গল্প

গল্প- সোপান

সোপান
– শিলাবৃষ্টি

মাঝে মাঝেই দাদুর বলা সেই কথাগুলো মনে পড়ে যায় আমার। আজ দাদু নেই, সেই কবে পাড়ি দিয়েছে অন্যলোকে। তাকে ডাকতো দাদু রাজা বলে। ভীষণ ভালো বাসতো। বলতো অনেক কথা, কিন্তু কিছু কিছু কথা মনে এমন ভাবে গাঁথা হয়ে যায় যে….
” রাজা! তোর সামনে একটা কাল্পনিক আকাশ ছোয়ার সিঁড়ি রাখবি, সেই সিঁড়িটাতে খুব ধীরে ধীরে উঠবি দাদুভাই। তাড়াহুড়ো করলেই হাঁপিয়ে যাবি। আর হাঁপিয়ে গেলে উঠবি কি করে শেষ অব্দি? তোকে যে আকাশ ছুৃঁতেই হবে ভাই।”
পরে বুঝেছিলাম এই সিঁড়িটার নামই বোধহয় উন্নতির সোপান।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো দাদুর বয়েস হয়েছিল পঁচাত্তর বছর ঠিক ই কিন্ত দাদুর মৃত্যুর কারণ আবার এই সিঁড়িই হলো। দাদু সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার কারণেই মারা যান। সিঁড়ি দিয়েই দাদু স্বর্গে গেছে।
তখন আমার ক্লাস ইলেভেন। দাদুর মৃত্যুতে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।তবু মন শক্ত করে উঠে দাঁড়ালাম। দাদুর ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই, তাই আর কোনোদিকে না তাকিয়ে আদা নুন জল খেয়ে লেগে পড়লাম। জয়েন্টে খুব ভালো র‍্যাংক হলো। আবার শুরু সিঁড়ি ভাঙা। আমাকে উঠতেই হবে একটা একটা করে অনেক সিঁড়ি। আকাশ ছোঁয়ার সেই সিঁড়িটাকে স্বপ্নেও আমি দেখতে পেলাম একদিন। খুব যত্ন করে অনেকগুলো ধাপ মুছলাম, যেন ধুলোতে না ঢেকে যায় আমার সোপান।
আমি ডাক্তার হয়েছি। দাদুর ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছি। দাদুর গ্রামের বাড়ি মুকুন্দপুরে গরীব মানুষগুলোর কাছে সপ্তাহে একদিন পৌঁছে যাই আমি। তাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করার মধ্যে আমি স্বর্গীয় সুখ লাভ করি।
সেই মাটিতে আমি অনুভবে দাদুকে পাই। ঝড় বৃষ্টিতে একদিন ফিরতে পারিনি। সেদিন সেই চারশ’ বছরের পুরাতন বাড়িতে রাতে যেন আমি স্পষ্ট দাদুকে দেখলাম। আমায় দাদু আশীর্বাদ করে, বলে গেল ” রাজা তোমার সামনে যে এখনো অনেকগুলো সিঁড়ি… ” সেটা স্বপ্ন ছিল না অন্যকিছু ডাক্তারি পরিভাষায় তার ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। শুধু বুঝেছিলাম সেদিন দাদুর ইঙ্গিতটা। তাই…
শুরু করলাম লণ্ডণ যাওয়ার প্রস্তুতি।
…..
আজ আমি এফ আর সি এস চেষ্ট স্পেলালিস্ট। মানুষ বলে ” ডাক্তার নয়, এ যেন ভগবান।”
আজ যা কিছু আমি তা আমার দাদুর জন্য। খুব মিস করি তোমায় দাদু। আমি বাবা হয়েছি দাদু। আর তোমার সেই সোপান এখন আমার ছেলের জন্য অনেক যত্নে রোজ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখি আমি। তোমার দেখানো সোপান… আমি ভালোবাসা দিয়ে সাজাবো।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page