কাতি বিহু
–সুমিত মোদক
প্রদীপ জ্বালা, প্রদীপ জ্বালা তুলসী তলায়;
প্রদীপ জ্বালা ক্ষেত-খামারে, ধানের গোলায়…
প্রদীপ জ্বালা …
আজ যে আমার বিহু, কাতি বিহু;
কদিন পরেই ফসল উঠবে ঘরে,
সোনালী ফসল;
মা যে আমার আসবে ঘরে, ঘর আলো করে…
মেয়েটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল;
এবার দেখাশোনাটা শুরু করতে হবে;
একটা তো পাস দিয়েছে …
কিন্তু, মেয়েটার যে খুব পড়ার ইচ্ছা;
ওর বাবারও …
আর, আমার হয়েছে যত জ্বালা!
এ পাড়া গ্রামের ওর মতো সব মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেল;
সে কারণে পড়শিরা কথা তোলে;
পুরুষ-মানুষটার সে দিকে কোনো কান নেই;
মানুষটার একটাই ইচ্ছা
মেয়েটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে;
বড় মানুষ …
সে কারণে মাঠের পর মাঠ আউস ধান ফলায়;
অনেক অনেক ধান;
সে ধান বেচে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবে;
মেয়েকে তাই প্রদীপ জ্বালাতে নিয়ে গেছে
ধান জমিতে;
স্বপ্নের ধান জমিতে, কঠিন বাস্তবের ধান জমিতে;
যেখানে কচি কচি ধানের শিস উত্তরের বাতাসে দুলে দুলে ওঠে;
ছড়িয়ে দেয় এক মায়াবী ঘ্রাণ,
ভালবাসার এক আবেশ;
এ যে এক আলোর আবাহন;
এ যে এক পোকামাকড় তাড়ানোর ব্রত;
ফসল রক্ষা করার ব্রত;
এ যেন এক মেয়েকে বড় করার ব্রত;
এ এক আকাশচুম্বী স্বপ্ন;
সে কারণে বাপ-বেটি মিলে বাঁশের আগায়
আকাশ প্রদীপ জ্বালে;
সে আলো যেন পূর্বপুরুষেদের স্বর্গে যাওয়ার
পথ দেখায়;
সে আলো আকাশ ছড়িয়ে নেমে আসে মাটিতে,
বাপ-বেটির চোখে, মুখে, বুকের ভিতর;
সারাটা আসাম জুড়ে আলোর পরব;
আমাদের কাতি বিহু;
আমাদের আলোর বিহু;
এ এক স্বপ্ন পূরণের পরব;
সেই সকাল থেকেই শুরু হয়েছে উঠান নিকানো,
খামার নিকানো,
পিঠেপুলির আয়োজন;
দুপুর থেকেই শুরু হয়ে গেছে প্রতিটি বাড়িতে
পিঠেপুলি;
আমাদের বাড়িতেও …
প্রথম পিঠেপুলি গোমাতার;
সে কারণে গোয়াল ঘরে প্রদীপ জ্বলে;
প্রদীপ জ্বলে পাড়া গ্রামের বুকের ভিতর;
প্রদীপের আলো, আকাশ প্রদীপের আলো;
সকলেই আলো মাখে, বিহু আলো;
আমাদের মেয়েটার মতো, পাগলাদিয়া নদীটাও আলো মাখে;
আলো মাখে পুরুষ-মানুষটাও;
মনের আনন্দে গান ধরে বিহুর গান;
সে গানে জাগে আমার সকল চাওয়া পাওয়া,
ভালবাসা;
আমার এ প্রদীপ-জীবনে আলো নিয়ে বেঁচে থাকা ।