Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- গর্ভগৃহ

গর্ভগৃহ
-অঞ্জনা চক্রবর্তী

 

 

শ্বশুরবাড়ি, সুবুচনী সত্যনারায়ণ পুজো। বাড়ি ভর্তি পাড়াপড়শী; আত্মীয় বন্ধু সমাগম।
বিবাহ পরবর্তী প্রথা বলে কথা-
বেনারসী-আর ধুতি জোড়ে বসেছে আবার নারায়ণ শিলার সামনে। বাড়ি ভর্তি ধূপ ধুনো কর্পূর গন্ধ।
আচমকা উঠতে গেল নতুন বউ- মহুয়া। মেঝেতে রক্ত। লেগেছে বেনারসী জুড়েও। সোমকের নতুন ধুতিতেও। সবাই চোখাচোখি -মা, পিসি, কাকিমা…আরো কত চোখ, পুজো ছেড়ে রক্ত অনুবীক্ষণ যন্ত্রে।
মহুয়াকে বলল শাশুড়ি- ফিসফিস করে, যাও বাথরুমে যাও।
-মা, পরে যাব, পুজো শেষ হোক আগে।
সমানুপাতিক একটু গলা চড়িয়ে বলল মহুয়া যাতে সবাই শুনতে পায়। শাশুড়ি একটু বিরক্ত।
আবার বসে পড়ল সোমকের পাশে।
সোমক হতভাগা হতোভম্ব।
কাকিমা এগিয়ে এসে বলল- মা, পুজোর সময় এই অবস্থায় বসতে নেই- থাকতে নেই- জানোই তো…
মহুয়ার উত্তর, আমার অসুবিধা হচ্ছে না কাকিমা। পুজো শেষ হলে ন্যাপকিন নিয়ে নেব।
-চুপ চুপ…আস্তে কথা বলো বৌমা- বাড়ি ভর্তি পুরুষ-
কথা বাড়ালো না মহুয়া। তবে গ্যাট হয়ে বসে রইল।
-কি হল বৌমা উঠলে না? শাশুড়ির ঝাঁজ।
-আমি তো বললাম পুজো শেষ হোক। আমার পুজো দেখতে ভালো লাগছে মা।
-নতুন করে কি নিয়ম শেখাতে হবে? বাড়ি ভর্তি কাকা দাদা…ঠেলা দিয়ে বলল শাশুড়ি। খানিক বিরক্ত- বৌমার রকম দেখে।
পুরুতমশাই মন্ত্র পড়ছে- আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্যং ব্রহ্মানঞ্চ বৃহস্পতিম….
মহুয়ার কোলে এসে বসল পাঁচ বছরের দেওর আর্য্য। সাদা পাঞ্জাবী -ফর্সা টুকটুকে। একটু মৃদু হেসে উঠল মহুয়া। ততক্ষণে আদির পাঞ্জাবী জুড়ে বৌদির মাসিকের রক্ত -সেই দেখে ছুটে এসেছে আর্য্যর মা। আর্য্যকে কোল থেকে তুলে নিতে চায় আর ও যাবে না –টাগ অফ ওয়ার, শেষে মা পরাস্ত হয়ে হাল ছেড়েছে।
শুরু হয়েছে আর্য্যর প্রশ্ন- বৌদি তোমার কোথায় কেটে গেছে? কেন এতো রক্ত ঝরছে?
মহুয়ার উত্তর- ঠাকুরের গর্ভগৃহে গেছো? আমার গর্ভগৃহ প্রস্তুতি নিচ্ছে মাসে মাসে রক্তপাত হয়ে-জন্ম দেবে একটা প্রাণ তোমার মতোই…
আর্য্য- তবে কেন ওরা পুজো থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে তোমায়?
– আসলে রক্ত পড়লে তো কষ্ট হয়। একটু বিশ্রাম -শুয়ে বসে থাকতে বলে –সব কাজ থেকে ছুটি এ ক’দিন। পুজোরও অনেক কাজ থাকে। তাই পুজোতে বসতে দিচ্ছে না।
সবাই থ। থমথমে পরিবেশ। ঠাকুর মশাই ততক্ষণে আরতি শেষ করে শান্তি জলে- ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি…

Exit mobile version