ধারাবাহিক- জন্মসূত্র (৩)

(সমাজের প্রান্তবর্গীয় দলিত সম্প্রদায়— রুইদাসদের (চর্মকার-মুচি) নিভৃত জীবনদর্শনের চিত্রপট )

জন্মসূত্র
-সুব্রত হালদার

 

[ পাঁচ ]

দৌলতপুরের মিতালী সংঘ ক্লাব গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাব মত একটা জরুরী সভা ডাকে। মিটিংটা তাদের ক্লাবের সদস্য এবং গ্রামবাসীদের নিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইমত সভার তোড়জোড়ও শুরু হয়। যেহেতু গাছ কাটার প্রতিবাদটা কেবল গ্রামের মধ্যে থেকে নয়, পাশের গ্রাম, বিশেষ করে বয়ারিয়া গ্রামের রুইদাস পাড়া থেকেও প্রবল আপত্তি এসেছিল। তাই কাদের কাদের মিটিং-এ ডাকা হবে সেই নিয়ে আলোচনার সময় ক্লাবেরই এক সদস্য, অসীম নস্কর কথাটা তুলেছিল- বলেছিল,“রুইদাস পাড়ার আটচালার মাথাদেরও উপস্থিত থাকার জন্যে বলা হোক, যেহেতু ওই বটগাছটার পশ্চিমপাশে ভাগাড় আছে। ওই ভাগাড়ে গরু-ছাগল পড়লে ওরা সবসময় মুখিয়ে থাকে তাদের চামড়া নেবার জন্যে। এটা ওদের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন বলে মনে হয় ওদের ডাকা উচিৎ।” অসীমের কথায় তেড়েফুঁড়ে ওঠে ক্লাবের সম্পাদক, সুপ্রভাত সরকার, “কেন, ওরা আমাদের গ্রামের কে? ওদের কিছুতেই ডাকা যাবে না। তাহলে ওরা পার পেয়ে যাবে। ‘সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বার হবার’ চেষ্টা করবে। তারপর অন্য কোন বিষয়ে, হয়তো সেখানে ওরা কোনভাবে যুক্ত আছে, সেখানেও বলবে, আমাদের না জানিয়ে তোমরা কাজটা করতে পারবে না। একদম ওদের পাত্তা দেওয়া চলবে না। নীচু জাত ওরা। পায়ের পাতায় থাকার যোগ্য ওরা। কোনদিন ওদের মাথায় তুলতে নেই। প্রচলিত একটা কথা আছে না, ‘কুকুরকে ‘লায় দিলে মাথায় ওঠে!’
সম্পাদকের যুক্তিটা একদম মেনে নিতে পারেনি অসীম। একটা মধ্যযুগীয় ধারণা নিজের মধ্যে ধরে রেখে কথাটা বলছে লোকটা। মানুষের জাতপাত নিয়ে এমন নগ্ন মন্তব্য মানতে পারল না ও। একটা সম্প্রদায়ের মানুষকে উনি কি না কুকুরের সঙ্গে তুলনা করল! এইসব তথাকথিত উচ্চবর্ণের গেঁয়োদের মানসিকতা কোন্ তলানিতে এসে ঠেকেছে! এখন আস্তে আস্তে রুইদাস সমাজেও শিক্ষার আলো প্রবেশ করছে। ছেলেরা স্কুল-পাঠশাল যেতে শিখছে। সরকার নানাভাবে ওদের উৎসাহিত করছে বাচ্চাদের স্কুলমুখো করার জন্যে। ওদের পাড়ার কিছু ছেলে-মেয়ে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে। হয়তো ওদের আগের প্রজন্ম মুর্খই ছিল। কিন্তু সন্তানদের মাধ্যমে বড়রা আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছে। এইজন্যেই ওরা দৌলতপুরের উচ্চবর্ণ বাবুদের মন থেকে ‘বাবু’ বলে আর ভাবতে চায় না। ক্ষমতাবান বলে ওরা বাবুদের সামনে সমীহ করার মত আচরণ করলেও আড়ালে মোটেই সম্মান করে না। সেটা জনান্তিকে ওদের কথায় কান পাতলে বোঝা যায়। অসীম সম্পাদকের উদ্দেশে বলল, “এই যুক্তিটা কিছুতেই মানা যায় না। সমাজের অন্তজ শ্রেণীর মানুষদেরও মানুষের সম্মান দেওয়া উচিৎ। রুইদাসদের মিটিংয়ে না ডাকার বিষয়ে সম্পাদকের এই যুক্তি সব সদস্য যদি মেনে নেয় তো তাই করবে। তবে একে আমি সমর্থন করতে পারছি না। প্রকাশ্যে আমি সম্পাদকের এই বক্তবের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সম্পাদকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই প্রথম প্রকাশ্যে কেউ একজন প্রতিবাদ করল! সামান্য একটা উঠতি ছোকরা তার মুখের উপর কথা বলাটা কিছুতেই ঢোক গিলে ভেতরে গ্রহণ করতে পারছে না, সুপ্রভাত সরকার। বমির মত তাই তা উগরে দেবার প্রবণতায় অসীমের উদ্দেশ্যে বলল, “আজকাল কিছু উঠতি ছোকরারা দেখছি ভালই ডানা ঝাপটতে শিখেছে। বড়দের সিদ্ধান্তের উপর নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপাবার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ওদের ডানা এখনই ছাঁটা দরকার। প্রথম রাতেই বেড়াল না মারতে পারলে সকলকেই পস্তাতে হবে। গ্রামের রাশ হাতছাড়া হয়ে যাবে। গ্রামে অরাজকতা-অনাচার ছড়িয়ে পড়বে। কোনদিন দেখা যাবে ওই রুইদাস পাড়া থেকে কোন মেয়েকে তুলে নিয়ে নিজের বউ বলে বসবে।”
অসীম দেখল সম্পাদকের এই অন্যায় বক্তব্যের উপর তার এক্ষুণি প্রবল প্রতিবাদ জানানো দরকার। রাগে তার পা-জোড়া থরথর করে কাঁপতে লাগল! বুঝতে পেরে গ্রামের তারই এক সহপাঠী প্রদীপ সঙ্গে সঙ্গে তার কাঁধে হাত রাখল।অসীমের কানের কাছে মুখ নিয়ে প্রদীপ বলল, “মাথা গরম করছিস কেন? দেখছিস না, ক্লাবের মাতব্বররা সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলছে না! এখন তুই-আমি মুখ খুললেই ওইসব গোঁড়া বর্ণাশ্রমপ্রিয় লোকগুলো আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাতে কেচ্চা আরও বেড়ে যাবে। আর দেখ, আমরা কিন্তু দলে সংখ্যালঘু। বাড়াবাড়ি হলে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। তার চেয়ে বরং চল, আমরা নিজে থেকেই ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে যাই। আর কোনদিন ক্লাবমুখো হবো না। সেইসঙ্গে গ্রামের বাইরে এদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাব।”
অসীমদের কাছ থেকে হোক বা অন্য কোনভাবে, মিতালী সংঘের মিটিংয়ের খবরটা পেয়ে যায় রুইদাস পাড়া। সঙ্গে সঙ্গে আটচালায় জরুরী ভিত্তিতে সবাই মিলে আলোচোনায় বসে যায়, এ ব্যাপারে তাদের ঠিক কি করণীয়? হঠাৎ করে বসেছে বলে পাড়ার সব মাতব্বররা একসঙ্গে জড়ো হতে পারেনি। যে যার মত রুজি রোজগারে ব্যস্ত। মুখে মুখে খবর পৌঁছোতে সবাই একে একে এসে পড়ে। সবিস্তার আলোচনোর পর আটচালা নন্দকে ভার দেয়, এই মিটিংয়ে কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা সবিস্তারে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া জন্যে।
ওরা ঠিক করে মিতালী সংঘ মিটিংয়ে তাদের ডাকুক বা নাই ডাকুক, উপযাচক হয়ে তারা সেখানে দলবল নিয়ে যাবে। রুইদাস পাড়া থেকে এতগুলো লোক ওখানে গেলেই প্রথমে মিতালী সংঘের কর্তারা ভিমরি খেয়ে যাবে ! তাদের উপস্থিতিকে ওরা মেনে নেবে না। কিন্তু তারা ওই মিটিংয়ে থাকবেই। তাদের বক্তব্য মিতালী সংঘকে শুনতেই হবে। তারা বোঝাবে, মিটিংয়ে অন্য কোন বিষয়ের আলোচনায় তাদের কোন দায় নেই। তারা উচ্চবাচ্য করবে না। কিন্তু ওই পুরোনো বটগাছটা কাটার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে তার আগে তাদের বক্তব্য শুনতে হবে। যদি মিতালী সংঘ তা মানতে না চায় তো বড় কোন গন্ডোগোলও বেঁধে যেতে পারে। সংঘ কর্তারা রুখে দাঁড়িয়ে তাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিতেও পারে। কিন্তু তারা গাছ কাটার কোন সিদ্ধান্ত না জেনে যাবে না। তখনই সংঘাতটা বাঁধতে পারে। সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তার মোকাবিলা করার জন্যে আমাদের আগে থেকে তৈরী হয়ে যেতে হবে। দরকারে আত্মরক্ষার্থে সেই অস্ত্র আমাদের প্রয়োগ করতে হবে। তবে কোন পরিস্থিতিতে প্রথম আঘাত আমাদের দিক থেকে যেন না হয়। আমরা আক্রান্ত হলে তবেই আত্মরক্ষার জন্যে রুখে দাঁড়াবো। কেননা দৌলতপুরের গ্রামের লোকেদের অনেক পয়সা আছে। ওটা বড়লোকের গ্রাম। থানা-পুলিশ পয়সা দিয়ে ওরা কিনে রেখেছে। তাই ওরা অন্যায় করলেও ঘুরিয়ে অন্যায়টা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পুলিশের হাত কাঁপবে না। যদিও বাবার উপর বাবা আছে। দরকার হলে আমরা থানার উপরের প্রশাসনিক দপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারি। আর আমরা যে হামলে পড়ে প্রতিপক্ষের ডেরায় যাচ্ছি, আমাদের পক্ষে উপযুক্ত অস্ত্র আছে বলেই না যাচ্ছি? সেই অস্ত্র আমরা এখানে দেখাচ্ছি না। সময়মত তা প্রয়োগ করবো। তখন মিতালী সংঘ সত্যি সত্যি ভিমরি খেয়ে পড়বে। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে। আমাদের রুজি রোজগারের জন্যে বিশেষ করে খোড়া, কুনকে, পালি, কুলো সারাবার জন্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হয়। দৌলতপুর গ্রামটা আমাদের রুজির ক্ষেত্রে একটা পয়া গ্রাম। ওই গ্রাম থেকে আমরা অনেক কাজ পাই। শুধু ওগুলো কেন, বাবুদের জুতো পালিশও আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে করে আসি। তাতে যেমন বাবুদের রাস্তায় বা বাজার-গঞ্জে গিয়ে জুতো পালিশ করতে হয় না। তেমনি আমরাও বাড়ি বয়ে কাজটা করি বলে দুটো বেশি পয়সা পাই। আমাদের এইসব কাজ দৌলতপুরে যতটা হয়, অন্য কোন গ্রামে এতটা হয় না। এতে আমরা যেমন উপকৃত হই, তেমনি ওদেরও সুবিধা হয়। সেই দিকটাও চিন্তা করে আমাদের সেইরকম ব্যবহার ওদের সাথে করতে হবে। প্রথম দিকে আমরা হাত জড়ো করে অনুনয় বিনয় করে আমাদের কথা পাড়বো। আশাকরি ওরা সেটা বুঝতে পারবে। কেননা ওরা বেশিরভাগই শিক্ষিত পরিবারের লোক। নন্দ কথাগুলো আটচালাকে বুঝিয়ে বলতে এককথায় সবাই তাতে সায় দেয়। সেইসঙ্গে আটচালা রতন আর নন্দকে ভার দেয় মিতালী সঙ্ঘের সঙ্গে যাবতীয় কথা বলার জন্যে। মানে রুইদাস পাড়ার প্রতিনিধি হয়ে রতন আর নন্দ সব কথা বলবে। কেননা, পাড়ার মধ্যে এদের দু’জনের পেটে একটু বিদ্যেবুদ্ধি আছে। দু’জনেই ফাইভ ক্লাস টপকাতে পেরেছিল। তারপর তো সবাই ‘ক-অক্ষর গো-মাংস’। পেটে ঘুসি মারলে স্বরবর্ণ বা ব্যাঞ্জনবর্ণের একটা অক্ষরও বার হবে না। তাছাড়া এরা একটু যুক্তি দিয়ে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে পারে। অন্যদের মত অতটা হ্যাঁকাতে নয়। কথায় কথায় মারব ধরব বলে চেল্লায় না। রতন-নন্দ বোঝালে বাবুরা নিশ্চয়ই তাদের আবেদন মঞ্জুর করবে। ওই সর্বনাশা প্রস্তাব মুলতুবি করবে। এই বিশ্বাস রেখে ওরা মিটিংয়ের নির্দিষ্ট দিনে যাবার জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
গোটা রুইদাস পাড়া ঝেঁটিয়ে হঠাৎ গিয়ে হাজির মিতালী সংঘের বিশাল পাকা ক্লাব ঘরের সামনের প্রশস্ত ফাঁকা জায়গায়।
ক্লাব ঘরের মাঝখানটা নাট মন্দিরের মত বড় দালান। দালানের এক দিকে দূর্গা মায়ের কাঠামো। বিসর্জন দেবার পর জল থেকে কাঠামা তুলে এখানে রাখা হয়। প্রায় এক’শ বছর ছুঁই ছুঁই এদের এই পূজা। দালানের দু’দিকে বড় বড় দুটো ঘর। একটা ঘরে ক্যারাম তাস লুডো খেলা হয়। অন্য ঘরটা অফিস ঘরের জন্যে বা ছোট খাটো মিটিংয়ের কাজে লাগে। এই ঘরটায় দেয়াল ঘেঁষে বইয়ের সুন্দর তাক আছে। প্রচুর বই রাখা আছে। সদস্যরা বা গ্রামের যে কেউ এখানে এসে বই পড়তে পারে। কেউ আবার বাড়িতেও নিয়ে যায়। সেই ব্যবস্থা করা আছে। বড় দালানটায় ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা এবং অন্যন্য সদস্য হাজির। এমন সময় রুইদাস পাড়ার মেয়ে-মদ্দদের দেখে কিছুটা অবাকই হয় সবাই। ঝাঁক ঝাঁক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি রুইদাসদের দিকে আছড়ে পড়ে। তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি রতন নন্দদের। এই অস্বস্তিকর মুহূর্তকে বেশিক্ষণ টিকিয়ে না রেখে রতন বলল, “বাবু, আমরা এসেছি আজকের আপনাদের মিটিংয়ে ওই ভাগাড়ের বটগাছটা কাটা নিয়ে আলোচনা হবে, এই কথা জেনে। সত্যি যদি তা নিয়ে আলোচনা হয় তো আমরা থাকব, না হলে চলে যাব। আর এই আলোচনার আগে যদি আপনাদের অন্য কোন বিষয় নিয়ে মিটিং হয় তো ততক্ষণ আমরা ওই দূরে অপেক্ষা করছি। যখন বটগাছটার বিষয় আলোচনায় উঠবে তখন আমরা আসব। আমাদের এ ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তাই অনাহুতের মত আমরা আপনাদের পাড়ায় এসেছি। সেজন্য মাপ করে দেবেন বাবুরা।”
রতনের কথায় যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে, মিতালী সংঘের সম্পাদক, সুপ্রভাত সরকার, “আমাদের গ্রামের ভাগাড়, আমাদের গ্রামের খেলার মাঠ আর আমাদের বটগাছ। সেই বটগাছ আমরা কাটব না রাখব সেটা আমাদের গ্রামের মানুষের নিজস্ব বিষয়। তা নিয়ে তোদের কথা শুনতে যাবো কেন রে? শালা, তোরা চামার জাত, ছোটলোক, তোদের কথা শুনে আমাদের চলতে হবে? তোরা কিনা মেয়ে-মদ্দে মিলে আমাদের ঘর বয়ে তেড়ে এসেছিস? কে তোদের এতবড় সাহস দিল রে, রতন? ওই ঘরশত্রু বিভিষণ অসীম-প্রদীপরা বুঝি? ওদের তো আমাদের ক্লাব থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এবার দরকার পড়লে গ্রামছাড়া করব। রামায়ণে বিভিষণ চরিত্রটা এমনি এমনি এসেছে? এইজন্যেই এসেছে। সব শালা বেইমান, মীরজাফরের জাত। তোদের কোন কথা আমরা শুনব না রতন-নন্দ। মেয়ে-মদ্দে যে পথে এসেছিস সেই পথ দেখে ফিরে যা। দ্বিতীয়বার এ’মুখো হবি না। ফল ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।”
সুপ্রভাতের কথায় সঙ্গে সঙ্গে রুইদাসপাড়ার মেয়ে বউরা গুনগুনিয়ে ওঠে! ছেলেরাও কেউ কেউ গজরাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে নন্দ ধমক দিয়ে বলে,“এই জন্যেই মেয়েদের বলেছিলুম তোমাদের আসতে হবে না। জানি তো তোমরা মুখ-ফটকা। কোথায় কখন কি বলতে হয় জানো না। আমরা তো আছি। তাহলে তোমরা আমার আর রতনের উপর কথা বলার ভার দিলে কেন। আমরা সরে যাচ্ছি, তোমরাই তাহলে কথা বলো।” নন্দর ধমকে রুইদাসরা চুপ মেরে যায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে রাগে জ্বলতে থাকে রতন-নন্দরাও। এমন হ্যাঁকাতে লোক এই সরকারটা! কেন যে একে এতবড় একটা ক্লাবের সম্পাদক করে রেখেছে কে জানে। এমন রগচটা লোককে এই দামী পদে রাখা ঠিক হয়নি দৌলতপুরের।
সম্পাদকের এই অপমানজনক কথা মানতে পারেনি তরুণ সংঘের সভাপতি বলাই হালদার। ধুতি-পাঞ্জাবী পরা দোহারা তামাটে চামড়ার প্রবীণ মানুষ। কথায় ধীরস্থির ভদ্রতা মেশানো। আলটপকা দেখলে সমীহ করতে ইচ্ছে করবে। নন্দরা তখন ব্যস্ত রুইদাসদের সামাল দিতে। তখনই বলাই বাবু উঠে বলল, “সুপ্রভাত, তোমার এমন কড়া কথা বলা উচিত হয়নি। ওরা ছোটলোক, নীচু জাত কি উঁচু জাত তা তো ওদের গায়ে লেখা নেই। আর জাত? কেউ মায়ের পেটের ভেতর থেকে জাত বেজাতের টিকিট হাতে ধরে পৃথিবীতে আসেনি। মানুষকে এইভাবে অপমান করা ঠিক হয়নি। ওরা কি বলতে চাইছে তা না শুনে প্রথমেই এইভাবে উগ্র ব্যবহার করা যায় না। আমি তো দেখছি তোমার সম্পাদক হবার যোগ্যতাই নেই। গ্রামের নেতা হতে গেলে অনেক সহনশীল হতে হয়।”
সভাপতি বলাই বাবুর কথায় একদম চুপমেরে যায় সম্পাদক। সভাপতি তখন দাঁড়িয়েই আছে। ক্লাবের প্রবীণ সদস্য, দুলাল-কা বলল, “ওদের বক্তব্য, ভাগাড়ের ওই পুরোনো বটগাছটা ক্লাব যেন না কাটে। ভাগাড়ে গরু পড়লে আসমান থেকে শকুনেরা উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে ওই গাছাটায় বিশ্রাম নেয়। শকুনেরা ওড়াউড়ি করলেই রুইদাসরা বুঝতে পারে, ভাগাড়ে গরু পড়েছে। ওরা প্রস্তুতি নিতে পারে সেই গরুর চামড়া নেবার জন্যে। আর গাছটা না থাকলে শকুনেরও বসার জায়গা থাকে না, রতনরাও সহজে বুঝতে পারবে না, ভাগাড়ে গরু পড়েছে কি না। এই হচ্ছে রতন-নন্দদের আসল বক্তব্য। এই প্রক্রিয়াটা একদম ওদের নিজস্ব বলে ওরা সাধারণভাবে মুখ ফুটে অন্যকে বলতে চায় না। গোপন রাখতে চায়। কেননা অন্যরা জেনে গেলে ওদের এই নিয়ে খোঁটা দিতে পারে তাই।” দুলাল-কার কথাগুলো নন্দদের মনের কথা। একদম ঠিক বলেছে দুলাল-কা। নন্দর সঙ্গে দুলাল-কার অনেক ঘরোয়া কথা হয়। তাই দুলাল-কা ভেতরের গপ্প এতটা জানে। ব্যক্তিগত ভাবে নন্দ, ‘কাকা’ না বলে লোকের কাছে ‘দুলাল-কা’ বলেই পরিচয় করায়। দুলাল-কা বলার পর রতন বলল, “বলাই বাবু, দুলাল-কা যে কথাগুলো বলল, ওটাই আমাদের কথা। আর অন্য কোন কথা আমরা বলতে আসিনি। তাছাড়া আমরা গরিব মানুষ। এই মরা গরুর চামড়া দিয়ে আমরা নানান জিনিস বানিয়ে পেটের ভাত জোগাড়ের অনেকটা ব্যবস্থা করতে পারি। ওই গাছ কেটে দিলে আমাদের পেটে লাথি মারা হবে যে বাবু। কোন শত্রুও এ’কাজ করতে চাইবে না। আমরা কি আপনাদের শত্রু, বাবু?”
রতনের আবেগ মেশানো কথাগুলো ক্লাবের অন্যদের মনে ধরে। সবাই যেন এবার গুন গুন করে রতনদের পক্ষে কিছু একটা বলছে বলে মনে হ’ল। তবু সভাপতি বলাইবাবু, সম্পাদক সুপ্রভাতকে বলল, “রতনদের বক্তব্যের উপর তোমার কি বলার আছে বলো।” সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদক বলল, “ওরা বলছে বলে ওদের কথা আমাদের মেনে নিতে হবে এটা ঠিক কথা নয়। আমরা তো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে গাছটা কাটার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। গাছটা কাটলে মাঠটা অনেক বড় করা যায়। তখন আমরা ওখানে খেলার টুর্ণামেন্ট চালাতে পারব। বাইরের কত ক্লাব তখন আমাদের এখানে খেলতে আসবে। তাদের খেলা দেখে গ্রামের ছেলেপুলেরা খেলা শিখতে পারবে।”
সুপ্রভাতের কথার টানকে টেনে ধরে বলাইবাবু বলল, “বটগাছ সমেত মাঠটা যতটা বড় আছে তাতে তো খেলাধূলা ছেলেরা ভালই করতে পারে। আমরাও তো সেসময় ওখানে খেলাধূলা করে এসেছি। তারপর এখন যারা খেলা করতে বা হাওয়া খেতে একটু বিশ্রাম নিতে মাঠে যায় তারাও রাজি হচ্ছে না। গাছ কাটার পক্ষে মত দিচ্ছে না। এতকাল তো টুর্নামেন্ট ওখানে হয়নি। নাই বা হল। তাতে আমাদের গ্রামের তো কোন শ্রীবৃদ্ধি হবে না। বরং ওইসব করতে গিয়ে অনেক উটকো ঝামেলা ক্লাবকে পোহাতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল মানুষের বেঁচেবর্তে থাকার অধিকার আগে না নেচেকুঁদে ফুর্তি মেটানোটা আগে। সেইটা আমাদের ভাল করে বুঝতে হবে। যে গাছ এক-গ্রাম বা এক-পাড়া মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সামান্য দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় করার বিলাসিতায় আমরা মানুষের জীবন মরণের প্রশ্নটাকে তুচ্ছ করে দেখব? এ তো দেখছি সেই কবিগুরুর ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটার ছায়া এখানে এসে পড়েছে! বাবুর জমি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান হতে হবে। তাই গরিব উপেনের বেঁচে থাকার সামান্য অবলম্বনটুকুও ক্ষমতার দম্ভে কেড়ে নিতে দ্বিধা করেনি।”
এরপর যথাসম্ভব কড়া গলায় সভাপতি বলাইবাবু বলল, “সম্পাদকের প্রস্তাবে আমার সায় নেই। এবার সমবেত সদস্যবৃন্দ এবং গ্রামবাসী তাদের মতামত জানাক। বটগাছটা কাটা হবে, না যেমন আছে তেমন থাকবে। এখন প্রত্যেক মানুষ যে যার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাবে সেই উত্তর এখানে পেশ করা হোক। অধিকাংশ মানুষ যা চাইবে তাই হবে।”
সভাপতির মতামতের পর সভায় বেশ খানিকক্ষণ ধরে গুঞ্জন চলতে থাকে। থামতে যেন আর চায় না। মাথা নেড়ে একে অপরের বক্তব্যে কেউ সাড়া দিচ্ছে, কেউ চুপচাপ থেকে অন্যকে সমর্থন দিচ্ছে, কেউ আবার বড়বড় রাগত দৃষ্টিতে সম্পাদকের দিকে তাকিয়ে, মনে হচ্ছে বিরূপ মন্তব্য ছিটিয়ে দিচ্ছে। মুখ ফুটে আর কেউ সম্পাদকের পক্ষে কোন কথা বলছে না। পরিস্থিতি বুঝে নিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হ’ল না সম্পাদক সুপ্রভাত সরর্কারের। নিরুপায়ে সেই মুখ খুলল, “আমার বুঝে নিতে অসুবিধা হল না যে আমার পক্ষে অধিকাংশ সদস্য নেই। আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে নিশ্চয়ই গাছ কাটার কথা তুলিনি। গ্রামের সুনাম যাতে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে সেই লক্ষ্যে আমি এগোতে চেয়েছিলাম। সুনাম হলে সেই সুনাম আমি একা উপভোগ করবো না। সকল গ্রামবাসীরও তা প্রাপ্য। আমার যুক্তিটা কেউ বোঝার চেষ্টা করল না। অন্য গ্রামের লোকেদের ভাল-মন্দ নিয়ে সবায়ের রাতের ঘুম যেন ছুটে গেল। এটাও ভেবে আমার খারাপ লাগছে যে, যারা সেসময় আমার মতামতে সায় দিয়েছিল, যাদের সমর্থনে আমি এ কাজে এগিয়েছিলাম তারাও আমার পক্ষে কোন কথা বলছে না। এই পরিস্থিতিতে আমার আর সম্পাদক পদ আঁকড়ে থাকার কোন মানে হয় না। আমি মিতালী সংঘের সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এই সভা পরিত্যাগ করলাম।”


[ ছয় ]সেই যে দৌলতপুরের চড়ার ধারে ভাগাড়ে গরুটা ফেলে এসে বাড়ি গেল, দেখতে দেখতে দশ দিন পার, এসেরালি আর এদিকে আসছে না। ওর সঙ্গে আরও পাঁচজন ভাগাড়ে গেছিল ওকে সাহায্য করার জন্যে। তাদের যখন খবর দেওয়া হয়েছে তারা কাজে এসেছে। এসেরালির বাড়িটা একটু দূরে। সেই তেলিয়া গ্রামে। হাঁটা পথে তো চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে যায়। ওদের পাড়ার হাসেম, নিয়েতকে দিঘিরপাড় বাজারে দেখা হলে বারবারই এসেরালিকে আসতে বলতে বলেছে শিবুবাবু। কিন্তু তার পাত্তা নেই। একদিন হাসেমকে চেপে ধরতে সে বলল, “তার মেয়েটাকে বলেছি, তোর বাপকে বলিস, বাবু দেখা করতে বলেছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই বলেছে। তা সে যদি না আসে আমি বা কি করি।” এবার শিবুবাবু চাপ দিয়ে বলল, “ও বাচ্চা মেয়ে। খেলে বেড়ায়। ওর কি ওসব মাথায় থাকে। তুইও হাসেম, আছিস তেমন। নিজে গিয়ে একবার বলে আসতে পারলি না। নিয়েতকে বললাম। সেও হয়তো তোর মত কাউকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে। এমন কথার বাহনকে পাঠিয়েছে, সেও ওই এসেরালির কচি মেয়েটার মত কেউ হবে। ঠিক আছে, তোরা যখন খবর দিবি না তখন আমাকেই ওর বাড়ি যেতে হবে। লোকটা কেন এতদিন হয়ে গেলে এদিকে আসছে না তা তো জানা দরকার। শরীর-টরির তো খারাপ হতে পারে? নাকি অন্য কিছু। কে জানে!”
হাসেম দেখলো বাবু ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে। প্রকাশ্যে না বললেও মনে মনে হয়তো তাদের এই কাজে হতাশ! শিবুবাবু চাষবাসে তাদের অনেক কাজ দেয়। বাগান চাষ তো বারোমাস করে। ওরাই সেইসব কাজ করে। এবার বাবুকে বিগড়ে দিলে আর কাজে নাও ডাকতে পারে। তাই আগ্রহ দেখিয়ে বলল, “বাবু, তোমাকে আর অতদূর হেঁটে এসেরালির বাড়ি যেতে হবে না। আমি আজই, এখনই বাজার থেকে ফিরে ওর বাড়ি যাচ্ছি। বিকেলে হাটে ফেরার সময় তোমার বাড়ি ঘুরে এসেরালির খবর দিয়ে তারপর নিজের কাজে যাবো। তুমি একদম চিন্তা করবে না। তুমি এত চিন্তা করছো, আর ও ব্যাটা নিশ্চিন্তে ঘরে শুয়ে আছে। এটা ও ঠিক কাজ করেনি।”
বিকেলে হাটে যাবার আগে হাসেম শিবুবাবুর বাড়িতে এসে খবর দিল, ক’দিন ভ’র এসেরালির ধুম জ্বর। দিন দুই হল জ্বরের দাপটে একটু লাগাম টেনেছে। কাজে বার হতে পারছে না। ফলে এদিকে রান্নাঘরের ভাঁড়াড়ে টান পড়েছে। এসেরালির বউ বলল, “বাবুর গরুটা ভাগাড়ে ফেলে আসার দুদিন পর থেকেই জ্বরটা কামড়ে ধরল ওকে। গরুটাকে নিয়ে দিনরাত চিন্তা করত। আসলে খুব ভালবেসে ফেলেছিল যে। ওটার মরণ ও মেনে নিতে পারছিল না।” হাসেমের কথা শুনে শিবুবাবুর মনটাও কেমন দমে গেল। জানে, এসেরালি গরু জোড়াদুটোকে ভালবাসতো। কিন্তু সে যে ওদের এতটা আপনজনের মত করে নিয়েছিল তা কোনদিন ভাবেনি। বাবুর পাশে গিন্নীমা দাঁড়িয়ে ছিল। হাসেমের কথা শুনে গিন্নীমা বলল, “গরুদের এত ভালবাসতো এসেরালি, নাঙল জোড়ার আগে ওদের একবার জাবনা খাইয়ে তবে চাষে নামাবে। বলবে, পেটে বল পেলে তবে না শরীরের তাকত দেখাতে পারবে । পেটে বল নেই আর তাদের যদি হ্যাট হ্যাট, চল্ চল্ বলো আর কঞ্চি দিয়ে কাপসাও, তারা পারবে কেন। এইজন্যেই তো ওরা এত খাটতে পারতো। আর লোকে হিংসে করতো, শিবুবাবুর গরু জোড়া রোজ যতটা জমি চষতে পারে, তার ধারেকাছে অন্য কোন বলদ জোড়া যেতে পারে না। হালের জোড়া, শিবুবাবুর হালের জোড়া। দেখার মতো জোড়া। আর সেইসঙ্গে তার হেলো, এসেরালি। দক্ষ পরিচালক না হলে আবার কর্মঠ কর্মী থেকেও কাজে আসবে না। লোকে যা বলে একদম সত্যি। হেলোকেও হতে হবে দক্ষ। শুধু চাষে নামার আগে কেন, গরু গোয়ালে ঢুকিয়ে আবার খোলভুষি দিয়ে জাবনার ব্যবস্থা করে তারপর সে হাত পা ধুয়ে ক্ষান্ত হয়। এমন পয়মন্তর হেলোও ক’টা পাওয়া যায়!” বলে একটু থেমে গিন্নীমা আবার বলল, “হাসেম, হাট থেকে তুমি বাড়ি ফেরার সময় আমাদের বাড়ি হয়ে একবার যেও? সত্যি তো, দশ দশটা দিন ও কাজে বার হতে পারেনি। রান্নার ভাঁড়ারে টান তো পড়বেই। বেচারা যেমন কষ্টে আছে, তার বাচ্চা বউরাও তো শুকিয়ে আছে গো! আমি এক পুঁটলি চাল আর কিছু সব্জি গুছিয়ে রাখছি। নিয়ে যেও। এসেরালিকে বোলো, গিন্নীমা পাঠিয়েছে। আর সুস্থ হলে আসতে বোলো।”
গিন্নীমা চাল ডাল সব্জি এসেরালির জন্যে গোছাতে ব্যস্ত। পাশেই শিবুবাবু বারান্দার চেয়ারে বসে। শিবুবাবু বলল, “জানো, ভাবছি কাল একবার সময় করে সাইকেলটা নিয়ে এসেরালির বাড়ি যাই। ওকে দেখে আসি। ডাক্তার-বদ্যি দেখিয়েছে নাকি শুধু ওইসব টোটকা-মোটকা করে পড়ে আছে কে জানে। না হলে এতদিন তো জ্বরে ভোগার কারণ দেখছি না। জ্বর সাধারণত তিন দিন থেকে বিদেয় হয়। আর আমার জন্যে ও অসুখে পড়ল। ওর বিপদে পাশে আমাদেরই থাকা দরকার। তুমি কি বলো?” গিন্নীমা উত্তরে বলল, “সেটা ঠিক কথাই বলেছো। পাশে থাকা মানে শুধু ওর বাড়ি গিয়ে পাশে বসে ভালমন্দ কথা শুনিয়ে কর্তব্য শেষ কোরো না যেন। কিছু নগদ টাকা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে এসো। পাশকরা ডাক্তার দেখাতে গেলে তো পয়সার দরকার। কাজ নেই তার পাবে কোথা থেকে। পেটের ভাত জোগাড় করতে পারছে না আবার পাশ করা ডাক্তার দেখাবে। দেখো গে, ওই টোটকাতেই হয়তো দিন পার করছে। হ্যাঁ, আর একটা কথা, যে টাকা দেবে, সেটা আবার যেন ওর দাদনের খাতার হিসেবে যোগ করে দিও না। গরিবরা তো এই করেই দেনার জালে জড়িয়ে জীবনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। জন্ম জন্ম বাবুদের পায়ের তলায় গড়াগড়ি খেতে হয়। সেই কাজটা তুমি করবে না। অবশ্য তুমি তেমন মানুষ নও। তবু বলে রাখলাম।” গিন্নীমাকে তারিফ করে শিবুবাবু বলল, “এই জন্যেই লোকে যোগ্য বাবুর যোগ্য গিন্নীমা বলে তোমাকে। তুমি তো আমার মনের কথাই কেড়ে নিয়ে বলে দিলে। ওইটাই আমি ভেবে রেখেছিলাম। তোমাকে শোনানোর আগেই তুমি আমায় শুনিয়ে দিলে। টাকা তো কত লোকের আছে। কিন্তু ক’জন সেই টাকা সঠিক কাজে লাগায় বলো তো ? সব অকাজে খরচ করে বসে। আমি যদি এসেরালির এই বিপদে ওর পাশে দাঁড়াই, ও আমাকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করবে। আমাদের কোন দরকারে-অদরকারে ও জান লড়িয়ে দিতে দ্বিধা করবে না। যে লড়াই পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। হৃদয় দিলে তবেই হৃদয়কে ছোঁয়া যায়।”
মজলিশপুরের মোড় থেকে ইট বেছানো রাস্তাটা বেশ খানিকটা এঁকে বেঁকে যাবার পর বাঁদিকে এসেরালিদের তেলিয়া গ্রামটা রেখে চলে গেছে মলং-কোদালিয়া হয়ে ইদমহল, বলাখালি ছুঁয়ে আমিড়ার দিকে চলে গেছে। আগের দিন রাত্রে কয়েক পশলা ভারি বৃষ্টিও হয়ে গেছে। মাটির উপর ইট পাতা। সাইকেল, ভ্যান, বাইক যাতায়াত করতে করতে রাস্তার ইট কোথাও ডেবে গেছে কোথাও আবার মুখ উঁচিয়ে আকাশ দেখছে। ইট আলগা হয়ে তার ফাঁকে জমে থাকা কাদা জল কখনো ফচাৎ করে ছিটকে সাইকেল তো বটে, নীচের দিকে কাপড়ে ছিটকে দেগে দিয়ে যাচ্ছে। সাইকেলের কলকব্জা কতটা আঁটোসাঁটো, তা এই রাস্তায় এলেই বোঝা যায়। কাদাজলের দোসর এখন এই সাইকেলের ঝনঝনে শব্দ। বিরক্তির আর শেষ নেই। মনে হচ্ছিল যেন, এমন জানলে এসেরালির বাড়ি আসার রায় সে দিত না। আর রাস্তার পাশে যেখানে ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া বট অশ্বত্থ বা বাবলাগাছ আছে, সেখানে বলার কথাই নেই! ফচাৎ ফচাৎ কাদা ছেটকানোর যেন প্রতিযোগিতা চলছে। দেখেশুনে সাবধানে না চালালে চাকা হড়কে সাইকেল আছাড়ও খেতে পারে। তবু কিচ্ছু করার নেই। যাবতীয় বিড়ম্বনাকে এড়িয়েই এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
নিয়েতই প্রথম দেখতে পায় শিবুবাবু সাইকেল টানতে টানতে তাদের পাড়ার দিকে আসছে। দৌড়ে ছুটে যায় সে, “আরে বাবু, তুমি আমাদের পাড়ায়? এসেরালির খবর নিতে? দিন সাইকেলটা আমাকে। কাদায় কাদায় তো ব্রেকের কাছে জমাট বেঁধে গেছে। গড়াবে কেমন করে। আপনি আস্তে আস্তে এগোন বাবু। আমি সাইকেলটা ধুয়ে পরিস্কার করে নিয়ে যাচ্ছি।” একটু চেঁচিয়ে বলল, “ও হাসেম, বাবু এসেছে রে আমাদের পাড়ায়। সঙ্গে করে নিয়ে যা এসেরালির বাড়ি।” শিবুবাবু এসেছে মানে তেলিয়া গ্রামে যেন ভগবানের মত কেউ এসেছে। একে একে ভীড় জমতে লাগল। জড়ো হওয়া মেয়েদের আবার উৎসাহ বেশি। একবারের জন্যে তারা বাবুকে দেখতে চায়। নিজেদের মদ্দদের কাছে বাবুর নাম শুনেছে। কিন্তু চোখে দেখেনি। এখন যখন হাতের কাছে পেয়েছে, অদেখার খামতিটা মেটাতে চায় ওরা। হাসেম, নিয়েত, খাজেবক্স সারাক্ষণ ছিল এসেরালির বাড়ি। বাবু বেরোলে সাথে সাথে তারাও চলে যায়। আসলে এই পাড়ার প্রায় সবাই জন-মজুরের কাজ করে। শিবুবাবুর মণিবীয়ানা সক্কলের মন ছুঁয়ে যায়। জন-মজুরকে শিবুবাবু কোনদিন নিছক জন-মজুর হিসেবে দেখে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহার করে। তাই সকলের কাছে এত প্রিয়।
ফেরার সময় শিবুবাবুকে আবার ওই কাদামাটির রাস্তার উপর দিয়ে যেতে হবে। মেন রাস্তাটা ইট বেছানো হলে কি হবে, ওদের তেলে গ্রামের ভেতরের রাস্তায় এখনো তা হয়নি। ফলে একটু বৃষ্টিতেই রাস্তা কাদাজলে একাকার। বাবুর কষ্ট হবে। তাই হাসেম বলল, “বাবু চলুন, আমি আপনার সাইকেলটা টেনে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের গ্রামের রাস্তাটা আপনাকে সঙ্গ দিয়ে পার করে দিই। আপনি খালি হাতে চলুন। কাদায় সাইকেল টানতে টানতে আপনার হাত পা ব্যথা হয়ে যাবে।” এদের এই আতিথেয়তায় শিবুবাবু যারপরনাই অভিভূত! এরা টাকাপয়সায় গরিব হলে কি হবে, এদের মত ধনী অন্তর, পয়সায় বড়লোকদের মধ্যে মেলা ভার। গল্প করতে করতে শিবুবাবু বলছিল, “জানিস হাসেম, বলদ জোড়ার একটা তো চলে গেল। মনে হচ্ছে ওর ওই চলে যাওয়াটা আমার ভবিষ্যৎ জীবন চলনের গতি প্রকৃতিও এদিক ওদিক হতে চলছে। ইদানিং শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। এসেরালিকে বলেছিলাম আগেরটার মত আর একটা বলদের খোঁজ কর। কিন্তু সেও তো খোঁজ দিতে পারছে না। আসলে কি জানিস, ঠিক ঠিক অমন জোড়া পাওয়া মুশকিল। তাই ভাবছি আর হালের জোড়া নতুন করে বাঁধবো না। চাষবাস আমি এবার ছেড়ে দেবো। ডাক্তার বারবার পরামর্শ দিচ্ছে চেঞ্জে যাবার জন্যে। আবহাওয়া পরিবর্তন করতে। অন্তত কয়েক মাস। তবে যদি নড়বড়ে হতে থাকা শরীরটা শক্তপোক্ত হয়। এদিকে তোর গিন্নীমা ডাক্তারের নিদেনের কথা ছেলের কানে শুনিয়ে দিতেই ব্যাস। শিলং থেকে ছেলে চাপ দিচ্ছে ওখানে চলে আসার জন্যে। বাপ-ছেলের এই ঝুল পেটাপেটি চলছে অনেক দিন থেকে। এখানে এইসব কর্মযজ্ঞ ছেড়ে যাই বা কেমন করে। তাই আমি ছেলের কথায় ঘাড় পাতছিলাম না। শৈল শহর শিলংয়ের ডি.এম. তোদের দাদাবাবু। বড় বাংলো। অনেক ঘরবাড়ি। থাকার কোন অসুবিধা নেই। মনোরম পরিবেশ। স্বাস্থ্যদ্ধারের একদম উপযুক্ত স্থান। তাই ভাবছি এবার হয়তো ছেলের কথায় সায় দিতে হবে। চিন্তা করছি কালো গরুটা এসেরালিকে দিয়ে দেবো। ওর হাতে গড়া গরু। ওই ভালভাবে পালতে পারবে। আর চাষবাস সব আমার মেজো আর ছোট ভাইয়ের হাতে ছেড়ে দেবো। ওরাই ওগুলো দেখাশোনা করবে। সার ওষুধের যা আকাশছোঁয়া দাম হয়ে গেছে, চাষে আজকাল তেমন লাভের মুখ দেখা যায় না। লোকের মজুরী আর অন্য যাবতীয় খরচ সামলে সামান্য কিছু পড়ে থাকে। তা থেকে ভাইরা যা দেবে মেনে নিতে হবে। তবে হ্যাঁ, এসেরালির একটা ব্যবস্থা করে যাব ভেবেছি। আমার দক্ষিণ মাঠের ওই দশবিঘের বন্দের মধ্যে দু’বিঘে জমি এসেরালিকে চাষ করতে দেব। চাষবাস করে যা পারবে আমাকে দেবে’খন। চাপাচাপি করব না।”
এবার হাসেম কথাটা তুলল, “বাবু, তুমি ওকে দু’বিঘে জমি চাষ করতে দেবে, তা আগাম চাষ না ভাগ চাষ।” বাবু বলল, “আরে বোকা, আগাম বা ভাগচাষ, ওসব কিছুই না। ওর সংসারটা বাঁচানোর জন্যে যা হোক সম্বচ্ছর ধান, মুগ, খেসারি কড়াই বা এটাসেটা চাষ করবে। আর এদিক সেদিক জন-মজুর খেটে নগদ পয়সাটা পেলে ওর চলে যাবে। মেজোবাবু, ছোটবাবুকে অবশ্য বলব, এসেরালি এবং তোদেরও যাতে দরকার পড়লেই কাজে ডাকে। তুই তো এমনিতেই ছোটবাবুর কাছে কাজ করিস। আমার জমিজমা চাষের জন্যেও তোদের কথা বলব’খন।”
হাসেম কিন্তু টিপ রেখে দাঁড়িয়ে আছে ওর প্রশ্নের উপর, “বাবু তুমি যাই বলো, তুমি তো আশা করছো এসেরালি যা পারবে কিছু কিছু চাষের লাভের অংশ তোমাকে দেবে। তার মানে তো ও তোমার ভাগচাষী হয়ে গেল। এবার ও যদি তোমার ওই দু’বিঘের বর্গা রেকর্ড করে নেয়? তখন তো তোমার জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে। ও জমি তুমি আর ফেরত পাবে না। এসেরালির হয়ে যাবে। না, তাই বলে ভাববে না, তুমি এসেরালিকে জমি দেবে বলছো বলে আমি ভাঙচি দিচ্ছি। সমাজে যা ঘটছে, তাই দেখেশুনে বলছি আরকি। অন্যসব বাবুদের কত জমি এইভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল! সেইজন্যে এখন সম্বচ্ছর আগো জমি পড়ে থাকবে- তবু আচ্ছা। কিন্তু ভাগচাষ বাবুরা আর কেউ দিতে চাচ্ছে না। এতে হল কি জানো বাবু, আমাদের মত গরিব চাষি-মজুরদের পেটে লাথি মারা হল।”
শিবুবাবু একটু চিন্তা করে বলল, “তুই যে কথাটা বলছিস তা একদম বাজে কথা তা তো নয়। আকছার এই ঘটনাটা ঘটছে। তাতে কি হচ্ছে বলতো, তোরা তো চাষের জমি না পেয়ে মরছিস, সেইসঙ্গে যারা পেয়ে বর্গা রেকর্ড করেছে তারাও কি ভাল আছে? বরাবরের জন্যে সেই জমি তারা ধরে রাখতে পারছে? পারছে না। ওই দেখ না, দিঘিরপাড়ের দিকে যেতে ডানদিকের জমিগুলো। সরকার থেকে চাষের জন্যে গরিব লোকগুলোকে পাট্টা দিল। কিছুদিন তারা চাষ করল। কিন্তু এখন দেখ, একটা জমি সেই লোকগুলো ধরে রাখতে পেরেছে? অভাবের তাড়নায় এক এক করে সব্বাই অন্য লোককে বিক্রি করে দিল! আসল লোক এখন একটাও নেই! আমারও তো উলকুনীর দশবিঘে জমি বর্গা হয়ে গেল। আমি তার কিচ্ছু পাই না। কিন্তু যারা বর্গা রেকর্ড করল, সেই জমি তাদের কারোর হাতে নেই। দু’বার এমনকি তিনবারও হাত ফিরি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে সেই জমি। তাই শুধু জমি বর্গা করে দখল-অধিকারে নিলে হবে না, সেই অধিকার ধরে রাখার ক্ষমতা রাখতে হবে। চাষবাসের যা খরচ এখন ওই দু’বেলা দু’মুঠো মজুর খেটে আনা মানুষগুলো সেই চাষের খরচ সামলাবে কেমন করে। তাই তারা অভাবে দখল হাত ফেরি করছে। কিন্তু সেই জমির আসল দলিল প্রকৃত মালিকের হাতে। সেই অধিকার বর্গারা কোনদিন পাবে না। সরকার পাল্টাবে, পরিস্থিতি পাল্টাবে এবং একটা সময় আসবে, সেই জমি আসল মালিকের হাতে চলে আসবে। এই বর্গা-টর্গা সরকারের রাজনৈতিক চমক ছাড়া আর কিছু নয়। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যে কিছুদিন এই চমক কাজ দেবে। তারপর সেই চমকের ফানুস ফটাস করে ফেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। এই দেখ না, সিঙ্গুরে কি হ’ল। টাটার কারখানার জন্যে সরকার জমি নিল। ক্ষতিপূরণ কারা পেল? জমির আসল দলিল যাদের হাতে, সেই মালিক পেল। আর ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত ভাগচাষিরা রেকর্ড করা বর্গা দলিল নিয়ে নাচানাচি করে গেল। লবডঙ্কা পেল তারা। বরং ওসব না করে বাবুদের সঙ্গে সৎ আচরণ করলে আখেরে চাষিদেরও লাভ। তাদের কোনদিন পেটের ভাতের অভাব হবে না।”
দু’একদিন ছাড়াই শিবুবাবু হাসেম বা নিয়েত অথবা ওদের গ্রামের যার সঙ্গে দেখা হয়, এসেরালির শরীরের খোঁজ নেয়। সবাই একই কথা বলে, জ্বর ছাড়ান দিচ্ছে না ওর। হঠাৎ একদিন ভোরবেলা হাসেম হন্তদন্ত হয়ে শিবুবাবুকে ডাকাডাকি শুরু করে, “বাবু এসেরালির শরীর একদম ভাল না। ভোর রাত থেকে খিঁচ শুরু হয়ে গেছে। ওকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তার বলল, এক্ষুণি ওর পা অপারেশন করতে হবে। গোড়ালির উপর থেকে পা কেটে বাদ দিতে হবে। গ্যাংরিণ হয়ে গেছে। পচন শুরু হয়ে গেছে ওর পায়ে। কবে মাঠে কাজ করতে গিয়ে পেরেক মেরেক ফুটেছিল। সেটা নাকি বার হয়নি। সেই থেকে পচন শুরু। এখন কি হবে বাবু?” শিবুবাবু সঙ্গে সঙ্গে শিলংয়ে ছেলের কাছে ফোন করে পিজির সুপারকে বলতে বলল, যাতে ওকে পিজিতে ভর্তি করানো যায়। ছেলে সব ব্যবস্থা করে পাল্টা ফোন করে পিজিতে রোগীকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে বলল। শিবুবাবু নগদ হাজার পাঁচেক টাকা হাসেমের হাতে দিয়ে বলল, “যা, এক্ষুণি অ্যাম্বুলেন্সে পিজির এমার্জিন্সিতে নিয়ে যা। ওখানে ডাক্তার পল্লব পাল বলে একজন ডাক্তারবাবু থাকবে। তাকে আমার ছেলের নাম বললেই সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। পল্লব ডাক্তার তোর দাদাবাবুর সঙ্গে এক ক্লাসে পড়েছে। ও ডাক্তার হয়েছে। আর তোর দাদাবাবু আই.এ.এস অফিসার। যা, একদম দেরি করিস না।”
শিবুবাবুর ভোরের আরাম-ঘুম ছুটে গেল। মুখটুখ ধুয়ে গিন্নিকে বলল চা বানিয়ে আনতে। দু’লোকে ডাইনিং টেবিলে চা খেতে খেতে এসেরালিকে নিয়ে আলোচনা করছিল। বাবু বলল, “হাসেম কি বলতে কি বলছে বুঝতে পারছি না, খিঁচুনি যদি ধরে যায় তো ও রোগীকে ফেরানো মুশকিল। ধনুষ্টঙ্কার রোগীর বেঁচে ফেরা মনে হয় সম্ভব নয়। পিজি বড় হাসপাতাল। যদি ওদের কেরামতিতে এসেরালি প্রাণ ফিরে পায়। তবে মনে হয় না। এই মনে একটু সান্ত্বনা যে ভাল জায়গায় চিকিৎসা করেও বাঁচানো গেল না। দেখো, ওদের পরিবারের কাছে আমরা ঋণী হয়ে গেলাম। আমার জমিতে চাষের কাজ করতে গিয়েই তো ওর পায়ে জংধরা পেরেক গেঁথে গেছিল। আর ওটা এমন হ্যাঁকাতে, পাত্তাই দিল না সেটাকে। হয়তো বাবলা কাঁটা-মাটা ফুটেছে ভেবে অবজ্ঞা করেছে। তখনই সাবধান হলে, প্রণব ডাক্তারের কাছে গিয়ে সেটা পা থেকে বার করে দিলে এই বিপদে পড়তে হত না। এখন তো ওর সংসারটা ভেসে যাবে। আমার আর কি করার আছে। বড়জোর ভাইদের বলে ওর বোয়ের জন্যে চাষের জমিতে বা ডাঙায় যতটা বেশি পারা যায় মজুরের কাজের ব্যবস্থা করতে পারি। আর যে দু’বিঘে জমি এসেরালিকে চাষ করার জন্যে দেবো বলেছি সেটা যদি ওর বউ করে, করবে। এমনিতে তো ওর বউ জমিতে ঘাষ নিড়ানের কাজ করে। চাষের কাজে অভ্যস্ত সে। এবার তার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল আর কি।”

Loading

Leave A Comment