জন্ম হয় জন্ম নয়
-কাজল দাস
প্রতিবারই জন্ম হতে হতে মিলিয়ে গেলাম অন্ধকার গহ্বরে! তাই আর জন্ম হয়নি, ভ্রূণেই থমকে আছে আমার অজ্ঞাত পরিচয়। আমার পূর্ব পুরুষের জন্ম হয়েছে, হয়তো আমার উত্তরসূরীরও জন্ম নিশ্চিত। তবু আমার জন্ম হতে হতে আজও হল’ না। যেমন ফলের জন্ম হয় ফুলের মৃত্যুতে, তেমনই একটা জন্ম চাই।
জন্ম সে তো জন্ম নয়,
জন্ম হলো পরিচয়
অজানা সুখে জন্ম নিলাম
সুখেই হলাম অপচয়।
মায়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে
সাঁতর দিলাম মন পুশিয়ে
মানিক সে তো হৃদ গভীরে
পড়ে আছে তুচ্ছতায়।
গর্ভে থাকা, ভু-গর্ভে থাকা
দুইটি জীবন একই হয়,
তোমরা যাকে জন্ম বলো-
জন্ম সে তো জন্ম নয়।
আতশবাজির বারুদে কাঁদে যন্ত্রনা, তাই ঝরে পড়ে আলোর রোশনাই হয়ে। জন্ম হয় এক উজ্জ্বল আত্ম তুষ্টির ফোয়ারার, সেই আলোর উন্মত্ততায় জন্ম তার- আত্মপ্রকাশ, ক্ষণিকের সেই আলোর বিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে- এক জন্ম-রঙিন মধূর ইতিহাস। সেই পুড়ে যাওয়া আনন্দ মিছিলে আমার জন্ম হোক।
সত্যি যদি জন্ম হতো,
চিনতো সবাই অবিরত
সবার চোখে নামের কাজল
বল তো কালো মন্দ নয়,
জাত ধর্ম ডাক পদবী
বিভেদ আনে জগৎময়
বর্ণে গন্ধে মাতাল করা
সেই তো ফুলের পরিচয়,
যে ঝিনুকে মুক্ত থাকে
সে যে পুরুষ থেকে নারী হয়
জন্ম জন্ম বলো ঠিকই
আসলে সে তো জন্ম নয়।
সূর্য অস্তমিত হলে জন্ম নেয় আঁধার রাত, সে রাত জন্ম দেয় অসংখ্য তারকার, সেই তারার বাসর ঘরে জন্ম নেয় চাঁদ, আবার চাঁদের মুখ চেয়ে জন্ম হয় চন্দ্রমল্লিকার, চন্দ্রমল্লিকার মধূ মেখে জন্ম হয় মধুচন্দ্রিমার। সেই স্মৃতি-মধুর জোছনায় জন্ম নিতে চাই-“আমি।”
যে ফুলেতে গন্ধ নাই
সে ফুল দিয়ে ঘর সাজাই
সেই ফুলেরই দোলায় দুলে
আবীর খেলে শ্যাম-রাই
হাজার তারা বসত করে
লক্ষ্য কোটি তারার ঘরে
এক নজরে ধ্রুব তারা
সবার চোখে হয় উদয়,
তেমন করে জগৎ মাঝে
দাও গো নিজের পরিচয়।
আসলে যা কে জন্ম ভাবো
সে তো জন্মের অভিনয়।
জন্ম সে তো জন্ম নয়
জন্ম সে তো জন্ম নয়।