ফুটেজ…
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
জীবন যখন মৃত্যুর কথা বলে- জীবিতের ভিড়ে একা একাকী মৃত্যু নির্ভয়ে শুয়ে থাকে। জীবন কাঁদে- কতক তাগিদে, কতক উপসর্গে। উপসর্গ তো একটাই- কান্না, ভীষণ ছোঁয়াচে। পরিবেশ বিষণ্ণ হয়ে উঠতে দেরি হয়না। কতোটা সাজানো, কতোটা গোছানো সে তো অন্য কথা। কিন্তু মৃত্যু তো থামাতে পারে না কিছুই, নিজেই থেমে যায়- সেখানেই বোধহয় জীবনের জয়। জীবনের চোখের জল শুকিয়ে যায়। আবার নতুন সূর্য দেখে, গতানুগতিক। হঠাৎ করে মৃত্যুর কথা হয়তো মনে হতেই পারে অপ্রাসঙ্গিক- আসলে বেশ কিছুদিন ধরে কেমন যেন জানা-অজানা মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাকে ঘিরে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে- কিছু মৃত্যু মিডিয়ার ভাষায় ‘ফুটেজ’ খাচ্ছে, তার রেশ মিটেও মিটছে না। দিন দিন মহার্ঘ্য হয়ে উঠছে, যতক্ষণ না আরও একটা ভারী ‘ফুটেজ’ খাওয়া মৃত্যু সামনে আসছে।
নামী দামী মৃত্যুর হাজার জ্বালা- সবকিছুই প্রকাশ্যে চলে আসবে অনর্গল। খোলা খিড়কি, ব্যক্তিগত বলে কিছু থাকবে না। সুচতুর খোলা চোখ অলিগলি খুঁজে সব বেআব্রু করবে। মৃতের প্রিয়জন, অতি প্রিয়জন কালো কাচের আড়াল খুঁজবে অনুভূতি ব্যক্তিগত রাখতে। সেখানে ভিড় পৌঁছাতে না পারলে ক্যামেরার ঝলকানি উঁকি দেবেই। আসল কথা হলো নামী হলেই নামটা বেচতে হবে- ওটা পাবলিক প্রপার্টি। খবরটা বেচতে হবে, বেচতে জানতে হবে।
বেনামী মৃত্যুর জ্বালা কম কিছু নয়। অর্থে দখল থাকলে শেষকৃত্যে বাঁধা নেই। যেখানে অর্থের অভাব সেখানে শেষকৃত্য পথ চেয়ে বসে থাকে। যতোই হোক মৃত্যু নথিভুক্ত তো করতে হবে। একটা অদ্ভুত ঘটনা দেখলাম- ভোর রাতে আগুন লেগে পুড়ে গেল রাস্তার ধারে একটি ঝুপড়ি। পাওয়া গেল আধপোড়া বিকৃত মৃতদেহ, শেষকৃত্যে দেরি হলো- চাঁদা তুলতে হলো যে, যোগাড় অবশ্য হলো, নমো নমো করে আপদ চুকেও গেল। পরদিন সেই পোড়া ঝুপড়ির ফাঁকা জায়গা দেখে বিয়েবাড়ির বরযাত্রীরা বাজি ফোটালো। তারপর দিন ওখানে একটা নতুন ঝুপড়ি বাঁধতে দেখলাম। সবটুকু ‘ফুটেজ’-হীন। যাওয়া-আসার পথে চোখে পড়লো যার যেভাবে, সে সেইভাবে দেখলো, সেইভাবে ভাবলো। শুধু একটাই সত্য- ওই প্রিয়জনদের শোক লুকোতে হয়নি, কালো কাচের আড়াল লাগেনি। রাস্তার ওপরেই কখনও বুকফাটা কান্না, কখনও নীরবে চোখ মোছা। ফিরে কেউ কেউ দেখেছে, চোখ ফিরিয়ে চলেও গেছে। ফিরে দেখার ‘অত সময় নেই…’ পথচারীদের। পথের শোক, পথেই মলিন হয়েছে অনায়াসে। জীবন ওখানে লিখে গেছে- মৃত্যু ক্ষণিকের, সত্য হলো চরৈবতি…ফুটেজ গড়াগড়ি খায় ফুটপাতে।
জীবনের উষ্ণতার ছোঁয়া শুভেচ্ছা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।