Site icon আলাপী মন

অণুগল্প- প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি
-অনন্যা মুখার্জী

 

 

 

বেলা দেবী সন্দীপকে বললেন, তুই বাবা আর মেয়ে পেলি না, শেষে একটা বিধবাকে আমায় পূত বধূ করে ঘরে তুলতে হবে? সন্দীপ বললো, কি বলছো মা? তুমিই তো বলতে, আজকাল এসব কিছু যায় আসে না, তোমার মহিলা সমিতির সভাতে কতবার তোমাকে মহিলাদের অগ্রগতির ওপর বক্তৃতা দিতে শুনেছি, আর তুমিই কি না আজ বলছো, আহির বিধবা বলে তাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না? সে কত বড় ডাক্তার, তাছাড়া সে আমায় ভালোবাসে, আমিও তাকে ভালোবাসি। সন্দীপের কাকুতি বেলা দেবী কর্ণ গোচর করলেন না। তিনি জানেন সন্দীপ মায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার ছেলে নয়।
এক বছরের মধ্যে বেলা দেবী সন্দীপের বিয়ে দিলেন। বৌমা স্কুলে পড়ান। পাড়া প্রতিবেশীদের প্রশংসা শুনে নিজের মনেই ভাবলেন, যাই হোক বাবা, দেখতে শুনতে আহিরের মত না হলেও, তার চলবে, এ মেয়ে তো আর বিধবা নয়।
তিন বছর পর, বেলা দেবী রাজ্যের একটি নার্সিং হোমের বিছানায় শুয়ে ভাবেন, কি ভুল হলো তার এই জীবনে? তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, একমাত্র পুত্র, পুত্রবধূর কথায় তাকে একটি জরাজীর্ণ সরকারি হাসপাতালের বাইরে বসিয়ে দিয়ে গেলো? বেঁচে থেকে আর লাভ কি? চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তেই দেখতে পেলেন সামনে আহির। গলায় স্টেথোস্কোপ আর এক গোছা বেল ফুল হাতে সে বলে ওঠে, কি কাকিমা, তুমি না ভীষন বেল ফুল ভালোবাসতে? দেখো তোমার জন্য এনেছি। কই দেখি জিভটা দেখাও আমায়? ওকি কাঁদছো কেন? আজ থেকে তুমি আমার হাসপাতালে আমার কাছেই চিকিৎসাধীন থাকবে। সুস্থ হয়ে আবার সুন্দর করে বাঁচবে, তোমার মহিলা সমিতির কাজ এখনও অনেক বাকি। শাশুড়ি না হয় না হলে, আমার মা হয়েই থেকো।

Exit mobile version