কবিতা- হেমন্ত দিনে যখন গাছের পাতা ঝরছিল

হেমন্ত দিনে যখন গাছের পাতা ঝরছিল
-সুনির্মল বসু

 

 

তখন নীল আকাশে ঝিলমিল রোদ্দুরে কত রঙ বেরঙের ঘুড়ি উড়ত, তখন আকাশটা ছিল গভীর নীল, গাছের পাতা সবুজ, ধানক্ষেতে উদাসী বাতাস বয়ে যেত, দীঘির জলে ফুটে থাকতো শাপলা শালুক,
দোপাটি ফুলের মতো সুন্দরী মেয়েরা হেসে উঠতো খিলখিল, বাতাস কত বর্ণ গন্ধ ছড়াতো,
মানুষের শৈশবে যে কী থাকে,
তখন যে কোনো মানুষকেই উপন্যাস থেকে উঠে আসা মানুষ বলে মনে হতো,
উঠোনে মাদুর বিছিয়ে পড়তে বসে বাঁশ বাগানের মাথার উপর দেখতাম লক্ষ তারার মিছিল, জ্যোৎসনা রাতে জামরুল বনে হেঁটে বেড়াতাম,
গভীর রাতে জানালা দিয়ে সুপারি গাছের ছায়া বিছানায় এসে পড়লে, বাবার পিঠের দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমোতাম,
তেমন আকাশ আজ আর দেখিনা,
পদ্ম দীঘিতে আজ আর ভ্রমর বসে না,
যেসব গাছ গুলোর কাছে সেই সব দিনে দুঃখ জানাতে যেতাম, তারা আজ কেউ বেঁচে নেই,
পৃথিবীটা কবে যে সাহারা মরুভূমি হয়ে গেল,
এই পরিবর্তন আজও বুঝি না,
অথচ, অরণ্য পাখির গান শুনে, সেগুন মঞ্জরীকে সাক্ষী রেখে, নদী ও পর্বতকে বিদায় জানিয়ে আমার চলে যাবার কথা ছিল,
পৃথিবীর দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমাবার আগে, পুরনো ক্যানভাসে চোখ রাখতে গিয়ে ক্রমশ হতাশ হচ্ছি,
কারা যেন ছবিতে কালি ছিটিয়ে দিলো,
শেষ অঙ্কটার উত্তর কিছুতেই মেলাতে পারিনি,
শূণ্যতা আজ শূণ্যতার কাছে কাঁদছে,
হেমন্তের পাতা ঝরার কাল শুরু হয়েছে।

Loading

Leave A Comment