Site icon আলাপী মন

ভৌতিক গল্প- জন্মেনজয়ের শ্মশান জাগানো

জন্মেনজয়ের শ্মশান জাগানো
-সুবিনয় হালদার

ছোটবেলা থেকে বিনয় মেধাবী ছেলে হিসাবে পরিচিত। সাহসী বুদ্ধিমানও বটে। সবকিছু সে যুক্তি দিয়ে বিচার করে তারপর যেটা ঠিক বলে মনে হতো সেটাই করত। এরজন্য তাকে অবশ্য পরবর্তী জীবনে অনেক মূল্য চোকাতে হয়। বিধিবাম, তার হাতে তো সবকিছু ছিলোনা! তাই সে আজো অপাংক্তেয় থেকে গেছে তথাকথিত সমাজ থেকে-, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়পরিজন থেকে কারন অন্যেরা যেখানে রকেট গতিতে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে সেখানে সে তার মূল্যবোধ আঁকড়ে যেই তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে গেছে।

নদী লাগোয়া চন্দনপুর গ্রাম ও তার একেবারেই গাঘেঁষা কুন্দনপুর গ্রাম। দুই গ্রামকে প্রধান খাল হতে ভাগ হয়ে যাওয়া পতিত-খাল বিভক্ত করেছে। নোনাজল বয়ে যাওয়ায় খালে মাছ চিংড়ি কাঙড়া ভালোই হতো। ফলে এলাকার প্রচুর মানুষ পাটা মেরে অর্থাৎ বাঁধ দিয়ে, জাল ফেলে, ছিপ ফেলে মাছ চিংড়ি কাঙড়া ধরত সকাল বিকাল। চন্দনপুর আর কুন্দনপুর গ্রামের একেবারে পূর্বপ্রান্তের শেষে যেখানে পতিত-খাল বাঁক নিয়ে বাজারের দিকে চলে গেছে সেখানে একটা শ্মশান আছে। পতিত-খালের পাড় ধরে একটা মেঠো রাস্তা কুন্দনপুর বাজারের ১-নং. গেট হতে চন্দনপুর গ্রামে ঢুকেছে- শ্মশানের ওপর দিয়ে, মুসলিম পাড়া হয়ে আলিদের বাড়ির সামনে কবরস্থানের পাশদিয়ে ঠাকুর-তলায়। রাস্তার একধারে বাঁশবন, বড়বড় খিড়িসগাছ, শেওড়াগাছ, কৎবেল গাছ ও অন্যান্য গাছের ঘন জঙ্গল ঝুঁকে পরেছে খালের দিকে আর তার মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা শুনশান মেঠো রাস্তা। খোরোকালে অর্থাৎ শুকনো মরশুমে গ্রামের অনেক লোকজন দিনের বেলা ওই রাস্তা ব্যবহার করতো। মেঠো রাস্তার ধারে অর্থাৎ শ্মশান যেখানে শুরু হচ্ছে সেখানে একটা ঘর, না ঠিক ঘর-না মন্দির বলাই শ্রেয়! তার ভিতরে মুখ বন্ধকরা তিন চারটে হাঁড়ি! বিনয় একবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে সেটা দেখেছে এবং গল্পে-গল্পে শুনেছে যে ওই হাঁড়ির কোনো একটার মধ্যে নাকি সুপারি আছে, আর যে ওটাকে ঘোর অমাবস্যাতিথির রাতে হাঁড়ির মুখের ঢাকা সরিয়ে নিয়ে আসবে সে নাকি বিশাল ধনীব্যক্তি হয়ে যাবে! তার অধীনে ভূতের রাজা থাকবে! মন্দিরের পিছনে বৃহৎ এলাকা জুড়ে একটা সুবিশাল বটগাছ। বটগাছের ঝুড়ি নেমে অনেক গুলো মোটা কাণ্ড চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, দেখলে মনে হবে- যেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটা অংশ। খালের এপারে আর-একটা রাস্তা চন্দনপুর গ্রামের ভিতর হতে ঠাকুর-তলা হয়ে কুন্দনপুর বাজারের ঠিক মাঝে গিয়ে যুক্ত হয়েছে। এই রাস্তার অনতিদূরে মাঠের মাঝখানে অর্থাৎ পতিত-খালের এপারে শ্মশান হতে খুবই অল্প দূরত্বে একটা পোতা ছিলো। উঁচু একটা মাটির ঢিবি। ঢিবিটা বেশ কয়েক মিটার জায়গা জুড়ে। এখানে কোনো নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে মারা গেলে পুঁতে দেওয়া হতো। বড়বড় শিমূল গাছ, নিমগাছ, কদমগাছ, অশ্বত্থ গাছে ভরে ছিলো এই পোতা। গ্রামের গরু ছাগলও মারা গেলে এই পোতার একধারে পুঁতে দিতো গ্রামবাসীরা। লোকে বলাবলি করতো যে গভীর রাতে নাকি এই পোতা হতে একটা আলো ওই শ্মশানে যাতায়াত করে! ভরসন্ধ্যাতেও অর্থাৎ আটটা নটার সময় কয়েকজন গ্রামবাসী নাকি ওই আলো দেখেছে! অনেকে আবার বলে সন্ধ্যার পর প্রায়শই মানুষের মতো কে যেন আওয়াজ করে ডাকে! ঠাকুরতলা থেকে তাস, ক্যারাম খেলে রাতে যখন একা-একা বাড়ি ফিরত বিনয় তখন কয়েকবার সে ওই ডাক শুনেছে! সন্ধ্যার পর তাই ওই রাস্তায় গ্রামবাসীরা খুব একটা হাঁটে-না! বলতে গেলে একদমই কেউ যাতায়াত করতো না । কুন্দনপুর গ্রামে আর বাজারে বৈদ্যুতিকের আলো থাকলেও চন্দনপুর গ্রামে ঢোকার দুটো রাস্তাতে এবং চন্দনপুর গ্রামে কিন্তু তখনও কোনো বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা ছিলোনা! কেরোসিন তেলের হ্যারিকেন লন্ঠন’ই ভরসা, সঙ্গে দু-ব্যাটারি, তিন-ব্যাটারির EVEREADY টর্চ লাইট।

বিনয় যখন জুনিয়র হাই স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে সবে হাই স্কুলে পা রেখেছে, একদিন সন্ধ্যার পর ঠাকুর-তলার খেলার মাঠে বল খেলার পরিসমাপ্তির পর বন্ধুবান্ধবদের সাথে বসে গল্প আড্ডা মারছে এমন সময় কথায় কথায় ডাকু বলল- কুন্দনপুরে শ্মশানের রাস্তা দিয়ে রাতে তেমন কেউ আসা-যাওয়া করেনা ! তোদের মধ্যে কেউ ওই রাস্তা দিয়ে গিয়ে শ্মশানের হাঁড়ি থেকে সুপারি আনতে পারবি ? খুব তো বড় বড় বিঞ্জান- যুক্তিবাদী- সাহসের কথা বলিস! দেখি তোদের কেমন দম! বিনয় বলল- তুই বলে দে কোন্ হাঁড়িটার মধ্যে আছে-, আমি নিয়ে আসছি ! ব্যাস-, সবাই চুপ! কারোর মুখে আর সাড়া নেই! ঠিক তখনই বিবেক স্বরূপ তরুণ বলল- এই না- না- একদম না, ওসব করার দরকার নেই! কোথায় হিতে বিপরীত হয়ে যাবে- এসব আলোচনা ছাড়। ডাকু একটু গ্যাঁ গুঁ করে বলল- আচ্ছা ওটা থাক্ তবে তুই আমার এই গামছাটা শ্মশানে ফেলে আসতে পারবি ? তাহলে জানবো তোর কলজের জোর আছে ! বিনয় বলল- যদি পারি তবে তুই সবাইকে রসগোল্লা খাওয়াবি ? ডাকু বলল- হ্যাঁ খাওয়াবো। থমথমে গুমোট আবহাওয়ায় হঠাৎ মাঠে একটা ঠাণ্ডা দমকা হাওয়া ধুলোবালি উড়িয়ে বয়ে গেলো! গুনো বলল- দ্যাখ, তোদের কথা ওখানে পৌঁছে গেছে! আমি ভাই এসবের মধ্যে নেই! ভাণ্ডু তোতলাতে তোতলাতে বলল- বি-বি- বিনয়, বা-বা-বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কি-কি-কিন্তু! বিনয় উঠে দাঁড়িয়ে বলল- তু-তু-তুই থাম্ ? ঠিক আছে, আমি একটু ঘর থেকে ঘুরে আসছি, তোরা কেউ যাবিনা এখানেই থাক্। বলে সটান ঘরে গিয়ে হাত-পা-মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেস হয়ে নিলো। তারপর এক কাপ চা খেয়ে একটা দু-ব্যাটারির টর্চ পকেটে পুরে তৈরী হয়ে সোজা ঠাকুরতলাতে হাজির। তখন সবাই সেখানে উল্টোপাল্টা কথা বলাবলি করছে। বিনয় এসে তাদের সাথে যোগ দিয়ে ডাকুকে বলল- দে গামছাটা দে। মিনমিনে সঙ্গে-সঙ্গে বত্রিশপাটি বের করে বলে উঠল- কীরে বিনয়, ঘরে থেকে তাবিজ-ফাবিজ নিয়ে এলি না-কি ? তা বেশ! তাহলে কী ভাবলি মানে আদৌ চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছিস তো বন্ধু ? না-কি- শুধুই লম্বা-চওড়া কথা বলে বাজিমাত করে দিতে চাইছিস! সবাই তখন এ-ওর মুখ দেখাদেখি করে বিনয়ের দিকে তাকাচ্ছে।

ডাকুর কাছ থেকে টাকলু মামা গামছাটা নিয়ে একটু তিরস্কার একটু অবহেলার হাসি হেসে বিনয়ের হাতে গামছাটা দিলো আর বলল- দেখিস ভাগ্না সাবধান- Best of Luck। ততক্ষণে এই ব্যাপারটা অনেকেই জেনে গেছে। বিনয় গামছা নিয়ে ঠাকুরের দিকে মুখ করে একটা প্রণাম ঠুকে রওনা দিলো। ঠাকুর ঘরের দালানের ঘড়িতে তখন রাত আটটার ঘণ্টা বাজছে।

ঘন-অন্ধকারে চারদিক ঢেকে গেছে। শুধু দূরে গাছপালা ঝোপঝাড়ের ফাঁক থেকে দু-একটা বাড়ির লণ্ঠনের ক্ষীণ আলো চোখে পড়ছে! ঝিঁঝিঁপোকার ডাক আর মাঝে-মাঝে জোনাকির আলো এলাকার চারপাশ মায়াবী করে তুলেছে। বিনয় আলিদের কবরস্থানের কাছাকাছি যখন দূরে থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে এলো আর সঙ্গে সঙ্গে আলিদের পাড়ার কুকুরদের সদলবলে চিৎকার। কবরস্থান অতিক্রম করে বিনয় হেঁটে চলেছে সামনের দিকে। আজিজদের ঘর টপকে বিনয় পতিত খালের মেঠো রাস্তায় উঠতেই গামছাটা বাম হাতে তাল করে মুঠো করে নিলো আর ডান হাতটা পকেটের টর্চ লাইটে রেখে এগোতে থাকলো। বাঁশ বনের কাছাকাছি আসতে বিনয়ের গা-টা যেন ছ্যাঁক করে উঠল! শীতল হাওয়ার স্পর্শে সমস্ত শরীরের লোমকূপ কাঁটা মেরে শিহরণ দেওয়ার সাথে-সাথেই হঠাৎ সামনে থেকে একটা কালো ছায়া রাস্তা পার হয়ে দ্রুতবেগে বিচ্ছিরী শব্দ করে চলে গেলো! বিনয় থমকে দাঁড়ালো। তখনি সে যেন টের পেলো তার আশেপাশে অন্য কিছুর উপস্থিতি! বাঁশ গাছের হেল-দোল, শেওড়াগাছ খিড়িসগাছ কৎবেল গাছে দৌড়ঝাঁপ ! ভয় একটু পেল ঠিকই কিন্তু সে দমবার পাত্র নয়। নিজেকে নিজে বোঝাতে লাগলো মনেমনে। এইসব সাতপাঁচ ভাবছে আর খুব ধীরগতিতে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বিনয়ের মনে হলো কেউ যেন উল্টো দিক হতে হেঁটে আসছে তার দিকে! বিনয় ভাবল যাইহোক একজনকে অন্ততপক্ষে দেখতে পাওয়া গেলো। শোনা কথা বেশীরভাগই যে ভুল হয়, আজ সে তার চাক্ষুষ প্রমান। বিনয়ের মনের জোর একটু বেড়ে গেলো। আবছা অন্ধকারে এগিয়ে চলা বিনয় কিছুতেই বুঝতে পারছেনা মূর্তিটা আদৌ আসছে না দাঁড়িয়ে আছে! মনে খটকা লাগলো! একবার ভাবল টর্চ লাইটটা বের করে মারবে! পরক্ষণে মনে হলো না- থাক্। এরই মধ্যে মূর্তিটা কাছাকাছি চলে এসেছে কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছেনা আসলে এটা কে ? এমনকি মূর্তিটার সাথে যখন তার পাশ কাটাকাটি হচ্ছে তখনো না! প্রবল ইচ্ছেতে জিগ্যেস করতে গেল- কে সৌগৎ চাচা ? কিন্তু বিনয়ের গলা থেকে কোনো আওয়াজই বের হলোনা, আশ্চর্য! পিছনে তাকানো বারণ এটা সে ঠাকুরমশাই এর কাছে শুনেছে। তাই সে সম্মুখ পানে চেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কী ছিলো ওটা! প্রকৃত মানুষ নাকি শুধুই ছায়া! খানিকক্ষণ পর আবার ধীর-স্থির মাথা ঠাণ্ডা রেখে এগিয়ে চলল বিনয়। শ্মশানের কাছাকাছি সবে সে এসেছে এমন সময় বিনয় দেখল- যেন কেউ খালে জাল ফেলছে! অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছেনা ঠিকই কিন্তু জাল ফেলার শব্দটা সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে! আরো কাছে আসতে সে খালের নীচে একটা মানুষের অবয়ব দেখতে পেল! না দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসতেই ডানহাতি শ্মশান আর সেই মন্দির। বিনয় চকিতে একটিবার তাকিয়ে বাম হাতে তাল করা সেই গামছাটা খালের দিকে হাল্কা করে ছুঁড়ে দিলো। সে দেখল খালের ধারে বড়বড় উলু-ঘাসে সেটা আটকে গেছে, জলে পরেনি। ঠিক তখনি শুনতে পেল সেই আওয়াজ- আয়- আয়-! বিনয়ের সাড়া শরীর ঝাঙ্কার মেরে উঠলো। প্রচণ্ড ভয়ে ঘামতে শুরু করেছে সে। কান মাথা ঝাঁ-ঝাঁ করছে। তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি এক দৌড়ে কুন্দনপুর বাজারে পালাবে! পরক্ষণে মনে হলো- কী সব ভুলভাল ভাবছে- শুনছে- সে! একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে পুনরায় ওই আওয়াজটা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সে আওয়াজটা পরিষ্কার আবার শুনতে পেলো! এবার তার মনে হলো কেউ যেন মন্দিরের ভিতর হতে আওয়াজ করছে! একবার সে ভাবল- গিয়ে দেখবে আসলে ব্যাপারটা কী! কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো না থাক্! দোটানায় সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। কিন্তু তার মতো একজন যুক্তিবাদী ছেলে এতো কাছে এসে এভাবে হেরে যাবে ? তাই ভয়ে ভয়ে অদম্য সাহসের ওপর ভর করে সে মন্দিরের দিকে গুটি-গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে থাকলো আর পকেটের টর্চ লাইটটা বের করে ডান হাতে শক্ত করে বাগিয়ে ধরল। মন্দিরের যতো কাছে সে যাচ্ছে ততোই স্পষ্ট হতে লাগলো আওয়াজ! গুটি-গুটি পায়ে সে মন্দিরের সিঁড়িতে উঠে খুব আস্তে দরজার একটা পাল্লা ঠেলে যেই টর্চ লাইটটা জ্বেলেছে অমনি একজন জমকালো ভুঁড়িওয়ালা উলঙ্গ মূর্তি তার দিকে বড়বড় নাটানাটা চোখ করে কটমট করে তাকিয়ে আছে! আলোর ছটা তার চোখেমুখে পরতে বিনয়ের তো আত্মারাম খাঁচা! একি ? এতো আমাদের কুন্দনপুরের জন্মেনজয় মামা! বড়বড় চুল দাড়ি আর সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরে ঘুরে বেড়ায়। বিয়েথা করেনি। লোকে অনেকে অনেক কথা বলাবলি করতো তাকে নিয়ে! কিন্তু এখানে এভাবে তাকে দেখবে, বিনয় কল্পনাও করতে পারেনি! হয়তো তিনি-ও তাই! সেই মুহূর্তে কিছু বুঝে ওঠার আগে বিনয় আমতাআমতা করে বলে উঠলো- জন্মেনজয় মামা-, তুমি-? উল্টো দিক হতে গম্ভীর কন্ঠে উত্তর এলো-, হ্যাঁ- আমি-। তুই এখানে কী করছিস ? বলতে বলতে এক কোনে হেঁটে এগিয়ে গিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা ধুতি পাঞ্জাবী পরছে-, বিনয় দেখল এটাই সুযোগে। ভাবা যা কাজ তা- সবে হাঁড়ির ঢাকা সরাতে যাবে হঠাৎ তার হাতটা কে যেন চেপে ধরল! বুকটা ধক্ করে উঠল- ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে জন্মেনজয় মামা। বিনয়কে টেনে এনে মন্দিরের সিঁড়িতে বসলো তারপর বলতে লাগলো- বিনয়, ওই যে চারটে হাঁড়ি দেখলি, এর কোনো একটার মধ্যে সুপারি আছে কিন্তু সেটা আমিও জানিনা। আজ আমি দশটা বছর ধরে সাধনা করছি, শুধু কোন্ হাঁড়িটার মধ্যে সেই সুপারিটা আছে সেটা জানবার জন্য! কারন যদি আমি সুপারি বিহীন হাঁড়ির ঢাকা খুলে ফেলি আমার মৃত্যু অবধারিত! তাই আমি প্রতি রাতে শ্মশান জাগাই! ভূত প্রেতদের সর্দারকে তুষ্ট করতে! আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এভাবে তোর মতো দেখেনি ভাগ্না। সত্যি তোর বুকেরপাটা আছে। তুই আমাকে কথাদে ভাগ্না-, এই তোর হাত ধরে আমি বলছি- তুই যে আজ আমাকে এভাবে দেখলি কাউকে বলবিনা-। বিনয় বলল- ঠিক আছে বোলব-না। দেখ্ ভাগ্না, তু্ই কিন্তু এই অমাবস্যার রাতে শ্মশান মন্দিরে দাঁড়িয়ে কথা দিলি। বিনয় বলল- আচ্ছা জন্মেনজয় মামা, এই যে সবাই বলে ভূত প্রেত ; আদৌ কী এগুলো বাস্তবে আছে ? জন্মেনজয় মামা শান্ত নম্র স্বরে বলল- আছে আবার নেই-ও! পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে যে জয় করতে পারবে তার কাছে সবই তুচ্ছ। আজ আর সাধনা হবেনা। তুই এগিয়ে চল্ আমি সব গোছগাছ করে পরে আসছি।

বিনয় যুুদ্ধ জয়ের মেজাজে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে কুন্দনপুর ১-নং. গেট হয়ে বাজারে এসে পৌঁছল যখন তখন রাত বেশ অনেকটা হয়ে গেছে। বিনয়ের ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে দেখে ডাকু বিবেক ভাণ্ডু স্বরূপ কুন্দনপুর বাজারের কাছাকাছি দলবেঁধে লাইট হাতে এগিয়ে এসেছে। সামনাসামনি হতেই সবাই একটা স্বস্তির হাসি হেসে ডাকু বলল- তুই একদম বিচ্চু ঢ্যামনা ছেলে। এখানে বসে সময় কাটিয়ে আমাদেরকে বোঝাচ্ছিস তুই শ্মশান ঘুরে গামছা ফেলে তর্কে জিতে যাবি! ওসব রসগোল্লা ফসুগোল্লা হবেনা এই বলে দিলুম। তখন ভাণ্ডু তোতলাতে তোতলাতে জিগ্যেস করলো- কী-কী-কী-রে বিনয়, ভূ-ভূ-ভূ- ভূত দে-খেছিস ?

Exit mobile version