গল্প

গল্প- কেঁচোর বিয়ে

কেঁচোর বিয়ে
– মুনমুন রাহা

ঘটক আমাদের পুরো ঠকিয়েছে। মুখে বল্লে মেয়ে নাকি রূপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী। আর এখন দেখ পাড়াতে ঢুকতে না ঢুকতেই মেয়ের স্বরূপ প্রকাশ পেল তো! পাড়ার লোকেরাই তো বলল, মেয়ে নাকি পাড়ার গুণ্ডা! মেয়ের নাম মুনিয়া হলে কি হবে পাড়ার লোকে তাকে নাকি মুন্না ভাই বলে ডাকে!
মাগো মা শেষে কিনা ঘটকটা আমাদের এমন করে ঠকাল!

মেয়ে দেখতে এসে এমনই হা-হুতাশ করছিলেন কাঞ্চনের মা সুরমা দেবী। কাঞ্চনের বাবা পরেশ বাবু বললেন, আঃ, বারবার ঠকিয়েছে ঠকিয়েছে বলছো কেন বল দেখি! মেয়ের গুনের কথা শুনেই তুমি ভিরমী খেয়ে চলে এলে। আর একটু অপেক্ষা করলে মেয়ের রূপটাও দেখতে পেতাম। তখন বোঝা যেত ঘটক কতটা সত্যি বলেছে!

-একদম ফালতু কথা বলবে না। ঝাঁঝিয়ে ওঠে সুরমা দেবী তোমার তো সখ কম নয়! আবার রূপ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে বলছো? বলি যদি ডানা কাটা পরীও হয় তবু কি ছেলের সাথে এমন মেয়ের বিয়ে দেব? রাত আটটা বাজে তবু মেয়ে বাড়ি ফেরেনি। কোথায় গেছে? না পড়ার কোন মেয়ের বিয়েতে বরকর্তা পণ না দেওয়ার জন্য ছেলে ফেরত নিয়ে যাবে বলছে সেখানে! আবার তো শুনে এলাম সেখানে গণ্ডগোল করে কার নাক এক ঘুঁষিতে ফাটিয়ে দিয়েছে। বাবা রে বাবা আর থাকি ঐ বাড়ি! কথাও শুনিয়ে দিয়ে এসেছি ।

কাঞ্চন এতক্ষন চুপচাপই ছিল। বেচারার মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ। একে তো রোগা পাতলা ভীতু ভীতু চেহারার জন্য কোন মেয়ের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য রাজি হয় না। যদিবা অনেক দিন পর একটা মেয়ের বাড়ি থেকে আগ্রহ দেখাল তাও মায়ের জন্য সেটাও মাটি হল! মেয়ে মারকুটে শুনেই চলে এল। তারপর আবার এসব কথা বলেই চলেছে। এখন আর সহ্য করতে না পেরে সে বলল, একদম ক্যানসেল না করে একটা বার কথা বল্লে দোষ কি হতো!

সুরমা দেবী চোখ পাকিয়ে বললেন, বাবু একদম চুপ কর বলছি। আর যেন এসব কথা না শুনি।
ব্যাস, মায়ের ভয়ে বাবু কাবু। এমন স্বভাবের জন্যই পাড়ার লোকে তাকে কাঞ্চন নয় কেঁচো বলে ডাকে।

এসব তর্ক বিতর্ক করতে করতেই পাত্রী দেখতে আসা পাত্রপক্ষের তিনজন চলছিল শুনশান রাস্তা দিয়ে। কিন্ত কপাল তাদের মন্দ ছিল সেদিন, তাই তো এই পাড়ার উঠতি মাস্তান বাচ্চু আর তার দলবলের সামনে পড়তে হল। সরমা দেবীর গয়না, পরেশ বাবুর ঘড়ি, মানিব্যাগ হস্তগত করে বাচ্চু এগোলো কাঞ্চনের দিকে । হাতের ঘড়ি আর মানিব্যাগ নিয়ে টান মারল ফোনটা। অফিসের দরকারি ইনফরমেশন থাকা ফোনটা কাঞ্চন ছাড়তে একটু ইতস্তত করতেই বাচ্চুর মেজাজ গেল চটে। কাঞ্চনকে সোজা চেপে ধরল সামনে থাকা ল্যাম্পপোস্টে। গলায় শান দেওয়া ছুরি তাক করে কিছু হুমকি দিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা।
একটা বিরাশি সিক্কার ঘুঁষি এসে পড়ল বাচ্চুর গালে । ঠিক হিরো থুরি হিরোইন টাইপের এন্ট্রি দিল আমাদের মুনিয়া ওরফে মুন্না ভাই। কলার চেপে বলল, আবার আমার পাড়ায় মাস্তান গিরি করছিস! আর যদি দেখি না মেরে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব। বাচ্চু তখন অবশ্য এসব শোনার অবস্থায় নেই। ঘুঁষির চোটে সদ্য উপড়ে আসা দাঁত দুটি নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার সাঙ্গপাঙ্গরা ততক্ষনে পগারপার। কেঁচো তখনও ল্যাম্পপোষ্টে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। মুন্না বাচ্চুর কবল থেকে সব জিনিস উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিল। তারপর কেঁচোকে বলল, উঠুন উঠুন এরকম ভয় পেলে চলবে? ভয়কে তো জয় করতে হবে! তবে না জীবনের মজা পাবেন।
মুন্নার কথায় কেঁচো চোখ তুলে তাকাল তার দিকে। বুকটা কেমন যেন একটা চিনচিন করে উঠল। এই প্রথম কেউ তার ভয় পাওয়া নিয়ে উপহাস না করে সাহস দিল। বুকের ব্যাথাটা অন্তরে গেঁথে যেতে যেতে কাঞ্চনের কানে এল তার মায়ের মধুর গলা।

দেখ দেখি বাবা থুরি মা ! আমি তো আমার ছেলেকে এটাই বোঝাতে পারি না ভয় পেলে কি সবসময় চলে! আজ তুমি ভাগ্যিস ছিলে তাই আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। দেখে ভাল লাগল মা তুমি মেয়ে হয়েও কত্ত সাহসী।

-কেন মাসিমা, মেয়েরা সাহসী হলেই অবাক হতে হয়! আগে কখনও সাহসী মেয়ে দেখেননি? কালী দুর্গা এরাও তো মেয়ে। তারা যদি অসুর মারতে পারে আমি কটা পাড়ার মাস্তান পেটাতে পারব না?

পরেশ বাবু বললেন, ঠিকই তো । তা মা তোমার বাড়ি বুঝি এপাড়াতেই?

মুনিয়া তার বাড়ির যা ঠিকানা দিল তাতে কারও বুঝতে বাকি রইল না যে তারা এই মেয়েকেই দেখতে গিয়েছিল। সুরমা দেবী তখন আবেগে গদগদ। বললেন, আমি ঠিক জানতাম আমার গোপাল আমায় কিছুতেই ভুল মেয়ের বাড়ি পাঠাতেই পারে না!
মুন্নাও বুঝে গেছে এই হল সেই লোকগুলোই যাদের কথা তার বাবা মা বলছিল, যারা কিছুক্ষণ আগে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার নামে খানিক অকথা কুকথা বলে এসেছে। রাগে তার মাথাটা গেল গরম হয়ে। দাঁত কিরমির করতে করতে সে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্ত তার আগেই কেলেঙ্কারি।
সুরমা দেবী এমন মেয়ে বৌমা হবে ভেবে ভক্তিতে গদগদ হয়ে ব্যাগে রাখা গোপালকে ব্যাগ সমেত মাথায় ঠেকিয়ে নীচে নামানোর সময় সোজা নামালেন মুন্নার মাথায়। এমন বড়সড় পিতলের গোপালের বারি খেয়ে মুন্না লুটিয়ে পড়ল কেঁচোর কোলে।

মুন্না চোখ খুলে দেখল বাবা মা সবাই চিন্তিত মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর একটা ভীতু ভীতু মুখ যার দুচোখ জুড়ে এখন চিন্তার ছায়া। কেঁচোর চিন্তিত চোখ দুটো দেখে মুন্নার বুকটা কেঁপে উঠল। তাকে সবাই সাহসী শক্তপোক্ত বলেই জানে কিন্ত তারও যে কারও চিন্তার কারণ হতে ইচ্ছা করে তা কেউ ভাবেইনি । কেঁচো আর মুন্নার উভয়েরই ব্যাথা ব্যাথা ভাবটা বেড়ে চলেছে একে অপরের জন্য।
মুন্নাকে চোখ খুলতে দেখেই সোফাতে বসা সরমা দেবী কালী ঠাকুর হয়ে গেছেন। এক হাত জিভ বার করে বললেন, দেখ দেখি মা বড় ভুল করে ফেললাম। তোমাকে আঘাত করার সাহস বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার ছিল না। তবু কি করে জানি হয়ে গেল। আসলে বুঝতে পারিনি আমার গোপাল তোমায় আশীর্বাদ করতে উপর থেকে ঝাঁপ দেবেন।
মুন্না একটু মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
ঠিক আছে মাসিমা কোন ব্যাপার নয় এরম একটু আধটু চোটে মুনিয়ার কিছু হয় না।

সরমা দেবী বললেন, এখন আর মাসিমা শুনবো না এবার থেকে মা বলতে হবে।
মায়ের কথায় তো কেঁচোর বুক উথালপাথাল।
মুন্না কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তার মনটাও যে ততক্ষনে বাঁধা পড়েছে ঐ ভীতু কেঁচোটার কাছে।
মুন্নার বাবা মা একটু ইতস্তত করছে। যারা কিছুক্ষণ আগেই তাদের মেয়ের সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলে গেল তারাই কিনা বিয়ে পাকা করতে চাইছে! তাদের মনের অবস্থা বুঝে পরেশ বাবু বললেন, আসলে আমাদের ধারনা ছিল ঘরের বৌ লক্ষ্মীই হয় কিন্ত আপনাদের মেয়ে সে ধারনা ভেঙে দিয়েছে । ঘরের বৌ যেমন লক্ষ্মী হয় তেমন কালী, দূর্গাও হয়।

ব্যাস আর কি মধুরেনো সমাপতে চার হাত চার চোখ এক হল। সরমা দেবীদের বৌমা সংজ্ঞার ট্যাবু ভাঙল। বাচ্চু দলবল নিয়ে মুন্নার বিয়েতে খেটে দেওয়ার সাথে সাথে ভাঙা দাঁতেই নেমতন্নও খেল। কেঁচোর মুন্না আর মুন্নার কেঁচো হল।

ঘটক আমাদের পুরো ঠকিয়েছে। মুখে বল্লে মেয়ে নাকি রূপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী । আর এখন দেখ পাড়াতে ঢুকতে না ঢুকতেই মেয়ের স্বরূপ প্রকাশ পেল তো ! পাড়ার লোকেরাই তো বলল , মেয়ে নাকি পাড়ার গুণ্ডা! মেয়ের নাম মুনিয়া হলে কি হবে পাড়ার লোকে তাকে নাকি মুন্না ভাই বলে ডাকে !
মাগো মা শেষে কিনা ঘটকটা আমাদের এমন করে ঠকাল !

মেয়ে দেখতে এসে এমনই হাহুতাস করছিলেন কাঞ্চনের মা সুরমা দেবী । কাঞ্চনের বাবা পরেশ বাবু বললেন,
আঃ , বারবার ঠকিয়েছে ঠকিয়েছে বলছো কেন বল দেখি ! মেয়ের গুনের কথা শুনেই তুমি ভিরমী খেয়ে চলে এলে । আর একটু অপেক্ষা করলে মেয়ের রূপটাও দেখতে পেতাম। তখন বোঝা যেত ঘটক কতটা সত্যি বলেছে !

একদম ফালতু কথা বলবে না ।
ঝাঁঝিয়ে ওঠে সুরমা দেবী তোমার তো সখ কম নয়! আবার রূপ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে বলছো ? বলি যদি ডানা কাটা পরীও হয় তবু কি ছেলের সাথে এমন মেয়ের বিয়ে দেবো ? রাত আটটা বাজে তবু মেয়ে বাড়ি ফেরে নি । কোথায় গেছে , না পড়ার কোন মেয়ের বিয়েতে বরকর্তা পণ না দেওয়ার জন্য ছেলে ফেরত নিয়ে যাবে বলছে সেখানে ! আবার তো শুনে এলাম সেখানে গণ্ডগোল করে কার নাক এক ঘুঁষিতে ফাটিয়ে দিয়েছে। বাবা রে বাবা আর থাকি ঐ বাড়ি! কথাও শুনিয়ে দিয়ে এসেছি ।

কাঞ্চন এতক্ষন চুপচাপই ছিল। বেচারার মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ। একে তো রোগা পাতলা ভীতু ভীতু চেহারার জন্য কোন মেয়ের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য রাজি হয় না । যদিবা অনেক দিন পর একটা মেয়ের বাড়ি থেকে আগ্রহ দেখাল তাও মায়ের জন্য সেটাও মাটি হল ! মেয়ে মারকুটে শুনেই চলে এল । তারপর আবার এসব কথা বলেই চলেছে। এখন আর সহ্য করতে না পেরে সে বলল ,

একদম ক্যানসেল না করে একটা বার কথা বল্লে দোষ কি হতো !

সুরমা দেবী চোখ পাকিয়ে বল্লেন,

বাবু একদম চুপ কর বলছি । আর যেন এসব কথা না শুনি ।

ব্যাস , মায়ের ভয়ে বাবু কাবু । এমন স্বভাবের জন্যই পাড়ার লোকে তাকে কাঞ্চন নয় কেঁচো বলে ডাকে ।

এসব তর্ক বিতর্ক করতে করতেই পাত্রী দেখতে আসা পাত্র পক্ষের তিনজন চলছিল শুনশান রাস্তা দিয়ে। কিন্ত কপাল তাদের মন্দ ছিল সেদিন , তাই তো এই পাড়ার উঠতি মাস্তান বাচ্চু আর তার দলবলের সামনে পড়তে হল । সরমা দেবীর গয়না পরেশ বাবুর ঘড়ি মানিব্যাগ হস্তগত করে বাচ্চু এগোলো কাঞ্চনের দিকে । হাতের ঘড়ি আর মানিব্যাগ নিয়ে টান মারল ফোনটা। অফিসের দরকারি ইনফরমেশন থাকা ফোনটা কাঞ্চন ছাড়তে একটু ইতস্তত করতেই বাচ্চুর মেজাজ গেল চটে । কাঞ্চন কে সোজা চেপে ধরল সামনে থাকা ল্যাম্পপোস্টে গলায় শান দেওয়া ছুরি তাক করে কিছু হুমকি দিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা ।

একটা বিরাশি সিক্কার ঘুঁষি এসে পড়ল বাচ্চুর গালে । ঠিক হিরো থুরি হিরোইন টাইপের এন্ট্রি দিল আমাদের মুনিয়া ওরফে মুন্না ভাই। কলার চেপে বল্ল ,
আবার আমার পাড়ায় মাস্তান গিরি করছিস! আর যদি দেখি না মেরে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব । বাচ্চু তখন অবশ্য এসব শোনার অবস্থায় নেই। ঘুঁষির চোটে সদ্য উপড়ে আসা দাঁত দুটি নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার সাঙ্গপাঙ্গরা ততক্ষনে পগারপার। কেঁচো তখনও ল্যাম্পপোষ্টে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। মুন্না বাচ্চুর কবল থেকে সব জিনিস উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিল । তারপর কেঁচোকে বলল ,
উঠুন উঠুন এরকম ভয় পেলে চলবে ? ভয়কে তো জয় করতে হবে ! তবে না জীবনের মজা পাবেন।
মুন্নার কথায় কেঁচো চোখ তুলে তাকাল তার দিকে । বুকটা কেমন যেন একটা চিনচিন করে উঠল । এই প্রথম কেউ তার ভয় পাওয়া নিয়ে উপহাস না করে সাহস দিল । বুকের ব্যাথাটা অন্তরে গেঁথে যেতে যেতে কাঞ্চনের কানে এল তার মায়ের মধুর গলা ।

দেখ দেখি বাবা থুরি মা ! আমি তো আমার ছেলে কে এটাই বোঝাতে পারি না ভয় পেলে কি সবসময় চলে ! আজ তুমি ভাগ্যিস ছিলে তাই আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম । দেখে ভাল লাগল মা তুমি মেয়ে হয়েও কত্ত সাহসী ।

কেন মাসিমা , মেয়েরা সাহসী হলেই অবাক হতে হয়! আগে কখনও সাহসী মেয়ে দেখেন নি ? কালী দুর্গা এরাও তো মেয়ে। তারা যদি অসুর মারতে পারে আমি কটা পাড়ার মাস্তান পেটাতে পারব না ?

পরেশ বাবু বললেন,
ঠিকই তো । তা মা তোমার বাড়ি বুঝি এপাড়াতেই ?

মুনিয়া তার বাড়ির যা ঠিকানা দিল তাতে কারও বুঝতে বাকি রইল না যে তারা এই মেয়েকেই দেখতে গিয়েছিল । সুরমা দেবী তখন আবেগে গদগদ। বল্লেন,
আমি ঠিক জানতাম আমার গোপাল আমায় কিছুতেই ভুল মেয়ের বাড়ি পাঠাতেই পারে না !
মুন্নাও বুঝে গেছে এই হল সেই লোক গুলোই যাদের কথা তার বাবা মা বলছিল, যারা কিছুক্ষণ আগে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার নামে খানিক অকথা কুকথা বলে এসেছে। রাগে তার মাথাটা গেল গরম হয়ে। দাঁত কিরমির করতে করতে সে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্ত তার আগেই কেলেঙ্কারি ।
সুরমা দেবী এমন মেয়ে বৌমা হবে ভেবে ভক্তিতে গদগদ হয়ে ব্যাগে রাখা গোপাল কে ব্যাগ সমেত মাথায় ঠেকিয়ে নীচে নামানোর সময় সোজা নামালেন মুন্নার মাথায়। এমন বড়সড় পিতলের গোপালের বারি খেয়ে মুন্না লুটিয়ে পড়ল কেঁচোর কোলে ।

মুন্না চোখ খুলে দেখল বাবা মা সবাই চিন্তিত মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর একটা ভীতু ভীতু মুখ যার দুচোখ জুরে এখন চিন্তার ছায়া । কেঁচোর চিন্তিত চোখ দুটো দেখে মুন্নার বুকটা কেঁপে উঠল। তাকে সবাই সাহসী শক্তপোক্ত বলেই জানে কিন্ত তারও যে কারও চিন্তার কারণ হতে ইচ্ছা করে তা কেউ ভাবেই নি । কেঁচো আর মুন্নার উভয়েরই ব্যাথা ব্যাথা ভাবটা বেড়ে চলেছে একে অপরের জন্য।
মুন্নাকে চোখ খুলতে দেখেই সোফাতে বসা সরমা দেবী কালী ঠাকুর হয়ে গেছেন। এক হাত জিভ বার করে বললেন ,
দেখ দেখি মা বড় ভুল করে ফেললাম। তোমাকে আঘাত করার সাহস বা ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিল না । তবু কি করে জানি হয়ে গেল। আসলে বুঝতে পারি নি আমার গোপাল তোমায় আশীর্বাদ করতে উপর থেকে ঝাঁপ দেবেন ।
মুন্না একটু মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
ঠিক আছে মাসিমা কোন ব্যাপার নয় এরম একটু আধটু চোটে মুনিয়ার কিছু হয় না ।

সরমা দেবী বললেন,
এখন আর মাসিমা শুনবো না এবার থেকে মা বলতে হবে ।
মায়ের কথায় তো কেঁচোর বুক উথালপাথাল।
মুন্না কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তার মনটাও যে ততক্ষনে বাঁধা পড়েছে ঐ ভীতু কেঁচোটার কাছে ।
মুন্নার বাবা মা একটু ইতস্তত করছে । যারা কিছুক্ষণ আগেই তাদের মেয়ের সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলে গেল তারাই কিনা বিয়ে পাকা করতে চাইছে ! তাদের মনের অবস্থা বুঝে পরেশ বাবু বললেন,
আসলে আমাদের ধারনা ছিল ঘরের বৌ লক্ষ্মীই হয় কিন্ত আপনাদের মেয়ে সে ধারনা ভেঙে দিয়েছে । ঘরের বৌ যেমন লক্ষ্মী হয় তেমন কালী , দূর্গাও হয়।

ব্যাস আর কি মধুরেনো সমাপতে । চার হাত চার চোখ এক হল । সরমা দেবীদের বৌমা সঙ্গার ট্যাবু ভাঙল। বাচ্চু দলবল নিয়ে মুন্নার বিয়েতে খেটে দেওয়ার সাথে সাথে ভাঙা দাঁতেই নেমতন্নও খেল। কেঁচোর মুন্না আর মুন্নার কেঁচো হল ।।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page