উৎসব
-সঞ্জিত মন্ডল
যদি বলি এত উৎসব কেন, কেন এতো মেলা চারপাশে!
মানুষ কি তবে শুধু উৎসব আর মেলাতেই ভাসে!
বাতাসেতে ব্যথা আর বেদনার হাহাকার মেশে,
তবু কারা কি করে যে মহানন্দে ভাসে!
আমি শুধু দেখি আর মনে মনে হাসি ভাবাবেশে।
এভাবে কি ভুলে থাকা যায়?
এতো জ্বালা, এতো ক্লান্তি, এতো অনাহার এতো মৃত্যু সংসার ছারখার এতো বেকারী!
এতো হানাহানি আর দড়ি টানাটানি, এতো ক্লেশ এতো অশান্ত হামলা এই ক্ষুব্ধ দুনিয়ায়!
মেলা কি নেশার ঘুম! ঘুমিয়েই কাল কেটে যায়!
জাগবে আবার কবে, বলো, কে কাকে জাগায় !
কি এমন খেলে বলো যেটা খেলে সব ভোলা যায়,
এমনই নেশার ঘোরে ভেসে যাওয়া যায়!
উৎসব মেলা দিয়ে বাকি সব ভুলে গিয়ে
এমনই নেশার ঘুমে ঢলে পড়া যায়!
কতো কার মেলা দেখি, আসে দেব গণপতি
আসে বিশ্বকর্মা স্তুতি, কতো মেলা শুরু হয়ে যায়,
একে একে দুর্গা আসে,সকলেরে নিয়ে সাথে
গরীবের দুর্গা কাঁদে নিত্য মরে উপবাসে, বিক্রি হয়ে যায়।
ধর্ষকের ভয়ে ত্রাসে লাশ হয়ে জলে ভাসে,
তার দিকে আর কেউ ফিরে না তাকায়!
লক্ষ্মী আসে, কালী আসে, জগদ্ধাত্রী আসে পাশে
ঘরে ঘরে লক্ষ্মী যারা কেঁদে মরে যায় তারা
অসুরেরা নিত্য হাসে ধর্ষিতা ধরায়!
কটা দিন মা মা ডেকে ঝড় তুলে দিকে দিকে বিসর্জন দিয়ে দেবে হেলায় ফেলায়।
যে মায়ে করলে পূজা, ঠেলে ফেলে দিয়ে তাকে সবাই পালায়!
মনে প্রশ্ন জাগে তাই সংসারের নিয়মই ভাই !
এই বুঝি হালচাল এই দুনিয়ায়!
যতটুকু প্রয়োজন দেখিয়েছি দয়া।
কটাদিন কাটিয়েছি তোফায় মজায়!
মজা শেষ, তাই মাকে ঠেলে ফেলে দেওয়া!
জলে-জঙ্গলে, বৃদ্ধাবাসে, বানপ্রস্থে তাই অবহেলা।
প্রয়োজন ফুরিয়েছে, মিছে আর কতো পোষা যায়!
চমৎকার! এ না হলে আদরের সন্তান সে মা’র!
উপেক্ষার এই মেলাভার!
সহজ উপায় কতো ঝেড়ে ফেলবার।
পূজা-মেলা, খেলা-মেলা, কাপড়ের মেলা, খাদ্য মেলা, ইলিশের মেলা, পিঠে মেলা, বই মেলা,
আরো আছে অগণিত মেলা, কত কিছু আছে জানবার।
দুঃখ -ব্যথা, বেকারীর জ্বালা, অর্ধাহার, অনাহার, অশিক্ষা, বিপ্লব,প্রেম,
অ-চিকিৎসা, না-চিকিৎসা, আরো কত জ্বালা সমস্যার।
এক ফুঁয়ে নিভে যায় এমনই যাদুর ঠেলা,
উৎসবে মেলার মজা কত বলি আর।
সাধে কি এ মন হাসে দেখে কর্মকান্ড নাশে
কতকিছু রসে বশে ঘটে চলে চারপাশে
খেলা খেলা মেলা ভাসে অলক্ষ্যেই বেলা বয়ে যায়।
হেলাফেলা সারাবেলা, কালবেলা সুমুখে দাঁড়ায়।
জন্মদাত্রী বিসর্জিতা মা একা একা পথে ভেসে যায় অবেলায়!