আমাকে যাবেনা ছোঁয়া
-অমল দাস
কার্ত্তিকের কুয়াশা সকাল -ভিক্ষুক ঘাসের পাতায় জল-অন্ন।
পায়ে পায়ে হেঁটে যাই প্রভাতী আবহে
পথ-পাশে আশ্বিনে ঝলসানো কাশের সারি সারি ঝোপ
হাওয়ার মৃদু ঝনঝন আর গোয়ালের গরু হাতে-
এক গোয়ালিনীর নূপুরের ধ্বনি নিস্তব্ধতা কেড়ে নেয়..
-মাঠে জনখাটা কৃষকের দল -নোনা ঘাম শস্যের শ্বসনে।
ভোরের সূর্যের লাল তখন অস্ফুট পূবের আকাশে
কোনো খুনি রক্তলীলায় খেলে আসে সদ্য -হাসে
তার আভা -জড়াতে চায় মাঠ ভাঙা পথে।
যেন আমায় তরবারি হাতে অপরাধী হতে বলে!
আমাকে যাবে না ছোঁয়া…
সবুজ ধানের শিষে দুগ্ধ দানার-মতো সতত
জেগে থাকি পতঙ্গের শাপিত মহারণে।
আমি আকাশের নীচে –পৃথিবীর’পরে
অন্ধকারের যোনির ভিতর থেকে জেগে উঠি..
খুঁজি সেই ভোরের বাউল, আজ-
মৃত সভ্যতার নীড়ে -কোথায় কোন জীর্ণ কবরে
অথবা ধ্বংসস্তূপে রয়েছে ঘুমিয়ে..
সবুজের ঘরে, নদী ভাঙা চরে..
কার্ত্তিকের নীল চাঁদের নগরে –মরুর সাগরে হেঁটে যাই
কস্তূরী মৃত্তিকার ঘ্রাণ আমার সমস্ত শরীরে।
আরও কিছু প্রেম-বিষ ঘ্রাণ দিয়েছিল প্রিয়ে
আঁতুড়ের উদ্বায়ী আতর সব -উবে গেছে বহুকাল
নীল প্রান্তসীমার ওপর দিয়ে অসীমের পারে
সাঁঝের শঙ্খনিনাদ-স্বরে সূর্যের মরণের আগে
যে সমুদ্র স্রোত লুটিয়ে পড়ে নুন-বালি-শামুক-ঝিনুকে
সেই বিষণ্ণ বিকালে তোমাকে পেয়েছি মুখচোরা শব্দের মতো
বিলাসী হাওয়ায় ভেসে কান ঘেঁষে-
দূরে অস্পষ্ট পাতাঝরা সেগুনের বনে…
পলাশের সব পাতা চুরি গেলো
-লালে, লালিত হওয়ার আগে।
সজনের ডাল ভেঙে আছে -ভাঙা কারও চালে
আমার অমীমাংসিত পথে পৃথিবী ঢলে পড়ে
কুমড়ো লতার মতো মনমরা হলদেটে মৃতপ্রায় ঘাসের উপর
আকাশের তারার আলো গিলে খায় কুয়াশার গ্রাস
অজানা পাখির ডানা ঝাপটায় অন্ধকার কালো রঙ মেখে
আমাকে যাবে না ছোঁয়া –যাবে..না.
কার্ত্তিকের রাতে..
আমি আঁধারের সুর ধরে আরও গভীর আঁধারে…
–আলেয়ার কিনারে…