গল্প- ভবিতব্য

ভবিতব্য
-শচীদুলাল পাল

 

 

বিভাস তার জীবনকাহিনী বলছে তার এক অতি ঘনিষ্ঠের সামনে —–
আমার বয়স তখন ২৮,ম্যাথেমেটিক্সে এম.এসসি পাশ করে কোনো চাকরি বাকরি পায়নি। বেকার। দু একটা টিউশানি করে কতটুকু বা আয় হয়?হাত খরচাটাও আসেনা। প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দিচ্ছি চাকরি পাবার আশায়।
এক খ্যাতনামা জ্যোতিষ যিনি আমার কুষ্টি তৈরি করেছিলেন তার কাছে একদিন গেলে কুষ্টি দেখে ভবিষ্যৎ বাণী লিখে দিলেন, প্রবল ধনযোগ আছে।নবমাধিপতি স্থিত অংশ অধিপতি, ভাগ্যস্থানে উচ্চস্থ পঞ্চমাধিপতির সহ যুক্ত থাকায় লক্ষীযোগ হয়েছে।ফলে কীর্তিবন্ত, রাজসদৃশ ধনবান হবে।উত্তমা স্ত্রীলাভ হবে।
আকস্মিক অর্থলাভ যোগ আছে।
অষ্টমপতি অষ্টমস্থানে, মৃতব্যাক্তির সম্পত্তি প্রাপ্তি যোগ আছে। বর্তমান সময় কষ্ট কর। শনি- চন্দ্রের দশা-অন্তর দশা ও শনির সাড়ে সাতি চলছে।মাস দুয়েক পরেই দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরের সাড়ে সাতি শেষ হবে।বর্তমানে প্রবল দারিদ্র্য যোগ।
স্ত্রী স্থান খুব শুভ। খুব সুন্দরী স্ত্রী লাভ হবে। স্ত্রী বিনয়ী,নম্র,সর্বসুলক্ষনযুক্তা, সুচরিত্রা,স্বামীপ্রিয়া হবে।
আমি বিয়েই করবো না মনস্থ করেছি স্ত্রী লাভ কি করে হবে?
ভাতৃস্থান অতি অশুভ। সন্তান স্থানে দেখা যাচ্ছে এক কন্যা হবে।
অনেক শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। কর্মস্থান মধ্যম।চাকুরি লাভ হবে।
জ্যোতিষের ভবিষ্যৎ বাণী বিশ্বাসই হলো না।

একান্নবর্তী পরিবারে দুই দাদা দুই বৌদি তাদের একটি করে সন্তান। ঘরে নিত্য অশান্তি।একে অপরের সাথে শুধু উচ্চগ্রামে কলহ কচকচি । প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে গেলে অনেক স্টাডি করতে হবে।কিন্তু দিন দিন বাড়ির বাতাবরণ ঝগড়াঝাঁটিতে এমন পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে যে কান ঝালাপালা হয়ে যায়।মা বাবা ঠাকুরমা অনেকদিন আগেই পরলোকে। শুধু ঠাকুরদাদা আছেন। বৌদিরা শুধু দাদা- শ্বশুরের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে আছে। বাড়ীটা ছেড়ে যেতে পারছেনা। যদি অন্য কাউকে লিখে দেয়। বুড়োটা যে কবে মরবে?
বেকার বলে একবৌদি একদিন বলেই দিল
— বিধবা মেয়ের মতো ঘরে বসে বসে অন্নধংস করছো।
আর এক বউদি বললো
— সংসারে টাকা দাও নাহলে রাস্তা দেখো। আমরা পারবোনা এভাবে তোমার পেট চালাতে।
ধুমসো যোয়ান মরদ! কুলি মজুরি করেও তো দুটাকা আয় করতে পারো?
ভাইপো ভাইঝিরাও অবজ্ঞা করে।অবহেলা করে সবাই।আমি যেন এক গলগ্রহ।ভবিষ্যৎ চিন্তায় একেই চিন্তাগ্রস্ত বিমর্ষ থাকি। তার উপর নানা সব কথার বাণে জর্জরিত।

একদিন আমি আশার এক চিলতে আলো দেখতে পেলাম।
একদিন ” আমার শহর ” নামে এক পাব্লিক ফেসবুক গ্রুপের বিজ্ঞাপনে দেখলাম “একটা টিউশন টিচার চাই।”
উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। নীচে ফোন নং। কিছুদিন আগে এইরকম বিজ্ঞাপন খবরের কাগজে ও OLx এ-ও দেখেছি। একদিন ফোন করলাম।ফোন নাম্বারটি একই। অপরপ্রান্ত থেকে বলল
— বলুন কি বলতে চান। আমি তখন বিজ্ঞাপনের কথা সবিস্তারে বললাম।
— আপনি সন্ধ্যা বেলায় বাবুর সাথে কথা বলবেন। আমি তার বাড়ির খাস চাকর নিবারণ।
এখন আপনি আপনার সম্বন্ধে কিছু বলুন। তাতে যদি বাবুর পচ্ছন্দ হয় তবেই আপনার সাথে কথা বলবেন। এইটি আপনার নং?
— হ্যাঁ।আমি সবিস্তারে আমার বায়োডাটা বললাম।
— আপনি অনেক শিক্ষিত। বাবু আপনাকে ফোন করবে।
সন্ধ্যাবেলা ফোন এলো। ফোনে দু একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে আমি উত্তর দিলাম।
বাবু বললেন
— তুমি কাল সন্ধ্যা বেলা তোমার কাগজ পত্র, বায়োডাটা ইত্যাদি নিয়ে চলে এসো।
পাশের শহরে আমি ঠিকানা খুঁজে পৌঁছে গেলাম।বিশাল বাড়ি। পুরানো আমলের অনেকটা জমিদার বাড়ির মতো। সংস্কার করে ঝাঁ তকতকে করা হয়েছে।অনেকটা জমি। জমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালিতে পূর্ণ।
চুল রুক্ষশুষ্ক।খোচাখোচা দাড়ি।অনেকবার কাচা হয়েছে এমন এক রঙচটা শার্ট-প্যান্ট পরে দরজায় বেল বাজাতে সেই খাস চাকর নিবারণ দরজা খুলে বললো —
–আপনি বিভাস চৌধুরী? বাবু আপনাকে গতকাল আসতে বলেছিলেন?
— হ্যাঁ। আমিই বিভাস চৌধুরী।
আমাকে সোফায় বসতে বলে ভিতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পরে বাবু এলেন।
সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে জরিপ করলেন, কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখে বললেন।
–আমার নাম দর্পনারায়ণ সিংহ। একডাকে এ অঞ্চলের সবাই আমায় চেনে।
তুমি আমার মেয়েকে পড়াবে।সে তার নিজের সময় অনুযায়ী সময় দেবে।
আমি বললাম কিন্তু স্যার আমার বাড়ি অনেক দূরে।
— সে তোমায় ভাবতে হবেনা। তুমি থাকবে আমার বাড়ির প্রাচীরের বাইরে আমারই জমিতে একটা ঘরে।তুমি উপযুক্ত বেতন পাবে।
তোমার বাক্স পেঁটরা নিয়ে কাল থেকে চলে এসো।ওখানে তোমাকে নিজেই রান্না বান্না করে খেতে হবে।
আমি রাজি হয়ে গেলাম।

পরদিনই এক অজানা ভবিষ্যতের উদ্যেশ্যে পাড়ি দিলাম।
একটা কিটস ব্যাগে জামাকাপড় আর বইপত্র নিয়ে হাজির হতেই নিবারণ আমায় প্রাচীর সংলগ্ন সেই ঘরটিতে নিয়ে গেলো। টালির ছাউনি দেওয়া ঘরে একটায় রুম। ভাঙা নড়বড়ে তক্তাপোশ। একটা নড়বড়ে টেবিল ও চেয়ার। রান্না বান্না করার সরঞ্জাম গ্যাসস্টোভ চাল ডাল নিবারণ আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছে। ঘরটাতে একটা জানালা। জানালা খুলতেই পোকামাকড় টিকটিকি গিরগিটি হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকতে শুরু করলো। ল্যাজ তুলে একটা কাঁকড়া বিছেও ঢুকে পড়েছে। নিবারণ সেটাকে বেশ কায়দা করে মারলো।টালি ভাঙা পরিত্যক্ত ঘরটিতে জলও পড়ে। মেঝেতে জলের দাগ দেখে বুঝলাম।দূরে একটা কুঁয়া, তারপাশে পায়খানা। আলো নেই। টর্চের আলোয় ভরসা।ঘর দেখিয়ে নিবারণ চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে আবার এসে বলল
—বিভাসবাবু চলুন, আপনার ছাত্রী আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
আমি গিয়ে বসে আছি। ছাত্রীর দেখা নেই। নিবারন এসে চা ও জলখাবার দিয়ে গেলো। অনেকগুলো আইটেম। ক্ষুধার্ত আমি একে একে সব খেয়ে ফেললাম। রাতে আর না খেলেও চলবে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ছাত্রীটি এলো। আধুনিকা বলতে যা বোঝায় সেই রকম পোশাক আশাক।মেয়েটি এসে বললো
— আমার নাম প্রিয়ংকা। পড়াশোনায় আমার মন নেই।ওগুলো আমার মাথায় ঢুকে না।আপনাকে পড়াতে হবেনা। আমার সব সাবজেক্টের হোমওয়ার্ক আপনি এই খাতায় লিখে দেবেন। আমি কপি করে স্কুলে জমা করব।
— সামনে তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষা। তুমি কিভাবে পাশ করবে?তোমার ভবিষ্যৎ?
— সে আপনাকে ভাবতে হবেনা। আমার বাবার প্রচুর টাকা। বিশাল লম্বা হাত। আপনি চুপচাপ নিজের কাজ করবেন। আমি মোবাইলে চ্যাট করবো। যদি রাজি থাকেন তাহলে ভালো, নাহলে উল্টো আপনাকে ফাঁসিয়ে দেব। এর আগে মিথ্যে বদনাম দিয়ে অনেক মাষ্টারকে আমি তেড়েছি।
আমি অনিচ্ছাকৃত রাজি হলাম।
রাত এগারোটা নাগাদ আমার জন্য বরাদ্দ সেই ভুতুড়ে ঘরে ফিরে এলাম। গা ছমছম পরিবেশ।বহুকাল এই ঘরে কেউ বাস করেনি।বাইরে নিশাচর পাখির কর্কশ আওয়াজ।আমি মনকে শক্ত করে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরদোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে, যা ছিলো তাই রান্না বান্না করে পড়াশোনায় মন দিলাম। প্রতিযোগিতা মূলক পরিক্ষায় বসার পড়াশোনার জন্য এই নিরিবিলি ঘরটি আমার কাছে খুব উপযুক্ত।
আসার সময় চার্জেবল টেবিল ল্যাম্পটি নিয়ে এসেছিলাম।

রাতে মেয়েটিকে টিউশন পড়িয়ে ফিরে এলাম ঘরে। দিনের রান্না করা খাবার গুলো খেয়ে পড়তে বসলাম। পড়তে পড়তে রাত হলো। নিশুতি রাত।হঠাৎ লোড সেডিং।আলো চলে গেলো। চাপ চাপ অন্ধকার। বাইরে থেকে কুকুরের আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসছে। নিশাচর পাখির কর্কশ আওয়াজ। টেবিল ল্যাম্পে চার্জ দেওয়া হয়নি। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে তক্তাপোশে শুয়ে পড়লাম।চোখদুটো লেগে এসেছে। একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব। হঠাৎ একটা ফিসফিস মেয়েলি কন্ঠস্বর।আমি কান খাড়া করে শুনবার চেষ্টা করলাম। মেয়েটি কাঁদছে। হঠাৎ অস্পষ্ট দেখলাম আমার সামনে সাদা শাড়ি পরা ঘোমটা মাথায় একটা মেয়ে। আমি চীৎকার করে বললাম কে ওখানে?
হাতড়ে টর্চের আলো ফেলতেই মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে গেলো।আমি অনুভব করলাম এই ঘরে প্রেত আছে। আমার নার্ভাস সিস্টেম খুব স্ট্রং। ভূত প্রেতে আমি বিশ্বাস করিনা। তাই সেরাতের মতো ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে উঠে দিনের বেলা ভাবছি গতরাতের কথা। ভ্রম ভেবে উড়িয়ে দিলাম।
পরের দিন যথারীতি কাজকর্ম করে, টিউশনি পড়িয়ে, ঘরে এসে কাজকর্ম করে খাওয়া দাওয়া সেরে পড়তে বসলাম।
টেবিল ল্যাম্পের আলোতে পড়ছি।হঠাৎ শুনলাম খিলখিল হাসির শব্দ।আকস্মিক দেখলাম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদা শাড়ি পরা এক বৃদ্ধা।
সে বললো
—আলো জ্বালবে না।
আলো আমার সহ্য হয়না। কি এতো পড়ছো?
আমার খুব কৌতুহল হলো বললাম
–বেশ আলো জ্বালবো না।কিন্তু আপনি কে? আমার কাছেই কেন বা আসেন?
সে তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো
— আমার দীনদরিদ্র নাতির-ছেলের এক কন্যা আছে। কন্যাটি সুন্দরী। পাড়ার বখাটে ছেলেরা তাকে সম্ভোগ করতে চায়। শিয়াল কুকুরের মতো তাকে ছিঁড়ে খেতে চায়।
শিয়াল কুকুরের হাত থেকে তুমি
মেয়েটিকে বাঁচাও। তুমি ভালো ছেলে।তোমার কাছে একটা অনুরোধ তুমি মেয়েটিকে বাঁচাও।
— আমি হো হো হেসে বললাম, আমার দ্বারা সেটি অসম্ভব। কারণ আমি বিয়েই করবো না। আমার নিজেরই চালচুলো নেই।বিয়ে করে খাওয়াবো কি? তাছাড়া আপনি বলছেন আপনার নাতির ছেলের কন্যা।তাহলে আপনার বয়স কত? একশ বছরের বেশি!
— আমার বয়সের গাছপাথর নেই।ওই মেয়েটির সৎপাত্রে বিয়ে দিয়ে আমি মুক্তি পেতে চায়। আমার অতৃপ্ত আত্মা শান্তিলাভ করবে।
— এবার বুঝেছি আপনার মতলব। আপনি আমার কাছে আসবেন না। এই বলে টর্চের আলো ফেলতেই বৃদ্ধা অদৃশ্য হয়ে গেলো।

এরপর দিন কয়েক তার দেখা নেই।
শুধু ভাবি বৃদ্ধাটি অশরীরী হলেও তার সাথে কথা বলতে ও শুনতে বেশ ভালো লাগে।একাকি এই ঘরে একা একা থাকতে থাকতে কেমন যেন মনমরা লাগে।অশরীরী হলেও একজন সাথী তো ছিল।
দিন দশেক পরে। বাইরে তুমুল ঝড় জল বৃষ্টি।শুনশান রাতের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে এক সাঁপে ধরা ব্যাঙের আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছে।আমি ভয়ে বিবর্ণ। প্রবল বেগে হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে হাওয়ার দাপটে পুরানো জরাজীর্ণ দরজাটা ভেঙে যাবে।অন্ধকার। লোডশেডিং। সামনে দেখি সেই বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে আছে। আজ তাকে বললাম বসুন।তিনি আমার তক্তাপোশের পাশেই বসলেন।
এ কদিন আসেননি কেন? আপনার অব্যক্ত কথা শুনতে ভালো লাগে। আমি সাহিত্যচর্চা করি। একটু আধটু লিখি বিভিন্ন পত্রিকাতে।
আপনার কাহিনি লিখবো।
বৃদ্ধার খিলখিল হাসির শব্দে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ হলো। ।ও সব ছাইপাঁশ লিখে কিচ্ছু হবেনা। ধান্দাবাজ।
— বেশ বলুন। আমি শুনবো।
বৃদ্ধা তখন তার কাহিনি বলতে শুরু করলো
—-আমার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া আমার স্বামীর নাম লক্ষীপতি।আমাদের ছিল লোহা লক্করের ব্যবসা।মনোপলি ব্যবসা।এই তল্লাটে এ ধরনের ব্যবসা করে আমাদের চেয়ে কমদামে কেউ দিতে পারতো না। তাই রমরমিয়ে চলতো।আমাদের ঘরে রাধামাধবের নিত্য পূজা সেবা হতো।হরি কীর্তন হতো। গীতা ভাগবত পাঠ হতো। খুব ধার্মিক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আমার স্বামী।ছেলের নাম রেখেছিলেন মদনমোহন। মদনমোহন খুব বিলাসী ছিল।ঘরে বাঈজী নাচ করাতো। মদ খেয়ে মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি করতো।আমার স্বামীর এসব অনাচার একেবারেই সহ্য করতে পারতোনা।একদিন ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে হার্ট এটাকে মৃত্যু হলো। বাবার মৃত্যুর পর ছেলে মদনমোহন তার বিলাসিতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল।কর্মচারীরা চুরি করতে লাগলো।
ব্যবসা পড়তির দিকে। কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমার পুত্রের এক পুত্র হলো অর্থাৎ আমার নাতি, নাম রাখলাম মুরারিমোহন।সেতো বড়ো হয়ে আরও বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিল।বেশ্যাপল্লীতে রাত কাটাতো। রেস খেলতো। জুয়া খেলতে গিয়ে
সর্বস্বান্ত হলো। ব্যবসা লাটে উঠলো। জমা টাকায় হাত পড়লো। ব্যবসা আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। দেনার দায়ে সব একে একে বিক্রি হয়ে গেলো। একদিন সিঁদুকের চাবি চাইলো নাতি মুরারিমোহন।আমি চাবি দিতে রাজি না হলে সে আমাকে মারধোর শুরু করলো। আমি এক গভীর রাতে সিঁন্দুক থেকে একশোটা মোহর একটা ঘটিতে পুরে ভালো করে মুখ বন্ধ করে বাড়ির কোনায় অশ্বত্থ গাছটির নীচে পুঁতে দিয়ে এলাম। পরবর্তী বংশধরেরা ভোগ করবে এই ছিল মনস্কামনা।

এরপর নাতি মুরারিমোহনের এক পুত্র হলো। নাম তার পুরঞ্জন।
তার জন্মের পর ঘরে ডাকাতি হলো।যা কিছু অবশিষ্ট ছিল সেগুলো সব নিয়েও তারা সন্তুষ্ট না হয়ে আমার কাছে সিঁন্দুকের চাবি চাইলে আমি দিয়েও দিলাম। দেখলো সিন্দুক ফাঁকা।তখন তারা আমার নাতিকে জোর জবরদস্তি করতে গেলে আমি প্রতিবাদ করলাম। আমার নাতিকে গুলি করতে গেলে আমি বুক চিতিয়ে রক্ষা করতে গেলে গুলিটা আমার বুকে লাগলো। সাথে সাথেই আমার মৃত্যু হলো।
অভাব অনটনের সংসারে নানান রোগভোগে বিনা চিকিৎসায় একে একে পরিবারের সবাই পরলোকে চলে গেলো। পারিবারিক দেনা শোধ করতে পুরঞ্জন বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হলো। এক চিটিংবাজ এসে পুরঞ্জনকে বললো
— এই দেখো তোমার বাবা আমার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলো। সুদে আসলে বিশাল টাকা। এইটাকা তুমি দিতে পারবেনা জানি তবে তুমি যদি জমি জমা সমেত পুরো বাড়িটা বিক্রি করে দাও আমি তোমার পিতৃপুরুষের ঋণ মকুব করে কিছু টাকাও তোমাকে দেব। অগত্যা পুরঞ্জন জমি বাড়ি সব বেচে দিয়ে নামমাত্র কয়েকটি টাকা ও একমাত্র কন্যা মনোরমাকে নিয়ে বস্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতে লাগলো।
পুরঞ্জন নানান জটিল রোগে আক্রান্ত। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল সব প্রায় শেষ। মেয়ে মনোরমা ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে বিবাহ যোগ্যা। কিন্তু কি করে বিয়ে দেবে। মনোরমা বলে, “তার বিয়ে হয়ে গেলে বাবাকে কে দেখবে। “
এতক্ষন বৃদ্ধা প্রেত কথা বলেই যাচ্ছিলো। আমি চুপচাপ শুনছিলাম। বৃদ্ধা একটু কথা বলা বন্ধ করলে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
পুরঞ্জন তার মেয়েকে নিয়ে কোথায় থাকে?
— এই শহরের দক্ষিনে এক বস্তিতে থাকে।
— আর যে বাড়িতে আপনি ও আপনার বংশধরেরা থাকতো সেটি কোথায়?
— যে বাড়িতে আপনি টিউশন পড়ান সেই বাড়িটায় আমাদের বাড়ি ছিলো। চিটিংবাজ দর্পনারায়ণ সিংহ আমার প্রপৌত্রকে মিথ্যে দেনার দায়ে জাল নথি দেখিয়ে বাড়িটা কিনে নিয়েছে নামমাত্র কয়েকটা টাকা দিয়ে।
— মোহরের ঘটিটা কোথায় পুঁতে রেখেছেন?
— পূর্বে যেটা আমাদের বাড়ি ছিল এখন দর্পনারায়ণ সিংহের বাড়ি, সেখানে দক্ষিণ দিকে প্রাচীরের গায়ে যে অশ্বত্থ গাছ আছে তার তলায়। আমি এখনো ওই গাছেই থাকি। যতদিন ওই মোহরগুলো পুরঞ্জনের হাতে পৌঁছে দিতে পারছি এবং মনোরমা সৎপাত্রস্থ হচ্ছে ততদিন আমার মুক্তি নাই।
আমার অনুরোধ তুমি বাবা ও-ই মোহরের ঘটিটা উদ্ধার করে পুরঞ্জনের হাতে তুলে দাও।
— ওরে বাবা! আমি পারবো না। ওই ভুতুড়ে জায়গায় আমি যেতে পারবো না।তাছাড়া দর্পনারায়ণ বা তাদের বাড়ির কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে আমাকে মেরে দেবে।
— তোমার কোনো ভয় নেই। রাত্রের বেলা সবাই যখন ঘুমাবে তখন যাবে।
— এতবড় দুঃসাহসিক কাজ করে আমার কি লাভ হবে?
— তোমাকে সাতটি মোহর দেওয়া হবে? বলে বৃদ্ধা প্রেত অদৃশ্য হয়ে গেলো।
আমি সারারাত ভাবলাম ৭ টি মোহরের অনেক দাম। আমি বেকার। টিউশানি করে খাই।তাও অনিশ্চিত। ছাত্রীটির মর্জির উপর নির্ভর করছে।
বাড়িতেও কেউ ভালোবাসেনা। আমার জীবনের কোনো দাম নেই।
এই দুঃসাহসিক কাজ করে এক কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার কিছু উপকার করলে ঈশ্বর সদয় হবে। তাঁর কৃপায় একটা চাকরি পেতে পারি। কিন্তু কয়দিন থেকে বৃদ্ধা প্রেতটি আর আসেনা।অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করি। সবটাই ভ্রম ভেবে ভাবি, আমি বোধহয় হ্যালুশিনেশনের শিকার।
বৃদ্ধার আসার আশা ছেড়ে আমি পড়াশোনায় মন দিয়েছি। রাত জেগে পড়ি।
একরাত শুতে দেরি হলো। অন্ধকার ঘর। হঠাৎ ফিসফিস মেয়েলি শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। দেখি বৃদ্ধা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বলছে,
— চলো শিগগির। আজ উপযুক্ত অমাবস্যার রাত।দর্পনারায়ণ মদ খেয়ে বেহুঁশ। ওর স্ত্রী বাত বেদনায় যন্ত্রণা কাতর।কড়া ডোজের ঘুমের অষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। নিবারন শ্মশান কালির পুজাতে সারারাত ওখানে থাকবে।প্রিয়ংকা মেয়েটি একটা ছেলের সাথে আবদ্ধ ঘরে কুক্রিয়ারত হয়ে রাত কাটাবে।
আমি ধড়ফড় করে উঠে পড়লাম। একটা কালো রঙের জামা প্যান্ট পরে প্রেতের পিছনে পিছনে অনুসরণ করলাম। প্রাচীরের সামনে থমকে দাঁড়ালাম। বললাম
–ভয় করছে।
প্রেতটি বললো
— কোনো ভয় নেই। আমি তোমার সাথেই আছি। পুরো ঘটনাটি তদারকি করবো।
প্রাচীরের উপর উঠে একলাফ দিলাম।দেখলাম এক বিষধর কেলে খরিস ফনা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
ভয়ে আমার শরীর হিম হয়ে গেলো।প্রেতটি বললো
— ওটি আমার পোষা সাপ। ও তোমাকে কিচ্ছু করবেনা।
তারপর প্রেতটি ঈশারা করতেই সাপটি ফনা নামিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেলো। ওই দেখো তোমার সামনে একটা শাবল ও কোদাল।
এই দেখো এই জায়গায় খুঁড়বে।দুহাত খুঁড়তে হবে।
আমি এখন প্রেতের আজ্ঞাবহ এক ক্রীতদাস। শরীরে অযুত শক্তি সঞ্চার হলো। শাবল চালাচ্ছি। কোদাল দিয়ে মাটি অপসারণ করছি। হাত দেড়েক খুঁড়বার পর একসময় টং করে শব্দ হলো। আমি উপু হয়ে হাত ঢোকাতেই এক ঘটিতে হাত লাগলো। আমি ঘটিটি তুলে প্রেতের হাতে তুলে দিতে হাত বাড়ালাম।
প্রেত বললো
— আমাকে কেন দিচ্ছ? তোমাকে যা যা বলেছি তাই করো।বলেই প্রেত অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি ঘটি হাতে প্রাচীর টপকে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানার উপর ঘটিটি উপুড় করতেই ঝকঝকে মোহরের আলোতে ঘরটি আলোকিত হলো। গুনে দেখলাম। হ্যাঁ একশোটাই আছে। আমি সেখান থেকে ৭ টি মোহর আলাদা করে রেখে দিলাম। ১৮৭০ সালের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মোহর। নেট ঘেটে দেখলাম অক্সন প্রাইস তিন থেকে সাড়েতিন লাখ প্রতিটি।

পরেরদিন সকাল বেলা ৯৩ টি মোহর এক পুঁটলিতে বেঁধে নিয়ে বের হলাম প্রেতের দেওয়া পুরঞ্জনের ঠিকানায় সেই বস্তিতে।দেখি বস্তির ঘরের সামনে একটি বোখাটে ছেলে পায়চারি করছে। শিস দিচ্ছে। আমাকে দেখে ছেলেটা চলে গেলো।

আমি দরজায় কড়া নাড়তে দরজায় ফুটো দিয়ে আমাকে নিরীক্ষণ করে একটি মেয়ে দরজা খুলে দিল।মেয়েটির পরনে শতছিন্ন শাড়ি।সে তার ছিন্ন আঁচল দিয়ে তার যৌবন ও দারিদ্রতা ঢাকবার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না। মেয়েটি ফর্সা ও সুন্দরী। তার অপরূপ রূপ যৌবন দেখে আমার বুকের ভিতর এক আলোড়ন তৈরি হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম।
–এটি পুরঞ্জনবাবুর বাড়ি?
মেয়েটি ক্ষীণ স্বরে বললো
— হ্যাঁ।কিন্তু বাবাতো বাড়িতে নেই।হাসপাতালে গিয়েছে। আপনি বিকেলে আসুন।
— তোমার নাম কি?
—আমার নাম মনোরমা। আপনি আমাকে বলতে পারেন। বাবা খুব অসুস্থ। বাঁঁচবার আশা নেই।
— আমি যা বলার বিকেলে এসে বলবো। তুমি দরজা লাগিয়ে দাও।

আমি ঘরে এসে পুঁটলি খুলে আমার ভাগের অংশের ৭ টি মোহরও তার সাথে ঢুকিয়ে রাখলাম। ১০০ মোহরের পুঁটিলিটি একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়লাম।
পুরঞ্জন বাবুর বাড়িতে কড়া নাড়তেই মনোরমা দরজা খুলে বললো
—বাবার অবস্থা ভালো না। প্রবল শ্বাসকষ্ট।
আমি বললাম
— আমি কিছু টাকা তোমার বাবার কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম।সেই টাকা ফেরত দিতে এসেছি। তুমি গিয়ে তোমার বাবাকে বলো।
মনোরমা বাবাকে গিয়ে বলতেই
বললো
— ওকে ঘরে আমার কাছে আসতে বল।
আমি গিয়ে দেখলাম পুরঞ্জনবাবু হাঁপাচ্ছেন। বললেন
— আমি কাউকে টাকা ধার দিয়েছি বলে মনেতো হয়না।
আমি ব্যাগ থেকে পুঁটলি বের করে একশোটা মোহর বিছানায় ঢেলে দিয়ে বললাম
— এগুলো সব আপনার।
মৃত্যুপথযাত্রী পুরঞ্জন বাবু মোহরে হাত দিয়ে বললেন
— এগুলো সব আমার?
— হ্যাঁ।সব আপনার।
— তোমার নাম কি বাবা?
— আমার নাম বিভাস চৌধুরী।
আমি বললাম
— আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।
— আমার আপত্তি থাকবে কেন? এতো সৎ ভদ্র ছেলে আমার জামাই হবে আমিতো বিশ্বাস করতেই পারছিনা। এতো ঈশ্বরের অসীম কৃপা।
মৃত্যুপথ যাত্রী পুরঞ্জন বাবু মনোরমার হাত বিভাসের হাতে দিয়ে বললেন আজ থেকে তোমরা স্বামী-স্ত্রী। আমি কন্যাদান করে গেলাম। দূরে কোথাও শঙ্খধনি হলো। পুরঞ্জনবাবু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। মনোরমা বিভাসের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।তার একচোখে বেদনার অশ্রু অন্য চোখে আনন্দাশ্রু।

মনোরমা মোহরগুলো পুঁটলিতে বেঁধে বিভাসের ব্যাগে সযত্নে রেখে, ব্যাগটি বিভাসের কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে বললো
— আজ থেকে এই সম্পদের মালিক তুমি।
বিভাসের বুকে মাথা রেখে বললো
— আমার মালিক ও ভবিষ্যৎ তুমি।
বিভাস দুবাহু প্রসারিত করে মনোরমাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বললো
–আজ থেকে তুমি আমার বউ, সহধর্মিণী, গৃহিণী, কলত্র, স্ত্রী,
জীবনসাথি, ভার্যা, অর্ধাঙ্গী।

মনোরমা যথাযথ নিয়মে পিতার মুখাগ্নি করে, তেরাত্রি পালন করে, শ্রাদ্ধ শান্তি করে, বিভাসের হাত ধরে ভোর বেলায় ঘর থেকে বেরিয়ে বিভাসের সেই টালির ছাউনি দেওয়া ভুতুড়ে ঘরে এসে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে কলকাতার উদ্যেশ্যে রওনা হলো।
সেখানে দিন কয়েক উন্নত মানের হোটেলে থেকে চাকরির সন্ধান করতে করতেই এক প্রাইভেট মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে বিভাসের উচ্চ বেতনের চাকরি হয়ে গেলো।
ব্যাঙ্ক লোনে ফ্ল্যাট কিনে, ব্যাঙ্কের লকারে মোহর রেখে বসবাস করতে লাগলো।
গল্পের শুরুতে লিখেছি, বিভাস তার জীবনকাহিনী বলছে তার অতি ঘনিষ্ঠের সামনে —–
কে এই অতি ঘনিষ্ঠ???
এই অতি ঘনিষ্ঠ মেয়েটি আর কেউ নয়। সে যে মনোরমা।
একদিন রাতে যখন বিভাস ও মনোরমা প্রেমালাপে মত্ত।সেই সময় এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন কল এলো।মাইক্রোফোন অন করে মনোরমা-বিভাস ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে বললেন।
–আপনি কি বিভাস চৌধুরী?
বিভাস বললো
–হ্যাঁ। আমিই বিভাস চৌধুরী। বলুন।
— আমি বহু চেষ্টায় আপনার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে আপনাকে ফোন করছি।আমি আপনার পিতামহের উকিল। খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল আপনার দাদুর সাথে। তিনি তার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর বিষয় সম্পত্তি আপনার নামে উইল করে গেছেন। তার হার্ড কপি আমার কাছে। নিয়ে যান। আর একটি কপি দাদুর আলমারিতে। বাড়িতে গিয়ে বারবার খোঁজ নিয়েছি।তারা বলেছে। বিভাস নিখোঁজ। নিরুদ্দেশ। তারা এই উইলের কথা জানে। আপনার দাদু নিজের হাতে লেখা একটা চিঠিও দিয়ে গেছেন আমাকে
— চিঠিতে কি লিখে গেছেন?একটু পড়ে শোনান।
— তিনি লিখেছেন —
প্রিয় দাদুভাই বিভাস।সবাই জানে আমি বধির। কিন্তু আমি যে হেয়ারিং এড লাগিয়েছি সে কথা কেউ জানতো না। আমি তাদের সব কথা শুনতাম। তারা যে আমার মৃত্যু কামনা করতো, তোমাকে নির্যাতন করতো, ঠিকমতো খেতেও দিতো না।মাছ রান্না হলেও বলতো আজ নিরামিষ। দ্বিতীয় বার ডাল তরকারি চাইলেও দিতোনা।নিত্য কথার বাণে তোমাকে জর্জরিত করতো। আমি সব শুনতাম। তুমি বেকার। চাকরির চেষ্টা করেও তুমি পাওনি।তোমার নিদারুণ কষ্টের কথা ভেবে ও ভবিষ্যৎ ভেবে স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি তোমার নামে উইল করে গেলাম।
ব্যাঙ্কে সব তোমার নামে নমিনী করে দিয়েছি।আমার মৃত্যুর পর ব্যাঙ্ক লকারের সবকিছু তুমি পাবে।
ইতি তোমার দাদু।

আমার শরীর ভালো নেই। আপনি যদি ফোন করে একবার আসেন তাহলে খুব ভালো হবে। এসে আপনাকে উইল করে দেওয়া নথিটি নিয়ে যান।আপনার দাদুর আত্মা শান্তি লাভ করবে।
এখন রাখছি।শুভ রাত্রি।

ফোন লাইন অফ হলে বিভাস সেই ব্যাগ থেকে জ্যোতিষের ভবিষ্যৎ বাণী লিখিত কুষ্টিটা মনোরমাকে পড়তে দিল।
মনোরমা বললো
— এক্কেবারে সবই ভবিষ্যৎ বাণী পুরো মিলে গেছে। কিন্তু এখানে লেখা আছে তোমার কুষ্টিতে সুন্দরী, সুচরিত্রা,বিনয়ী, শ্রদ্ধাবতী স্ত্রী হবে।
আর এক যোগে লিখেছেন স্ত্রী স্থান খুব শুভ। খুব সুন্দরী স্ত্রী লাভ হবে।বিনয়ী, নম্র,সর্বসুলক্ষনযুক্তা, সুচরিত্রা,স্বামীপ্রিয়া হবে।

মনোরমা জিজ্ঞেস করল–
তোমার স্ত্রীর কি এসব গুন আছে?
বিভাস মনোরমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
— হ্যাঁ। কুষ্টিতে লিখিত সব গুন তোমার আছে।শুধু তাই নয় সব কিছুই সঠিক।
আগে জানতাম জ্যোতিষের ভবিষ্যৎ বাণী ঠিক হয়না। এখন তোমাকে পেয়ে আর সবকিছু পেয়ে মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ ভবিতব্য।

Loading

7 thoughts on “গল্প- ভবিতব্য

  1. আপনার মন্তব্য ও মুগ্ধতায় লেখনী সার্থক হলো।
    ধন্যবাদ অফুরান প্রিয় সাহিত্যিক।

Leave A Comment