Site icon আলাপী মন

কবিতা- আলোর বিচার

আলোর বিচার
-সুবিনয় হালদার

 

 

আমি বগটুই গ্রামের নুরজাহান- বয়স বারো
আমার বোন মমতাজ- নয়,
তোমরা আমাদের চেননা
ধ্যাৎ চিনবেই-বা কী করে-
তোমরা তো কোনোদিন আমাদেরকে দেখোইনি!
জানো- আমার মা বলেছে নানা নাকি এই নামটা রেখেছিলো,
খুব ভালোবাসতো আমাদেরকে নানা।
শবেবরাতের একদিন আগে বাড়িতে এসেছিলো নানা,
হাসি-গল্প-মজা করতে করতে আমি জিগ্যেস করেছিলাম- নানা, আমার নামটা তুমি রেখেছো? তা এই নামের মানে কী?
তখন নানা আদর করে গাল টিপে একগাল হেসে বলেছিলো- তুই হলি জগতের আলো।
সেকি আলো- চারিদিকে শুধু আলো আর আলো–
জগৎ এর সমস্ত আলোর ছটা এক সাথে দলবেঁধে আমাদের বাড়িতে-
আমাদের ঘরে- আমাদের শরীরে- চামড়ায়- জীবন্ত কোষে–
সেই জগতের আলোর আগুন আজ আমাকে বোনকে আব্বা আম্মি ফুপাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিলো! জ্বালা… কী-ভীষণ জ্বালা…
বোন-আমি-আমরা কাঁদছি- চিৎকার করছি;
আর উন্মত্ত আগুনের সমবেত উল্লাসের সেকি অট্টহাসি!
জানো- ওরা যখন আমাদের বাড়ির লোহার গেট কাটছিলো- তালা ভাঙছিলো মা তখন নানাকে ফোন করেছিলো,
আমিও নানাকে কেঁদে কেঁদে ফোনে বলেছিলাম- নানা আমাদের বাড়ির বাইরে কত লোক- চিৎকার করছে- বোম ফাটাচ্ছে-
তুমি এক্ষুনি আমাদের বাড়ি এসো নানা- আমার ভীষণ ভয় করছে…
তখন ঘরের বাইরে আগুনের ঢল- বারুদের কোলাহল!
ভয়ে আমি বোন হাত ধরাধরি করে আম্মীর কোমর জাপটে ধরি,
আম্মী তার দুহাত দিয়ে আমাদের দুবোনকে আগলে ধরে !
তারপর সব তার- কেটে গেল- বিচ্ছিন্ন হয়ে আগুন বারুদ আমার শরীর- আমাদের শরীর আলিঙ্গন করে বুকে টেনে নিলো-
জগৎ এর আলো!

এরপর কিছু আর মনে নেই-
হঠাৎ দেখি আনিসদা!
তোমরা তো আনিসদাকে চিনতে;
চিনতে না?
তার খোঁজ করেছো? করো-নি-
জানো তো, আনিসদার সাথে আজ আমাদের দেখা হয়েছে-
তার থেঁতলানো রক্তাক্ত শরীর নিয়ে আমাদের কাছে দৌড়ে এসেছে,
অঝোর নয়নে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমাদের পোড়া কালিমাখা শরীর-গুলো বুকে জড়িয়ে ধরেছে-
গায়ে পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বোনকে কোলে তুলে নিয়েছে!
আমার পোড়া-কাঠ পেনা হাতটা ধরে বললো- চল, আমার সাথে!
কোথায়– কোথায় যাবো- আনিসদা?
বিচার সভায়..
তোর জগৎ আমার- আমাদের জগৎ বিচার করবে না।
যেখানে সবার সঠিক বিচার হয় সেখানে!

Exit mobile version