পোড়া মাটির পুতুল
–সুমিত মোদক
দশ হাত পুতুল আছে গো বাবু;
দশ হাত পুতুল…
পোড়া মাটির পুতুল…
টেরাকোটার পুতুল…
তোমরা যাকে দুগ্গা বলো, মা দুগ্গা…
একটা পুতুল নাও গো বাবু, একটা পুতুল…
মাত্ত একশ টাকা দাম আছে গো বাবু,
একশ টাকা…
এ লাল মাটির দেশে, এ লাল মাটির পুতুল আছে;
পোড়া মাটির পুতুল…
ওই দেখছেন বাবু, টিলার মাথার উপরে থেকে
সুরযিটা কেমন লাল হয়ে ঢলে পড়ছে
শাল জঙ্গলের ভিতর;
ঠিক যেন আমাদের ঘর-সংসারের মতো
অন্ধকার জাগে;
এতো খনে শ্বশুরটা হয়তো মহুল পিয়ে
ঘুমে ঢলে পড়েছে ঘরের দাওয়ায়;
বাচ্চা মেয়েটা সন্ধ্যে দিচ্ছে ঘর-দোরে ;
শাশুড়ি হয়তো এখনো কেঁদ ফল কুড়ায় জঙ্গলে;
মুরগিগুলা ফিরে এসেছে খোঁড়ে;
একটা পুতুল নিন না গো বাবু,
একটা পুতুল…
মাত্ত একশ টাকা…
বেশি নেবো না গো বাবু, বেশি নেবো না;
বাড়ি ফেরার মুখে কম দামেই ছেড়ে দেবো;
মাটির দামে …
এ লাল মাটির দামে…
এখানে মাটির কোনও দাম নাই;
এখানে আগুনের কোনও দাম নাই;
রোদে পোড়া মানুষগুলার কোনও দাম নাই;
দাম নাই এ টেরাকোটা শিল্পের, এ শিল্পীর,
এই টিলার দেশে, এ মালভূমে, এ মল্লভূমে;
ওই যে টিলাটি দেখছেন,
ওই টিলাটার ওপরেই আমাদের গেরাম,
আমাদের প্রতিদিনের টিকে থাকার গল্প…
একটা পুতুল নিতে পারতেন বাবু;
একটা পুতুল…
এই একটা পুতুল একটা সংসারের আলো,
বেঁচে থাকার স্বপ্ন;
এক রাতে মরতটারে কারা যেন ডেকে নিয়ে গেল;
তার পর আর ফিরলো না;
কারা ডাকলো! কেনও ডাকলো!
কোথায় গেল!
আজও কোনও উত্তর খুঁজে পেলাম না!
তবে মাঝে মধ্যেই পুলিশ খোঁজ নিতে আসে বাড়িতে;
ফিরলো কি না…
গেরামের লোকে অনেকে অনেক কথা বলে;
আজকাল সে কথা আর গায়ে মাখি না;
সন্ধে নামলে হুট করে গেরামে ঢুকে পড়তে পারে
হাতির দল, মহুলের গন্ধে;
মহুল পিয়ে শুঁড় দুলিয়ে নাচতে পারে;
বাড়ি, খেত-খামার নষ্ট করতে পারে
কোনও বিশ্বাস নাই ;
বিশ্বাস নাই ঝাণ্ডা ধরা মানুষগুলোর উপর;
ওরা বলে যায়–
এই করে দেবো, ওই করে দেবো…
কোনও দিনের জন্য কিছুই করলো না,
আমাদের জন্য;
সে এ ঝাণ্ডার লোক হোক বা ও ঝাণ্ডার …
এখন কুমারী নদীর জল অনেক কম;
এপার থেকে ওপারে পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়;
পার হয়ে যায় সময়;
অথচ, পার হতে পারলো না শহুরে ডাক্তার বাবু,
আজও তাই ওঝা ভরসা;
আর আমার ভরসা এ দশ হাত পুতুল;
তোমাদের দুগ্গা, মা দুগ্গা …