে এলেন। নিথর সৌদামিনী এপারে, ওপারে মধুজা.. তাঁর মণির ‘মা’ ডাকেও সাড়া দিলেন না আর।
মায়ের মাথা কোলে নিয়ে ঠায় বসে থাকলো ওপারে। বাবা-ঠাকুমার শত অনুরোধেও এলো না বাড়ির ভেতরে। সৌদামিনীর দেহ নিয়ে যখন শেষযাত্রায় রওনা হলো- মধুজা শুধু ধীরে ধীরে বললো, ‘আমি তো কথা রেখেছিলাম মা..তুমি কেন অপেক্ষা করলে না?’
বাড়ির ভেতরে আর পা দেয় নি মধুজা.. ঠাকুমা-বাবা কারোর মুখের দিকেও চোখ তুলে তাকায় নি। চলে এসেছিল নিজের জগতে- একা। এখনো অনেক পথচলা বাকি, তার মা তো বেঁচে থাকবে তার নৃত্যের ঝঙ্কারে, ভোরের স্বপ্নে।
শুধু মিথ্যে আভিজাত্যের চৌকাঠ পড়ে থাকলো- সেও যেন আজ একা, বড়ো একা, অসহায়।

Exit mobile version