উৎসবে ও উৎসে
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
উৎসবের আমেজ নিয়েই শরতের যাওয়া-আসার শর্ত। আকাশ-বাতাসে উতলা স্বর, মন যেন ছুটি খোঁজে নিত্যদিনের দিনপঞ্জি থেকে। বাঙালির প্রিয় উৎসব আর এই উৎসবের আবহে বেশ কিছুদিনের শিথিলতা। কারোর ভাবনার ঘরে তালা, কারোর ভাবের ঘরে তালা। উৎসব আমাদের মনটাকে নিয়ে যায় অন্য আবহে- যেখানে প্রিয়জনকে কাছে পেতে চায় মন, আনন্দঘন মুহূর্তগুলো ভাগ করে নিতে চায় সাধ্যমত। আবার এই উৎসব ঘিরেই কত অচেনা মুখ পরিচয়ের গণ্ডী ছুঁয়েই আপন হয়ে ওঠে। কোনো কোনো পরিচিতি উৎসব শেষেও সম্পর্কের গ্ৰন্থিতে বাঁধা পড়ে, আবার কিছু পরিচয় আতস বাজির মতো ক্ষণিকের। আতস বাজির কথায় মনে এসে গেল আরো এক উৎসব- কালি পুজো, দীপাবলী, দীপান্বিতা। ওই একটা দিনেই বহু রূপে ঈশ্বরের আরাধনা- বিবিধ আচার। বাঙালি বড়ো আবেগপ্রবণ- আবেগের ধারায় ভেসে থাকে জলে যেমন পঙ্কজ ভাসে। বাঙালীর বোধহয় পঙ্কজ না হয়ে উপায় নেই। হঠাৎ করে যেভাবে ধর্মীয় সন্তানরা রীতিনীতি, সনাতনী, পুরাণ, বেদ, শাস্ত্রীয় আচারণ, সামাজিক আচরণ সবকিছু নিয়ে উৎসবের আবহে সমালোচনার ঢেউ তুলছেন তাতে ভাবনায় বেশ ধকল লাগছে। উৎস খুঁজলে একটা কথাই ভাবতে বাধ্য করছে মানুষ আগে না কি ধর্ম আগে! ধর্ম মানুষ সৃষ্টি করলো না কি মানুষ ধর্ম সৃষ্টি করলো? সাধারণ জ্ঞান তো বলে ধর্ম মানুষের সৃষ্টি, আর ধর্মকে ধারণ করতে কিছু আচরণের ব্যয়-বৃদ্ধি। সমাজ যখন মানুষের তৈরি সম্মিলিত সংস্কৃতি। সব যখন মানুষের হাতেই গড়া- তাহলে সামাজিক আচরণ তো ধর্মের আঙিনায় বেড়ে ওঠে। আলাদা হয় কি করে? এইসব সাজানো রীতিনীতি, যা সুযোগ মতো সুযোগসন্ধানীরা চাপিয়ে দিয়েছিলেন বা দিয়েছেন। ক্ষত তৈরি করেছেন। পুরাণ বা সনাতন ধর্ম যা কিছুই হোক না কেন তৎকালীন সমাজ ও ধর্মীয় সন্তানরা দায় এড়াবেন কোন শর্তে? হঠাৎ করে যেন মনে হচ্ছে সেই ধার্মিক সন্তানরা আবার মাথাচাড়া দিয়েছেন। ইতিহাস না কি সব বিকৃত, নতুন করে গড়ে নিতে মজবুত হয়ে ওঠার ডাক দিচ্ছেন। জানি না, আজ যদি সত্যি করেই নতুন ইতিহাস লেখার চেষ্টা হয়, আগামী কবে তাকে “বিকৃত” উপাধি দেবে- অহেতুক রক্তক্ষরণের আভাস তাই থেকেই গেল ‘ধর্ম’ নামাঙ্কিত টোলের মহিমায়।
আগামী ২৯ অক্টোবর আলাপী মন-এর বিজয়া সম্মেলনী। আলাপী মন-এর চতুর্থ মুদ্রণ সংকলন ওইদিনেই উষ্ণতার স্পর্শে চোখ মেলবে স্বজনসাথীদের উপস্থিতির মাঝে। ব্যস্ততায়, অপেক্ষায়, আশায় কেটে যাবে মাঝের কয়েকটি দিন।
আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনায় আলাপী মন।