মুক্ত করো ভয়
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
মাতৃভূমি, মাতৃদুগ্ধ, মায়ের আঁচল, মাতৃভাষা
সবকিছুতেই জন্মগত অধিকার। ছিনিয়ে নিতে হয় না, নিজে থেকেই ভরিয়ে রাখে জন্মক্ষণ থেকে প্রকাশে-অপ্রকাশে। এ তো অনুভব আর অনুভূতির কথা, বাস্তব! একটু আলাদা।
মাতৃভূমির নির্বাচিত জাঁদরেল, স্বশিক্ষিত, বিভিন্ন ধরণের ভূস্বামী (শাসক, প্রশাসন) বিরাজিত আছেন তাঁদের চেলা চামুণ্ডা নিয়ে স্বমহিমায়। আমি বা আমরা কেবল নাগরিক মাত্র, নাগরিকত্ব অধিকার ভোগ করি জন্মসূত্রের পরিচয়ে, মাতৃভূমি বলে গান গাইতে পারি, ভাবে আবেগে ভেসে যেতে পারি বিশেষ বিশেষ দিনে- তার বেশি কিছু নয়, এটা মনে রাখতে পারলে নাগরিকত্ব পরিচয়ের কার্ড আমার বা আমাদের পকেটে। মোদ্দা কথাটা মাতৃভূমিকে যতোই ভালোবাসো, ভূস্বামীদের ন্যায়-অন্যায় নিয়ে মুখ খুললেই তা কিন্তু মাতৃভূমির বিপক্ষে যাবে, তখন নাগরিকত্ব নিয়ে টানাটানি হতেই পারে। মাতৃভূমিতে জন্মগত অধিকার কতটুকু- প্রশ্নের মুখে!
মাতৃদুগ্ধ, সেও বড়ো ক্ষণস্থায়ী। সেই কবে খেয়েছি জ্ঞানচক্ষু খোলার আগেই, সেই স্বাদে শুধুই স্মৃতি। কর্মব্যস্ততার মাঝে পড়ে জন্মের কিছু দিন পর থেকেই নিমপাতা, লঙ্কাবাটা সহযোগে স্তনবৃন্ত শিশুমুখ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নানারকম ফন্দিফিকির চলতেই থাকে। তারপর বিজ্ঞাপনের গুঁতোয় প্রোটিন-ভিটামিনের লোভনীয় তালিকা তো আছেই। অতএব… সুযোগের সদ্ব্যবহার, “আহা! দেখলেই বোঝা যায় __ বেবী” ছোটোবেলায় চেনা বিজ্ঞাপনী চমক।
নামে হয়তো অনেক বদল এসেছে, নতুন নতুন চমক এসেছে। তাহলে মাতৃদুগ্ধ! যার যেমন ভাগ্য তেমন মেলে। তবে “মাঈ কা লাল” কিন্তু মাতৃদুগ্ধ আষ্ফালনের এক আজন্মের বিজ্ঞাপন, প্রয়োজনে ঝুলি ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
মায়ের আঁচল- ওটাই শুধু বড়ো নিজের।
মা-সন্তানের সম্পর্কের একান্ত আপন। মায়ের আঁচল যেন গ্ৰীষ্মে শীতলপাটি, শীতে একমুঠো রোদ্দুর আর উষ্ণতা। সবসময় মাতৃস্নেহে ম ম করছে। চোখ বুঁজলেই সেই ঘ্রাণ যেন ঘিরে ধরে- গভীর, ভীষণ গভীর চাইলেই যতবার খুশী ডুব দেওয়া যায়।
এ স্বাদের ভাগ হবে না।
মাতৃভাষা- “মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাঙলা ভাষা” ভাষার কথা এলেই তিনি এসে আগে হাত ধরেন। যদিও শুধু বাঙলা নয়, সবার কাছেই নিজের মাতৃভাষা বড়ো সুমধুর। শুধু মধুর নয় আবেগের, গর্বের।
মাতৃভাষায় কথা বলে সুখ, গল্প করে সুখ, পরনিন্দা-পরচর্চায় বড়ো সুখ। যদিও এক শ্রেণী আছে যারা ভাষাদিবসে আলাদা করে বিশেষ যত্নে মাতৃভাষা শেখে ও শেখায়, বাকিদিনে ভুলে যেতে পারলেই বাঁচে।
ভাষা নিয়ে বললে তো হাজার কথা, লক্ষ ব্যাখ্যা, তর্ক-বিতর্ক, তরজা, তর্জমা সবটুকু আর বুঝলাম কবে? শুধু মাতৃভাষার সান্নিধ্যে সুখে বিভোর হয়ে থাকলাম, মনের পাতায় আঁক কাটলাম। শ্রদ্ধায়, স্মরণে বেশ ছিলাম। কিন্তু ওই যে পুরস্কার! তা’ও তো অসুবিধা ছিল না- দৈ তো আর নেপোয় মারে নি, নিজের জিনিস ঘরে উঠেছে। তা বলে যা মুখে আসবে তাই বলে সাফাই!
এমন কি তাঁর জন্মদিনেই উদাহরণে তিনি উঠে এলেন অবলীলায়। হায় বুদ্ধিজীবী সাফাই গাওয়া বাঙালী… এতোটুকুও লজ্জা পেলে না? আপামর বাঙালীর গর্বের জায়গায় অবলীলায় হাত রাখলে! আর কতো? তোমাদের জ্বালায় তো সব জলাঞ্জলি গেছে, সব কেড়ে নিয়েছো সে কবে পুনরুদ্ধার হবে, আদৌ হবে কি না কে জানে! তবুও যে কটা পুরোনো কাঠামো এখনো সচল- তারা ভাবি আমাদের শৈশবের কথকতা, কৈশোরের কিশলয়, যৌবনের চঞ্চল চারুলতা, বার্ধক্যের ব্রতকথা আদৌ অক্ষুন্ন রাখতে পারবো তো?
আশার কথা গুরুদেব বলে গেছেন- “মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়…”
এমন উষ্ণ দিনে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।