Site icon আলাপী মন

কবিতা- কুলধারা-র মেয়ে

কুলধারা-র মেয়ে
–সুমিত মোদক

 

 

আমাকে তুমি ছুঁতে পারবে না কোনও দিন;
আমি যে, সেই কুলধারা-র মেয়ে …

বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে এক সময় যেখানে
ভোরের আলো ফুটতো;
ডেকে উঠতো ভোরের পাখি;
ছড়িয়ে পড়তো রাগ ভৈরব …
সেখানে এখন ধ্বংস প্রাপ্ত, অবলুপ্ত এক জনপদ;
বিভীষিকাময় এক পরিবেশ;

অথচ, এক সময়
একটা নির্দিষ্ট ছন্দে জীবন চলছিল;
চলছিল জীবনাচার, সমাজ ও সভ্যতা …
রাগ-অভিমান, প্রেম-ভালবাসা, সুখ-দুঃখ …
সবই তো ছিল;
ছিল নিজস্ব এক সংস্কৃতি, পরম্পরা;
পালি-পরম্পরা , ব্রাহ্মণ পরম্পরা …
সে পরম্পরায় আমাদের জন্ম, জন্মান্তর;

কিন্তু, তুমি ও তোমরা কত সহজেই ভাবলে,
নারী কেবল মাত্র ভোগের বস্তু;
ইচ্ছা করলেই যেমন খুশি ভোগ করা যায়;
উপভোগ করা যায়;

আমাকে তুমি ভোগ করতে চেয়েছিলে পুরুষ;
ভোগ করতে চেয়েছিলে তোমার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়;
তোমার ঔদ্ধত্যে …
তুমি কি ভুলে গিয়েছিলে একটি নারী একটি সমাজের সম্মান!
একটি সভ্যতার সম্মান!
একটি সংস্কৃতির, একটি পরম্পরার রক্ষাকবচ,
মন্ত্র-বীজ;
তাকে নষ্ট করা কোনও মতে সম্ভব নয়;

পুরুষ, তুমি সে কথা বার বার ভুলে যাও;
নাকি ভুলতে চাও!
নাকি সুন্দরী-যুবতী-সনাতনী…
দেখলেই তোমার আদিম লালসা জেগে ওঠে!
ভেঙে ফেলতে চাও সভ্যতার মেরুদণ্ড;

সেটা তোমার পক্ষে কোনও দিন সম্ভব নয় লালায়িত পুরুষ,
সভ্যতার কলঙ্ক, হিংস্র-বন্য-স্বত্ত্বা …
তোমার পক্ষে সম্ভব নয়;

তুমি তো দেখলে একটি নারীর সম্মান বাঁচাতে,
একটি সমাজের সম্মান বাঁচাতে,
একটি পরম্পরা বাঁচাতে,
কিভাবে একটা রাতের মধ্যে বাতাসে মিলিয়ে গেলো একটা সমাজ;
একটা নয়, দুটো নয়, তিরাশিটি গ্রামের সকল মানুষ বাতাসে মিলিয়ে গেলো;
বাতাসে মিলিয়ে যায়;
বাতাসে মিলিয়ে যেতে জানে;

তুমি ভাবছো,
তোমরা ভাবছো পালিয়ে বেঁচেছি;
সনাতনী কখনও পালায় না;
পালাতে শেখেনি;
আমরা আজও আছি;
আমরা থাকবো যুগ যুগ ধরে
এই কুলধারা-র মাটিতে, এ ভারতবর্ষে;

আমাকে কোনও দিন ছুঁতে পারবে না তুমি;
আমাদের কোনও দিন ছুঁতে পারবে না তোমরা;
আমরা যে এই কুলধারার মেয়ে;
আমরা যে সনাতন ভারতবর্ষের মেয়ে।

Exit mobile version