অজান্তে…
-শিলাবৃষ্টি
আজকাল কেকাকে কেমন অচেনা লাগে!
সব সময় ব্যস্ততা দেখায়! সত্যিই কি ও এতটা ব্যস্ত! মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় রাজুর। কেকাকে ছাড়া এখন কিছুই সে ভাবতে পারেনা, অথচ “ভালোবাসি তোকে ভীষণ” এই কথাটা আজো বলা হয়ে ওঠেনি। ঠিক যখন বলি বলি করছে মন তখনই কেকার পরিবর্তন রাজুকে ভাবনায় ফেলে দেয়।
“হ্যালো কেকা ”
‘বল, কিরে কথা বল। তাড়াতাড়ি বল।’
” সবসময় এত তাড়া কেন তোর কেকা? ‘
” আছে বন্ধু, তাড়া আছে। তোকে তো জোজোর কথা বলাই হয়নি! কখন বলি বলতো? ”
রাজু অবাক হয়! প্রশ্ন করে
” জোজো? ”
” হ্যাঁ বন্ধু। বেস্ট ফ্রেণ্ড হিসেবে তোকেই আমার আগে বলা উচিৎ ছিল, কিন্তু ফোনে এত কথা হয়? আর আমিও তোর সাথে বেশী কথা বলতে পারছিনা এখন! প্লিজ ডোন্ট মাইণ্ড রাজু।আসলে জোজো কি ভাববে.. তাই তোর সাথে গল্প করতে পারিনা।
ও আমাকে এত ভালোবাসে… তুই বিশ্বাস করতেও পারবিনা। আর আমিও। ওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা। ঠিক আছে রাখ। রাতে ফোন করিস।” বলেই লাইনটা কেটে দেয় কেকা। রাজু স্তম্ভিত। ও ভাবতেই পারেনা কেকা ওকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারে!
সেই ইলেভেন থেকে ওরা এক আত্মা এক প্রাণ যেন। এতগুলো বছরেও কেকাকে সে চিনতে পারলো না! রাজু ভালো জবের জন্য কম্পিটিটিভ এক্সাম দিচ্ছে, কলকাতায় পড়াশোনার জন্য থাকতে হয় ঠিকই তবে মন পড়ে থাকে নিজের ছোট্ট শহর গোপালপুরে, কেকার কাছে।
আজ আর কিছুতেই পড়াশোনায় মন বসানো যাবে না। বিকেল বেলা রাজু এলোমেলো চিন্তা নিয়ে ময়দানের দিকে
হাঁটতে থাকলো এদিক ওদিক।
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! কেকার জন্যই নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলবে ভেবেছিল৷ কিন্তু আর কিছুই হবেনা তার দ্বারা।
রাতে কেকাকে ফোন করলো রাজু। আজ তাকে জানতেই হবে সব।
“হ্যালো হ্যালো”
” ওয়েট কর একটু। জোজোর ঘুম ভেঙে যাবে। আমি ব্যালকনিতে যাই! ” ফিসফিসিয়ে বলে কেকা।
“হোয়াট!! ”
মিনিট খানিক চুপচাপ।
” বল, আসলে জোজো আর আমি আজ এক বিছানাতেই…. ”
“মানে? !”
“কি আবার মানে! ”
“কাকিমা কাকু কোথায়! ”
” মামাবাড়ি গেছে। খুব বৃষ্টিতে আটকে পড়েছে। ফিরতে পারেনি।”
” আর তুই! ”
” নারে একটুও একা লাগছেনা, জোজো আছে তো! ও এত সুইট না… তুই ভাবতেও পারবিনা। আমার শয়নে স্বপনে শুধু এখন জোজো আর জোজো! বাপি আর মা নেই বলে ওকে আমি আমার কাছেই ডেকে নিয়েছি! আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছি। আর জোজোও কিন্তু ..
রাজু মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় খাটে।
এই কেকাকে সে ভালোবেসেছিল! ভাবতেই কেমন লাগছে। কেকা এত নোংরা?
সারারাত ঘুমাতে পারেনা রাজু। মাথায় খুব যন্ত্রণা! বার বার হোয়াটসঅ্যাপ খোলে। পুরোনো চ্যাটগুলো দেখে। কত রাত অব্দি তারা গল্প করতো। কেকা বলেছিল সেটে কিছু সমস্যা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপ খুলতে পারলেও মেসেজ করতে পারছেনা।
নাহ, এ জীবন রাজু আর রাখবেনা। বেঁচে থেকে কী হবে। কেকা তো এখন অন্যের।ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল বোধহয়। এলার্ম বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সেকেণ্ড এপ্রিল সকাল সাতটা।
অভ্যেস বশত হোয়াটসঅ্যাপ খুলে তাকালো।
কেকার মেসেজ এসেছে!..
আজ দেখছি মেসেজ করতে পারলাম।
গুড মর্নিং রাজু
এই দেখ – আমার জোজোকে।…
কিন্তু ডাউনলোড হচ্ছেনা ছবিটা। রাজু
দেখতেও চায়না। নিশ্চয়ই তার থেকে অনেক বেশী সুপুরুষ এই জোজো!
হ্যাঁ হয়েছে ডাউনলোড। কিন্তু….
কোথায় জোজো? এতো একটা বিদেশী কুকুরবাচ্চার ছবি!!
…..
টাইপিং কেকা…
দেখলি আমার জোজোকে? কেমন লাগলো? দারুণ না? তোকে আমি পরে ভিডিও কল করে জোজোকে ভালোভাবে দেখাতে চাই । বাই।
তুই কবে আসবি রাজু? আমি ভীষণ ভীষণ মিস করছি তোকে…
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে রাজু। অজান্তে দুটো চোখ জলে ভরে গেছে।
কেকা না জেনেই এপ্রিল ফুল বানিয়ে দিয়েছে তাকে কাল সারাদিন সারারাত।
“আই লাভ ইউ কেকা, আমি আসছি খুব তাড়াতাড়ি…” মনে মনে বলে ওঠে রাজু।