Site icon আলাপী মন

গল্প- আপনজন

আপনজন
-শচীদুলাল পাল

 

 

হুগলি জেলার কোন্নগরের একপ্রান্তে ব্যান্ডেল হাওড়া মেন লাইন অপর প্রান্তে সমান্তরাল গঙ্গা বয়ে চলেছে। গঙ্গার পাশ দিয়ে সুদীর্ঘ জি টি রোড। ঘন বসতিপূর্ণ এই শহরের মধ্যভাগে প্রধান রাস্তার উপর দুই বিঘা বাগান ঘেরা জমির উপর বিশাল বাড়িতে মাধববাবু একাই থাকেন। পৌষ মাস।মেঘলা আকাশ। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা মাঠায় ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলেন লতা দিদিমণি। বাড়ীটির ভিতর থেকে কাশি ও কাতরানির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ালেন। গেট খুলে লন পার হয়ে প্রধান দরজায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন দরজার সামনে দুধের প্যাকেট, খবরের কাগজের স্তুপ। দীর্ঘদিন ঘরে কেউ প্রবেশ করেনি ও কেউ বের হয়নি।দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। কলাপসিবল খোলা।
লতাদি কলিং বেল বাজালেন। সাড়াশব্দ পেলেন না। জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিলেন। কেউ এসে দরজা খুললো না।
চিন্তিত মনে লতাদি জোরে জোরে অনেকক্ষণ ধরে ধাক্কা দিলেন, বেল বাজালেন ও ডাকলেন। অনেকক্ষন পর দরজা খুলে টলতে টলতে বেরিয়ে আসলেন মাধব বাবু। রোগক্লিষ্ট শরীর। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। জীর্ণ শীর্ণ শরীর।
প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন ভদ্রলোক। লতা দিদিমণি হাত ধরে ধীরে ধীরে ঘরে বিছানায় শুইয়ে দিতে সাহায্য করলেন। কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন- একি! অনেক জ্বর! কবে থেকে জ্বরে ভুগছেন?
বহু কষ্টে ক্ষীণ স্বরে বললেন- কবে থেকে তা বলতে পারবো না। তবে আমি মৃত্যু পথযাত্রী। আমি আর বাঁঁচবো না। আপনি কে?
– সে সব পরে বলবো। এখন বলুন ওষুধপত্র কিছু খেয়েছেন? কিছু খাবার খেয়েছেন?
– বিছানা ছেড়ে উঠে ওষুধ নেবার সামর্থ আমার নেই। আর খাবার কে খাওয়াবে?
লতাদিদিমনি ড্রয়ার থেকে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বের করে খাওয়ালেন। কপালে জলপটি দিলেন। দেখলেন ঘরে কোনো খাবার নেই।
বললেন আমি আপনার জন্য কিছু ওষুধ ও পথ্য নিয়ে আসছি। আপনি শুয়ে থাকুন। উঠবেন না।
দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বর্ষণ মুখর সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়লেন ডাক্তারের সন্ধানে।
কোনো ডাক্তার আসতে চাইলো না। ডাক্তারকে রোগীর বিবরণ বলে ওষুধ, পথ্য পাউরুটি দুধ ফল কিনে নিয়ে আসলেন।জ্বরের ঘোরে দিন কয়েক কাটলো। যমে মানুষে টানাটানি। বিকারে ভুল বকছে। মৃতা স্ত্রীকে স্মরণ করে বলেই চলেছে- জ্যোৎস্না!আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চলো। লতাদি অহরহ সেবা শুশ্রূষা করে গেলেন। তার সেবা শুশ্রূষায় ও ঐকান্তিক প্রার্থনায় ঈশ্বর তুষ্ট হলেন।
দিন সাতেক পর মাধব বাবু চোখ মেলে চেয়ে দেখলেন তার সামনে সেবারতা এক মহিলার হাত। তার মনে হলো সাক্ষাৎ কোনো দেবি। তার সেবাযত্নে প্রাণ ফিরে পেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হলেন। মাধব বাবু বললেন- আপনি কি কোনো দেবি? আপনিই কি ঈশ্বর? কে আপনি? কি আপনার পরিচয়?
– আমি দেবি নয় স্যার। আমি এক গার্লস স্কুলের রিটায়ার্ড শিক্ষিকা। আপনার সাথে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু দরজায় নেমপ্লেট দেখে জানলাম আপনিও স্কুল শিক্ষক।
আজ মাধববাবু অনেকটা সুস্থ। দিন দুয়েক জ্বর আসেনি।
গরম জলে স্নান সেরে খাওয়ার টেবিলে বসে দুজনে একসাথে খাবার খাচ্ছে। পরিপাটি করে লতাদি রান্না করেছে।
এভাবে আরও দিন কয়েক পর পুষ্টি ও বল সঞ্চার করে স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে মাধব বাবু বললেন- আমিও হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত হেডমাস্টার। এই বাড়িটি আমার বাবা করেছিলেন। আমি কিছু সংস্কার করেছি মাত্র। আমার ছেলে অয়ন খুব মেধাবী ছিল। হায়ার সেকেন্ডারিতে প্রথম দশজনের মধ্যে পঞ্চম হয়েছিল। কম্পুউটার সাইন্সে বি টেক। পরে এম টেক। পাড়ায় খুব নাম। আমিও গর্বিত। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির কোর্সগুলো করে এক কোটি টাকার প্যাকেজ অফার নিয়ে এখন সে আমেরিকায়। আমারই বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম। খুব ভালো মেয়ে। ওদের এক ছেলেও আছে। বেশ সুখেই আছে। প্রথম প্রথম ফোনে মাঝে মধ্যে কথা বলতো। পরে ধীরে ধীরে ভুলেই গেলো। আমি ফোন করলে বলতো “আমি ভীষণ ব্যস্ত বাবা। পরে আমিই কল ব্যাক করবো।”
পরে আর তার সময়ই হতো না। বউমাও আমাদের ভুলে গেলো। সাধের এক রত্তি আমাদের নয়নের মনি নাতিটাকেও কথা বলতে দিতো না। বলতো তার নাকি পড়াশোনার খুব প্রেশার। সেবার অয়নের মা এক কঠিন ক্রিটিকাল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। মৃত্যুপথযাত্রী জ্যোৎস্না (আমার স্ত্রী) কথা বলতে চেয়েছিল ছেলে বউমা আদরের নাতির সাথে, কিন্তু পারেনি। তার ইচ্ছে ছিল ছেলের হাতে আগুন পেয়ে স্বর্গে যাবে। সে ইচ্ছেও তার পূরণ হয়নি। ছেলে একবার ফোন করে বলেছিল তার নাকি সামনে প্রমোশন, ছুটি সে পাবে না। সুতরাং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সে আসতেই পারবে না। অবশ্য কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল।
সেও আজ বছর পাঁচেক আগের কথা। ছেলে বলেছিল ওখানকার সব বিষয় সম্পত্তি বেচে দিয়ে আমেরিকায় চলে আসতে। আমি বলেছিলাম “আমি নিরুপায়”।
পৈতৃক ভিটে মাটি, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় সজন, আপন দেশ, আপনজন ছেড়ে যেতে মন চাইনি।
– আপনার জ্বরের কথা কাউকে জানিয়েছিলেন? কাউকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন?
– যতক্ষণ সজ্ঞানে ছিলাম ডেকেছি। কথা বলেছি। অনেক আত্মীয় বন্ধু যাদের সাথে নিত্য দেখা হয়, কথা বলে, তারা কেউ খোঁজ রাখেনি। কেউ কথা রাখেনি।ফোন করেনি।
– বাড়িতে কাজের লোক? রান্নার লোক?
– তারা তো জ্বর শুনে ভয়ে অনেকদিন থেকে এ মুখো হয়নি। বাগান পরিচর্চা করার মালি! তারও পাত্তা নেই।
– আর কোনো আপনজন?
– এতদিনে উপলব্ধি করলাম, আমার কোনো আপনজন নেই। আপনিই ফেরেস্তা, দেবদূত, এক অতি আপনজন। আপনিই আমার প্রাণদাত্রী। আমি শুধু নিজের কথায় বলে যাচ্ছি। এবার আপনার কথা বলুন।
– হ্যাঁ। নিশ্চয়ই বলবো। কিন্তু তার আগে আপনার পূজোর ঘরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বেলে দিয়ে আসি।

বিশাল দোতলা বাড়িটির বাগানের গাছপালার আড়ালে সূর্য গেলো অস্তাচলে।পাখীদের কলতানে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। শান্ত নিস্তব্ধ যাদব বাবুর গৃহমন্দিরে বহুকাল পরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে উঠলো। নিস্তব্ধতা খান খান করে শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হলো। লতা দিদিমনি পূজার ঘর থেকে ধীর পায়ে বৈঠকখানা ঘরে যাদব বাবুর মুখোমুখি সোফায় বসলেন। আজকের সন্ধ্যায় জীবন সায়াহ্নে দুটি অচেনা প্রাণী। দুই শিক্ষক শিক্ষিকা হৃদয় – মনের কাছাকাছি।
যাদব বাবু বললেন- এবার আপনার কথা বলুন দিদিমণি।
লতা দিদিমণি শুরু করলেন- আমি ফিজিক্সে এম এসসি পাশ করে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। চার ভাই দুইবোনের সংসারে আমিই একমাত্র উপার্জনশীলা। বাবাকে সাহায্য করতাম। দুভাই ও বোনরা তখন খুব ছোট। সংসারের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে সংসার চালিয়ে সঞ্চয়ের টাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছি। বাবার মৃত্যুর পর ভাইবোনের বিয়ে দিয়েছি। ভাইদের স্বল্প আয়। একান্নবর্তী বিরাট পরিবার।
– আপনি বিয়ে করেননি?
– সেটা আর হয়ে উঠেনি। সংসার সামলাতে গিয়ে, সংসারটাকে দাঁড় করাতে গিয়ে
কখন যেন মেঘে মেঘে বেলা হয়ে গেছে। আমি অবিবাহিতা থেকে গিয়েছি। আমি এখন চিরকুমারীর মর্যাদায় গৌরবান্বিতা।
ভাইবউরা প্রথম প্রথম ঠিক ছিল। পরে তারা আমাকেই অবজ্ঞা করতে শুরু করলো। আমার কর্তৃত্ব মেনে নিত না।
ধীরে ধীরে আমার সঞ্চিত অর্থের উপর কেউ সাহায্য, কেউ অধিকার দাবি করতে লাগলো। আমি অকাতরে তাদের দিয়েই যেতে লাগলাম।
দিতে দিতে একদিন সব ফুরিয়ে আসতে লাগলো। এমনকি বোনদের বিয়েতে সোনার অলংকার দিয়েছিলাম। ভাইবউরাও দাবি করলো আমাদেরও দিতে হবে। আমি ভাবলাম এরাই তো আমার সব আমার আপনজন। দিয়েই দি।
তাস খেলায় তাসের পাতা যেমন বিতরণ করে তেমনি সব গয়নাগাঁটি জমানো টাকা সমবন্টন করে দিলাম।
দিতে দিতে আমি হয়ে গেলাম প্রায় নিঃস্ব। যে স্বল্প আয়ের ভাইকে আমি বেশি ভালোবাসতাম যার পরিবারে নিজেকে আপন ভেবে সম্পূর্ণ সঁপে দিয়েছলাম, তাদের ছেলেমেয়েদের কোলে পিঠে মানুষ করলাম। সমবন্টনে সেই ছোট ভাই ও ভাই বউ-এর হলো রাগ। দিনরাত খোঁটা দিতে লাগলো।
আমার উপর মানসিক নির্যাতন করতে শুরু করলো। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে লাগলো।
অসুখে বিসুখে চেক আপ করানো ডাক্তার দেখানো কিছুই করতো না। আমি যেন তাদের কাছে গলগ্রহ। এক অবহেলিত অবস্থায় দিন কাটতে লাগলো।
– এতো অমানবিক!
– হ্যাঁ। আমি এক অশনি সংকেত উপলব্ধি করলাম।
– তখন কি করলেন?
– আমি ঠিক করলাম আমি আর সংসারে থাকবো না। আমি নিজের উপার্জনের টাকায় কেনা জমি, নিজ আয়ের তৈরি বাড়ি ত্যাগ করে এক বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিলাম।
– আপনি তো পেনশন হোল্ডার?
– পেনশনের টাকা যাকে যতো দিতাম তাকে ততটাই এখনো ফোন পে-তে পেমেন্ট করে দিই।
-এখনো তাদের টাকা দেন?
– না দিয়ে পারি! তারা যে আমার আপনজন।
এখন কোথা থেকে আসছিলেন?

আপনার এই পাড়ায় অনেকটা দূরে আমার এক বোনের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তার একটা ছেলে আছে ক্লাস ফোরে পড়ে। তাকে খুব ভালোবাসি।
কিছুদিন আগে দিনকয়েক থাকবো বলে গেছিলাম। বোনঝি লতামাসি লতামাসি বলে খুব খাতির করলে। নাতিটাকে একটা বড়ো দামি খেলনা দিলাম। সে খুব খুশি। তার আনন্দে তার সাথে খেলা করে আমিও কিছুটা সময় কাটালাম।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে একটা ঘরে শুয়েছিলাম। পাশের ঘরে বোনের মেয়ে ও তার হাসবেন্ড-এর কথা শুনে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। তাদের কথাগুলি বুকের মধ্যে হাতুড়ির আঘাত দিতে লাগলো।
‘লতা মাসি এসে আমাদের বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা সব মাটি করে দিল। এখন কতদিন থাকবে? কবে যে বিদেয় হবে বুড়িটা? মরণ হয় না। নাতির সঙ্গে প্যায়ারের নাম করে শেষ বেলায় আমাদেরই ঘাড় মটকাবে না তো?’
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে আমি শাড়ি ছেড়ে বোনঝিকে ডাকলাম। হাতে একটা ভারি প্যাকেট দিয়ে বললাম এটা তোমাদের জন্য। যাও দিন কয়েকের জন্য কোথাও বেড়িয়ে এসো। বোনঝি প্যাকেট খুলে দেখলো অনেক টাকা। লক্ষাধিক। দেখে একদম থ হয়ে গেলো।
আমি বললাম, বৃদ্ধাশ্রমে আমার পাশের বিছানায় যে মেয়েটি থাকে সেই মেয়েটির কাল থেকে শরীর খুব খারাপ। আমাকে এখুনি চলে যেতে হবে। আমি ধীর পায়ে ঘর থেকে বের হলাম। বোনঝি নিশ্চল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। আমি আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের হয়ে যখন রাস্তায়, তখন পৌসমাসের বৃষ্টি,
আর আমার দুচোখে জলের ধারা মিলেমিশে একাকার। তারপরই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আপনার রোগ যন্ত্রণার আওয়াজ পেয়ে আপনার সাথে সাক্ষাৎ।
কিছুক্ষণ নিঃশব্দে থেকে উভয়ে উভয়ের কথা শুনে তাদের আপনজনদের কথা অনুভব করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষে দুজনে দুই আলাদা রুমে থেকে রাত্রিবাস করলেন। সারারাত ভাবলেন। লতা দিদিমণি ঘরদোর সব গুছিয়ে রান্নাবান্না করে ঢেকে রেখে বললেন- স্যার। আমার কাজ শেষ। আমি আজ চলে যাবো। এই আমার ফোন নং। প্রয়োজন পড়লে আমায় ডেকে পাঠাবেন।
– আপনি চলে যাবেন?
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃরাশ সেরে মাধববাবু বললেন- শুনেছি বন্যার সময় গাছের ডালে একসাথে সাপ ও মানুষ বাস করছে। দুজনেই একই সমস্যার সম্মুখীন। দুজনেই নিরাশ্রয়।
আমরাও দুজনেই নিরাশ্রয়। এই বিশাল পৃথিবীতে আপনজন খুঁজে পাইনি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলি।
লতাদি চোখ নামিয়ে বললো- বলুন।
আপনার সাহচর্যে সেবায় যত্নে আমি মুগ্ধ। অভিভূত। ঈশ্বর এতদিন বাদে এক প্রকৃত আপনজন পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবার আমাকে আপনার আপনজন ভাবার সুযোগ করে দিন।
লতাদি মাথা নিচু করে রইলো। কি উত্তর দেবে?
মাধব বাবু বললো- আমাকে আপনার কোমল হৃদয়ে স্থান দিন।
লতা দিদিমণি চোখে চোখ রেখে বললেন
-বেশ।
-শুধু বেশই যথেষ্ট নয়। আসুন আমরা আমাদের একাকীত্ব দূর করি। একজন আর একজনকে চিরসাথী করি।
– সমাজ কি বলবে? নিন্দে করবে যে।
– আমরা লিভ টুগেদার হয়ে জীবন যাপন করতে চাই।
– এ এক গভীর সমস্যা।
– ঠিক আছে। তাহলে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা যদি দিই।
– সারাজীবন অবিবাহিতা থেকে এই শেষ বেলায় বিয়ে! অসম্ভব। লোকে কি বলবে?
– লোকে আবার কি বলবে? তাছাড়া আমরাতো এই বয়সে দেহের টানে বিয়ে করছি না।
লতাদি মাথা উঁচু করে বললো- আপনজন খুঁজতে গিয়ে যা দেখলাম। সমাজ সংস্কার তো আমাদের কথা ভাবেনি। আমাদের দিকে তাকায়নি। এখন আমাদের নিষ্কাম ভালোবাসার স্বীকৃতি দিক বা না দিক আমরা ঘর বাঁধবো।
-আমরা ভাববো এই বয়সে শরীর নয়। চাই আপনজন।
– আমি ভাবছি এই বিশাল সম্পত্তি ও বাড়ি কোনো মিশনের স্কুলকে দান করে দেব। সেখানে আমাদের জীবিত অবস্থাতে স্কুল হবে। ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষালাভ করবে। তারাও হবে আমাদের প্রকৃত আপনজন।
– আমি আপনার পরিকল্পনায় সহমত। এই বিশাল সম্পত্তির উপর দুটি মাত্র রুম নিয়ে আপনি আমি প্রকৃত আপনজন ভেবে জীবনের শেষ কটা দিন কালাতিপাত করবো।
– এই বিশাল সম্পত্তির সিংহদ্বারে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে “আ-প-ন-জ-ন”
– আর আমাদের দুজনের হৃদয় মন্দিরেও লেখা থাকবে “আ-প-ন-জ-ন”

Exit mobile version