
কবিতা-বাঙলার শৈত্যপ্রবাহ
বাঙলার শৈত্যপ্রবাহ
-শচীদুলাল পাল
হিমের পরশ শীতে শির-শির
উত্তর হাওয়ায় কাঁপে শরীর।
রুক্ষ শুষ্ক বাতাবরণ,
মিষ্টি মধুর তপন তাপন।
স্নান জল স্পর্শণে শিহরণ
অঙ্গে অঙ্গে লাগে কম্পন।
খসে পড়ে পাতার বসন
নগ্নরূপে গাছপালা বন।
কুয়াশার চাদর আচ্ছাদন
ঝাপসা লাগে পথঘাট লোকজন।
জুবুথুবু অলস জীবন
আপাদমস্তক ঢেকে শয়ন।
লেপ কাঁথা কম্বল সম্বল
গরীবের গা-সেঁকতে অনল।
চলো দার্জিলিং পাহাড়ে
তুষারপাত দেখবো এবারে।
ধনীর সাজ টুপি সোয়েটার
জ্যাকেট কোর্ট প্যান্ট মোজা মাফলার।
নেই ঘর নেই কাপড় নিরাভরণ
জাড়ে জ্বর গরীবের মরণ।
বড়লোকের শখের পৌষমাস
শীতকালে দুঃস্থের সর্বনাশ।
খেজুর রসেরই নলেন গুড়
পিঠে পায়েস মিষ্টি মধুর।
মালপোয়া পাটিসাপটা
দুধপুলি বকুল তিল পিঠা।
সফেদা লেবু কমলা
কুল জলপাই ধাত্রীফল আমলা।
পালং বেথো মেথি মটর
ধনেপাতা মুলো গাজর।
বাঁধাকপি ফুলকপি
বেগুন বিলাতি ওলকপি।
শীতের মরসুমি শাক সবজি
এই সময়ে খাও মন মরজি।
আনন্দমুখর শীতের মেলা
বই পড়তে, কিনতে বইমেলা।
পৌষমাস টুসু পরব মানভুম
বিটিছিলার টুসু গানের ধুম।
টুসু ভাসান পোখোরে চান
আগুনে গা সেঁকে মাতান।
বক্রেশ্বর উষ্ণপ্রস্রবণ
শীতে দিনভর অবগাহন।
শান্তিনিকেতন চলো যাই
কবিগুরুর সেই পৌষ মেলায়।
জয়দেবের কেন্দুলি মেলায়
কীর্তন শেষে খড়ের গাদায়।
সাগর সঙ্গমে সাগর বেলায়
মকর সিনান পুণ্যির আশায়।
চলো দলবেঁধে কজনে,
নদীকুলে বনভোজনে।
নাচ গান কাব্যে দুঃখ ভুলি
মিলেমিশে সেলফি তুলি।
পরিযায়ীর ভীড় জলাশয়ে
আসে পাখি দূর পাড়ি দিয়ে।
ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা,
গাঁদা, গোলাপ শীত প্রেমিকা।
যিশু স্মরণ বড়োদিনে
সারা বিশ্বে উদযাপনে।
শীতের রাত রাস্তাঘাট শুনসান
কাজের শেষে প্রত্যাবর্তন।
সরস্বতী বর কামনা
মাঘ পঞ্চমী আরাধনা।
প্রথম ধুতি প্রথম শাড়ি
সেলফি নিতে কাড়াকাড়ি।
ওমের খোঁজে লেপের তলায়
ঘন সান্নিধ্যে জাড় পালায়।

