সম্পাদকীয়

কয়েকটি রবিবার

কয়েকটি রবিবার
-রীণা চ্যাটার্জী

সুধী,
আজকের দুনিয়ায় নতুন ঢেউ উঠেছে- সামাজিক নানা মাধ্যমে পুরুষের কান্না (নাকি কান্না বললাম না, ওতে নারীর একছত্র অধিকার) শোনা যাচ্ছে। পুরুষ জাতি যে বড়ো অত্যাচারিত- তা কবিতা, কথকতা, গল্প, ভাষণে বেশ ফলাও করে বলা হচ্ছে, সমমনস্ক সমর্থকরা সমর্থনের বন্যায় (অবশ্যই man made বন্যা, বলতে দ্বিধা নেই) ভাসিয়ে দিচ্ছেন। দায়িত্ব আর কর্তব্যবোধে নুইয়ে পড়া কাঁধ নিয়ে ফ্যাকাসে জীবন-যৌবন নিয়ে বাছাদের বড়ো কষ্ট…
সত্যিই তো একজন সত্যিকারের পুরুষের যে অনেক দায়িত্ব- তা অস্বীকার করার বা তর্ক করার মতো মুর্খতা মোটেই শোভা পায়না। কিন্তু সত্যিকারের পুরুষ কজন! সে বিস্ময় থেকে মনের নিষ্কৃতি নেই।
সামাজিক মাধ্যমের তর্ক ছেড়ে একটু সাংসারিক প্রেক্ষাপটে চোখ রাখি। পুরু সর তোলা দুধ, ঘি, মাখন, ছানা, কাঁটা ছাড়া মাছের পেটি সে সব তো ভাঁড়ারের কথা, মা-ঠাকুমার ভালোবাসা- ও নিয়ে কথা হবে না। যে যার ভাগ্যে খায়…
আরও একটু গভীরে– দাম্পত্য সুখের ফসল সন্তান। প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে দেখুন মহামান্যরা একবার, চোখের সব জল শুকিয়ে যাবে- এ আমার কথা নয়, চিলেকোঠার পাশে কানে কানে বলা দুঃখের কথা, পরম্পরায় ভেসে চলেছে। আর ওই যে বিশেষ চারটি দিন? অশ্লীল শোনাবে বললে তাই না? চুপচাপ সহ্য করতে হয় কিছু যন্ত্রণা মুখে হাসি নিয়ে- জানতে দিতে নেই। এমন শিক্ষাই দিতে হয় মেয়েকে মা’র- তাঁর মা-ও তো দিয়েছিলেন। বয়স পেরিয়ে যায় আজকের মা কালকের ঠাকুমা-দিদিমা হয়ে যায়। তখন নতুন মেয়ের নতুন যন্ত্রণার দিন তাঁদের কাছেও বেহায়াপনা মনে হয়।
এ তো সব মেয়েদের নারী হয়ে ওঠার গল্প।
নারীর সংসার, জীবনের পাঠ- পৌরাণিক কাহিনি বিক্রম-বেতালের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই যে বেতাল রাজার পিঠে চড়ে বলল- সমস্ত রাস্তা মুখ বন্ধ করে চলতে হবে। মুখ খুললেই ছেড়ে চলে যাবে। পিঠে বোঝা চেপে গেল, গল্প শোনার পাঠ শুরু হল, তার থেকে কি শিখতে পারল শেষে তা বলতে হবে, না বললেই খন্ড খন্ড হয়ে যাবার হুমকি। যেই মুখ খুলল- সঙ্গে সঙ্গে আবার শর্তভঙ্গের দায় চেপে গেল। ছেড়ে গেল সেদিনের বহু কষ্টে পেরোনো পথটুকু। আবার নতুন ভোরের অপেক্ষায়…
সংসারে যেদিন মুখ খুলবে সেদিন আত্মীয়-পরিচিতের মুখগুলি আর চেনা যাবে না। আয়নাও অচেনা লাগবে…
আজকের নারী, আজকের পুরুষ- কি চায়, কি বোঝে, কিভাবে চলবে সে তাদের ইচ্ছে, তাদের দায়। তবে আমার কটা বিশুদ্ধ রবিবার চাই- একটা শীতের লেপমুড়ি দেওয়া রবিবার, একটা বর্ষায় ভেজা রবিবারে ধোঁয়া ওঠা উষ্ণ তরল পানীয় চাই, রবিবারের গ্ৰীষ্মের শুকনো দুপুর চাই, চাই কবিতার সঙ্গে একান্তে এক রবিবার, চাই নির্ভেজাল পুরুষোচিত আয়েসী রবিবার। বাকি সব চুলোয় যাক- জন্মজন্মান্তরে নারী জনম আপন করে নেব, শুধু কয়েকটি রবিবারের বিনিময়ে, বড়ো লোভ জাগে পুরুষালি রবিবারে।

নতুন বছরের হিমেল হাওয়ায় মিশে থাকা মিঠে রোদ্দুরের উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

(সব কথা সবার জন্য যেমন নয়, আবার সব কথা সবার সহ্য হবে, এমনও নয়- তবে বিতর্ক কাম্য নয়, কারণ এ নিতান্তই মনের কথা)

Loading

4 Comments

  • Anonymous

    মনের অনুভূতির চরম প্রকাশ! মনের গভীর
    থেকে এত সুন্দর করে বলতে পারে ক’জন!
    আন্তরিক অভিনন্দন দিদিভাই 💐💐💐

  • Pradip Sarma Sarkar

    একেবারে সহমত রীণা।নারীর হাফ ছুটি, রবিবাসরীয় ছুটির আমেজ ও বয়সের সাথে সাথে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার পর অবসরের সসাম্মানিক আরাম কোথায়? নারীর শ্রমের মূল্যায়ন হোক। নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক হোক।এ দাবী আমারও রইল।

Leave A Comment

You cannot copy content of this page