অভিমানী
-লোপামুদ্রা ব্যানার্জী
পশ্চিম আকাশে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভা, এক ঝাঁক বালি হাঁসের আওয়াজ করে আকাশের বুক চিরে উড়ে যাওয়া।এইসব প্রকৃতির স্বাভাবিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য জানালার পাশে রাখা রাজস্থানী মোড়াটাতে বসে দেখছিলেন অনুরাধা দেবী।
ঘরের টেক্সচার পেইন্টিং-এর ওপর লাগানো ওনার মেয়ে জামাইয়ের বাঁধানো ফটো ফ্রেমের এক কোণে যে ছোট্ট ঘড়িটা আছে তা টিক টিক করে নিজের ছন্দে চলছে। অনুরাধা দেবী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন পাঁচটা বেজে গেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মনিদীপা স্কুল থেকে ফিরবে।
অনুরাধা দেবীর একমাত্র মেয়ে মনিদীপা।মনিদীপা তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনুরাধা দেবীর স্বামী চলে গেলেন। যেহেতু ওনার স্বামী সরকারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সেই হেতু কমপ্যাশনেট গ্ৰাউন্ডে মনিদীপা চাকরি-খানা পায়। তারপর যদিও মনিদীপা মাস্টার্স কমপ্লিট করে, বি এড ট্রেনিং’ও নেয়। বছর সাত আট চাকরি করার পর সুদীপ্তকে বিয়ে করে।
যেহেতু মেয়ে চাকরি আর সংসার একা সামলাতে পারবে না। সেই হেতু মেয়ের অসুবিধার কথা ভেবে অনুরাধা দেবী তার নিজের বাড়ির নিচের তলায় ভাড়াটে বসিয়ে পাকাপাকি ভাবে মেয়ের কাছে এসেই থাকেন। রান্নার মাসি ও কাজের মাসির কাজ কর্মের তদারকি ওনাকেই করতে হয়।
দেড় বছর হলো নাতি এসেছে ঘরে। তাই মনিদীপা মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফার করিয়ে সুদীপ্ত মানে ওর বরের স্কুলে জয়েন করেছে। আজই তার প্রথম দিন। অনুরাধা দেবী ও মনে মনে বেশ অস্থির। জামাই-এর স্কুলে মেয়ের কেমন কাটবে কে জানে?
নাতি অঘোরে ঘুমাচ্ছে দেখে অনুরাধা দেবী আস্তে আস্তে সিঁড়ির একটা একটা ধাপ অতি সন্তর্পণে নেমে এলেন। নীচে নেমে আসার কিছুক্ষণ পরেই ডোর বেলটা বেজে উঠলো। অনুরাধা দেবী হাঁটু ব্যথাকে উপেক্ষা করে দ্রুতবেগে পা টানতে টানতে দরজা খুলেই জিজ্ঞাসা করেন, কি রে মনি আজ কেমন কাটলো নতুন স্কুল?
জুতো জোড়া একপাশে খুলে রেখে ব্যাগটা সোফাতে অবহেলা ভরে ফেলে গটগট করে বাথরুমের দিকে চলে গেল।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে লাল রঙের গামছাটা তে পা দুখানি মুছে সোফায় এসে বসলো। অনুরাধা দেবী এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলো সামনে। জলটা সামান্য একটু খেয়ে মনিদীপা জিজ্ঞেস করে, মা টকাই কি করছে?
-টকাই ঘুমাচ্ছে। সারা দুপুর হাত পা ছুঁড়ে বিকালের দিকে ঘুমাতে গেল দাদুভাই। রাত নটার আগে তোর ছেলে উঠবে বলে মনে হয় না। এবার বল তো তোর কেমন কাটলো নতুন স্কুল। নতুন সব সহকর্মীদের সঙ্গে কেমন আলাপ পরিচয় হল? হ্যাঁ রে সুদীপ্ত কখন ফিরবে?
-তোমার জামাইয়ের ফিরতে দেরি হবে। সেই রকমই টেক্সট করেছিল আমাকে।তাই আর আমি অপেক্ষা না করে অটো ধরে চলে এলাম।
তারপর কিছুটা নাকের ডগা ফুলিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে, আজ তোমার জামাই আমার সঙ্গে যে ব্যবহারখানা করলো তা আমি কোনদিন ভুলবো না।
অনুরাধা দেবী বেশ বুঝতে পারছে তার মেয়ের মনে চোট লেগেছে সাংঘাতিক। কিন্তু সুদীপ্ত কি এমন চোট দিলো যে মনি এতখানি অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে?
মনিদীপা গ্লাসের জল পুরো শেষ করে বলে, জানো মা তোমার জামাই আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করলঝ আজ স্কুলে মনেই হচ্ছিল না আমি ওর সহধর্মিণী। একসাথে স্কুলের মেন গেটে ঢুকেছি এই পর্যন্ত। তারপর থেকে ও প্রধান শিক্ষক আর আমি সহ শিক্ষিকা।
অনুরাধা দেবী ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটা টেনে বসে। তারপর স্মিত বদনে বলে, এটা তো একদম সত্যি কথা। সুদীপ্ত বাতাস পুর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তুই মিউচুয়াল ট্রান্সফার করিয়ে ওর স্কুলের সহশিক্ষিকা হিসাবে যোগ দিয়েছিস আজ থেকে।
-জানো মা আজ স্কুলে গিয়ে এটেন্ডেন্স-এর খাতায় সই করে আমি স্টাফ রুমে গিয়ে বসি। ওখানে গিয়ে আলাপ হয় মধুমিতা ম্যাম এর সাথে। ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম সুদীপ্ত স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা খুব কড়া হাতে মেনটেন করে।
-এ তো খুব ভালো কথা। অনুশাসন না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠ ভাবে চালানো যায় না। তুই জামা কাপড় চেঞ্জ করে আয়। আমি সন্ধ্যাটা দেখিয়ে নিই।
অনুরাধা দেবী সন্ধ্যা প্রদীপ দেখিয়ে একটা চন্দন সুভাশিত ধূপ কাঠি জ্বালিয়ে খুব মৃদু আওয়াজ তুলে শঙ্খ ধ্বনি করলেন। ঈশ্বরকে করজোড়ে প্রণাম করে বললেন, হে দয়াময় স্কুলে আজ ঠিক কি ঘটেছে এখনও মনি বলে নি। তবে তুমি যে মঙ্গলময় সেটা আমি সর্বদা মেনে চলি।
ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে মনিদীপা তার সুদৃশ্য কাঁচের গ্যাস ওভেনে কাঁচের কেটলিটাতে জল চড়িয়ে দিয়েছে। এয়ার টাইট কন্টেনার থেকে দুটো নোনতা বিস্কুট বের করে প্লেটে রাখল। তারপর কাঁচের কফি মগে অর্ধেকটা করে লিকার চা ঢেলে সেন্টার টেবিলে নিয়ে এলো।
কফি মগে ঠোঁটটা হালকা ভিজিয়ে মনের ক্ষততে একটু উষ্ণ আরামের ছোঁয়া পেল। তারপর মনিদীপা আবার শুরু করলো, মা তোমার জামাই বাইরের লোকের সামনে আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারলো কি করে?
অনুরাধা দেবী বেশ বুঝতে পারছে নিম্নচাপ বেশ ভালোই ঘনীভূত হয়েছে মনিদীপার মন জুড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠবে হয়তো সাইক্লোন কিংবা টর্নেডো। তারপর শুরু হবে মুহু মুহু ব্রজপাতের সঙ্গে তুমুল বর্ষণ। আর একবার যদি মনিদীপা কান্নাকাটি শুরু করে তাহলে কিন্তু সহজে থামতে চায় না। এইসব কথা ভেবে অনুরাধা দেবী মেয়ের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, কি হয়েছে একটু খুলে বল মনি এবার?
মনিদীপা একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আমার বারো বছরের চাকরিতে কোনো প্রধান শিক্ষক আমাকে একবারের জন্য ফাঁকিবাজ বলে নি। কোনো প্রধান শিক্ষক সংশয় প্রকাশ করে নি আমি ক্লাস কন্ট্রোল করতে পারি কি না? আমি নির্ভুল টেবুলেশন শীট করতে পারি কিনা? কিন্তু আজ প্রথম দিনেই তোমার জামাই আমার দিকে সন্দেহের তির ছুঁড়ে দিল।
-আহা কি হয়েছে সেটা খুলে বলবি তো? তখন থেকে শুধু গৌরচন্দ্রিকা করেই যাচ্ছিস।
-তাহলে শোনো। আমি আগেই তোমাকে বলছি মধুমিতা ম্যাম এর কথা। ও আমাকে বলে, আমরা সকলেই মানে ফোর্থ গ্ৰেডের স্টাফ থেকে অ্যাসিসট্যান্ট টিচার সকলেই জানি আপনি হেডস্যারের মিসেস। আমাদের আগের ইংরেজি দিদিমণি মালতিদির জায়গায় এসেছেন। তবে সত্যি বলছি আমরা সকলেই অপেক্ষা করে আছি হেড স্যার আপনাকে কি কি সুযোগ সুবিধা দেয় তা দেখার জন্য। আফটার অল আপনি হেড স্যারের মিসেস। আপনার ক্ষেত্রে তো নিয়মের রদবদল করতেই হবে।
আমিও কৌতূহল ভরে জিজ্ঞেস করি, সুযোগ সুবিধা বলতে কি বোঝাতে চাইছেন?
মধুমিতা ম্যাম চোখগুলো গোল গোল করে বলে, হেড স্যার আমাদের ভীষণ কড়া। সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঠিক সময়ে স্কুলে এসে হাজিরার খাতায় সই করা চাই। সময়ে সাইন না করলে একটা সি.এল ছুটি গেল। তারপর হলো গিয়ে কোনো টিচার না এলে তার ক্লাস নিতে যেতে হবে হবে। তখন তোমার যতই অফ পিরিয়ড থাকুক না কেন। রেজাল্ট তৈরীর সময় টেবুলশন শীটে সামান্য ভুল ত্রুটি হলে যাচ্ছেতাই ভাবে কথা শোনান।
তাই যখন থেকে আমরা শুনেছি হেড স্যারের সহধর্মিণী আমাদের স্কুলের সহ শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হচ্ছেন। তখন থেকে সকলের মনে আপনাকে নিয়ে কৌতুহল বেড়ে গিয়েছে।
আমি মধুমিতা ম্যাম-এর কথা শুনে কিছুটা লজ্জায় রাঙা হয়ে বলি, কি যে বলেন আপনারা! আমার কোনো অতিরিক্ত সুযোগের দরকার নেই। আপনাদের মতই আমিও হেডস্যারের কলিগ।
কথা বলতে বলতে খেয়াল করি নি কখন এগারোটা দশ বেজে গেছে। এমন সময় পিওন গুনময়দা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে, মনিদীপা ম্যাম আপনাকে হেড স্যার এখুনি নাইন-এ সেকশনে যেতে বললেন রোল কলের খাতা নিয়ে। নাইন -এ সেকশনের ছেলেমেয়েরা রীতিমত শোরগোল শুরু করে দিয়েছে। ক্লাস শেষে করে হেড স্যারের রুমে এসে ওনার সঙ্গে অবশ্যই দেখা করবেন।
যথারীতি নাইন-এ সেকশন থেকে সোজা আমি সুদীপ্তর রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি আরো দুজন বর্ষীয়ান টিচার বসে আছেন।হেড স্যারের চেয়ারে সুদীপ্তকে একদম অন্যরকম মনে হচ্ছিল। রুমের চতুর্দিকে ওর পরিচ্ছন্ন রুচির ছাপ রয়েছে। দেওয়ালে বেশ বড় বড় বাঁধানো ফটো মহাপুরুষদের। শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদা মা আর বিবেকানন্দের একসাথে বাঁধানো ছবিতে একটা রজনী গন্ধার মালা দেওয়া রয়েছে। ধূপের কাঠি খানা নিভে গেলেও তার হালকা সুবাস ঘরে বেশ পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।
আমি আস্তে আস্তে বললাম, আমাকে ডেকেছো? তারপর নিজেরই কি মনে হলো আমি পুনরায় বললাম, আমাকে ডেকেছেন?
সুদীপ্ত রেজিস্ট্রার দেখতে দেখতেই মুখটা সামান্য একবার তুলে বললো, আজ আপনার প্রথম দিন এই স্কুলে। আর প্রথম দিনেই প্রথম ক্লাস নিতে গেলেন দেরীতে?
সুদীপ্তর এমন গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর আগে কখনো শুনিনি আমি। ভয়ে আমার গলা মরা নদীর মতো শুষ্ক হয়ে উঠেছিল। তবুও মনে সাহসের সঞ্চার করে বললাম, ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো দেরী হবে না।
জানো মা এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু আমার মুখে দোষীর ন্যায় স্বীকারোক্তি শুনে যে দুজন বর্ষিয়ান টিচার বসেছিল ওখানে তারা মাথা নিচু করে মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। তখন আমার মাথার দুপাশের রগ দুখানা রাগে, অভিমানে টনটন করে উঠলো।আর তখন থেকেই কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমার স্বামী বাইরের লোকের সামনে আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন করলো? মা আজ ও বাড়ি ফিরলেই আমি কিন্তু ওর কাছে কৈফিয়ত চাইবো।
এমন সময় ডোর বেলটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো। মনিদীপা নিজেই গেল সোফা থেকে উঠে দরজা খুলতে। সুদীপ্তর এক হাতে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসের প্যাকেট আর এক হাতে রোল-এর প্যাকেট। মনিদীপাকে দেখামাত্রই সে বলে, গিন্নি ধরো ধরো। প্যাকেটগুলো ধরো তাড়াতাড়ি।
মনিদীপা বেজার মুখে প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে আবার যথারীতি সোফায় তার পুরানো স্থানটা গ্ৰহণ করলো।
সুদীপ্ত চেঞ্জ করে এসে দেখে মনিদীপা এখনও গোমরা মুখ করে বসে আছে। অনুরাধা দেবী তিনটে স্টিলের প্লেটে রোলগুলো সাজাচ্ছেন।
সুদীপ্ত একটা প্লেটে দুটো রোল নিয়ে এসে মনিদীপার পাশে বসে বলে, মা আজ আপনার মেয়ে আমাকে আপনি সম্বোধন করেছে ।
সুদীপ্তর কথাটা যেন আগুনে ঘি-এর কাজ করলো। মনিদীপা আহত বাঘিনীর মত হুঙ্কার দিয়ে বললো, আর সেইজন্য তুমি আমাকে বাইরের লোকের সামনে ধমক দিতে ছাড়লে না?
সুদীপ্ত প্লেটটা সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে মনিদীপার হাতটা জোর করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে, প্রধান শিক্ষিকার চেয়ারে তুমি বসে থাকলে তুমিও বোধহয় একই কাজ করতে যদি আমি দেরি করে ক্লাসে ঢুকতাম।
মনিদীপা সুদীপ্তর চোখের দিকে তাকায়। সেখানে সে দেখতে পায় তার সাদাসিধে বরকে। কিন্তু পর মুহূর্তে মনে পড়ে যায় হেড স্যারের চেয়ারে বসে থাকা কালীন সুদীপ্তর চাহনিটা। আবার চিড়বিড় করে উঠল মনিদীপার মাথার ভিতরটা।
অভিমানী কন্ঠে সে বলে, দুজন টিচার ওখানে যখন বসে ছিল তখন তাদের সামনে এমন কড়া ভাবে কথা না বলতে পারলে আমার সাথে। আমি দেখেছি ওনারা মুখ টিপে হাসছিলেন।
অনুরাধা দেবী এসে বসলেন মনিদীপার অন্য পাশে। তারপর হাত দিয়ে ওর থুতনিটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে, আমার মেয়েটার বয়স বাড়ছে কিন্তু বুদ্ধি বাড়ছে না। ও’রে সহধর্মিণী আর সহকর্মী দুটো বিষয় যে আলাদা সেটা তুই’ও তো ভালো ভাবে জানিস। তুই নিজে আমাকে এর আগে কতবার বলেছিস, মা কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবনকে এক করা উচিত নয়।
মনিদীপা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, সবই জানি মা। তবু সুদীপ্তর রাশ ভারী কন্ঠস্বরটা মেনে নিতে পারছি না। আসলে স্কুলের হেড স্যারের চেয়ারে বসে থাকা মানুষটাকে আমি স্বামীই ভাবছি অতিমাত্রায়। আর এইখানেই ব্যক্তিগত আমি পিছিয়ে পড়ছে সহকর্মী আমি’র থেকে।
সুদীপ্ত বলে, তুমি যদি দুটো চরিত্রকে এক করে ফেল তাহলে অন্যরা তো করবেই। আমরা যদি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে দূরে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র কলিগ হিসাবে স্কুলে কাজ করি তাহলে হয়তো অন্যান্য স্টাফরা কিছুটা কম আঙুল তুলবে আমাদের দিকে। আমাদের আচরণে, হাবে ভাবে যেন স্পষ্ট ফুটে ওঠে আমরা সহকর্মী।
মনিদীপার মনের কোণে যে কালো মেঘ জমে ছিল তা এতসব কথোপকথনের পর ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগলো। নতুন ভোরের আলো পেয়ে যেমন অর্ধ প্রস্ফুটিত কুঁড়িগুলো পাপড়ি বিকশিত করে সূর্যের আলোর দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। ঠিক তেমনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে মনিদীপা সুদীপ্তকে বললো, আজ আমি খুব ক্লান্ত। হেড স্যারের কাছে বকা খেয়ে মনটা একদম ভালো নেই। রাতের রুটি কিন্তু তোমাকেই বানাতে হবে।
মনিদীপার কথা শুনে অনুরাধা দেবী ও সুদীপ্ত হো হো করে হেসে ওঠে। সুদীপ্ত রসিকতা করে বলে, ‘জো হুকুম মেরি আকা’।