সভ্যতার মেরুদণ্ড
-সুমিত মোদক
বার বার মরে যায় , বার বার জেগে ওঠে মানুষ ;
কত বার যে মরে থাকে আবার জেগে উঠে ভিতর থেকে ;
সে কারণে শেষ বারের মতো মরে যাওয়ার সময় বুঝতে পারে না জীবনের বর্ণমালা ;
অথচ , মানুষ-ই মৃত্যুকে বেশি ভয় পায় ;
সরস্বতী নদী মাটির গভীরে চলে গেলে ধ্বংস হয়ে পড়ে প্রাচীন এক সভ্যতার মেরুদণ্ড ;
একটু একটু করে নষ্ট হতে থাকে হৃদয়ের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতি গুলো ;
জন্ম নিতে থাকে আলো-অন্ধকারের গোপন রহস্য ;
হয়তো মানুষ ভুলে যেতে চেয়ে ছিল সনাতন পরম্পরা সকল ;
তাই নতুন প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারেনি মাটি ;
যেখানে পা রাখতে পারে ;
মাথার উপর আকাশ আছে ঠিকই ,
কিন্তু সেখানে যে গভীর কালো মেঘ …
গুহা মুখ থেকে বেরিয়ে এসে এক ভবিষ্যতের মা অন্ধকার আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কালপুরুষ ;
এক জঙ্গল থেকে আরেক জঙ্গল পথে পা রেখেছে
একটা জাতি , একটা সময় ;
যেখানে কোনও পাখির কলরব নেই ;
কেবলই নৈঃশব্দ্য এক ;
সূর্যের আলো ছুঁতে , রোদ্দুর মাখতে বেশ কিছু গাছ
মেঘ গুলোকেও ছুঁয়ে নেয় ,
মাটির গভীর থেকে আরও গভীরে ছড়িয়ে দেয় শিকড় ;
অথচ মানুষ উপড়ে ফেলেছে তার শিকড় ,
তার ভবিষ্যৎ ;
আবার মৃত্যু ভয়ও পায় ;
আসলে বুঝে উঠতে পারে না কি সে চায় ;
বার বার মরতে মরতে , সত্যিকারের মরে যাওয়ার সময়
বাঁচার প্রবল ইচ্ছা জাগে ;
আর তখন কিছু করার থাকে না ;
যে জাতি সভ্যতা ছেড়েছে ;
যে জাতি সময় কে ছেড়েছে ;
ছেড়েছে অতীত , ভবিষ্যৎ , নিজেরই অস্তিত্ব …
সে জাতির কাছ থেকে কেবল মৃত্যু ছাড়া
আর কি আশা করা যায় ;
প্রথম ভোরে আসনে ধ্যানস্থ হলে জেগে উঠে
মুলাধার চক্র , চৈতন্য …
তখনই ফিরে ফিরে আসে পূর্বপুরুষের চলার পথ
ভবিষ্যতের সুর ;
একটু একটু করে সকালের আলো ফোটে ;
একটু একটু করে জীবনের স্বরলিপি সেজে ওঠে ;
আর তখনই উত্তর পুরুষ গেয়ে ওঠে জীবনের গান ;
গনদেবতার গান –
জাগো বোধ , জাগো বিবেক , জাগো মনুষ্যত্ব ,
জাগো চেতনা , জাগো হৃদয় , জাগো অমৃত …