একা’দশী তিথি
-সুবিনয় হালদার
চতুর্থ প্রহর শেষে ঊষালগ্নে উদ্ভাসিত হতে থাকে পৃথিবী।
নিশি সমাপন মুহূর্ত জানান দেয় পাখিদের সমবেত কিচিরমিচির ডাক আর আজানের আওয়াজ।
মা’ ষষ্ঠীর শঙ্খধ্বনিতে সকাল-সকাল তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে তৈরী হয়ে নেয় একা’দশী, আজ তার আর্য্য-ভূমিতে সংস্কৃতি যজ্ঞের পৌরোহিত্য করতে হবে।
সেখানে তার পরিচিত বহু মানুষজন আসবে, নমোনমো দুগ্গাদুগ্গা করে আত্মপ্রত্যয়ে বেড়িয়ে পরে একা’দশী।
সেখানেই সেদিন প্রথম দেখা- তিথি ; পঞ্চমীদির সাথে ছোটবোন দ্বিতির হাত ধরে এসেছিল ওখানে।
দিদি’ই তাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয়-, বাক্য বিনিময় হয় সামান্য কিছু- ব্যাস এইটুকু।
তারপর ধীরেধীরে দামোদরে জোয়ার আসে! কোটালে ভেসে যায় সবকিছু কিন্তু তিথি সেটা বোঝেনি কখনোই!
তবুও আসে, জানান দেয় সে আছে !
তিথির মেজ বোন অষ্টমী খুব সুন্দরী। মনে সংগোপনে লালিতপালিত কামিনীকাঞ্চন শোভিত যা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষীত !
আসাযাওয়া গভীর হতে গভীরতর হতে থাকে। দিন যায়- বছর ঘুরে বছর আসে আর যায়- ; উত্তর থেকে দক্ষিণায়ন অতিবাহিত হয় কত কিন্তু উত্তর মেলেনি আজো !
বসন্তের পরন্ত বৈকালে ঝরাপাতায় ফাগুন হাওয়ায় মর্মরধ্বনির সাথে কোকিলের ডাক শুনে নেচেছিল মন !
চেতনা পুরে প্রেরণা’ এসে জাগিয়েছিল সাদা খামে হলুদ ছোঁয়ার অনুভূতি !
তড়িঘড়ি ছুটে গিয়েছিলো- এক মায়াবী আলোর উৎস সন্ধানে ;
তার’ই জন্যে সে অপেক্ষা করছিলো- অনেকটা সময় ধরে, রাস্তার পাশে গাছের তলায় এক যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে।
পথচলতি কত মানুষ- কত ব্যস্ততা- বাস গাড়ির হর্ণ এর বিকট আওয়াজ- দুষিত আবহাওয়া- সব কিছু উপেক্ষা করে !
সমস্ত বাধা অতিক্রম করে হন্তদন্ত হয়ে ঘামে-নেয়ে একসা শরীরে একা’দশী তিথির সামনে দাঁড়ালো- ;
অন্যমনস্ক তিথি যেন রূপকথার দেশে মায়াবী পরী,
কী বলবে- ও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিলো-না !
সুন্দর পরিপাট্য বেশভূষায় বেশ লাগছে ।
একা’দশীকে এইভাবে বোকা স্ট্যাচুর মতো হাঁ-করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও উঠে দাঁড়িয়ে বললো- চলো- অনেক দেরি হয়ে গেছে ! বলে সটান রাস্তার ধার ধরে হাঁটতে থাকলো !
একা’দশী তখন ওর কাছে গিয়ে আলতো স্বরে বললো- তোমাকে-না আজ খুব সুন্দর লাগছে ।
ধ্যাৎ,মোটেই না- ; কী-যে বলো-না- আজকাল ; বলে- শরৎ মেঘের ওড়না উড়িয়ে একটু লাজুক হাসি হেসে এগিয়ে চললো-,
অগত্যা সে-ও ওর পিছু-পিছু হাঁটতে থাকলো !
মোড়ের বাম দিক ঘুরে একটু এগিয়ে একটা অটোরিকশা রিজার্ভ করলো । ও কিছু জিগ্যেস করার আগেই সে বললো- ওঠো ;
একা’দশী আগে উঠে বসার পর সে তার একেবারে পাশে- গায়ে গা-ঠেকিয়ে গেটের দিকে বসলো ।
অটোরিকশা চলতে থাকলো একা’দশীর নাজানা গন্তব্যে !
হাওয়ায় তিথির চুল গুলো ঠোঁট স্পর্শ করে উড়ে এসে পরছে একা’দশীর মুখে আর তিথির মেয়েলি গন্ধে তার নিশ্বাসে প্রশ্বাসে এক পারিজাতের নরম স্নিগ্ধতা ভরিয়ে দিচ্ছে !
তার শাড়ির আঁচলটা বারবার উড়ে এসে ওর মুখমণ্ডলটা ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে, ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরে কেউ যেন একটা কাশফুল দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছে !
তিথির ঘোরে আচ্ছন্ন একা’দশী শুধু মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতেই থাকে ! হাল্কা লাজুক হাসি আর চোখেমুখে উজ্জ্বল আভার উপস্থিতি ভরে উঠেছে তিথি ।
কোন কথা বলছেনা দেখে সে জিগ্যেস করতে যাবে- ঠিক সেই সময় তিথি বলে উঠলো- এই দাঁড়াও- দাঁড়াও এখানে ।
নেমে পড়লো দুজনে । ভাড়াটা বের করার আগেই তিথি চালকের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিয়ে একা’দশীর দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় বললো- চলো- সামনের ওইখানে আমরা যাবো !
দেখলো দূরে একটা বড় বিল্ডিং আর তার গেটের বাইরে ইংরেজিতে লেখা- The Asylum .