অণু গল্প
-
অনু গল্প-কাঁচা সোনা
কাঁচা সোনা
-সঞ্জয় গায়েনসামনে হলুদ সরষের বন। দুপাশে লালগোলাপের ক্ষেত। মাটির দেয়াল আর খড়ের ছাউনি দেয়া সারি সারি ঘর। হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো তমাল গাছ ও বটবৃক্ষ তলায় বিরাট উঠোন। গোবর জলে নিকোনো। এরকম এক আশ্রমে ওকে দেখা। একমনে বাউল গান শুনছিল। হঠাৎই আমার চোখে পড়ে। একা বসে আছে। তবে কি সঙ্গীরা কাছেপীঠে কোথাও ঘুরছে? নইলে বাঙালী মেয়ের এত সাহস! কাছাকাছি থেকে এসেছে বলে তো মনে হচ্ছে না। পোশাকে শহরের চিহ্ন। গায়ের রঙ কালো হলেও রূপচর্চার লক্ষণ স্পষ্ট। ঘন্টাখানেক ধরে ওকেই দেখে গেলাম। কেউ এসে ওর পাশে বসে নি। ওর চোখেও কাউকে খোঁজার চাউনি নেই। নিশ্চিন্তে বাউলের কন্ঠে শুনে চলেছে- ঢলিয়া ঢলিয়া / ঢলিয়া ঢলিয়া / ঢলিয়া ঢলিয়া গো / বৈকুন্ঠ আসরে / সঙ্গীরা আসি ভিড় করে / আর বৈরাগী কলসী ভাসে / যমুনারই জলে…
লক্ষ্য করলাম ওর শরীরে গানের ছন্দ খেলা করছে। আমি আর থাকতে পারলাম না। নিজেকে টেনে গিয়ে বসালাম একেবারে ওর কাছে। পাশে বসেও এত সুখ। আমার নিঃশ্বাস ওর ঘাড়ে। কিন্তু সে সবে এ মেয়ের হুঁশ নেই।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যে নেমে এল। এবার ওর চোখে মেঘের ছায়া। আমি ঠিক এই মুহুর্তটুকুর অপেক্ষাতেই ছিলাম। নিশ্চিত বৃষ্টির পূর্বাভাস। আমি ছাতা ধরব। মনে মনে প্রস্তুত। তবে ওকে আগে সাহায্য চাইতে হবে। আমি যে এতক্ষণ ওর পাশটিতে পরাণসখা হয়ে বসে আছি সেটা অবশ্যই বুঝেছে। মেয়েদের তৃতীয় নয়ন খুব প্রখর। এখন দেখার ও রাধারানী হবে নাকি দ্রৌপদী। আমি তো কৃষ্ণ হব।
উঠে দাঁড়াল ও । মৃদু হাসি মাখা মুখ। আমি সামনে। দৃষ্টি বিনিময় হল। কিন্তু ওইটুকুই। গটগট করে হেঁটে এগিয়ে গেল। একা। ওদিকে বাউল গান ধরেছে, তারে ধরি ধরি মনে করি / ধরতে গেলেম / আর পেলেম না / দেখেছি রূপসাগরে / মনের মানুষ কাঁচাসোনা… -
অনুগল্প-অমর রহে
অমর রহে…
– শক্তি পুরকাইতহাবিবপুর গ্রামের মাঠ পেরোলে দেখা যায়, দখিনা বাতাসে খপ্ খপ্ করে উড়ে চলেছে একটা দীর্ঘ পতাকা। তার নীচে ইট দিয়ে গাঁথা শহীদ বেদী। তাতে জ্বলজ্বল করছে লেখাটা ‘শহীদ পলাশ মন্ডল ‘ অমর রহে…। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে, স্ত্রীকে চাকরি দেবে। দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেছে। কেউ এসে এক গেলাস জল পর্যন্ত দেয় নি। বাবা হারানো ছোট ছোট দুই ছেলের মুখ চেয়ে মিনতি পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করে বেড়ায়। আজ এই অঞ্চলের প্রধান হায়দার আলি আসবেন শহীদ-বেদীতে মালা দিতে। মিনতি জানলা খুলতেই দেখতে পেল বিশাল দীর্ঘ একটা মিছিল। সে দেখল ওটা মিছিল নয়, এক বছর আগে খুন হয়ে যাওয়া রক্তার্ত তার স্বামীর শবদেহ। মিনতির দু’চোখ বেয়ে নেমে এল ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। দূর থেকে শুনতে পেল কে যেন শ্লোগান দিয়ে উঠল ‘ শহীদ পলাশ মন্ডল অমর রহে …’
-
অণু গল্প- মৃত্যুর মাঝে
-
অণু গল্প- ভোরের স্বপ্ন
ভোরের স্বপ্ন
– অমিতাভ সরকারএক ঝাঁক উপন্যাসের একটি পাতা। প্রস্ফুটিত শরতের শিউলি। এ রকমই ভাবনা নিয়ে আবাস গড়তে চেয়েছিলাম মঙ্গলের বুকে সেই কবে। আবাস গড়েছি। নীলিমা তুমি দেখতে পাচ্ছো?
তোমাকে দিতে পেরেছি পাকা আম রঙের আকাশ। এক চিলতে জমিতে আবাস চেয়েছিলে না? তোমার জন্য রয়েছে আবাসের সাথে হেক্টরের পর হেক্টর জমি প্রভাত ভ্রমণের জন্য। অফুরন্ত বনানী। অঢেল দূষণমুক্ত শ্বাস গ্রহণের প্রান্তর। হাত ধরাধরি করে সকলের চলাফেরা। দরজার আগল নেই। এখানের অভিধানে ধনী দরিদ্র বলে কিছু নেই, হিংসা বিদ্বেষ কি জিনিস জানেনা কেউ। এখানে হাসি ছাড়া কান্নার স্থান নেই। হাসপাতাল দরকার হয় না। বিষ ঢেলে জমিতে ফসল হয় না। দেখো নীলিমা কিছুদিনের মধ্যে আমাদের গায়ের রং আকাশের মত হয়ে গেছে না! তুমি কি সুন্দর বুঝতে পাচ্ছ! গ্রহান্তরের পরীরা এসে তোমার ঘুম এনে দেয়। তোমার মুখের উপর দেখতে পায় গৈরিক চাঁদের আলো।
প্রভাতের কলকাকলি তোমার আমার ঘুম ভাঙায়। তরঙ্গে তরঙ্গে ভেসে আসে পৃথিবীর বুকে নীলিমার উচ্ছাস আহ্বান ও স্মৃতি, ও বিথী দেখে যা আমাদের কত সুখ আমাদের আবাসে। -
অনু গল্প- স্মৃতি
স্মৃতি
– অঞ্জনা গোড়িয়ামিনিটের মধ্যেই সব শেষ। প্রদীপ গেল নিভে। প্রাণটা গেল হারিয়ে। কত যত্নে আদরে ছিল। বুলি বলত। গান শোনাত। যা দিই তাই খেত। সেই ছোট থেকেই আমার কাছে। ছেড়ে দিলে ও আর কোথাও যায় না।
টি.ভি.টা চললেই ঘরের গেটের কাছে উঁকি দিত। তাকে নিয়েই বাড়ি সুদ্ধ সবার আনন্দ। একদিন আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতেই ছুটে এলো। আমি কখন ওকে নিয়ে একটু বেরাতে যাব? সেই আশায় বসে থাকে গেটে সামনে। আমার দাদা খবর দেখছিল টি.ভি.তে। যেই বাইরে আসতে গেল খেয়াল ছিল না একদম। অমনি বড় দু’টি পায়ের তলায় চাপা পড়ল। চিৎকার করে ডেকে উঠল। মুনিয়া! ছোট্ট শালিকটা। পায়ের চাপে আর চোখ খুলল না। দু’চোখ গড়িয়ে বেয়ে গেল অশ্রু নদী। আজও মনকে ভাবায় কাঁদায়। আমার আদরের বুনো শালিক। -
অণু গল্প- শেষ বেলায়
শেষ বেলায়
-অঞ্জনা গোড়িয়াচলে গেল বহুদূরে। আর ফিরবে না,পৃথিবীর আলো আর দেখবে না। এই তো কয়েক মিনিট আগে ও চেয়ে চেয়ে দেখছিল পৃথিবীর রূপ,রং। ফুলের সুগন্ধে মেতেছিল,পাখির কূজন শুনে মুগ্ধকর্ণ, শিশুর চিৎকারে বিরক্ত আর সংসারের কোলাহলে ঝালাপালা হওয়া মানুষটা ক্ষণিকের মধ্যে চুপচাপ, কোন স্পন্দন নেই প্রাণের।
শান্তিতে চক্ষু মুদিত (আমার মায়ের বাবা) দাদু। বড় আদরের নাতনি আমি। আমার পড়াশোনা নিয়ে সবসময় সচেতন। বলতো, এই যে আমার দিদিমনি, সত্যিকারের দিদিমনি হতে পারবি তো? ছাত্র পড়াতে হবে, মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে। শুধু হেঁসেল ঠেলা আর ছেলে মানুষ করলেই চলবে না, মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। দাদু তখনকার দিনের হাইস্কুলের মাস্টারমশাই, যে ক’টা টাকা পেত, ঠিক করে সংসারই চলত না, তবু ছাড়েনি শিক্ষকতা। বিনা বেতনে গ্রামের মেয়েদের পড়াত।একটু বড় হতেই বাবা জ্যেঠু ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমার বিয়ে দিতে। পাত্রপক্ষ দেখতেও আসে, কিছুতেই বসবো না, জ্যেঠুর কথাই বাড়িতে শেষ কথা।
সে যাত্রায় দাদুই বাঁচাল,বুঝিয়ে সুজিয়ে বিয়েটা আটকে দিল। খুব খুব খুশি হয়েছিলাম আমি,দাদুর ওপর। একদিন হাসতে হাসতে দাদু একটা কলম দিয়ে আমাকে বলেছিল, আমি যেদিন থাকব না ,সেদিন এই কলম দিয়েই লিখিস আমার কথা, নারী শিক্ষার কথা, তুই দিদিমনি হয়ে দেখিয়ে দিস। মেয়েরাও সব পারে।
যত্ন করে রেখেছি কলমটা, আজ দাদু আর নেই, রয়ে গেছে সেই কলমটা আর একটা ডায়েরী। যাতে বড় বড় হরফে লেখা আছে, “আমার আদরের দিদিমনি” জন্য এই ডায়েরীটা রেখে গেলাম্।
ডায়েরীটাতে দিদার সঙ্গে কি করে বিয়ে হল, কি ভাবে ন,বছরের স্ত্রী “দিদাকে’ লেখাপড়া শিখিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিল, সুন্দর করে লেখা, আজ যা অমূল্য সম্পদ।
সেই কলমেই লিখলাম্ দাদুর জীবন কথা। “শেষ বেলায়”। -
অণু গল্প- আমি কবি
আমি কবি
– অঞ্জনা গোড়িয়া“আমি রবি
হবু কবি
আঁকি ছবি
নই লোভী।”বালক মনে কবি হবার স্বপ্ন।বারবার পড়ছে আর মুচছে ।কিছুতেই মিল পাচ্ছে না। তবু কবি তাকে হতেই হবে রবি ঠাকুরের মত। বালক কাগজের পাতায় লিখছে আর ছিঁড়ছে। ঘরময় কাগজ। কি যে হচ্ছে? মিল পাচ্ছে না খোঁজে। তবু কবি সে হবেই। খাতাটা নিয়ে একবার বাবার কাছে এল, বাবা ,বাবা, দেখো না ঠিক হয়েছে কি? মিলটা একটু খু্ঁজে দাও না?
বাবা ফাইল দেখতে দেখতে বলল, উঃ কাজের সময় বিরক্ত করো না তো। মায়ের কাছে যাও।
বালক গেল মায়ের কাছে, মা একবার দেখে বলো না, মিলটা হয়েছে কি?
মা মুখটা আড়াল করে বলল, আরে বাবা, দেখছ না আমি ফেসিয়াল করছি। চোখে শশার খোসা। দেখব কি করে ?
দিদির কাছে গেল, বিরক্ত দিদি বলল, তুই হবি কবি?সত্যি পাগল একটা। আমি এখন গান শুনছি ইউ টিউবে পরে আসিস।
পাড়ার এক বন্ধু এল, “এই খেলতে যাবি মাঠে? চলে আয় এখুনি।”
বালক মনটা ভার করে বসে আছে ।
কাছে আসতেই বলল, কি হয়েছে তোর ?
সব শুনে হেসে বলল , আরে বাবা তুই কবি হতে চাস্?আগে বলবি তো আমায়?
আরে বাবা নেটে ছেড়ে দে কবিতা। দু’দিনেই তুই কবি হয়ে যাবি। কত লাইক পাবি। কমেন্ট পাবি।
আমার স্মার্ট ফোনটা তোকে দিলাম। এবার থেকে নেটেই “কবি “হবি । -
অণু গল্প- রং নম্বর
রং নম্বর
– অঞ্জনা গোড়িয়াহঠাৎ একটা অজানা নম্বর থেকে কল। ফোনটা ধরতেই সেই চেনা ডাকে বলে উঠলো, প্রিয়া ভালো আছ? চমকে উঠলাম। কে এ? সেই গলা, সেই বলার ধরন?কিছু জানার আগেই বলল রং নম্বর। ফোনটা কেটে দিল। তবু মনের মধ্যে একটা কুচিন্তা ঘুরতে লাগলো। তবে কি ফিরে এসেছে। নম্বরটা পেল কি ভাবে? ভীষণ ভয় করতে লাগল প্রিয়ার। এ দিকে ওর শরীরটাও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার কিছুই ধরতে পাচ্ছে না। কাজে মন লাগছে না। দিব্যি ভালোই চলছিলো সুখের সংসার। কদিনের জন্য বাইরে কাজে গিয়ে জ্বর বাঁধিয়ে বাড়ি এল। সেই থেকে চিকিৎসা করা হচ্ছে, কোন ভালো কিছু হচ্ছে না। চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। ঠিক তখনি বেজে উঠল ফোনটা। সেই নম্বর থেকে। ভরসা করে ধরল, কে আপনি? বারবার ফোন করছেন? চিনতে পারছ না? নাকি অচেনার ভান করছ?
চুপ করে রইল প্রিয়া। সেই বলল, ভয় পেও না। নম্বরটা তোমার বরই দিয়েছে। দু’টো নম্বর দিয়েছিল। মনে হয় ওরটা সুইচ অফ। ফোনটা ওকে দাও। ভয়ে ভয়ে বলল প্রিয়া,”কি বলার আমাকে বল?”
হা হা হা হেসে উঠলো। এখনো সেই ভীতুটা আছ। বিছানা থেকে বলে উঠলো স্বামী,”কার ফোন?” হাতে দিলাম ফোনটা। অট্টহাসিতে ঘরটা ভরে গেল। “কাল আসছে আমার এক বন্ধু। দেখবে তোমার ভালো লাগবে।”
জানতে চাইলাম,”কে আসছে?”
হাসি মুখে বলল, “গাড়িতে কাল এক ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ হল। আমাকে চেনে মনে হয়। নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। তোমাকেও চেনে। আমার অসুখের কথা শুনে আসতে চেয়েছে। ঠিকানা দিয়েছিলাম সঙ্গে ফোন নম্বর। দেখি, কি বলে একবার।”
ও জানেই না এই সেই জন। যাকে কথা দিয়েছিল বিদেশ থেকে ফিরলে বিয়ে করবে প্রিয়া। কি উত্তর দেবে প্রিয়া?
কিছুই বুঝে উঠতে পারল না ।
ও কি প্রতিশোধ নিতে আসছে ?পুরানো কিছু চিঠি আজ ও ওর কাছে। সব কি জানিয়ে দেবে ও? ভাবতে ভাবতেই বেলটা বেজে উঠল। একটু শাড়িটা পড়িপাটি করে পড়ল। মাথার অগোছালো চুলটা সুন্দর করে ছেনে খুলে দিল কাঁধের নীচে।
জানি না কেন একটু সাজতে ইচ্ছা করছে। এখনও কি ওর জন্য সেই টানটা –না না এসব কি ভাবছে?
আস্তে আস্তে গেটটা খুলে দিল। চেয়ে দেখে, একজন সেবক। এ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দাঁড়িয়ে।
কাছে এসে বলল, স্যার পাঠিয়েছেন রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। স্যারের নিজস্ব হসপিটালে। ওখানেই চিকিৎসা করবেন স্যার। প্রচন্ড রোগীর চাপ। তাই আসতে পারে নি। তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। প্রিয়া মনে মনে বলল, ‘তুমি ঠিক আগের মতই আছো।” -
অণু গল্প- মা’ এর তুলনা হয় না
‘
মা’ এর তুলনা হয় না
– রেহানা দেবনাথসুমনার আজ মেয়ে হয়েছে, সে প্রথম ‘মা’ হয়েছে তাই শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির সবাই দেখতে এসেছে। সবাই খুব খুশি।তাদের দেখে সুমনাও খুব খুশি কিন্তু মাকে দেখতে না পেয়ে তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তার মায়ের উপর অভিমানও হলো।মনে মনে ভাবলো না হয় মায়ের অপছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছি আর বছর খানেকের মধ্যে বাচ্ছাও নিয়ে নিয়েছি, এতে মা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তাই বলে আমার জীবনের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে মা পাশে থাকলো না!
পাঁচদিন ধরে সুমনা মায়ের জন্য খুব কষ্ট পেয়েছে তাকে একবারও দেখতে এলো না, ফোন করলো না!!
ছুটির সময় তার দাদা যখন ডিসচার্জ করে বাড়ি নিয়ে যেতে এলো তখন সুমনা পরিষ্কার জানিয়ে দিল ওই বাড়িতে সে যাবে না! শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে। আর রাগে মায়ের নামে যা নয় তাই কথা বলতে থাকে!
তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওর বাবা বলে এভাবে বলিস না মা!তোর মায়ের তুলনা হয় না। সে তোকে জন্ম দেবার সময় নিজের প্রাণের বাজি রেখেছিল সবার কথা অগ্রাহ্য করে আবার সেই একই কাজ করেছে তোর ডেলিভারির দিন তোকে রক্ত দিয়ে! তোর ও তোর মেয়ের জীবন বাঁচিয়ে।
আজ সে বিছানায় অসুস্থ। তোদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
সুমনা দু’চোখে জলের ধারা নিয়ে বলে আমায় এখুনি মায়ের কাছে নিয়ে চলো।আমি তার পা ধরে ক্ষমা চাইবো আর প্রশ্ন করবো। যে মেয়ে প্রতিপদে তাকে নীচু করেছে,তার কথা অমান্য করেছে তার জন্য কেন নিজের জীবন নিয়ে খেলে!!! -
অণু গল্প- আত্মার কাজ
আত্মার কাজ
-রাখী চক্রবর্তীবিভু একটা একটা করে খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ছে আর মেঝেতে ফেলছে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি তুফান হচ্ছে। রাত নটা বাজে এখন।
-বিভুর একদম পড়াতে মন নেই বিভু আর ঘর কিন্তু নোংরা করবে না।পরিষ্কার করে দিলাম।
বিভু চমকে গেল হঠাৎ এই কথাটা শুনে, ও মালতীদি তুমি। তা এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে হঠাৎ কেন এলে কাজে? তুমি তো সকাল বেলায় কাজে আসো রোজ তবে, আজ… এখন? তোমার নাকি জ্বর হয়েছে? মা বলছিল।
-তুমি তো নোংরা ঘর পছন্দ করো না তাই।
-তোমার গলার স্বরটা এরকম লাগছে কেন?আর এত রাতে তুমি কখনও আসনি তো কাজ করতে।-না, কাল থেকে যদি না আসতে পারি।
-মালতী দি ,আয়নাতে তোমাকে এত বীভৎস লাগছে কেন? আবার কোথায় গেলে? দূর কারেন্টটাও আসছে না। এ কি চেহারা করেছো। কাঠি কাঠি মনে হচ্ছে তোমাকে দেখে।
ও মালতীদি কাঁদছো কেন?
-আমার সাবুর হাতে কাল কিছু টাকা দেবে? ওর খুব দরকার টাকাটা
-ঠিক আছে মাকে বলব কাল সকাল বেলায়।কোথায় গেলে আবার? মালতী দি, মালতী দি
বিভুর মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলছে, এত রাতে মালতীকে কেন ডাকছিস? ওকে রাতে কি করে পাবি?
সেকি রে বিভু তোর ঘর পরিষ্কার কে করল এত রাতে?
-মালতী দি এসেছিল তো, কাজ করছিল, কোথায় যে গেল। আর বলল সাবুর হাতে তুমি কিছু টাকা দিও কাল সকাল বেলায়।
-কি বললি?
-মালতীদি কাজের মেয়ে গো
-কি বলছিস বিভু!
-মালতীদি কাজের মেয়ে গো
-মালতী তো আজ দুপুর বেলায় মারা গেছে।তোর কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হল তালেগোলে তোকে বলা হয় নি
বিভু বলল, তা কি করে হয় মা, আমি যে দেখলাম মালতীদিকে,
সারা রাত বিভুর মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে ওর মা। বিভু জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে, আর মাঝে মাঝে “মালতীদি” বলে বলে চমকে উঠছে।
সকাল বেলায় বিভুর বাবা মালতীর বাড়ি গিয়ে সাবুর হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল, খাবারের জন্য দিলাম এটা রাখ, পরে আবার দেব। তোমার একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেব আমি।
আজ চারদিন হল বিভু একটু সুস্থ আছে।কিন্তু বিভুর ঘরটা সব সময় কে যেন পরিষ্কার করে রাখে।
বিভু জানে মালতীদি রোজ আসে রাতের বেলায়। তবে বিভু এখন আর ভয় পায় না।