আমার শুক্লা পঞ্চমী
–সুমিত মোদক
কি ভাবে ভুলবো আমার হলুদ রঙের শাড়ি!
কি ভাবে ভুলবো তোমার ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি!
কি ভাবে ভুলবো …
এদিনটি যে প্রতি বছর আসে;
এদিনটি যে শুক্লা পঞ্চমী;
আমার অঞ্জলি…
আমার রূপকথার রাজপুত্তুরের সঙ্গে
পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে
উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন…
যে স্বপ্নটা এক দিন তুমি দেখিয়ে ছিল;
তুমি তো বার করে এনে ছিল
আমার চেনা জানা ছন্দ থেকে,
আরেক ছন্দে, আরেক স্বপ্নে …
সে স্বপ্নে দিনের পর দিন বুঁদ হয়ে থেকেছি;
কেবল মাত্র তোমার জন্য,
তোমার হৃদয়ের জন্য …
একটু ভালোবাসার জন্য,
ভালো-বাসার জন্য;
তোমার কথা মতো মাঝ রাতে উঠে প্রতিবেশীর হলুদ গাঁদা ফুলের গাছ থেকে
সবকটা ফুল চুরি করে এনে ছিলাম;
সেটাই জীবনের প্রথম ও শেষ চুরি …
তোমার জন্য;
সে রাতে যে ভয় করেনি তা নয়;
ভয় পেয়েছিলাম, খুব, খুব ভয় …
যদি ধরা পড়ে যাই,
যদি কেউ জানতে পারে;
কি বলবো! কি ভাবে মুখ দেখাবো!
সে দিন প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেনি;
বুঝতে পেরেছিল বাড়ির লোকজন,
আমার চুরি;
ফুল চুরি …
কিন্তু, কেউ বুঝতে পারেনি কি ভাবে
একটু একটু করে আমার ভিতরটা চুরি করে নিয়েছো তুমি;
তোমার জন্য ভিতর থেকে বড়ো হয়ে ওঠা;
তোমার জন্য এতো সুন্দর করে নিজেকে সাজিয়ে তোলা;
কেবল তোমারই জন্য …
অথচ, কত সহজে তুমি ভুলে গেলে তোমার প্রতিশ্রুতি সকল;
ছেলেরা কি কেবল প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়!
নাকি ভুলতে চায়!
আমি তো পারিনি,
মেয়ে বলে কি!
আমি তো পারিনি!
সে দিন প্রথম সকালে, সকলের সঙ্গে আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম প্রতিমার সামনে
অঞ্জলি দিতে;
ঠিক আমার পিছনে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে;
আর তোমার হাতের ফুলের পাপড়িগুলো একটু একটু করে ছড়িয়ে দিয়ে ছিলে আমার মাথায়,
আমার আবেগে, আমার হৃদয়ের গোপন অলিন্দে;
সে দিনই সেজে উঠেছিলাম নতুন করে,
নতুন আবেশে,
নতুন এক সুরে;
সে সুর যে আজও বাজে হৃদয় জুড়ে …
সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে
সারাটা দুপুরে জুড়ে
নদীর ধারে বসে
একের পর এক বুনে গেছি
ভবিষ্যতের স্বপ্ন;
সে স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেলো ;
তুমি এখন প্রবাসী, সংসারী;
আমি এখন একা;
অথচ, আমার শুক্লা পঞ্চমী আছে;
আছে প্রথম সকালের অঞ্জলি;
আমার স্কুলের ছাত্রীরা যখন এ দিনটিতে
হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে,
তখন আমাকে আমি নতুন করে দেখি;
খুঁজে পাই অতীত, আমারই মেয়েবেলা,
আমার রূপকথারা …
তুমি হয়তো অনেক কিছু পেয়েছো এ জীবনে;
কিন্তু, আমার মতো পাবে না এ দিনটি;
এই প্ৰথম সকালের অঞ্জলি …
” জয় জয় দেবী চরাচর সারে,
কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে …”