Site icon আলাপী মন

গল্প- স্বপ্নের পুরুষ

স্বপ্নের পুরুষ
-শিলাবৃষ্টি

সে ছিল আমার কিশোরী বেলার প্রেম। তাকে একটিবার দেখার জন্য রোজ বিকেলে ব্যালকনীতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। সে কি বুঝতো! না কি অবুঝ ছিল! কে জানে! বয়েসে আমার থেকে অনেকটাই বড় ছিল! তাই প্রেম নিবেদন আর করা হয়নি সেই বয়েসে। আমার স্বপ্নের পুরুষ হয়েই ছিল।
আমি এখন সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ি। কোএডুকেশন কলেজ, সব বন্ধুরা ভালোই প্রেম করতে শুরু করেছে। লিজার মানে আম্রকুঞ্জে ওরা সময় কাটাতে চলে যায়। আমি বুঝতে পারি একজোড়া চোখ আমায় ফলো করে। রাজিব..রাজিব মিত্র। থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। কলেজের জি এস। কারণে অকারণেই কথা বলে। আমার খারাপ লাগেনা। সেদিন লাইব্রেরিতে ঢুকেই দেখি রাজিব বসে আছে একটা বই নিয়ে। আমাকে দেখে একটু সরে বসলো। আমিও অনার্স-এর বইটা পেয়ে কিছু নোট লেখার চেষ্টা করবো, এমন সময় রাজিব বললো “রাধা, আজ আমায় একটু সময় দেবে”
“কখন রাজিবদা?”
“তোমার যখন সময় হবে”
‘আচ্ছা, আমার শেষ ক্লাস তিনটে চল্লিশে। তারপর…”
“ঠিক আছে আমি ওয়েট করবো”
তখনো বুঝতে পারিনি রাজিব ঠিক কেন দেখা করতে বলেছে। জি এস-কে রাগানো একেবারেই ঠিক নয়। তাই রাজি হয়েছি ঠিকই কিন্তু ক্লাসমেটদের কি বলবো ভাবছিলাম। যাইহোক নিজের কাজে মন দিলাম। বিকেলে ছূটির পরে অনেকেই একসাথে বাসষ্টপ অব্দি ফিরি! আজ বলতে হলো আমি লাইব্রেরিতে যাবো, কিছু নোটস তৈরীর জন্য, তোরা এগিয়ে যা। আরতি আর আমার বাড়ি একই দিকে। তাই ও বললো ” চলনা আমি বসছি! একসাথেই ফিরবো। ”
” আরে না না, আমার অনেক দেরি হবে!”
ওরা চলে যাওয়ার পর আমি এদিক ওদিক তাকালাম কিন্তু রাজিব কে দেখতে
পেলাম না। কলেজ এখন ফাঁকাই বলতে গেলে! একপা একপা করে গেটের কাছাকাছি এগোতেই দেখতে পেলাম রাজিব বাইক নিয়ে আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বললো – ” বসো পেছনে”
” কোথায় যাবো? ”
” ভয় নেই রাধা, আমি তোমাকে নিয়ে পালাবো না! ” বলেই হা হা করে হেসে উঠলো। আমিও সে হাসিতে যোগ দিলাম।
ও একটা কফিসপে গিয়ে থামলো –
” চলো একটু কফি খাই! “আমি কিন্তু কিন্তু করছিলাম, তবু যেতেই হলো।
কফি আর স্ন্যাকস অর্ডার করে রাজিব আসল কথার অবতারণা করলো –
” রাধা! তুমি কি এনগেজ?”
আমি একটু অবাক হয়েই তাকালাম রাজিবের দিকে, কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
” বলো না, সত্যি বলবে কিন্তু! ”
“কেন? ”
” তুমি বুঝতে পারছোনা? এ প্রশ্ন কেউ কেন করে? ”
” সেভাবে আমি এনগেজ নই রাজিবদা!”
“তার মানে! ” রাজিব বিস্মিত।
“মানেটা শুনলে তুমি হাসবে। আমি স্কুল লাইফে একজনকে ভীষণ পছন্দ করতাম, রোজ তাকে একবার দেখার জন্য আকুল হতাম। সে কিন্তু কিছুই জানেনা। তবে আমার ধারণা তাকে একদিন আমি খুঁজে পাবোই!” কথাগুলো শুনে রাজিব আবার প্রাণখোলা হাসি হাসলো। ” ওসব কল্পনা বাদ দাও রাধা। আমি তোমাকে লাইক করি এই কথাটা জানানোর জন্যই এখানে এসেছি। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।আশা করবো পজেটিভ উত্তরই পাবো।!”
একটু অস্বস্তিতে পড়লাম। মুখে বললাম
” আমি জানতাম শুভ্রাদির সাথে তোমার….”
” ঠিকই জানতে, তবে রিলেশনটা টেকেনি!”
ব্যাপারটা আমিও শুনেছিলাম। কফি খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। দুজনেই উঠলাম।
” কিছু বললেনা তো?”
” আমাকে কয়েকদিন সময় দাও রাজিবদা”…
” আচ্ছা আচ্ছা, তবে বেশি দেরি করোনা।”

কি করে বলি রাজিবদা তোমাকে আমার সেভাবে পছন্দই নয়। আর তুমি আরেক জনের সাথে এতবছর…. যাক গে। সন্ধ্যায় দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম আজকের সব কথা! আর ভাবছিলাম আমার স্বপ্নের সেই পুরুষের কথা। আনিনা তার নাম, জানিনা তার ধাম! কোথায় হারিয়ে গেল একদিন সেই মুখ! সেই ব্যক্তিত্বময় হাঁটা! আর কি কোনদিন দেখতে পাবোনা তোমায়?
আমার অপেক্ষা কিন্তু শেষ হয়নি! শেষ হয়নি আমার বারান্দার পথ চাওয়া!

দিন দুয়েক পরে ইংলিশ অনার্সের ক্লাসে
এ কে বি বললেন নতুন প্রফেসর জয়েন করেছেন, উনার ক্লাস আমরা আগামীকাল থেকে পাবো। রুটিনটা একটু চেঞ্জ হলো – সেকেন্ড পিরিয়ডে থাকবে নতুন স্যার এস সি মানে সুদীপ চ্যাটার্জীর ক্লাস।
পরেরদিন সেকেন্ড পিরিয়ডে আমরা অপেক্ষা করছি, এ কে বি স্যার পরিচয় করিয়ে দিতে ঢুকলেন যাকে নিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম তাকে দেখে। এতো আমার সেই স্বপ্নের পুরুষ, যাকে দেখার জন্য আমি প্রতিদিন ছটফট করেছি। আজ এভাবে দেখবো সত্যিই আশা করিনি। এ কে বি খুব রসিক মানুষ, বললেন -” এই নাও সুদীপকে। তোমাদের নতুন লেকচারার। ড্রামার ক্লাস নেবেন আমাদের কলেজেই ওর প্রথম পোস্টিং। ব্যাচেলার, হ্যান্ডসাম
ইয়াং ম্যান।তোমাদের ভালো লাগবে আশা করি। আমি এবার যাই, তোমরা পরিচয় করে নাও! ”
স্বপ্নের ঘোরে যেন সময় কেটে গেল!
ক্লাস শেষ হোলো। আমি সুযোগের অপেক্ষায় থকবো, আমি বলবো আমার মনের সব জমে থাকা কথা! আনন্দে দুচোখ জলে ভরে গেল। আমার ভালোবাসায় কোনো ফাঁকি নেই তা আজ নিজেও বুঝলাম। এভাবে ঈশ্বর ফিরিয়ে দিলেন আমার স্বপ্নকে বাস্তবে। যেভাবেই হোক আমি ওকে পাবোই নিজের করে এ বিশ্বাস আমার আরো দৃঢ় হলো।

রাজীবকে ইনবক্সে জানালাম – ” আমি ফিরে পেয়েছি আবার আমার স্বপ্নের পুরুষকে, সেই যাকে আমি রোজ একবার দেখার জন্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম!”

Exit mobile version