কবিতা

কবিতা- ভালোবাসা’র জন্য

ভালোবাসা’র জন্য
-সুব্রত আচার্য্য

আমি মাকে আর-একবার দেখতে চাই , আরও একবার দেখতে চাই আমার মাতৃভূমি – ভারতবর্ষকে।

মায়ের আলতা পরা পা কিংবা নিকনো উঠান , এক একটা ভারতবর্ষের ছবি আঁকা। শৈশবের দুষ্টুমি মাখা বিকাল আর মায়ের আঁচলের ঘ্রাণ , আজানে – শঙ্খ ধ্বনিতে আজও খুঁজে বেড়াই আমার মানচিত্রে ।

মা তুমি কেমন আছো ? তোমাকে কতদিন দেখিনি ! তুমিও তো – – – – – -।
তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে মা। তুমি খুব কষ্ট পেয়েছিলে , না মা ! মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম , ওদের মুখ
দেখে। যারা আমার দেহে পাঁচ পাঁচটি বুলেটের আঘাত করেছিল , ওরা আর কেউ নয়- সিরাজ আর শিবু ।

সিরাজকে তো ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি , ও একটু ডাকাবুকো। ওর দিদি সেলিমা আমার সঙ্গে পড়তো। ওরা প্রতি বছর দূর্গা পূজোয় আমাদের বাড়িতে আসতো। সারাদিন হাসি , মজা , আর খাওয়া দাওয়ার পর সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। আমরাও যেতাম ঈদের সময় ওদের বাড়িতে। সিরাজের মা আমাকে খুব ভালোবাসতো। আমিও – – – -।
শিবু তো , ও আমার পাড়ার ছেলে। ছোট বেলায় আমরা লুকোচুরি খেলতাম , কতবার একসঙ্গে সিনেমা দেখতে গেছি , কালী পূজো – দূর্গা পূজোয় চাঁদা তুলেছি একসঙ্গে।

মাগো , খুব কষ্ট হচ্ছিল , যখন যন্ত্রণায় প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছিল আমার শরীর ছেড়ে। খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিল তোমাদের। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল মা তোমার মুখটা আর সেলিমার মুখটা।

মা তুমি বলেছিলে এবছর দূর্গা পূজোয় সেলিমাকে একটা শাড়ী কিনে দেবে। শাড়ী পড়লে সেলিমাকে খুব সুন্দর দেখায়। আগুন রঙ ওর খুব প্রিয়। অথচ – – – – আগুনকেই ও বেশি ভয় পেত। মা, সেলিমা এখন কেমন আছে ? ও ভীষণ কেঁদে ছিল না ! তুমি আর কেঁদো না , মা। তুমিই তো শিখিয়েছিলে ভালোবাসার জন্য সব কিছু ত‍্যাগ করতে হয় , কোন কিছুর জন্য ভালোবাসা ত‍্যাগ করতে নেই।

ওসব কথা থাক মা। যারা আমার দেহে পাঁচ পাঁচটি বুলেটের আঘাত করেছিল ওরা কেউ আতঙ্কবাদী নয়। ওরা পাকিস্তানীও নয়। ওরা আমার পূর্ব-পরিচিত- আমার আপনজন !।

আচ্ছা আতঙ্কবাদী কারা ? ওদের কেমন দেখতে ? ওরা কোথায় থাকে ? ওদের মা আছে- ? আর ভালোবাসা ?ওরা কি পারে ভালোবাসার জন‍্য সব কিছু ত‍্যাগ করতে ?

আমি আর একবার মা’ তোমাকে দেখতে চাই , আরও একবার দেখতে চাই আমার মাতৃভূমি – ভারতবর্ষকে।

এক মায়ের কোলে জন্ম আমার , মৃত্যু আর এক মায়ের কোলে।

Loading

One Comment

Leave A Comment

You cannot copy content of this page