Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- পিতৃপরিচয়

পিতৃপরিচয়
-অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ

 

 

বয়স ৭,বছর। পাঁচ বছর বয়সে মায়ের কোলে চলে এসেছিল দিদার বাড়ি। তারপর থেকে নিজের বাড়ি চোখে দেখে নি।
বাবা কে? তার মনে নেই। কোনো দিন খোঁজও করে না। মা আবার একটা বিয়ে করেছে দোজবরে। এই বরেরও একটি ছেলে আছে। প্রথমে বলে ছিল, মেয়েকে নিজের করে নেবে। কিন্তু পরে বেঁকে বসে এ পক্ষের বর। সাফ জানিয়ে দিল, এই মেয়েকে বাপের বাড়ি রেখে এসো। মেয়ের আসল বাবাও আবার একটা বিয়ে করেছে। তাই বাপের বাড়ি রেখে আসতে চায় না মা। সেই থেকে দিদার বাড়িটাই তার ঘর। দিদাই তার মা -বাবা।
এতদিন খিচুড়ি স্কুলে ছিল।এবার প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হবে। প্রয়োজন একটা পিতৃপরিচয়। মেয়েটির দু-দুটো বাবা। তবু সে পিতৃহীন।

দিদার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট মেয়ে অহনা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্যারের দিকে।
দিদা বারবার কাকুতি মিনতি করছে স্কুলের হেড স্যারের কাছে। অহনার অভিভাবক হিসেবে দিদার নাম থাকুক স্কুলের খাতায়।
প্রশ্নটা আপনাদের কাছে রাখলাম। বলুন মেয়েটির প্রকৃত অভিভাবক কে? দুটো বাবা থাকা স্বত্তেও কেউ দায়িত্ব ভার নিতে রাজি নয়। অথচ দিদা পরের বাড়িতে কাজ করে মানুষ করতে চায় ছোট্ট অহনাকে। কে হবে অহনার অভিভাবক?

স্যার, সরকারি নিয়ম মেনে জানিয়ে দিলেন, পিতার নাম এবং জন্ম সার্টিফিকেট ও আঁধার কার্ড জমা দিলে তবেই ভর্তি করা সম্ভব।
দিদা বেঁকে বসে। একটাই প্রার্থনা, আমি যখন মানুষ করছি, তখন আমার নামই থাকবে। যে বাবার অত্যাচারে জন্মের পাঁচ বছর পর ছোট মেয়েকে নিয়ে মাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। সেই বাবার নাম কেন রাখব বলুন?
মেয়ের মা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় জন্ম সার্টিফিকেট ফেলে এসেছি।
মেয়েকে সঙ্গে এনেছি, বলে আর দেবে না বলেছে।
অসহায় অহনা, মা-দিদার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কি পড়া হবে না মা? আমি কি স্কুলে আসব না?

Exit mobile version