Site icon আলাপী মন

ধারাবাহিক- জন্মসূত্র (১৪)

জন্মসূত্র
সুব্রত হালদার

 


[ বত্রিশ ]


গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর কালবৈশাখীর দাপদাপানিটা যেন বড্ড বেশি দেখা যাচ্ছে। সেই চৈত্র মাস থেকে শুরু হয়েছে। সারা বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দফে দফে কতবার যে ঝড় বৃষ্টি হ’ল তার ঠিক নেই। তারপর এই আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে মৌসুমী বায়ুর এমন হামলা দেখা যায় না। হাওয়া অফিস তো একটার পর একটা ফরমান দিয়ে চলেছে। মাঠে চাষে যেতে নিষেধ করছে বজ্রাঘাত থেকে চাষীদের প্রাণ বাঁচাতে তো নদী-সমুদ্রে ট্রলার-নৌকো ভাসাতে কড়া বার্তা দিয়ে চলেছে। ওদের কথা না মানলে তো আবার ঝড়ের গ্রাসে মাঝ সমুদ্রে ট্রলার মাঝি সমেত গায়েব হয়ে যাচ্ছে। খবরিয়ার দল টিভিতে, খবরের কাগজে, রেডিওতে মন্তব্য করছে, পৃথিবীতে গরমের হু হু করে বাড়বাড়ন্তর জন্যেই প্রকৃতি এই খামখেয়ালীপনা শুরু করেছে। এর জন্যে দায়ী মানুষই। এত কলকারখানা, এত যানবাহন, এত গাছপালা হুড়মুড়িয়ে কেটে সাফ করে দিলে মা ধরিত্রীকে ঠান্ডা করার সাধ্য কার! ফলে যা হবার তো হচ্ছে। দেখবি, আবার একটা সময় আসবে, এই অতিবৃষ্টি, খেয়ালীপনায় আবার অনাবৃষ্টির অবস্থার সৃষ্টি না হয়। তখন তো আবার আমাদের এই জলের জন্যে আসমান পানে দু’হাতের আঁজলা পেতে,‘জল জল’ করে হাপিত্যেশ করে যেতে হবে। পাই ধরে একই জমিতে ‘আগো চাষ’ দিতে দিতে কথায় কথায় বলছিল দুই হালের কাঁড়া’র দুই হেলো, সুধা আর কাসেম। হ্যাট্ হ্যাট্ করে নাঙ্গল ঠেলতে ঠেলতে সুধা একটু এগিয়ে যায়। কাসেম যায় সুধার থেকে খানিক পেছিয়ে। একসাথে নাঙ্গল ঠেলার সময় আগুপেছু বেশি ফারাক হলে আবার চলে না। পাই ঘেঁটে যায়। তাই কাসেম বলল,“সুধা, দাঁড়িয়ে যা। আমার বাঁয়াটা একটু কমজোরি আছে। সেই একহপ্তা হয়ে গেল ‘হাটগেছের’ মাঠে চাষের সময় নাঙ্গলের ফলাটা বাঁয়ার খুরের ভেতর গুঁজে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে গেছে। বুঝতে পারিনি। গরুটাও তখন কোন গুরুত্ব দেয়নি। দিলে তখনই সে খোঁড়াতো। কিন্তু হাল ছেড়ে যখন জোত খুলে সন্ধ্যে বাড়ি ফিরছি, তখনই বেটা খোঁড়াতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ব্যথাটা বাড়ে আর কি। পা ধরে তুলে দেখি তখনও রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়া গাছের পাতা হাতে কচলে তার রস দিলাম। বাড়িতে গিয়ে শুকনো লঙ্কা-তেল গরম করে লাগালাম। তখন বেটা বেশ পা ছটকাচ্ছিল। তারপর জাবনা খেয়ে শুয়ে পড়ে। সকালে দেখি আর খোঁড়াচ্ছে না গরুটা। ওখানেই আমার ভুল হয়েছিল, পরের দিন আবার হাল নিয়ে মাঠে নামা। ঘা-টা তো পুরো সারলো না। আবার সেই পা নিয়ে শক্ত আগো মাটি ভাঙতে গিয়ে তাতে বারবার আঘাত লাগে। পরদিন আবার খোঁড়াতে লাগল। বিডিওতে ডাক্তারের কাছে যেতে ডাক্তার ওষুধ-ইঞ্জেকশন দিল। বলল, “এখন এক সপ্তা গরুকে জিরেন দিতে হবে। নাহলে তোমার এই বর্ষার চাষে এ গরুকে আর কাজে লাগাতে পারবে না।” তাই করলাম। কিন্তু সেই থেকে গরুটা যেন অনেকটা কমজোরি হয়ে গেল। ডাঁয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারে না। আবার যদি সে জখম হয়ে যায়! সেই ভয়ে আমিও আর বাঁয়াকে চাপাচাপি করি না। সুধা, তুই একটু থাম। গরুজোড়াকে খানিক জিরেন দিই। সেইসঙ্গে আমরাও দু-চার ফুঁক বিড়ির টান দিয়ে নিই।” কাসেমের কথায় সুধা তার হালজোড়া থামিয়ে দেয়,“চল তা’লে কাসেম। জমির আলে বসে একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক। ঘন্টাদুই হয়ে গেল আমরা জিরেন নিইনি। আমাদের সঙ্গে গরুরাও খেটে চলেছে। দু’তরফেরই একটু বিশ্রাম দরকার।”
ক’দিনের বৃষ্টিতে জমিতে মইচাপ জল দাঁড়িয়ে গেছে। সেই জলে হাতটা ধুয়ে নেয় কাসেম। ভিজে হাতটা গামছার এক খোঁটে মুছে অন্য খোঁটে পলিথিনের ছোট্ট থলেতে জড়িয়ে রাখা বিড়ির প্যাকেট আর দেশলাই সতর্ক হয়ে বার করে। যাতে দেশলাই বাক্স আবার ভিজে না যায়। তাহলে তো আর তাতে কাঠি ঘসে আগুনের জন্ম দেওয়া হয়ে উঠবে না। বিড়ি ফোঁকারও দফারফা হয়ে যাবে। পেরেছে কাসেম। দেশলাই কাঠিতে আগুনকে পৃথিবীর মুখ দেখাতে পেরে মনে মনে পরীক্ষায় পাশের গর্ববোধ করে। এরপর আর সময় খুইয়ে দেবার উপায় নেই। বিড়িটা কাঠির আগুনের সামনে আহুতি দিয়ে ফুঁক ফুঁক করে দু-চারটে লম্বা টান মেরে মুখের ভেতর একগাদা ধোঁয়া ভরে নিল। ওদিকে বাঁ হাতে নিজের বিড়িটা ধরে ডান হাতটা বাড়িয়ে আছে কাসেমের দিকে সুধা। ও জানে প্রথম দফায় ক’টা সুখটান দিয়েই কাসেম তার দিকে ধরানো বিড়িটা বাড়িয়ে দেবে। সুধা সেই বিড়ির আগুনে নিজের বিড়ি ফুঁকিয়ে কয়েকবার টেনে আগুন হস্তান্তর করে নিল। এইসময় এই পরিবেশে ওরা, চাষীরা অভ্যস্ত আগুন হস্তান্তরে। এখানে জাত বেজাত, উঁচু নীচুর কোন বালাই নেই। একটাই শ্রেণী, একটাই সম্প্রদায় তখন ওরা। ওরা কৃষিপ্রধান দেশের কৃষক সম্প্রদায়। অন্য সব কথিত ধর্ম সম্প্রদায় এখানে এসে একাকার হয়ে গেছে।
নিজের বিড়ি ধরিয়ে সুধা বলল,“তবু তো নাবি-বর্ষার দৌলতে শুকনো খটখটে জমির এখন অনেকটাই রাগ কমে গেছে। তাই আমাদের নাঙ্গল কত সহজে জমির আগো ভাঙতে পারছে। গরুগুলোরও কষ্ট কম হচ্ছে। না’হলে খটখটে জমির আগো ভাঙতে গরুর যা কষ্ট।” সুধার কথার খেই ধরে কাসেম বলল,“শুধু গরুর কেন, হেলোদের বুঝি কম কষ্ট হয়? শালা, নাঙ্গলের মুঠো চেপে ধরে থাকতে থাকতে দাবনা গজে যাবার জোগাড় হয় না বুঝি?”
-তা যা বলেছিস তুই। সন্ধ্যে বাড়ি ফিরে গায়ে যেন ‘তার’ থাকে না। খাওয়াদাওয়ার পর বউ উশম গরম তেল দিয়ে মালিশ করলে তবে যেন ব্যথা শরীর থেকে ছাড়ান দেয়। পরের দিন আবার নতুন দমে বলদ জোড়া নিয়ে হালে নামতে পারি।
সুধা এই ‘নতুন দমের’ কথা বলতেই কেমন যেন উদাস হয়ে আসমানের দিকে চোখ রাখল কাসেম,“এই নতুন দমে কতদিন জমি চাষে তোদের দরকার হয় দেখ। এখন এই যে মানুষ হাল চাষের জন্যে তোর আমার, যাদের জোড়া বলদের কাঁড়া আছে তাদের এত কদর করে। মনে হয় এই কদর আর আমরা বেশিদিন উপভোগ করতে পারব নারে সুধা। এমন দিন সামনে এগিয়ে আসছে, সেইদিন মানুষ আর আমাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। আমাদের এই হম্বিতম্বি একদিন ঘুচে যাবে। এই যে লোকে রোজ সন্ধ্যে বা ভোরে আমাদের বাড়ি উজিয়ে এসে তাদের জমি চষে দেবার জন্যে অনুরোধ উপরোধ করে। আর আমরা, ‘আজ হবে না বাবু, কাল, পরশু দেখব। কাল হালদারদের হবে তো পরশু মন্ডলদের। তারপর তোমাদের।’এইসব বলে দর হাঁকাইয়ের দিনগুলোর অস্ত যাবার সময় হয়ে এসেছে।” কাসেমের কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে সুধা। বিড়ির শেষের দিকে ফুক ফুক করে ঘনঘন দুটো লম্বা টান দিয়ে তা জমির জলে ফেলে দিতে ‘চোঁক’ শব্দ ঠিকরে আসে সেদিক থেকে। মুহূর্তের জন্যে সেদিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে আনে কাসেমের দিকে! এবার একগাদা প্রশ্নমুখো হয়ে কাসেমকে বলে,“এত গম্ভীর মুখে এই কথা হঠাৎ তুই বলছিস যে কাসেম? কি এমন হল, যে অমন উদাস হয়ে ভয়-ভয় মনে বললি কথাগুলো? আমাকে ভড়কে দিতে চাইছিস, তাই না? তোর ওই ভড়কানিতে আমি ভিজে যাবার লোক না বুঝলি? অত বোকা নই আমি। হঠাৎ কোথাও কিছু নেই, একটা উদ্ভট কথা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছিস, বল? যা-তো, হচ্ছে চাষবাসের কথা। কোথা থেকে ভড়ংবাজি দিয়ে দিলি, কি না আমাদের সামনে সমূহ বিপদ। তা আমাদের মত গরিবদের বিপদ তো ডাঁয়ে বাঁয়ে সব সময়। ও আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। ওতে ভয় পেলে আমাদের চলবে নাকি। তাহলে তো বউ-ছেলে-সংসার নিয়ে বাঁচাই দায় হয়ে যাবে। ওসব আজেবাজে কথা ছাড়ান দে,কাসেম। চল। এবেলা এই বন্দেটা সারতে হবে। বিকেলে হাটগাছার মাঠে আমাদের যেতে হবে। ওটা সারা হয়ে গেলে হালদার বাবুর কাজটা আপাতত শেষ হবে। পরদিন সকালে ভূতবাড়ির কাছে দাসেদের দেড় বিঘেটা ধরতে হবে।”
-এতটা জায়গা একবেলাতে কেমন করে সারবি? জায়গার মাপটা একবার আঁচ করে দেখেছিস? নাকি থাবগো একটা কিছু ভেবে বলে দিলি, এবেলা সারা হয়ে যাবে! যদি বিকেলে হাটগাছায় যেতেই হয়, হালদার বাবুদের কথা দিয়ে থাকিস তো তাহলে এক কাজ করি আয়। এখন একেবারে এক টাইমের ‘চৌপুরো’ কাজ করে এটা সেরে নিই। তাছাড়া উপায় দেখছি না। কাসেম বলল। কাসেমের কথায় সায় দিয়ে সুধা বলল,“কথাটা তুই একদম ভুল বলিসনি কাসেম। আমি তখন অতটা তলিয়ে ভাবিনি। এক বেলায় পারা যাবে না। চাপাচাপি করেও হবে না দেখছি। চৌপুরো মেরে না গেলে সবদিক সামলানো যাবে না দেখছি। অন্য দিনের জন্যে খিঁচ জায়গাটার ‘আগো-ভাঙা’ ফেলে রাখা ঠিক হবে না। কবে আবার এইটুকুর জন্যে এদিকে আসা হবে তার ঠিক ঠিকানা নেই। এই আমন চাষের সময় আমাদের ঝামেলার আর শেষ থাকে না। সবাই চায় তার জমি আগে হাল হয়ে যাক। কিন্তু রোগী ছটফট করলে কি ডাক্তার ছটফটাবে? ফটাবে না। যার কথা না রাখা হবে তার গোঁসা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দিকটাও তো বাবুদের ভাবা দরকার। এরা আবার আমাদের ছাড়া অন্য হেলোদের কাছে যাবে না। বাবুরা বলে কি না, তোদের মত দরদ দিয়ে অন্যরা এত সুন্দর জমি কাদা করতে পারে না। তা ভালো জিনিস পেতে গেলে একটু তো ধৈর্য ধরতে হবে, কি বল তুই কাসেম?
-তোর কথাটা একদম ফেলনা নয় তা মানছি। কিন্তু মানুষের মন তো। থিতু হতে চায় না। একজনের জমিতে নাঙ্গল পড়লে অন্যজনও চায় তারটাতেও নাঙ্গল নামুক। আর বর্ষার প্রথম ঝটকায় রোয়া সারতে পারলে তাড়াতাড়ি গাছের মাটি ধরে নিতে সহজ হয়। সুস্থ সবল গাছ হলে পোকা মাকড়ের হামলা সামলে নিতে পারে। ওই তো, ওই জন্যেই না শিবুবাবুর ছেলে শুভবাবু, কথায় কথায় ছড়া কেটে বলে,‘লাগালাগি বাস, দেখাদেখি চাষ।’ একজনের চাষ শুরু হলে অন্যরাও হামলে পড়ে তাদের জমি কত তাড়াতাড়ি চাষ সেরে ফেলা যায়। আর আমরা হেলোরা বাবুদের ইচ্ছেকে থমকে দিতে থাকি। আসলে আমাদের ক্ষমতার তো একটা সীমা আছে। গরু তো আর মেশিন নয়। যত খুশি খাটানো যাবে। সেও তো মানুষের মত একটা জীব। মানুষের মত তার শরীরকেও তো জিরেন দিতে হয়। নাহলে সে লড়বে কেমন করে। তাই মানুষের চাওয়ার সীমার সঙ্গে আমাদের গতর দেবার সীমার তফাৎ তো থাকবেই। আসল গোলটা সেখানেই। গতর খাটাবার সীমাই এখানে যত ঝামেলার মূলে। অত তলিয়ে এসব কথা যেমন আমরা ভাবি না, তেমনি বাবুরাও ভাবে না। ভাবলে এই মন কষাকষি আর থাকে না। কিন্তু এখানে আমাদেরই বা কি করার আছে বল, কাসেম। এটা তো সকলকে বুঝতে হবে। না বুঝে উপায় বা কি। এর বিকল্প তো আর হবার উপায় নেই। আমাদের যেমন বাবুদের উপর ভরসা করতে হবে। বাবুরাও আমাদের ফেলে যাবে বা কোথায়। আমাদের হাল পছন্দ না হলে অন্য কারোর হাল, তার কাজ অপছন্দ হলে আর একজনের কাছে যেতে হবে। আমাদের মত যেকোন হেলোর কাছেই বাবুদের যেতে হবে। নাহলে চাষ বন্ধ হয়ে পড়ে থাকবে। জমি বন্ধ্যা করে ফেলে রাখতে হবে। তা তো কেউ করতে পারবে না। খাবে কি তাহলে মানুষ!
সুধার কথায় মনের ভেতর শ্লেষের হাসি খেলে গেল কাসেমের। তুই কোন খোঁজখবর যে রাখিস না সুধা, তা তোর এই কথায় বোঝাই যাচ্ছে। তাই আমি যখন বললাম, আমাদের এই সুদিন আর বেশিদিন নেই, তখন তুই আমাকে হেলায় উড়িয়ে দিতে পারলি। কিন্তু তুই কি জানিস, আমাদের এখান থেকে ছ’ সাত কিলোমিটার দূরে, ঈশ্বরীপুর গ্রামের মাঠে ইঞ্জিন-হাল নেমে গেছে! এই ইঞ্জিনওয়ালা হ্যান্ড ট্রাক্টর দিয়ে মানুষ একদিনে বিঘের পর বিঘে জমি চষে নিচ্ছে! হ্যাঁ, এটা ঠিক, এই হ্যান্ড ট্রাক্টর হাঁটুর উপর, কোমর জলে চলবে না। ইঞ্জিন ডুবে গেলে তার চলা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমাদের গরুর কাঁড়া দরকার পড়বে। কিন্তু যদিও এখনো আমাদের রাজ্যে, জমিতে বড় চাকার বিশাল বিশাল ফলার ট্রাক্টর নামেনি। ওগুলো কিন্তু আমাদের দেশের অন্য প্রদেশে চালু হয়ে গেছে বহুদিন আগে থেকে। পাঞ্জাব, হরিয়ানার মত আরও অনেক উন্নত উচ্চ ফলনশীল চাষ এলাকায় এগুলো ছেয়ে গেছে। তা সেই বড় ট্রাক্টর আমাদের এদিকে আসতে যে আর বেশি দেরি হবে না, তার নমুনা ওই হ্যান্ড ট্রাক্টর। কম জলে বা শুকনো জমিতে এই ইঞ্জিন ট্রাক্টরের দাপটের সামনে গরুর হাল যে খাপ খুলতে পারবে না তা পাগলেরও বুঝতে অসুবিধে হবার কথা না। মনের আতঙ্ক মনের ভেতর পুষে রেখে কাসেম বলল,“চল সুধা। আর বসে থেকে বেলা চড়িয়ে লাভ নেই। কাজ যখন আমাদের করতে হবে তখন করেই ফেলা যাক।”
মাঠে নেমে এবার সুধা বলল,“কাসেম, তোর গরুটা যেকালে কমজোরি, তো এক কাজ কর। তোর গরুর জোতটা নিয়ে তুই আমার আগে যা। আমি তোর পেছনে থাকি। তাহলে তোর জোতের বশে আমি যেতে পারব। তখন আর আগুপেছু হতে হবে না আমাদের। গরু দমে গেলে হেলোর যা কষ্ট তা আমি খুব ভাল করে জানি। আমার ডাইনেটা যখন বয়সের টানে কমজোরি হতে লাগল। কিছুতেই আমার মনের টানে সে টান দিতে পারছিল না। তখন অতটা বুঝিনি যে ওর বয়স হয়ে যাচ্ছে। সেই যৌবনের শক্তি আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছে ও। সেটা না বুঝে কম কঞ্চির ঘা খেয়েছে ও! বাড়িতে গিয়ে কম চেল্লাচেল্লি করেছি? বউ তখন সতর্ক করে আমাকে বলল, “ওর বয়সটা কত হয়েছে তুমি খেয়াল রেখেছ? প্রায় দশ বছর হয়ে গেল ও তোমার হাল টানছে। কত খাটাবে তুমি একটা অবলা জীবকে? তুমি এখন যেমন তাগদ নিয়ে খাটতে পারছো, বুড়ো বয়সে পারবে?” তখনই আমার টনক নড়ে। সেইজন্যেই তো এ বছর এই ডায়নেটা কিনলাম। সে তো তুই সবই জানিস, কাসেম।”
-তা তোমার বুড়োটাকে তো তোমরা বুড়ো বাবা-মায়ের মত ঘরে লালন পালন করো। আমাদের জাতের মত কুরবানির জন্যে গরু-হাটে বেচে দাও না। তা সে তোমাদের নিয়মে যা হয় তাই করো। পরে মরে গেলে ভাগাড়ে ফেলে দাও। সেটা অবশ্য একটা ভাল কাজ। ভাগাড়ে ফেললে কত শকুনের খিদে মেটে। না হলে ওরাই বা যায় কোথায়। খাদ্য-খাদকের সম্পর্কে তো জীব জগৎ চলে। এটা না থাকলে সৃষ্টি যে আবার লোপাট হয়ে যায়।
-শুধু শকুনের কথা বলছিস কেন কাসেম? মানুষও তো ঘুরিয়ে পেটের খিদে মেটায় এই মরা গরুকে সম্বল করে। তুই মুচি- রুইদাসদের কথা ভুলে গেলি! ভাগাড়ে গরু পড়লে তবেই না ওরা তাদের ছাল-চামড়া জোগাড় করতে পারে? সেই চামড়ায় ঢাক ঢোল জুতো আরও কত কি চামড়ার জিনিস বানিয়ে বিক্রি করে সংসার চালায়। সে কথাটা বাদ দিলে তো চলবে না। জ্যান্ত হাতির মত মরা হাতিও যেমন লক্ষাধিক টাকায় বিকোয়, তেমনি জ্যান্ত গরুর মত মরা গরুরও কদর আমাদের সমাজে কম না। আর একটা কথা শুধাই তোকে কাসেম, একটা পশুকে বছরের পর বছর ঘরে পালন করতে করতে তাকেও না, পরিবারের অন্য সদস্যের মত আমরা আপনজন মনে করে ফেলি। সেইজন্যে যতই সে পশু হোক, তাকে ত্যাগ করতে আমাদের জাতের মানুষদের মনে খোঁচা লাগে। মরণ পর্যন্ত তাকে কাছে রাখতে চাই আমরা। তা সে ছাগল, মুরগি যাই হোক। আর গরুর বেলায় তো কথাই নেই। আমাদের শাস্ত্রেই তো তাকে সম্মানের সঙ্গে জায়গা করে দেয়া হয়েছে। এই যে ছাগল, মুরগি, আজন্ম পুষে যখন অর্থের কারণে তাকে ফেরিওয়ালার কাছে বেচে দেয়া হয়, মনটা ডুকরে ওঠে। মেয়েরা তো কাঁদতে শুরু করে। তবু, ওই যে বললি, খাদ্য-খাদকের সম্পর্কের কারণেই জীব জগৎ টিকে থাকে। সেই বেঁচে বর্তে থাকার জন্যে আবার মনকে দমিয়ে রাখতে হয়।” সুধার কথায় সায় দিয়ে কাসেম বলল,“ঠিক কথাই বলেছিস তুই। তোদের মনের কথা আর আমাদের মনের কথায় কোন ফারাক নেই রে সুধা।”
মাঝ আকাশের সূর্য ক্রমশ পশ্চিম দিকে কাত খেতে শুরু করেছে। সুধা সেটা খেয়াল করল। ভেবে নিল এইভাবে ধীর গতিতে যদি তাদের হাল চলতে থাকে তো বাকি জমির যতটা চষতে বাকি আছে তা চৌপুরোতেও শেষ হবে না। কাসেমের বাঁয়াটা সত্যি সত্যি তাগৎ নিয়ে এগোতে পারছে না। ওর পায়ে যে একটা কষ্ট হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। আর কাসেমকে তাড়া দিয়েও তাই কাজের কাজ কিছু হবে না। তাড়া দিলে ও তখন গরুটাকে হাতের কঞ্চির বেত দিয়ে কাপসাতে শুরু করবে। ওইভাবে পশুপীড়ন করাটাও ঠিক না। ও বেটার সেই বোধ আছে বলে মনে হয় না। যখন তখন গরুকে কাপসায়। আরে বাবা ওরা তো মানুষ না হলেও ভগবানের দেওয়া জ্যান্ত জীব। প্রহার করলে আমাদের মত ওরাও তো যন্ত্রণা পায়। তাই সুধা ঠিক করল কাসেমের কাঁড়াকে জমি চষা থেকে তুলে দিতে বলবে সে। ওকে তুলে ও তার হাল নিয়ে তাড়াতাড়ি চালিয়ে সময়ের মধ্যে কাজ সেরে নেবে। না হলে, সুধার ইচ্ছে থাকলেও কাসেমের জন্যে সে এগোতে পারছে না। সেইমত সুধা কাসেমকে বলল, “তুই এক কাজ কর কাসেম, তুই তোর জোড়া নিয়ে উঠে পড়। তোর বাঁয়াটা থমকাচ্ছে। তাই তোর ইচ্ছে থাকলেও তুই এগোতে পারছিস না। এই বাকিটুকু আমি তাড়াতাড়ি হাল চালিয়ে শেষ করে নিচ্ছি। তুই ততক্ষণে ওদের কাঁধের জোল নামিয়ে মুখের জালতি খুলে দে। ওদের একটু ঘাস খাইয়ে দে।”
সুধার কথা মত কাসেম মাঠ থেকে উঠে পড়ল। জালতি খুলে দিল ঠিকই তবে একেবারে ছেড়ে দিল না। নিয়ম মত সিংয়ে দড়ি বেঁধে দুটো গরুর খোঁটা নিজের হাতে রেখে দিল। নাহলে পাশে যারা ধান গাছ রুয়ে গেছে, তাদের রোয়া খেয়ে নিলে ঝামেলায় পড়তে হবে। গরু-গাধাদের তো আর ওইসব জ্ঞানগম্মী নেই যে কোনটা ঘাস আর কোনটা ধানের চারা বোনা। বাঁয়াটার কাছে গিয়ে পায়ের খুরের ভেতর ঘা-টার কি অবস্থা দেখল। এখনো ভাল করে শুকোয় নি। তার উপর এই জলকাদা ওর ভেতর ঢুকছে। শুকোবার ফুরসতই তো পাচ্ছে না ও। মাঠে জমে থাকা জল একমুখ ভরে পিচকিরির মত সরু করে কয়েকবার ছিটিয়ে দিল খুরের গলাসির ভেতর। সেখান থেকে আটকে থাকা কাদা সব বেরিয়ে গেল। গরুটা কি শান্তভাবে তাকে কাজটা করতে দিল। কোন ছটফট করল না। অন্য সময় হলে পা ছটকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করত। আসলে কাদা বেরিয়ে যাচ্ছে, ওর আরাম হচ্ছে। গলা উঁচিয়ে শান্তভাবে কেমন দাঁড়িয়ে আছে। ডাইনের থেকে বাঁয়াটার বয়সও অনেকটা বেশি। বুড়োর দিকে ঢলে যাচ্ছে তার বয়স। এমনিতেই বেশিদিন হাল টানতে পারবে না। এই মরসুমটা যদি বা টেনেটুনে চালিয়ে দিতে পারে তো সামনের মরসুমে এদের দিয়ে কাজ হবে কি না বলা যাচ্ছে না। তার উপর ওর এই পায়ে ঘা। অনেকদিন ধরেই সারছে না। কি হবে বলা যাচ্ছে না। আদৌ তা সারবে কি না কে জানে। এইসব চিন্তা করতে করতে কাসেম গলা বাড়িয়ে সুধাকে বলল,“জানিস সুধা, আমার এই বাঁয়াটা যদি আর কাজে না লাগে তো আমি নতুন করে আর গরু কিনবো না। ডাঁয়াটা বেচে দিয়ে হালের কাঁড়া তুলে দেব।”
কাসেমের কথায় চমকে ওঠে সুধা! আস্তে আস্তে চলন্ত হালের কাঁড়া থামিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,“কি বললি তুই কাসেম! কাঁড়া তুলে দিবি! কেন, হঠাৎ কি এমন ঘটল যে তুই এমন অলক্ষুণে চিন্তা করছিস? হালের কাঁড়া তুলে দিলে তুই খাবি কি? বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখ-দুঃখে দিন চলে যাচ্ছে, তা বুঝি সহ্য হচ্ছে না?” বলতে বলতে আকাশের দিকে চোখ উঠতে, বেলা গড়ানের ইঙ্গিত দেখে আবার হাল চালু করতে করতে সুধা বলল, “তোকে দেখছি জমি থেকে তুলে দিয়ে ঠিক হল না। উঠেই আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে বকরবকর করে চলেছিস। এ’কথা আমি তো ভাবতেই পারছি না। তাই আমার বুড়োটাকে ঘরে রেখে এই জোয়ানটাকে ঘরে তুললাম।”
-সে তুই ঘরে তুলেছিস, ভুল কাজ করিসনি। কিন্তু নতুন করে আমি যদি তুলি তো মস্ত ভুল হয়ে যাবে আমার। এই ভুল আমি জেনে বুঝে করতে পারব না। তোর হাল-জোড়া, বলতে গেলে একদম নাবী। সর্বনাশা পরিস্থিতি আমাদের উপর আছড়ে পড়তে পড়তে তোর জোড়া ততক্ষণে বুড়ো হবার সময় হয়ে যাবে। তখন তুইও আমার মত ভাবতে শুরু করবি।
-কেন তুই এমন অলক্ষুণে কথা বলতে শুরু করেছিস বলতো, কাসেম? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তোর মাথা-টাথা খারাপ হল কি না বলতো?
-ঈশ্বরীপুরের মত আর একটা হ্যান্ড ট্রাক্টর পশ্চিম দেবীপুরে নেমেছে। সে খবর তুই রেখেছিস? এবার আস্তে আস্তে পূর্ব দেবীপুর, বাসুদেবপুর তারপর দৌলতপুর, বয়ারিয়া, উলকুনী, কোদালিয়া- চারদিক ছেয়ে যাবে। তুই শুধু এই বর্ষাটা কাটতে দে না। তারপর দেখবি তাদের রমরমা আছে কোথায়! তখন আমার না, তোরই মাথা-টাথা খারাপ হবার জোগাড় হয়ে দাঁড়াবে, দেখে নিস। খানিক চুপ করে রইল ওরা দু’জনেই। তারপর কাসেম আবার বলল, “কিরে সুধা, একেবারে চুপ মেরে গেলি যে? এতক্ষণ তো আমার কথা হুড়িয়ে দিচ্ছিলিস। এবার বুঝি মগজে সেঁধিয়েছে, কথাগুলো?” এবার হ্যাট হ্যাট করে গরু তাড়িয়ে নাঙ্গল ঠেলতে ঠেলতে সুধা বলল, “তুই শালাই তো আমার মনে ভয় সেঁধিয়ে দিচ্ছিস। চুপ হয়ে যাব না তো কি করব। তোর কথা যদি সত্যি হয় তো তাহলে আমাদের জীবন তছনছ হয়ে যাবে রে কাসেম। চাষীর সমাজে ‘হেলো’ বলে অন্য মজুরদের থেকে যে বাড়তি কদর পেতাম তা তো ঘুচে যাবার দিন সামনে আগত। পেট বাঁচাতে আবার সেই জন-মজুরের দলে মাথা গুঁজতে হবে। কাম-হাঙর যখন একবার তাদের কামের বুকে থাবা বসাতে শুরু করেছে, সত্যিই তো একদিন আসবে, ও বেটা তাদের গিলে খাবেই খাবে।” বলতে বলতে মনমরা হয়ে গেল সুধা। এতটাই দমে গেল যে আর যেন সে হাল চালাতে পারছিল না। গায়ের জোর হারিয়ে ফেলছিল। কিন্তু আরও তো দুটো পাই চষতে বাকি আছে। এটা শেষ করে তবে কাঁড়া তুলতে হবে। অগত্যা সে কাসেমকেই বলল, “কাসেম, তুই এইটুকু হাল টেনে দে। আমি যেন আর টানতে পারছি না। তোর জোড়ার খোঁটা আমি ততক্ষণে ধরছি।” কাসেমের বেঁধে রাখা গরু দুটোর খোঁটা ধরে ঘাষ খাওয়াতে খাওয়াতে সুধা ভাবতে লাগল, ওই ইঞ্জিন-হাল সত্যি সত্যি একদিন তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে। কিন্তু তাদের মত হেলোরা যদি এক জোট হয়ে এই যন্ত্রকে মাঠে নামতে না দেয় তো রক্ষা পেতে পারে তাদের ভবিষ্যৎ দুর্ভাগ্য। যেখানে হালের ট্রাক্টর দেখা পাওয়া যাবে সেখানে সবাই মিলে গিয়ে তার ড্রাইভারকে পিটিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করবে। ‘প্রথম রাতেই বেড়াল মারতে হয়।’ প্রচলিত এই কথার খেই ধরে সুধা ভাবল, সবে ট্রাক্টর-হাল মাঠে নামা শুরু করেছে। তাই প্রথম এই যন্ত্র মাঠে নামানো তাদের আটকাতে হবে। তবে যদি তারা বাঁচে।
বাকি হালটুকু শেষ করে কাসেম, সুধার গরুর কাঁড়া তুলে নিল। জোয়াল, নাঙল খুলে ওরা দুজনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সুধা, কাসেমকে তার ভাবনার কথা বলতে কাসেম বলল, “তুই যা ভাবছিস সেটা করলে মন্দ হয় না। একটা প্রতিবাদ করা যেতেই পারে। না হলে ট্রাক্টরওলারা তাদের নাকের ডকা দিয়ে ‘ফাঁকা মাঠে লাঠি ঘুরিয়ে’ পার পেয়ে যাবে। তবে আর একটা কথা কি জানিস সুধা, আমাদের চাপে হয়তো ট্রাক্টরওলা হাল না করে ফিরে যাবে। কিন্তু কতদিন আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে পারব তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকবে না বলে আমার মনে হয়। যাদের জমি ওই মেশিন-হাল চাষ করবে তারা যদি জোর করে তাদের ডেকে নিয়ে আসে আর বলে, কে বাধা দিতে আসে দেখব। যারা বাধা দিতে আসবে তাদের আমরা দেখে নেব। তখন তো একটা বড় গন্ডগোলের মধ্যে আমাদের জড়িয়ে পড়তে হবে। মারপিট, থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াবে। আমরা ছা-পোষা মানুষ। দিন আনি দিন খাই। ওইসব থানা-পুলিশ সামলানোর ক্ষমতা আমাদের আছে? নেই। যদি লকআপে দশদিন পুরে রাখে, বউ-বাচ্চা তো না খেতে পেয়ে মরে যাবে। আমাদের গরিবদের হয়ে কেউ বলতে আসবে না। উল্টে বাবুরা বলবে, এতদিন তোদের মেজাজে তেল মাখিয়ে আমাদের চলতে হত। যখন ইচ্ছে কাজে আসতিস। যখন ইচ্ছে আসতিস না। এখন তোদের বিকল্প আমরা পেয়ে গেছি। তোদের ভাল হল কি মন্দ হল তা দেখে আমাদের আর কাজ নেই। এতদিন তোদের হালের খামখেয়ালির উপর আমাদের চাষের ভাগ্য ঠিক হত। এখন এই ট্রাক্টর একদিনে বিঘের পর বিঘে জমি হাল দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর গরুর হালের মুখ চেয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সেই অপেক্ষার দিন শেষ।”
-তা আমাদের গরুর হালের ক্ষমতার তো একটা সীমা আছে। আমরা সকলের
মনের সঙ্গে দৌড়ে হাল দৌড় করাবো কেমন করে কাসেম? তা তো সম্ভব নয়। তবু বাবুরা আমাদের জীবন জীবিকার কথা একবারও ভাববে না!
-এখানে কেউ কারোর ভালোর কথা ভাবে না রে সুধা। সব দেনা-পাওনার হিসেব কষে চলে। ইঞ্চিন হালের খরচও নাকি আমাদের গরুর হালের থেকে কম। একটা জমি চষলে আমরা তিনজনের খরচ নিই। দুই গরু আর হেলো। সেখানে ইঞ্জিন ঘন্টার হিসেবে দাম নেয়। তাতে নাকি গড়ে অনেকটা খরচ কমে আমাদের থেকে। তাহলে বাবুরা আমাদের মুখ চেয়ে কেন গ্যাঁটের কড়ি বেশি খরচ করতে যাবে! যাবে না। কিছুতেই যাবে না। তা ইঞ্জিন জমি চষে যাবার পর সেই কাদা মাটি সমান করার জন্যে তো মই দিতে হবে। সেটার জন্যে এখনো ইঞ্জিন তৈরী হয়নি। এই হেলোদের তখন ডাক পড়বে। তখন একটু কদর পাব আমরা। না হলে জমি রোয়া যাবে না। তা ওই মই দেবার জন্যে আর কটা হালের কাঁড়া লাগবে। তাতেও দুর্ভাগ্য আমাদের থেকে ছাড়ান দেবার নয়।

ক্রমশ…

Exit mobile version