গল্প- কাল রাতে কে এসেছিল

কাল রাতে কে এসেছিল
-সুনির্মল বসু

রাত্রি গভীর। চোখে ঘুম নেই। জানালায় জোসনার আলো। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। নিচে সদর দরোজা খোলার শব্দ।

দোতলার সিঁড়িতে যেন কার নুপুরের ধ্বনি বাজে। কে এলো। কেউ কি এলো। আমার ঘুম ভাঙানিয়া এই মধ্যরাতে কে এলো। জানালার নিচে ফুলের বাগান।

নীলাঞ্জনা এসেছে। আমার অতীত। আমার ভালোবাসা। বললাম, এতদিন পর আমাকে মনে পড়ল,
সব সময় মনে পড়ে। আসা হয়ে ওঠে না।
আমি তো তোমাকে ভুলে যেতেই চাই।
সে কি, সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে না,
কি লাভ,
ক্ষতিও তো নেই,
আছে,
কি,
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে,
সুশোভন, তুমি কখনো বাসি রজনীগন্ধার গন্ধ শুকেছো,
না,
শুকনো ফুলের গন্ধ অতীতের সুগন্ধ বয়ে আনে,
সেসব কথা মনে করতে চাই না,
কেন,
আমাকে আমার মত থাকতে দাও,
গড়িয়াহাটের বিকেল, মিলেনিয়াম পার্ক, কফি হাউসের সন্ধ্যেগুলো মনে নেই বুঝি,
আছে, তোমার পথের থেকে আমার পথ বহুদূর,
আমরা কি আবার নতুন করে শুরু করতে পারি না,
না, তা হয় না। অনেক দেরি হয়ে গেছে।

আমি মানছি সুশোভন, সেদিন আমি তোমার কাছ থেকে চলে গিয়ে ভুল করেছিলাম, মনীষ যে শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সে কথা আমি ভাবতে পারিনি,
ওসব কথা জেনে আমার কি লাভ, তুমি ফিরে যাও নীলাঞ্জনা,
আমাকে তুমি ভুলে যাবে বলছো,
জানিনা, ভাবি নি কিছু, বলতে পারব না,
তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো,
না,
কিভাবে বাকি জীবনটা কাটাবে,
ভেবে দেখিনি, আমার অন্ধকার ঘর ভালো, আলোতে এলে, আমার চোখ জ্বালা করে।
তথাকথিত সভ্য মানুষদের দেখলে আমি ভয় পাই।
তুমি চলে যাও নীলাঞ্জনা।

আমি তাহলে কি নিয়ে থাকবো,
সেদিনের স্মৃতির মধ্যে, সেইসব কৃষ্ণচূড়ার দিন, সেইসব রাতের স্মৃতি,
সুশোভন, তুমি বড় নিষ্ঠুর,
হা হা, তাই বুঝি,
হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘ। প্রবল ঝড়ের শব্দ। গাছপালার মাতামাতি।
সুশোভন আমি চলে যাচ্ছি। আমি আর কখনো তোমার কাছে আসবো না।
আমাকে ভুলে যেও নীলাঞ্জনা। যদি জীবনে এইসব ঝড় একদিন থেমে যায়, আমি নিজেই তোমার কাছে সেদিন ফিরে যাবো।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল সুশোভনের।

মনে পড়ল, গতকাল বিকেলে গড়িয়াহাট মোড়ে এক ঝলক নীলাঞ্জনাকে ভিড়ের মধ্যে হেঁটে যেতে দেখেছিল। উড়ু উড়ু অবাধ্য চুলগুলোকে সামলে নিয়ে ও তখন টালিগঞ্জগামী বাস ধরবার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল।

Loading

Leave A Comment