হালুয়া
–রীণা চ্যাটার্জী
বললেই নিন্দুকেরা বলবে- ‘বলছে..’ তাও একসময় বলতেই হয় জীবনটা যেন হালুয়া- হয়ে গেছে, মানে শুধু ওই হালুয়ার মতো চটচটে পাকটা থেকে গেছে আর কি! পাক দেওয়ার আগে অবশ্য বোঝা দায়- তখন গাওয়া ঘি আর মেওয়ার সুবাস, ঝরঝরে সাদা সুজি, তেল আর তেলানির অপূর্ব চকচকে মিশ্রণ। তারপর তাতে যখন আলোচনার চিনি মেশাবে, ব্যস ওতেই যত বিপদ। যত পাকাবে তত চটচট করবে। কত পাক, কেমন পাক তা ঠিক মতো বোঝার আগেই, প্যাঁচপ্যাঁচে ঘামের মতো গায়ে লাগাবেই, আর হাত লাগলেই চটচট করবে। ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও পারবে না। ঝাড়ু মেরে তাড়াবে যে তার উপায় নেই- চটচটে যে, আঠার মতো সেঁটে যাবে। যদি একটিবার ভরসা করে ঝাড়ান দিয়েছো তো আলোচনা-সমালোচনা থিকথিক করবে। হয়তো ঝাড়ুকেই তখন ‘লে হালুয়া’ বলে ঘরের বাইরে ফেলে দিতে হবে। শখের ঝাড়ুখানা না হয় ফেলা গেল- তাতেও রেহাই নেই। “বোবার শত্রু নেই” প্রবাদ ঘুচিয়ে দিয়ে মিথ্যের ডোবাজলে ঝাড়ু পচবে, দুর্গন্ধ ছড়াবে। নিজের নাকে নিজেই চাপা দিয়ে সেই দুর্গন্ধ সাফ করতে আবার নিজেকেই নামতে হবে। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ, না মরা অবধি শাস্তি নেই। পচা জলে নাকানিচুবানি খেতে হবে। নাকানিচুবানি খেতে খেতে ঝাড়ু খুঁজে তুলে দেখবে তাতে বেশ খানিকটা ঘ্যানঘ্যানে ছত্রাকের ভিড়- আনন্দে বাসা বেঁধেছে। মুখরোচক লাগে। পরের কথা সবসময় মুখরোচক, বিনে পয়সার হালুয়া যে- যত পচবে তত মিষ্টি। হালুয়ার পাক তখন রূপ বদলে চাটনি হয়ে গেছে। সেও চটচটে, মাখামাখি তাতে নতুন উপদ্রব মাছি উড়ছে, ভনভন করছে। ছিল হালুয়া, হয়ে গেল চাটনি- যেখানে পড়বে সেখানে জ্বালা- দূষিত জ্বালা।
তখন মনে হবে এর থেকে হালুয়া ভালো ছিল- শুধু তো গায়ে লেগে ছিল ঘামের মতো। একবার এই অভিজ্ঞতা হয়ে গেলেই পরের বার মন বলবে- চাটনি হয়ে কাজ নেই বাপু ‘হালুয়া’ হয়ে কাটিয়ে দে বাপ বাকি জীবনটা। শুধু বলিস না- কারা হালুয়া করলো তাহলেই চাটনি… মনে রেখে পথ চলো, ভাবখানা এমন রাখতে হবে যেন মন হালুয়ায় মাখামাখি, নেচে নেচে হরি বলো, প্রসাদ নিতে ভিড়ের অভাব হবে না, অভিযোগ থাকবে না। শুধু জীবন-হালুয়া কেঁদে কেঁদে বলবে- “ত্রাহি মাম ত্রাহি মাম…”
পড়ার শুরু থেকেই খিদে পেয়ে গেল যেন দিদি,কি অনবদ্য শৈলীতে অনেক কিছু কথা বলেছেন এখানেই আপনার লেখার স্বার্থকতা।
প্রাপ্তি ভাই
খুব সুন্দর