Site icon আলাপী মন

গল্প- মাধু

মাধু
-সুজিত চ্যাটার্জি

 

 

মাধু বিয়ের দশদিনের মাথায় বিধবা হল। বর রতন মাঠে চাষ করতে গিয়ে সাপের ছোবল খেল।
ধন্বন্তরি ওঝার যাবতীয় ঝাড়ফুঁক কেরামতিকে নিষ্ফল প্রতিপন্ন করে শেষ নিঃশ্বাস ফেলে সব্বাইকে আকুল পাথারে ভাসিয়ে রতন চলে গেল।
কপাল লিখনে অবিশ্বাসী গুটিকয় অনামুখো যারা বলেছিল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ছেলেটা প্রাণে বেঁচে যেত, রতনের সর্বজ্ঞানী মুখরা মা শীতলা, তাদের সাতগুষ্টির মৌখিক শ্রাদ্ধ করে পিন্ডি চটকে নিদান দিয়েছিল, তাদের ছেলেমেয়েদের সাপে কাটলে যেন তারা তেমনই করে।
কেননা কপালের লেখন খন্ডায় কারো বাপের সাধ্যি নেই।

মাধু বিধবা হবার দশদিনের মাথায় তারই মেজ দেওরের সঙ্গে মাঝরাতে একই ঘরে একসঙ্গে পাকড়ে গেল।
পাকড়াও করার অসাধ্য সাধন করল কে?
সেই সর্বজ্ঞানী মুখরা মা শীতলা।
মাধু চোখের জলে নাকানিচুবানি খেয়ে প্রাণান্তকর ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করল, সে কোনও ভাবেই দায়ী না ।
একলা ঘরে সুযোগ বুঝে মেজ দেওর এই কান্ড ঘটিয়েছে, সে সম্পূর্ণ নির্দোষ।
ভোবি ভোলবার নয়।
শীতলার অকাট্য প্রমাণ, তার নির্ভুল অনুমান দক্ষতা এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
সে নিশ্চিত জানতো, এ মেয়ে অপয়া, এক ছেলেকে খেয়েছে এবার নির্বংশ করে তবেই ছাড়বে এই রাক্ষসী ডাইনির বংশধর।
সুতরাং এই কালনাগিনীকে কোনোমতেই আর এ ভিটেতে রাখা চলেনা।
বিধবা মাধু শ্বশুর ঘর ছাড়া হল।

উঠতি ধনী দাসু বাবুর দয়ার শরীর, তার ওপর তিনি সদ্য বিপত্নীক।
মাধু দেখতে শুনতে বেশ। বয়স কম, এমন ডাগরডোগর বিধবাকে তো আকুলে ভাসিয়ে দেওয়া যায় না। সুতরাং মোসাহেবদের মান এবং মুখ রাখতে মাধু এখন দাসু বাবুর আশ্রিতা।

মাধু এখন অনেক পরিণত।
প্রতি রাতেই তার ঘরে পুরুষ ঢোকে। দয়ালু দাসু বাবু, রসালো বাবু হয়ে রাত বিতোয় নধর নারী শরীরের সঙ্গে।
তবে একেবারে খালি হাতে নয়।
মাধুর দেওয়া শর্ত পূরণের অঙ্গীকারে।
প্রতি রাতেই পুরনো তবুও নতুন খেলা।
প্রতি রাতেই নতুন নতুন শর্তের অঙ্গীকার।
আজ অলংকার, কাল টাকা, পরশু জমির দলিল আরও আরও আরও…
দূর্বল মুহূর্তে পুরুষেরা বড়ই দাতা হয়ে ওঠে।
মাধু বুঝেছে বোবা আর বোকা থাকার অনেক জ্বালা। তাছাড়া যৌবনের জৌলুশ বড়ই ক্ষণস্থায়ী।
মেজ দেওরের ধাষ্টামো আর সর্বজ্ঞানী মুখরা মা শীতলার নির্মম আচরণ তাকে চতুর হতে শিখিয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চুলে পাক ধরা মাধুর এখন নিজস্ব ঘর।
মেয়ে ঐশ্বর্য আর কিছুদিনের পরেই ডাক্তার হয়ে যাবে।
ভাগ্যিস সেদিন প্রবল চাপের মধ্যেও অবিচল থেকেছিল মাধু।
না, সে গর্ভত্যাগ করেনি।
সবই দয়ালু দাসু বাবুর দান।
শুধু একটাই আফসোস,
দয়ালু দাসু বাবু মান আর মুখ বাঁচাতে স্বেচ্ছায় কড়িকাঠে ঝুলে প্রাণত্যাগ করেছিল।

Exit mobile version