দৃষ্টিপথের পাঁচালী
-সুনির্মল বসু
হেমন্তের পাতা ঝরার দিনে যে পথ দিয়ে তুমি একলা হেঁটে গিয়েছো হে প্রেমিক, শীতের হিমেল স্পর্শ পেরিয়ে বসন্ত দিনে কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়ার পাশে সেই অতীত স্মৃতি ভাসে,
জীবন এমনই, বারবার পথ বদলায়, ছবি বদলায়, সুখ-দুঃখের পালাবদল ঘটে,
উতরোল নদীপথ, খাঁড়ি ও মোহনা চেয়ে দ্যাখে,
জাহাজ মাস্তুল উড়িয়ে অনির্দিষ্ট যাত্রায় এগিয়ে যায়,
ভেসে যায় মানুষের জীবন পথ,
পুরনো স্মৃতিকে কে আর মনে রাখে হায়,
পথে নামার আগে সেই পথ কোথায় তোমায় নিয়ে যাবে, সে কথা কারও জানা নয়,
আকাশ নদী ও বিজন অরণ্য পথ চেয়ে দেখেছিল,
দৃশ্যপট বদলায়, জীবনের সাকিন ঠিকানা বদলে যায়, তবু জীবনের ভবিতব্য কাকে যে কোন পথে নিয়ে যায়,
হেমন্তের ঝরা পাতার দিনে যে হতাশ প্রেমিক বসন্তদিনের দিকে চেয়ে থাকে, কৃষ্ণচূড়ার দিনে সে কি আর অতীতকে মনে রাখে,
নদীতে সাম্পান ভেসে যায়, শ্মশানে চিতার আগুন জ্বলে, পুরনো পথে হেঁটে যায় নতুন মানুষ,
সকাল দুপুর বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা আসে, দূর গ্রামে সাঁঝের প্রদীপ জ্বলে,
আকাশে একটা দুটি তারা জ্বলে ওঠে, রাতের পালকি চড়ে চাঁদ আসে,
হেমন্ত দিন থেকে বসন্তে ফিরে যাবার মতো সকাল সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসে,
আসা যাওয়াই জীবনের সরল সমীকরণ,
চলতে চলতে পথে একদিন ফুরিয়ে যায়,
পথের ওপর দীর্ঘ প্রলম্বিত ছায়া পড়ে, সেই ছায়া আসল মানুষটাকেও ছাড়িয়ে যায়,
তখন জীবনসঙ্গী স্মৃতিমালা, সাফল্য ব্যর্থতা ছাপিয়ে তখন মধ্যরাতে স্মৃতিগুলো একা একা কথা বলে,
দীঘল দীঘি, উত্তাল নদী, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র তখন একই ভাবে বয়ে যায়,
সাধের সিন্দুক ফেলে জন্ম পথিক মানুষ তখন অন্য লোকে অন্য বিশ্বাসে নতুন সংকেতে একলা হেঁটে যায়,
তারার আলোর মালা পরা রাত্রি, একলা চাঁদ, কুয়াশায় ঢাকা আকাশ অপার বিস্ময় নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথিবীর এই দৃশ্য বদল চেয়ে দ্যাখে।