ভালোবাসার জন্য
– সুনির্মল বসু
অনেক কান্নার মেঘগুলো একদিন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, এক একদিন পাহাড়িয়া বাংলো থেকে দূর অরণ্য পথে যেতে যেতে ঝাউবনে কোনো বসন্ত দিনের শেষে অনুরাধার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়,
কতদিন ওর সঙ্গে কথা হয়নি, কতদিন,
পাহাড়ের খাঁজে চাঁদ দেখা দিলে, কজন আর চাঁদ মুখের দেখা পায়, ঘুম ঘুম পাহাড়ের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে তখনও কি অতীত ভালোবাসা কথা বলে,
পুরনো দীঘির পাড়, দোলনচাঁপার বন, অরণ্য পাখির গান আজও কি পুরনো বসন্ত দিন ফেরায়,
সেদিনও তো বিলের জলে শাপলা শালুক ফুটে ছিল, মৌ বনে মৌ জমেছিল,
আলপথ দিয়ে অনুরাধা হেঁটে গেছে কতদিন,
শিমূল বন, প্রাচীন কদম গাছ সেই গোপন ভালবাসার কথা জানতো,
কত পথ ,পথ হারিয়েছে কতদিন,
ভগ্ন প্রাসাদের নিচে দাঁড়িয়ে কত কথা ছিল সেদিন,
ঝরা বকুলের সুগন্ধ নিয়ে যেদিন গেছে,
সেই পথে আজ কাল আর হাঁটে না অনুরাধা,
অথচ, আমি অঙ্ক করে ওকে ভালোবাসি নি,
কতদিন কেটে গেল, কত নির্ঘুম রাত্রি পার,
অনুরাধা আসেনি, অনুরাধারা কথা দেয়, কথা রাখার দায় নেয় না,
সেই থেকে আমি সমুদ্র নাবিক হয়ে গেলাম,
জলজ জীবন, একাকিত্ব, অ্যালবার্টস পাখির গান,
উড়ুক্কু মাছ, শুশুক, দেখে দিন কেটেছে আমার,
পুরনো শহরে ফিরে পাহাড় দেখতে গিয়ে কতদিন পর ওকে দেখলাম,
এতটা নির্বিকার অনুরাধা, ভাবতে পারিনা,
একটা মিথ্যে ভালোবাসার পিছনে ছুটে ছুটে ক্লান্ত আমি,
বুঝে নিলাম, ভালোবাসা দেবার মতো, ভালোবাসা গ্রহণ করবার ক্ষমতাও সকলের থাকে না,
ফিনল্যান্ডে জাহাজে যাবার সময় ,লাইট হাউসের নিচে দাঁড়িয়ে, এলিনা আমাকে এই কথা বলেছিল,
পাহাড়ে বৃষ্টি দেখবো ভেবে এসেছিলাম,
রাত গভীরে মনে হল, মরুভূমিতে একলা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি,
নিঃসঙ্গ চাঁদ, রাতের তারারা, রাতপাখি আর উদাস পাইন বন, সেগুন মঞ্জরী আমার কান্নার সাক্ষী হয়ে রইল, রাতের কান্না কি শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রতীক্ষায় থেকে যাবে।