অণু গল্প

অণুগল্প- উপহার

উপহার
অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ)

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ দু’হাতে দু’টো ঝোলা ব্যাগ নিয়ে শাড়ির দোকানে অপেক্ষায়। পকেটে হাত দিয়ে দেখেন সামান্য কিছু টাকা পড়ে আছে। কিছুতেই একটা শাড়ি কেনা যাবে না।
মনোরমাকে প্রতি বছর এই দিনে একটা করে শাড়ি দেন। আজ হাতটা একেবারে খালি।
দোকানদার বৃদ্ধের হাতে একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বলল- গত দশ বছর ধরে আপনাকে দেখছি, এই দিনে শাড়ি কিনতে। শাড়িটি নিয়ে যান। সময় মতো শোধ দিয়ে দেবেন।
কিন্তু উনি বাকিতে কিছুতেই নেবেন না। যদি না শোধ দিতে পারেন। তাই।
নিজে হাতে যখন সংসার চালাতেন, হিসাব করেই সব কিছু সামলে নিতেন। এখন পুরো সংসারটা ছেলে বৌমার।
তাছাড়া বয়স হয়েছে আর নিজের কাছে কিছুই থাকে না।
টাকা চাইতে গেলেই অনেক অজুহাত আর একগুচ্ছ প্রশ্ন। কী হবে এই বয়সে টাকা? যা খেতে চাইবেন বলুন এনে দেব।
বাজার করা, রেশন তোলা সব কাজ বৃদ্ধকে করতে হয়। ছেলে থাকে বিদেশে। তাই প্রথমে ভালোবেসে নিজেই বলেছিলেন, সব কাজ করব। কিন্তু এখন আর পেরে উঠছেন না। তবু না বলার উপায় নেই।

বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ছেলের বউ। বাজার নিয়ে বৃদ্ধকে ঢুকতে দেখে বৌমা গর্জে উঠলো। সকাল থেকে অপেক্ষা করে আছি, বাজার আনলে তবে ভাত চাপাবো। আর আপনি বাজারে আড্ডা দিচ্ছেন। এত দেরী হলো কেন শুনি?
বৃদ্ধ সবে কিছু বলতে যাবে, সামনে এসে মুখে হাত চাপা দিল বৃদ্ধের স্ত্রী মনোরমা।
অনেক বেলা হলো, এসো বাড়ির ভেতর এসো। এখনো টিফিন করোনি। পিত্তি পড়ে গেলে শরীর খারাপ করবে।
বৌমা গজগজ করতে করতে বাজার নিয়ে চলে গেল।
বৃদ্ধ মনোরমার হাত ধরে কেঁদে ফেললেন। আজ আর তোমাকে কিছুই দিতে পারলাম না গিন্নী। মনে আছে গিন্নী, আমাদের বড়খোকা আজকের দিনে নিজে হাতে… মনোরমা আর কিছু মনে রাখতে চায় না
থামিয়ে দিল স্বামীকে। থাক না। এসব কথা আর শুনতে চাই না।
মনোরমা চোখ মুছতে মুছতে বলল, বুড়ি বয়সে এসে আর কিচ্ছু লাগবে না গো। এসো খাবে এসো।
সন্ধ্যায় একজন ডেলিভারি বয় এসে একটা বাক্স দিয়ে গেল বৃদ্ধের হাতে।
বাক্সটা খুলতেই দেখতে পেল বড়ো একটা কেক, মায়ের পছন্দের আলতা সিঁদূর আর লাল গরদের শাড়ি।
একটা সুন্দর খামে লেখা আছে, “মা” আমি কিছু ভুলিনি এখনো। শুভ জন্মদিন
মা। তোমার জন্মদিনের উপহার।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page