গল্প

গল্প- চোখ বুজে…

 

চোখ বুজে…

– অমল দাস

 

 

-রণ বউ এসেছে…  রণ’রে বউ…  

টুনি ডাকলো। রণজয় শুনেও শুনলো না। বেশ কয়েক বছর আগে বাড়িতে একটি ছোট্ট টিয়া নিয়ে আসে রিক্তা, রণজয়ের বউ।  নাম রাখে টুনি -রিক্তার সর্বক্ষনের সঙ্গী। প্রথম প্রথম রিক্তা কথা শেখাতো, এখন পাখিটা খুব কথা বলে। যা শোনে তাও, নিজের থেকেও বাদ দেয়না। টুনি ওদের ছোট্ট সংসারের সদস্য।

টুনি আবার ডাকে –ওরে রণ দ্যাখ বউ …

রণজয় তাও দেখলো না। সে একটি আধখানা চাঁদের মতো চেয়ারে বসে, পা’দুটিকে তুলে দিয়েছে সামনের  বারান্দার কার্নিশে। শরীরের ভঙ্গি ঠিক ছাউনি খোলা ডিঙি নৌকার মতো। চেয়ারের ঠিক পিছনেই টেবিল। হাতে খবরের কাগজ। খবরে গভীর ভাবে ডুব দিয়েছে। ভাবখানা -পারলে খবর ডুব দিয়ে তুলে আনে। রিক্তার অভিমান এমন মনঃসংযোগে রণজয় হয়তো তাকে কখনো দেখেইনি।

রিক্তা চা হাতে পিছনেই দাঁড়িয়ে। রণ দেখল না। রিক্তা ধৈর্য হারিয়ে বলল – এখানেই দেবো চা’টা..

রণ পিছনে না তাকিয়েই বলল – সক্কাল সক্কাল স্বামীকে চাটা। এ কি দজ্জাল বউ! তা..  অপরাধ কি হল দেবী ? স্বামী না.. স্ত্রীর পরম গুরু!

রিক্তা বলল – গুরু নয়.. গুরু নয়.. গরু, মাথায় শুধুই ভুষো। এ সুর রণজয়ের চেনা। প্রায়ই শুনতে হয়! যেমন কর্ম,  ফল তো আর আলাদা হতে পারেনা! গতে বাঁধা। রণজয় কথা না বাড়িয়ে পিছন না ফিরেই বলল- ও চা এনেছো টেবিলে রাখো।

রিক্তা চা রেখে নিজের চায়ের কাপটা নিয়ে পাশের চেয়ারেই বসলো। রণ কার্নিশ থেকে পা নামিয়ে ভিজে বিড়ালের মতো । টেবিলের দিকে ঘুরে খবরের কাগজটি মুড়ে রাখতে গিয়েই যত বিপত্তি।  চায়ের কাপ সটান মেঝেতে –ঝন্‌ ঝন্‌ ঝন্‌ আওয়াজ। কাচের টুকরো মেঝেতে গড়িয়ে গেলো। শুধু কাচ ভাঙার মতো একটা মুখের সহস্র ভাগ দেখা গেলো না।

রণ কাপের দিকে না দেখে রিক্তার দিকে ক্যাবলার মতো চেয়ে রইল।  এগুলো রিক্তার খুব যত্নের জিনিস। এখন দেবী কি রূপ ধরে!

টুনি বলে উঠলো- রণ করলি তো কেলো..

রিক্তার চক্ষু রক্তবর্ণ। নাকের পাটা ফুলছে… কমছে। একেই ছুটির দিন, সকাল থেকে খবরের কাগজে মুখগুজে – কথা নেই। তার উপর সাধের কাপ টুকরো টুকরো।

চিৎকার করে উঠলো রিক্তা – দেখেছ.. দেখেছ..! দিলে তো সর্বনাশ করে। দামী কাপসেট’টার তিনটেই শেষ করলে তুমি! হাড়ে লক্ষ্মী নেই গো..

রণজয় চেয়ার নিচু হলো। কাপের টুকরো তোলার ভান করে সোজা রিক্তার পায়ে হাত। রিক্তা চমকে গেলেও পরক্ষনেই দু’পা সরে গিয়ে, কপট গম্ভীর্যে বলে উঠলো -থাক.. থাক..  পায়ে পড়ে মাফ চাইতে হবে না!  ন্যাকামি বন্ধ করো।

-দেবী এ ন্যাকামি নয়, প্রান ভয়। গরম চা তোমার পায়ে পড়লো কিনা সেটাই দেখছি।

-পড়লে পড়ুক! তাতে তোমার কি যায় আসে…? 

-বাঃ রে.. বউটা তো আমার। চা পড়ে এমন সুশ্রী বউয়ের শরীরে খুঁত ধরে গেলে নিজেকে মাফ করতে পারবো না তো ।

-আদিখ্যেতা। সকাল সকাল ফাজলামির আর জায়গা পেলে না?   

– আদিখ্যেতা নয় গো! ও আমার বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়া ভালবাসা।

-শোন ওই সব ভালবাসা বুকের খাঁচাতেই রেখে দাও। ভালবাসার খাঁচা আর খোকার প্যান্টের কাছা দুই সমান। ঢিল দিলেই খুলে পড়ে মাটিতে।

– সেকি! এসব কি কথা সক্কাল সক্কাল ! (রণজয়ের ঠোঁটে মৃদুহাসি)

-গ্যাট হয়ে বসে না থেকে ঘর থেকে বিদায় হও। একসেট নতুন কাপ নিয়ে এসো।

– সে নয় যাচ্ছি। তবে খাঁচার ভালবাসার একটা ব্যবস্থা হবে না?  

রিক্তা আন্দাজ করলো। আদুরে স্বরে বলল- খাঁচা সামলাবে না কাছা?  

দুজনেই কাছাকাছি এলো। আবেশে চোখ বন্ধ।

টুনিও চোখ বন্ধ করে বললো- বাঃ রে লজ্জা নেই…

 

——–সমাপ্ত————-

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page