Site icon আলাপী মন

ভৌতিক গল্প- ভাড়াবাড়ির অশরীরী

ভাড়াবাড়ির অশরীরী

-ইন্দ্রনীল মজুমদার

 

 

রাতে কি একটা শব্দে বেশ যেন সৌমিতের ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। বেশ জাঁকিয়ে ঘুমটা এসেছিল বটে, কিন্তু এই আওয়াজটাই ঘুমের রেশটা কাটিয়ে দিল। ঘুমন্ত চোখে লাইটের স্যুইচটা জ্বেলে টলতে টলতে কোনোরকমে বাথরুমে গেল সে। চোখে মুখে জল ছিটিয়ে ঘুমের ভাবটা কাটাতে হবে। তারপর খুঁজতে হবে আওয়াজের উৎস। তাই হল। ভালোভাবে সব কিছু লক্ষ্য করতে আরম্ভ করল সৌমিত। খুব ভালোভাবেই মনে আছে কে যেন বেশ জোরে জানালাটা ধাক্কাচ্ছিল। হ্যাঁ, পাঁচিলের দিকের কাঠের জানালাটা বন্ধই থাকে। কেননা মশার ভয়। ওই জানলাটাই মনে হয় ধাক্কাচ্ছিল কেউ। সৌমিত কৌতূহলভরে জানলাটা খুলল। খুলে দেখল কেউ নেই। আবার জানালাটা বন্ধ করে বিছানায় আসতে যাবে এমন সময় সে জানলায় ধাক্কা মারার আওয়াজ শুরু হল। কে যেন হয়তো বোঝাচ্ছে যে, জানলা খোলো, অনেক দরকারি কথা আছে। সৌমিত ভয়ে অস্ফুট গলায় বলল, “কে? কে ওখানে?” কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ পেল না। কিন্তু, জানলা ধাক্কানোর আওয়াজ ক্রমশ বেড়ে চলল। এক সময় মনে হল জানলাটা বোধহয় ভেঙেই যাবে। ঠিক তখনি বেশ সাহস সঞ্চয় করে জানলাটা খুলল সৌমিত। কিন্তু এবারও অবাক কাণ্ড! কোথাও কেউ নেই। সৌমিত জোড়ে চিৎকার করে উঠল,– “কে?জানলা ধাক্কাচ্ছিলেন কেন? কে আপনি? কই গেলেন?”কিন্তু, কোনও সাড়াশব্দ পেল না সৌমিত। ব্যাপারটা তো বেশ রহস্যজনক।

সৌমিত আজই কলকাতার এই বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে এল। সদ্য কলকাতার একটি নামী অফিসে জয়েন করেছে সে। তাই কোচবিহার থেকে কলকাতার এই বাড়িতে আসা বৈকি। বাড়িটা বেশ ভালো লেগে গিয়েছিল সৌমিতের। আর ভাড়াও বেশ কম। ও ওর একার পক্ষে এই বাড়ি ঠিকই আছে। কিন্তু প্রথম দিন রাতেই যে এমন অদ্ভূতুড়ে উপলব্ধি হবে, কিন্তু সেটা ও কোনোকালেই ভাবতেই পারেনি। সদ্য বি.টেক. পাশ করা বছর বাইশের সৌমিত কুণ্ডুর জীবনে এই প্রথম যেন অলৌকিকতার প্রবেশ ঘটল। যাই হোক, সৌমিত শুনেছিল যে বাড়িটা বহুদিন খালি পড়েছিল তাই হয়তো জানলা দরজাগুলো অব্যবহৃত ছিল। সেই জন্যে বোধহয় হালকা হাওয়ায় জানলাটা ওরকম করছিল। কিংবা পেঁচা কি বাঁদুড়ের সাথে ধাক্কা লাগছিল হয়তো জানলাটার সাথে তাই ওই আওয়াজটা হচ্ছিল। কিন্তু তা বলে এত…..। এরপর, সৌমিত আর কিছু ভাবলো না। ওইটুকু নিজেকে বুঝিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল কেননা পরের দিন ওর অফিস আছে তাই ঘুমটা খুব দরকার।

সেই রাতে পরের দিকে ঘুমটা বেশ ভালই হল সৌমিতের। সকালে উঠে বেশ ঝরঝরে লাগলো। বেশ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিসের দিকে রওনা হল। অফিসের ব্যস্ততায় ভুলেই গেল গতকালের ঘটনা। সেদিন অফিসের একটু বেশি কাজ ছিল তাই ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। ফিরে যখন সদর দরজা খুলে ঘরে ঢুকে আলোটা যেই না জ্বেলেছে ওমনি তার মনে হল খাটে কে যেন ছায়ামূর্তি বসে ছিল তাকে দেখে খাট থেকে নেমে পালিয়ে কোথায় যেন একটা মিলিয়ে গেল তা ঠিক ঠাহর করা গেল না। সৌমিতের শরীর দিয়ে একটা শিহরণ খেলে গেল। কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার মতো দাঁড়িয়ে তারপর মনের ভুল ভেবে স্বাভাবিক কাজকর্মগুলো সম্পন্ন করল সে। সেদিন রাতে এমনকি বেশ কয়েকদিন কোনও ঘটনা ঘটল না। এমনিভাবেই চলছিল একদিন ঘটে গেল এক অদ্ভূতুড়ে ঘটনা। রাতে বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়ল সৌমিতের। বাথরুমের দরজাটা যেই না খুলতে যাবে ওমনি সে শুনতে পেল বাথরুমের কলের জলের আওয়াজ। কে যেন কল খুলে তার জল ব্যবহার করছে। এত রীতিমতো তাজ্জব ব্যাপার! তাহলে কি কোনও চোর ঢুকল ঘরে? শিগগিরি সৌমিত সদর দরজা চেক করল কিন্তু সদর দরজা তো বন্ধ।‌ আর জানলাগুলো‌ প্রায় সবই বন্ধ। একটা যাও খোলা কিন্তু সেখানে তো গ্রিল লাগানো আছে। তাহলে বাথরুমে কে? সৌমিত ছুটে গেল বাথরুমের দিকে। কিন্তু, আবার বিস্ময়কর ব্যাপার হল এই যে, বাথরুমের দরজা তো বাইরে থেকে আটকানো। তবে লোকে সেখানে ঢুকলো কিভাবে? সৌমিত বড় চমকে গিয়েই বাথরুমের আলোর স্যুইচ জ্বেলে দরজা খুলে দেখে‌ কোত্থাও কেউ নেই। কলটাও বন্ধ। অথচ বাথরুম জলে ভর্তি। বোঝাই যাচ্ছে সদ্য কেউ যেন ব্যবহার করেছে। ভারী অবাক করার মতোই ব্যাপার। যাইহোক, সৌমিত বাথরুম করে ফিরে এল বেশ নির্বিঘ্নেই‌ কোনও অসুবিধা ছাড়াই। আর মনে মনে ভাবল যে, এর একটা বিহিত করা দরকার। আগামীকাল শনিবার– অফিস ছুটি। তাই, একবার বাড়িওয়ালার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলা দরকার। এখানে অন্য কেউ আছে না কি? অশরীরী কেউ?

পরদিন বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে বেশ নিরাশাই হতে হল সৌমিতকে। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোকটি বেশ বয়স্ক। একাই থাকেন। বেশ হেসে হেসে বললেন, “কি হে সৌমিত? বাড়িটিতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না তো?”

– না। তবে কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে যেগুলোর ঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছি না।

এই বলে সৌমিত ঘটনাগুলো সংক্ষিপ্তভাবে বলে। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোকটি শুনে প্রথমের দিকে বেশ‌ গম্ভীর ছিলেন। কিছু একটা চিন্তায় বেশ বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন বেশ যেন। এক দৃষ্টিতে, এট মনে যেন কোনও এক চিন্তায় ডুবে ছিলেন। সৌমিত জ্যেঠু বলে ডাকাতে তাঁর যেন হুঁশ এল। তিনি যেন ঘোর কাটিয়ে বেশ স্বাভাবিক অবস্থায় হেসে বলেন, “না না, ও তোমার মনের ভুল। ও বাড়ি খুব ভালো বাড়ি। কোনোদিন কোনো অভিযোগ তো পাইনি। ঐসব তোমার মনের ভুল মাত্র। এত খাটা খাটনি কর তো। খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক করে করো।”

– আচ্ছা, বেশ। আসি তাহলে।

– কোন টেনশন নেই। কিছু সমস্যা হলে জানিও। ভালো থেকো।

কিন্তু এত কিছু আশ্বস্তবাণীর পরেও সৌমিতের মনের দ্বন্দ্ব কাটে না। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোকটি কি যেন কোনও কথা না বলে চেপে গেলেন। খোলসা করে বললেন না ব্যাপারটা। সৌমিত অগত্যা নিরাশ হয়ে ফিরে এলেন। তা ঘরে ফিরে সৌমিত দেখে যে তার ঘর পুরো লণ্ডভণ্ড। ফাইল সব ছড়ানো আছে, বই সব মাটিতে পড়ে আছে, জলের বোতল খোলা আছে আর তার থেকে জল গড়িয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি যা তা অবস্থা হয়ে রয়েছে। সৌমিতের বেশ ভয় খেলে গেল। ঘরের কারুর ঢোকার তো জো নেই কেননা সদর দরজা তো বাইরে থেকে তালা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। গ্রিল দেওয়া জানালাগুলোও তো বন্ধ ছিল। তাহলে? সৌমিত বেশ ভয়ে আবার রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,– “কে তুমি? কি চাও কি? কে আছ এখানে?” বেশ কয়েকবার এই প্রশ্নগুলো উচ্চারণ করার পরও কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। এবার সৌমিত কিছুটা থেমে বেশ রেগে গিয়েই বলল, “তুমি যেই হও না কেন, চলে যাও এখান থেকে। চলে যাও।” ঠিক সেই সময় কে যেন সৌমিতকে পেছন থেকে জোড়ে ধাক্কা মারলো। সৌমিত উল্টে পড়ে গেল ঠিকই কিন্তু গুরুতর কোনো আঘাত বা চোট পেতে হয়নি তাকে।

এরপর, সোমবার অফিসে গিয়ে মানসীদিকে ব্যাপারটা জানায় সৌমিত। আসলে হয়েছে কি, সৌমিত ঐসব ভূতুড়ে ঘটনার জেড়ে বেশ মনমরা হয়ে পড়েছিল। তা দেখে মানসীদি সৌমিতকে জিজ্ঞাসা করেন, “কি রে, সৌমিত? কি হয়েছে তোর? খুব তো জলি থাকিস, তা আজ এত মনমরা লাগছে। ভাই, কি ব্যাপার বলতো?

সৌমিত কাতর কন্ঠে বলল, “আর বলো না দিদি। এই ভাড়া বাড়িতে যাওয়ার পর যা সব ঘটছে।”

– তা ছেড়ে দে।

– আর কোথাও পাব বলো তো এত কম দামে?

– তা কি কি হচ্ছে বল তো।

– তোমাকে না হয় টিফিন টিফিন ব্রেকের সময় বলব। এখন প্রেজেন্টেশনটা একটু বানিয়ে নিই।

টিফিন ব্রেকের সময় সৌমিত মানসীদিকে সবকিছু খুলে বলে। মানসীদি সৌমিতকে নিজের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করেন ও ভালোবাসেন। আবার সৌমিতের কাছে মানসীদি শুধুমাত্র একজন বন্ধু বা ফিলোসফার বা গাইডই নন– একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী ও বড়দির মতো। তা, মানসীদি তো সব শুনে বললেন, “ঐ বাড়িতে বেশিদিন থাকিস না। আমাদের এদিকে একটা ফ্ল্যাট আছে বটে এখানে চলে আয়। ঐ বাড়ির মধ্যে অশুভ কিছু প্রেত বা ভূত ঐ জাতীয় কিছু একটা আছে হয়তো।”

সৌমিত ভয়ে চমকে ওঠে, “কি বললে প্রেত বা ভূত?”

– হ্যাঁ। হতে পারে ঐ বাড়িতে কেউ আত্মহত্যা করেছিল বা খুন হয়েছিল, তোকে যা জানাইনি। জানালে বাড়ির জন্য ভাড়াটে পাওয়া যেত না।

– এই রে! (সৌমিত আরও ভয় পেয়ে যায়।)

– তাই বলছি আর কি। ঐ বাড়ি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেড়ে দে।

সৌমিত তৎক্ষণাৎ ভেবেই নেয় যে ঐ হানাবাড়িতে এরপর আর থাকবে না। তাই এ মাসটা কোনওরকম কাটিয়ে চলে যাবে অন্য জায়গায়।

মানসীদি আবার বলে ওঠেন, “একটু খোঁজখবর নিস তো ঐ বাড়িতে কেউ কখনো আত্মঘাতী বা খুন হয়েছিল কি না।”

– আচ্ছা, বেশ। তোমার চেনা জানা কোনও ভাড়াবাড়ি পাওয়া যাবে? আছে তোমাদের ঐদিকে কোথাও?

– আছে। আমাদের বাড়ির কাছে। একটু খোঁজখবর নেব। বাড়িওয়ালা আমার হাসবেন্ডের চেনা আছে। আশা করি হয়ে যাবে। আমাদের বাড়ির কাছাকাছি গেলে তোর অফিসটাও বেশ কাছে হয়ে যাবে। ঐ ভূতুড়ে বাড়ি ছেড়ে দে, চলে আয় এদিকে।

– তাই হোক দিদি।

সেদিন রাতে আর কিছু হল না। তার বেশ কয়েকদিন পর যা সব ঘটল তা সৌমিতের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। এই ক’দিন অফিসের কাজের চাপে খুব ব্যস্ততায় কেটেছে। সৌমিত মানসীদির কথা মতো তাঁদের ওখানেই যাচ্ছে। সেই মতো সবকিছুর তোড়জোড়ও চলছে। একদিন রাতে ফেরার সময় সৌমিত ভাবল যে, মানসীদি ঠিকই বলেছেন। ও যে বাড়িতে আছে সেই বাড়ি সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নেওয়া দরকার। কোথায় নেবে? সৌমিত ভাবল যে হোটেলে ও রাতে নিয়মিত খায় সেখানেই জিজ্ঞেস করবে। আগে করবে ভেবেছিল কিন্তু অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কিংবা নানান কারণে করা হয়ে ওঠেনি। আবার সময় পেয়ে যখন করবে ভেবেছিল তখন অচেনা মানুষজনকে প্রশ্ন করতে গিয়ে কোথাও একটা লজ্জাবশত ‘কিন্তু কিন্তু’ করেও জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। যাইহোক, খাবার খেয়ে বিল মেটানোর সময় দোকানে আর কেউ ছিল না সৌমিত তখন দোকানের মালিককেই জিজ্ঞেস করল, “কাকু, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

– হ্যাঁ, বলো।

– আচ্ছা, আমি আপনাদের দোকানের উল্টোদিকের গলিতে দ্বিতীয় নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকি।

– ও আচ্ছা। তা বাড়িওয়ালার নামটা কি যেন।

– রঞ্জনবাবু, রঞ্জন বাগচী।

– ও, হ্যাঁ হ্যাঁ। তা কি জানতে চাও বলো?

– ঐ বাড়ির ব্যাপারে কিছু বলবেন। কিরকম যেন অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। একা খুব ভয়ে আছি। ওখানে কি কেউ আত্মহত্যা বা খুন হয়েছিল?

মালিক ভদ্রলোক কেযন যেন বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তারপর বললেন, “একটা বাড়ির সম্বন্ধে এরকম শুনেছিলাম বটে। সেটাই কি এই বাড়ি? আচ্ছা, দাঁড়াও তো…” তারপর ওঁর পাশে বসা স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁ গো, বছর তিনেক আগে সুইসাইড করেছিল যে ছেলেটি, সেটা কি রঞ্জনবাবুর?

মালিকের স্ত্রী জানালেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ। রঞ্জনবাবুর ছেলেই তো আত্মহত্যা করেছিল। ঐ বাড়ি নিয়েই তো যত অপবাদ। কেউ টিকতে পারে না।”

সৌমিত জিজ্ঞাসা করে, “কাকিমা, কাইন্ডলি একটু ডিটেলসে বলবেন?”

মালিকের স্ত্রী বলতে আরম্ভ করলেন,– “ছেলেটি যতদূর জানতাম একটু পাগলাটে গোছের ছিল। তাই ওর কিছু হয়নি। হাজার বলা সত্ত্বেও না করেছিল বিয়ে না করত কোনও কাজ। রাতদিন খালি নেশা করে একে ওকে তাকে জ্বালিয়ে কাটাত। বাপের থেকে খালি টাকা চাইতো। সেই নিয়ে বাপ ও ছেলের খুব ঝগড়া হত। ছেলে মারা যাবার বছর দশেক আগে রঞ্জনবাবুর স্ত্রীও মারা যান। শেষের দিকে ছেলেটা আরও বিগড়ে যাওয়াতে বাপে ও ছেলের মধ্যে এতটাই ঝগড়া হত যে পাড়া মাথায় উঠত। তা, একদিন হঠাৎ করে শুনলাম ছেলে ফ্যানে দড়ি লাগিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। ছেলের আত্মহত্যার পর রঞ্জনদাও ঐ বাড়ি ছেড়ে পাশের একটা ফ্ল্যাটে চলে যান। এরপর, একজন দম্পতি ভাড়াটে ছিলেন বটে তবে তাঁরা বেশিদিন থাকতে পারেননি। তাঁরাও নানান অভিযোগ করেছিল। তারপর বহুদিন ভাড়াটে ছিল না ওই বাড়িতে। মাঝে কোভিডের সময় তো বন্ধই ছিল। এই কয়েক মাস পর তুমি এলে।”

দোকানের মালিক এবার বললেন, “হ্যাঁ, মনে পড়লে এবার। আগের ভাড়াটে ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রীও বলতেন ঐ বাড়িতে থাকা যায় না। কার যেন ছায়া ঘরময় ঘুরে বেড়ায়। বাথরুমের জল খোলা থাকে, জানলা ও দরজায় নানা ধরণের আওয়াজ হয় ইত্যাদি।”

দোকানের মালিকের স্ত্রী বললেন, “তুমিও বাবা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও। নয়তো তোমার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। ঐ‌ প্রেতাত্মা খুব জ্বালায়।”

সৌমিতের বেশ ভয়ে ধরে যায়। বাড়িতে এসে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ মাঝ রাতে এক ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে যে সিলিং ফ্যান থেকে দড়িতে কে যেন ঝুলছে। হঠাৎ, ধড়ফড় করে উঠে পড়ে সৌমিত। না, কোথাও কেউ নেই। জল খেয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু ঘুম আসে না কিছুতেই। এভাবেই ভোর হলে সৌমিত উঠে মর্নিং ওয়াকে বেড়োয় তাতে মনটা হয়তো ভালো থাকবে। আজ অফিস করে কাল ছুটি নিয়ে ঐ ভাড়া বাড়িতে চলে যেতে হবে। সব কথা বলাই আছে। মাসও শেষ হতে চলল। এর মধ্যে যা করার তাই করতে হবে। পরদিনের ছুটি মঞ্জুর হল। সামান্য জিনিস আছে বেশিক্ষণ লাগলো না শিফ্ট করতে। তারপরের দিন শনিবার– মাসের শেষ তারিখ। সৌমিত বাড়িওয়ালাকে মাসের টাকাটা দিয়ে আসল।

এবার এই ভূতের বাড়ি ছাড়তে হবে। ছাড়ার সময় যখন সদর দরজায় তালা আটকে সৌমিত চলে আসছিল তখন জোড়ে জোড়ে ভেতর থেকে দরজা ধাক্কার আওয়াজ শোনা গেল। সৌমিত এবারও কৌতূহলভরে আবার তালা খুলে দেখে ভেতরে কেউ নেই। এমনকি ভেতরে উঁকি-ঝুঁকি মেরেও কাউকে কোথাও দেখল না। আবার, দরজায় তালা দিয়ে বেড়োচ্ছে এমন সময় আবারও দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শোনা গেল। এবার যেন আরও জোড়ে। সৌমিত এবার অবশ্য ভয় পেল না, বরং বেশ সাহস সঞ্চার করে বলল, “এই চোপ্!” ওমনি আওয়াজও থেমে গেল। তারপর সৌমিত দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পর নরম গলায় বলল, “বিদায়, ভালো থাকিস। আর কাউকে জ্বালাস না। তুই শান্তি লাভ কর।” তারপর, আর কোনও আওয়াজ শোনা যায়নি। ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে আসে সৌমিত। তারপর, নতুন ভাড়া বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বলা ভালো, সে বিদায় দেয় ভাড়াবাড়ির অশরীরীকে।

Exit mobile version