প্রয়াণ… লহ প্রণাম
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
সুন্দর, শাশ্বত, সমাহিত, পবিত্র- এই শব্দগুলো বারবার ভেসে উঠেছে মানসপটে গত কয়েকদিন ধরে। সত্য তো বটেই- কিন্তু কজন পায় এমন সমাহিত প্রয়াণ মুহূর্ত।
মৃত্যুকে ছুঁয়ে নতুন করে যেন মূর্ত হয়ে উঠলেন আরো আপনজন হয়ে গেলেন আত্মার। এ আত্মিক বন্ধন তো কোনোদিন আলগা হবার নয়। আসমুদ্র হিমাচল যেদিন এক সাথে অশ্রুসাগরে ভাসলো- সেদিন দূরে সরে গেল মনের সকল কলুষতা, ভেদাভেদ, জাতি, ধর্ম। প্রকৃত শিল্পীর কোনো জাতির নয়, কোনো বিশেষ ধর্ম, বর্ণের অধীন নয়, একটাই পরিচয় তাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় তাঁর শিল্পসত্তা।
রাজনীতি ছুঁতে পারলো না তাঁকে- জীবনেও না, মরণেও না। ক’জন পারেন এমন জীবনাদর্শ তৈরী করে যেতে? স্বর্গীয় অমলিন হাসির ছবিটা যেন শিখিয়ে দেয়- জীবনের ছন্দ, বারবার দেখেও আশ মেটে না। না, তিনি আর ফিরে আসতে চান না, যদিও আসেন আবার “লতা মঙ্গেশকর” হতে চান না। তাঁর নিজের কণ্ঠেই এইরকম শোনা গেছে সাক্ষাৎকারে। তাহলে যদি পুর্নজন্ম বলে কিছু থাকে- তিনি হয়তো হবেন তাঁর নিজের কণ্ঠের অনুরাগী। আনমনে অবসরে শুনবেন তাঁর পূর্বজন্মের কণ্ঠস্বর। মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে হয়তো ভাববেন- “ইসস আমিও যদি এইরকম গাইতে পারতাম” যেমন আমরা সবাই এখন ভাবি। হয় না সবকিছুর পুনরাবৃত্তি হয় না- তাহলে মহিমা খন্ডিত হয়ে যায়। তিনি থাকুন একাধিপত্য নিয়ে সুরের জগতে স্বমহিমায় যতদিন পৃথিবীতে সুর থাকবে, থাকবে তাঁর গান।
যখন লিখছিলাম, তখনো জানতে পারিনি গীতশ্রীও অমৃতলোকে। সুরের সন্ধ্যা অস্তমিত! গানে গানে আবার ফিরে পাওয়ার, অনুভব করার আপ্রাণ চেষ্টা…কৈশোর, যৌবনে সুরে সুরে হারিয়ে যাওয়ার সন্ধ্যা বেলা- “কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে..” শোকার্ত বাঙলা আর বাঙালীর একটাই আর্তি আজ আকাশে বাতাসে।
সকালে আবার- বাপী লাহিড়ী না ফেরার দেশে… জীবনকে সচল রাখার, ছন্দে বেঁধে রাখার, সুরে সুরে মাতোয়ারা করে দেওয়া শ্রদ্ধেয় প্রিয় মানুষগুলো মুহূর্তের ব্যবধানে স্বর্গীয় হয়ে গেলেন।
জীবনের জৈবিক যন্ত্রণা থেকে দূরে, যান্ত্রিক পরাধীনতা ছিন্ন করে পরপারে। মৃত্যু শান্তি এনে দিয়ে গেল হয়তো। কিন্তু আমরা.. একসাথে এতো বিষাদ! কিভাবে দিতে পারি হৃদয়ের অঞ্জলী? বড়ো বেসুরো যে আজকের সকাল। সুর কতো দূরে.. “ইয়াদ আ রাহা হ্যায়…”