গল্প

গল্প- কুয়াশা

কুয়াশা
-পাপিয়া ঘোষ সিংহ

 

 

সকালে উঠে বাইরের দিকে তাকায় রুমেলা। চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। এরপর বিছানা ছেড়ে আয়নার কাছে এসে দাঁড়ায় রুমি, চোখ গুলো খুব ফুলেছে তার। আসলে গতরাতে সে ঘুমোতে ই পারেনি। মাথার মধ্যে একটা কথায় ঘুরছে, কি এমন বলেছিল রুমি, যে দীপন ওরকম করে খেঁকিয়ে উঠলো??

রুমেলা মিত্র, ইউনিভার্সিটির বাংলা এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, ছোট থেকেই রুমেলা খুব শান্ত,ধীর স্বভাবের। সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করার জন্য তাকে ভালোবাসে সবাই। বাবা-মায়ের আদরের রুমি জীবনে কখনও কোনো আঘাত পায়নি। বেশ আদরে, আবদারে দিন কাটতো তার,খুব রিজার্ভ হ’লেও রুমেলার বন্ধুর অভাব ছিল না। তবে একটু অন্য ইঙ্গিত পেলেই রুমেলা সেই সব ছেলে বন্ধুদের থেকে দূরেই থাকতো।

হঠাৎ সেদিন কি হলো?? রুমি মনে মনে ফিরে গেল বছর পাঁচেক আগের সেই দিনে। খুব ঠান্ডা, রুমি তখন টিউশন থেকে ফিরছিল।একে শীতকাল,তাইতে আবার টিপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তায় পাশে চায়ের দোকানটায় দাঁড়ালো। সাইকেলে এই রাস্তায় রুমি রোজ‌ই যায়, এই দোকানে একদল ছেলেদের আড্ডা দেওয়া দেখতে পায়। তবে আজ সেই দল নেই। আছে একজন। এগিয়ে এসে রুমিকে প্রশ্ন- আমরা একে অপরকে চিনি?? রুমি বলে হ্যাঁ দেখেছি তো। তবে সেভাবে চেনা জানা হয়নি। অপরজন আবার বললো বন্ধু হ’তে পারি? এই বলে এক কাপ কফি এগিয়ে দিয়ে সে বললো তুমি খুব ভালো কবিতা বলো। রুমি র মুখে লাজুক হাসি। তারপর সে বললো আমি দীপন, দীপঙ্কর চ্যাটার্জি, বি-টেক ফাইনাল ইয়ার। রুমি বললো আচ্ছা। দীপন কথা বলতেই থাকে। সুন্দর, সাবলীল, আন্তরিক কথা বলা রুমিকে কেমন মোহিত করে দেয়। বৃষ্টি থেমেছে, সময় অনেক পেরিয়ে গেছে, রুমি ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়ে। রুমিকে উঠতে দেখেই দীপন বলে এখনই চলে যাচ্ছো? আবার কবে দেখা হবে?? রুমি হাসে, বলে অনেক দেরি হয়ে গেছে, দেখা প্রায়ই তো হয় আসতে-যেতে। এবার দীপন এগিয়ে এসে বলে রুমেলা আমরা আলাদা দেখা করতে পারি না?? রুমেলা চুপ করে যায়। কিছু না বলেই বেরিয়ে আসে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়িতে আসার পর থেকেই রুমেলার কানে একটাই কথা প্রতিধ্বনিত হতে থাকে-“আমরা আলাদা দেখা করতে পারি না”? দীপঙ্কর চ্যাটার্জি হ্যান্ডসাম, কর্মদ্যোগী, ছটফটে, অদ্ভুতভাবে কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। রুমি অনেক মেয়ের কাছে দীপনের নাম শুনেছে। কেউ বলে আমাদের দীপনদা এরকম, তো কেউ বলে দীপন তো আমার খুব ভালো বন্ধু। অত্যন্ত মেধাবী, সু-বক্তা ছাত্রনেতা দীপঙ্কর চ্যাটার্জি যে এভাবে রুমেলার বন্ধুত্ব চায়বে সেটা রুমেলা কখনও ভাবেই নি। সেই ডাক তার কানে বাজছে,কেমন করে ফেরাবে সে?

না ফেরানোর ক্ষমতা রুমির নেই, শুরু হলো তাদের আলাদা দেখা করা, কথা বলা, প্রেম-ভালোবাসা। রুমি হায়ার সেকেন্ডারি, কলেজ পেরিয়ে আজ ইউনিভার্সিটিতে। দীপন বি-টেক,এম-টেক করে বড়ো কোম্পানির অফিসার, জীবন পাল্টেছে,শহর পাল্টেছে, তবুও তাদের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দু’জনে দু’জনকেই খুব ভালোবাসে। রুমির মাস্টার্স কমপ্লিট হলেই দু’জনের বিয়ে হবে।
সম্পর্কের গভীরতা অধিকারের জন্ম দেয়।রুমির প্রতি দীপনের অধিকার রুমি সবসময়ই সাদরে মেনে নেয়। কিন্তু রুমি যদি কোনসময় দীপনকে অধিকার নিয়ে কিছু বলে দীপন মেনে তো নেয় না উপরন্তু রেগে যায়। কথা বন্ধ করে দেয়। দীপনকে ছেড়ে থাকতে পারে না বলে রুমি নিজেই মানিয়ে নেয়।

এভাবে চলছে আজ একবছর। রুমির মনে কিছু প্রশ্ন জমা হয়। প্রশ্নহীন আনুগত্য কি ভালোবাসা? কেন এমন হচ্ছে মাঝে মাঝে? কেন দীপন ভুল বুঝছে রুমিকে? আগের দীপন তার রুমির কাছে কবে ফিরবে কুয়াশা কাটিয়ে ? মনের জমাট বাঁধা প্রশ্ন আজ প্রাক বরষার মেঘে পরিণত। রুমির মন চায়ছে বৃষ্টি নামুক। ধুয়ে দিক দুজনের মনের সমস্ত জটিলতার কালো। রুমি কে বুঝতে পারবে দীপন,অবশ্যই পারবে। রুমির ভালোবাসা তার দীপনকে ঠিক কুয়াশার চাদর থেকে বের করে আনবে ঝলমলে রোদ্দুরে।

Loading

3 Comments

  • Anonymous

    অসংখ্য ধন্যবাদ । আমার লেখা কে স্থান দেওয়ার জন্য

  • Ranjan Mukherjee

    কবিতার সাথে এবার গল্প , নতুন প্রাপ্তি।
    খুব ভালো লাগলো। চরিত্র গুলো জীবন্ত।

Leave A Comment

You cannot copy content of this page