অণু গল্প

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- সিক্রেট -৪

    সিক্রেট
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    আলোটা কয়েকবার দপদপ করে নিভে গেল। ঘরে এখন ঘনঘোর অন্ধকার। মোমবাতি ব্যাগের ভেতর আছে। ভুল হয়ে গেছে। ওটাই সবার আগে বের করে রাখা উচিৎ ছিল। টর্চ জ্বালিয়ে সেটা এখনই বের না করলেই নয়। টর্চের ব্যাটারি বেশী ক্ষয় করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ওটা এখানে মানে পাহাড়ি জায়গায় অসময়ে বড্ড কাজ দেয় ।
    যুবতী বাথরুমে। ওখানে এখনই আলো চাই। ওর অন্ধকারে বড্ড ভয়।বাথরুমের দরজা খোলা। মোমবাতির আলো আঁধারি মায়ায় বিবস্ত্র জলভেজা যুবতী আরও আকর্ষণীয় আরও সুন্দরী।
    যুবক অস্থির মন, বাঁধন হারা।

    বারান্দায় পায়ের শব্দ। পাশের ঘরে আরও এক দম্পত্তির আনন্দ আগমন। উচ্ছ্বসিত হাসির ঝংকার।এঘরের যুবতীর কপালে ভাঁজ। চার পেগ হুইস্কি খাওয়া হয়ে গেছে। তবুও কান ঠিকঠাকই কাজ করছে।
    নাঃ, এই গলার আওয়াজ চিনতে ভুল হবে না কিছুতেই। কানের মধ্যে শব্দদূষণ হয়ে থাকবে, কে জানে কতকাল !

    কাল ভোরেই বেড়িয়ে যেতেই হবে। অন্যত্র।
    একই জায়গায়, একই হোটেলের পাশাপাশি ঘরে, আর যা-ই হোক। পরকীয়া অসম্ভব।
    বিদ্যুৎ এসে গেছে। কিন্তু না, মোমের আলো আঁধারিই থাক। এই ভালো। এখন জোরালো আলোয় ভয় করবে।
    আরও কয়েক পেগ চাই। বেহুঁশ হতে।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- সিক্রেট -৩

    সিক্রেট
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    পর্ব-৩

    অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলো। ডিভোর্স দিয়ে দেবার জন্য। উপার্জনশীল স্ত্রী। অকারণ বদমেজাজি মাতাল স্বামীর, নিত্যকার শারীরিক মানসিক নির্যাতনের টার্গেট বোর্ড হবার সত্যিই কোনও মানেই হয়না।
    ছ’বছর অতিক্রান্ত। বিয়ে হয়েছে। কিন্তু, সংসার কিছুতেই সন্তান ছাড়া পূর্ণতা পায়না।
    কার দোষ কে জানে।

    অশীতিপর বিধবা শাশুড়ীর অন্তিম চাহিদা। সংসার হলো, স্বামী স্ত্রীর শোয়া বসা সবই হলো । অথচ..বাঁজা বউ নির্ঘাত। নইলে এতসময় লাগে নাকি?
    অশীতিপর সময় সময় যৌবনবতী হয়ে ওঠে।
    মনে মনে। স্মৃতি।

    পাশের বাড়ির নব্য তরুণ। সদ্য গ্রাজুয়েট। ছাদে ঘোরাঘুরি। চোখ পরস্ত্রীর ঘরে, জানালায়, বারান্দায়, ছাদে, সর্বত্র। বয়সের ধর্ম। বাগ মানে না। বাঘ হতে চায়।

    ইদানীং বেশ ভাব জমেছে দুজনের। কামনার আকর্ষণ। মাকড়সার জাল। শিকার। ক্ষুধার্ত শিকারী।
    শাশুড়ীর অবিবেচক খোঁটা, বাঁজা বউ।
    হয়ে যাক পরীক্ষা সত্যা সত্যের।

    সেদিন দুপুরে। ধামসানো বিছানায় প্রবল ঝড়, বিধ্বস্ত এলোমেলো আলুথালু স্ত্রী। তারুণ্যের কালবোশেখী বৃষ্টি ঝরিয়ে চলে গেছে তরুণ। শুধু রেশটুকু রয়ে গেছে তখনও।
    রিংটোন বাজছে। অচেনা। তরুণ ফেলে গেছে ভুলে। স্ক্রিনে চেনা নাম জ্বলজ্বল করছে। ওপারে চেনা কন্ঠস্বর। স্বামী। কাজ সমাধা তরুণ?

    তরুণ ফিরে এসেছে। ফেলে যাওয়া ফোনের টানে।
    ফোন ফিরিয়ে দেবার ছলে। তরুণের হাত চেপে ধরে পরস্ত্রী এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করলো।
    ঔরস যারই হোক। শুধু মা হতে চাই। ঘুচে যাক বাঁজা বদনাম। রসাতলে যাক সাজানো সতীত্বের মূল্যহীন অহংকার।
    আমাকে অসতী মা করে দাও।

     

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- সিক্রেট -২

    সিক্রেট
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    পর্ব-২

    বিকেল পড়ে আসছে। পশ্চিম দিগন্তে তারই রক্তিম আভাস। প্রিন্সেপ ঘাটের ধারে সাজানো বেঞ্চগুলো, প্রেমের আকুলতায় আচ্ছন্ন। একাকী যুবকটির হাতে কোল্ড ড্রিংকের খানিকটা শেষ করা বোতল। ওতে ভদকা মেশানো আছে। যুবতী আসবে। কথা সেই রকমই আছে।বোতলের আংশিক পানীয়ও তারই অপেক্ষায়।

    গঙ্গার ঠান্ডা হাওয়ায় নেশা আরও গাঢ় হয়।বোতল খালি হয়ে গেছে। যুগলপ্রেমের আসক্তি অন্ধকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও ঘনীভূত। নেশা লজ্জা কেড়ে নিচ্ছে, বাড়িয়ে দিচ্ছে উন্মাদনা।

    একটু পাশেই, চুড়ান্ত এলোমেলো দুর্বার ঘনিষ্ট আরও দুজন। যুবক যুবতী। একজন বড্ড চেনা। পুরুষ।
    যুবতীর নেশায় ভাটা পড়া বিস্ফোরিত চোখ। ওদের পাশেও খালি হয়ে যাওয়া কোল্ড ড্রিংকের বোতল।
    আলগা হয়ে গেছে, সেই কবেই, সাত পাকের বাঁধন।

    মাঝ গঙ্গায় অন্ধকারে ভেসে যায় ডিঙি। টিমটিমে আলো আঁধার ঘোচাতে পারে না। চেনা অচেনার দাঁড় বেয়ে সময় বহে যায়। পুরাতন প্রেম, ঢাকা পড়ে না। সাজানো সংসার সাজে কৃত্রিমতায়।

    রাতের ডিনার টেবিলে কষা মাংস, পরোটা। নিদারুণ পরিতৃপ্তির মুখোশ। দারুণ রেঁধেছো মাংসটা। জবাব নেই।

     

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- স্বপ্নপুরণ

    স্বপ্নপুরণ
    – রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    চৌরাস্তা মোড়ে ভিক্ষা পাত্র নিয়ে বসা ছেলেটাকে ভীষণ ধমক দিয়েছে আজ অয়ন। “এই হাত পাতা কেন রে, বাজে অভ্যাস-কাজ করে খেটে খেতে পারিস না!”

    আজও বাবা বাড়িতে তুমুল চিৎকার শুরু করেছিল। মাকে শুনিয়ে বললেও উদ্দেশ্য যে অয়নকে ধাক্কা দেওয়া বেশ বোঝে সে। “তোমার লাডলাকে বলো বাপের হেঁসেলে আর নয়, চেষ্টা করুক, এত স্বাধীনতা ভালো নয়! “কথাগুলো যখন খোঁচা দেয় আরও অস্থির হয়ে ওঠে। চেষ্টা কিন্তু অয়ন করছে একটা ভালো কাজ যা তার বিবেককে পরিশ্রুত রাখে মাথা উঁচু রাখতে সাহায্য করে নাহলে এত পড়াশোনা সে করলোই বা কেন যদি দোকানে খাটতে হয়।

    কখনো কখনো রেগে যায় মা, “উফ তুমি এবার একটু থামবে-ছেলেটা খেতে বসলেই শুধু বাজে বাজে কথা। তুমি বাবা নও যেন একটা পিশাচ!”

    আবার একটা স্বাধীনতা দিবস, টিভিতে নেতার উন্নয়ন ফিরিস্তি কিচ্ছু ভালো লাগে না অয়নের।
    অন্যরকম কিছু যদি করা যায়, ভেবেই সকালে হাজার পিস মাস্ক কিনে এনেছে পাইকারি দামে ১২০০টাকায়। পাঁচজনকে টার্গেট করে একটু একটু করে সৎ পথে উপার্জন করার খিদেটা জাগিয়ে তুলেছে। ভিক্ষা নয়, কাজ করে সম্মান আদায় অনেক বেশি স্বাধীনতার এটা বুঝছে ওরা।প্রতি মাস্ক ৩ টাকা লাভে সরবরাহ করছে অয়ন।আরো কিছু ছেলে মেয়ে যোগাযোগ করেছে ইতিমধ্যে, যারা বিক্রি করতে রাজি। অয়নের ইচ্ছা ভিন্ন অথচ চাহিদা যোগ্য জিনিস সময়ের সাথে সাথে এদের হাতে সরবরাহ করে। এমন ভালো কিছুজনকে ইতিমধ্যেই অয়ন তার বিক্রেতা টিমের অন্তর্ভুক্ত করার কাজে নেমে রীতিমতো সাড়া পেয়েছে। অয়ন বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যাদের পেটে খিদে আছে, চোখে আছে স্বপ্ন তারা অন্তত ভালভাবে বাঁচুক কাজের মধ্য দিয়ে। যদি তারা বিক্রি করতে পারে হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়ার থেকে এ পথ অনেক সম্মানের। এর ফলে এদের পরিবার যেমন বাচঁবে অয়নেরও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নপূরণ ।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- সিক্রেট- ১

    সিক্রেট- ১
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    ডোরবেল বাজতেই বিছানায় লেপটে থাকা দুটি নারী পুরুষ আদিম শরীর, ছিটকে সরে গেল। পুরুষ শরীর লুকিয়ে গেল ব্যালকনির পর্দার আড়ালে। নারী শরীর কাপুড়ে সভ্যতায় সেজে, দরজা খুলে দিলো।

    চুড়ান্ত নেশায় সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন একটি অভিজাত শরীর, প্রবেশ করলো নিজস্ব ঠিকানায়।
    কিছু গোঙানির মতো শব্দ, তারপর পরিচিত বিছানায় পতন এবং অঘোর নিদ্রা।

    আদিম পুরুষ শরীর, পর্দার আড়াল সরিয়ে নির্ভয় নিশ্চিন্তে প্রকাশিত। কাপুড়ে সভ্যতায় শরীর ঢেকে সহাস্যে নিষ্ক্রান্ত। সিঁড়িতে স্বাভাবিক পদশব্দ।
    দরজায় খুশীর চাঁদপানা প্রেয়সী সুদর্শনা।
    কামুক আঙুলে আপাত বিদায়ের মৃদু দোলানী।
    উড়ন্ত চুম্বনে সিক্রেট পারফিউম গন্ধ।

    সংসার মেতেছে লুকোচুরি, চু কিত কিত খেলায়।
    কেউ বলবে সুখ। কেউ বলবে ব্যভিচার।

    ব্রেকফাস্ট টেবিলে আবারও উচ্ছ্বলতায় মাখানো মাখন টোস্ট। চিনি নাকি মরিচ?

     

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- হাওয়া বদল

    হাওয়া বদল
    – সৃজিতা ধর

     

     

    ভেদনীতিতে আস্থাবান ব্যক্তি বা বৈষম্যমূলক আচরণকারীর অভাব খুব একটা চোখে পড়ে না এই তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ সমাজে। পুরুষতান্ত্রিকতা গ্রাস করেছে নৈতিকতাকে। মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও কিছু কিছু মেয়েদের পরিস্থিতি আমাদের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনামিকা-র মতও হয়।

     বছর পঁচিশের অনামিকা-র চোখে অনেক স্বপ্ন। না, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা বলছি না। অনামিকা ঘুমের ঘোরে দেখা অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে না। ও খোলা চোখে স্বপ্ন দেখে যে, নিজেকে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় সে নিয়ে যেতে পেরেছে। প্রথমবার অনু(অনামিকা) বৈষম্যের আঁচ পেয়েছিল ক্লাস ফাইভে। তখন অনু নাচ শিখতে যেত এক জায়গায়। ছেলে-মেয়ে একসাথে নাচ শিখলেও সেদিন‌ নাচের রমা দিদিমণি মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলেছিল যে, “তোদের একটু সহজ মুদ্রা শেখাই।” সেদিন অনুর আর বলা হয়ে ওঠেনি যে “ওরা পারলে আমরাও পারবো।”

                     ক্লাস নাইনে ওঠার পরে নাচটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঐ ‘তৃতীয় হাত’-টা হিসেবে বলা হয় যে নাচ করা হয়তো শ্বশুরবাড়ি মেনে নেবে না। তাহলে অত নাচ শিখে আর কি হবে! আসলে মেয়েদের সেই ছড়া শেখানোর বয়স থেকেই শেখানো হয় যে-“…রাঙা মাথায় চিরুনি/বর আসবে এখুনি, নিয়ে যাবে তখনই।” অর্থাৎ ছোট থেকেই বোঝানো হয় যে, কোনো এক ছেলে এসে তাকে নিয়ে যাবে…আর তাহলেই যেন সেটা সার্থক। একটা প্রশ্ন থেকেই যায় তাহলে- বর না আসলে সেই মেয়েটা এগোতেই পারবে না? নাকি বরের আগমনটাই একটা মেয়ের জীবনের চূড়ান্ত সার্থকতা?

                     অনু-র সম্বন্ধ এসেছে। ছেলের সাথে আলাদা কথা বলার সময় জানতে পারে যে চাকরি করা মেয়ে তাদের খুব একটা পছন্দ নয়। অনু এবার আর চুপ থাকেনি। নিজেই না করে দিয়েছে…এখানে সে‌ বিয়ে করবে না। আসলে এরকম অনু-রা কখনোই এটা বলে খুশি হয় না যে, আমার বর অমুক জায়গায় চাকরি করে। ওরা এটাও বলতে চায় যে সে নিজে আজ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

                     স্কুলের‌ বেল‌ পড়তে আর দশ মিনিট বাকি। অনুর স্বামী বাইকে করে এসে নামিয়ে দিল অনুকে স্কুলের সামনে। আজ শিক্ষিকা হিসেবে অনু প্রথম পা রাখলো‌‌ স্কুলে। সেদিনের সম্বন্ধটা না করে দিয়েছে বলে আজ আরও একবার খুব খুশি হল অনু। সবাই সমান‌ নয়। অনুর আজ যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে একদম অনুর মনের মতই…সেও নারীদের অধিক সুবিধাদানে নয়, বরং সমান‌ সুবিধাদানে বিশ্বাসী।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- সুজন

    সুজন
    – শচীদুলাল পাল

     

     

    রুমি ভট্টাচার্য আর সুজন দাস একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। দুজনে ছোটো থেকে খুব বন্ধুত্ব। খুব কাছাকাছি না হলেও খুব দূরও নয় দুজনের বাড়ি। দুজনে ছোটোবেলা থেকে একসাথে খেলা করে, স্কুল যায়, বেড়াতে যায়।
    দুজনের পরিবারেও এক সহজ সরল সদ্ভাব আছে তিন পুরুষ ধরে।
    সেদিন সুজনের বাড়িতে একসাথে পড়ছিল। নোট নিচ্ছিল দুজনে। বাইরে সাইক্লোন। ঝড় জল বৃষ্টি।একটু থামলে যাব এই ভেবে ভেবে দেরি হয়ে গেল। এদিকে মায়ের ফোন “রুমি! রাত আটটা বাজে কখন ফিরবি?”
    রুমি বললো “এক্ষুনি আসছি মা”।
    সুজনের মা বললো “রুমি তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না। সুজন তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”
    দুজনের হাতে দু’টো ছাতা দিয়ে সুজনকে বললো, “একেবারে ঘরে পোঁছে দিয়ে আসবি।”
    দুজনে রোমাঞ্চকর বর্ষার রাতে পথ চলছিল। বড় রাস্তা থেকে রুমিদের পাড়ায় ঢোকার রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে বড্ড নিরিবিলি। সেখানে আসতেই আকস্মিক চারজন পাড়ার চেনা ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়লো রুমির উপর। সুজন একজনকে ধরে দু’চার ঘুষি দিতেই আরও দু’জন এসে তাকে আক্রমণ করলো। তাদের হাতে চাকু ছিল। সুজন বাধা দিলেও সবার সাথে পেরে উঠতে পারছিলো না। চাকুর আঘাতে রক্তাক্ত অবসন্ন হয়ে পড়ে গেলো। চোখের সামনে রুমির উপর একে একে আক্রমণে দিশাহারা।

    একসময় তারা ছেড়ে চলে গেলে সুজন রুমিকে কাঁধে তুলে নিয়ে তিন কিমি দূরে থানায় পৌঁছে এফ আই আর লেখালো। আর তার মোবাইল ফোনটি জমা দিয়ে জ্ঞান হারালো। জ্ঞান আর ফিরলো না।
    মোবাইলে ছিল সব ঘটনার ভিডিও। পরদিন একে একে চার ধর্ষক ও সুজনের হত্যাকারী গ্রেপ্তার হলো।
    মোবাইল ভিডিও ও ডাক্তারের রিপোর্ট অনুসারে দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে চারজনই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হলো।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- দিদি

    দিদি
    – সৃজিতা ধর

     

     

    ছোটবেলার কথা খুব একটা মনে নেই। সবটাই গল্পে‌ শোনা। ছবিতে বরাবর দেখেছি একটা হাত আমায় আগলে রেখেছে, স্নান করাচ্ছে।‌ না, আমি মায়ের কথা বলছি না। সে‌ আমার‌ দিদি, বিনি দিদি। মাকে নিয়ে তো অজস্র গল্প শুনি আমরা। আজ না হয় দিদি নামক এই সম্পর্কটার একটা রূপকথা হোক।
    একটা ঘটনা বেশ মনে আছে।‌ দিদিকে নিয়ে একটা ভয়ের স্বপ্ন দেখে খুব কেঁদে উঠেছিলাম। আসলে আমরা কিন্তু স্বপ্ন দেখেছি বলে ভয় পাই না, সেটার বাস্তবায়ন নিয়ে ভয় পাই। আমিও সেদিন কেঁদেছিলাম, তবে সেটা ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে। আজ আবার খুব কান্না পাচ্ছে। আবার যেন‌ কাছছাড়া হয়ে যাচ্ছে দিদি। আজ দিদির বিয়ের সানাইয়ের আওয়াজে আমার কান্নাটা কেমন চাপা পড়ে যাচ্ছে। আজ থেকে আমার একলা ঘরে শোওয়ার পালা। এতগুলো বছর ওর সাথেই একটা ঘরে শুয়েছি। হয়তো কাল সকালে আবার ভুল‌ করে বিনিদি ডেকে উঠবো, মা হয়তো ভুল করে দিদির থালায় ভাত বেড়ে রাখবে। অনেকটা কবিতা করে ঠিক এরকম বলাই যায়-
    অন্য বাড়ির শ্রী ফেরাতে
    বাড়ির লক্ষ্মী পর হয়েছে,
    পঁচিশ বছরের অভ্যাসে মা
    মেয়ের নামে ভাত বেড়েছে।

    তবে বিনিদি আর আমার মধ্যে একটা ছোট্ট ব্যবধান আছে। ব্যবধানটা একটা শূন্য-র। বিনিদি বানানের ‘ব’-এর নীচে একটা ছোট্ট শূন্য এঁকে দিলেই আমার নাম, রিনি। এই বিনি-রিনির মধ্যের ব্যবধানটা যেন সবসময় শূন্য-ই থাকে। যদি কেউ বলে “দুই বোনে মিল আছে তো?” তখন এটাই বলব যে মিল আছে কিনা জানি না তবে‌ ‘ব্যবধানটা শূন্য’।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- প্রাপ্তি

    প্রাপ্তি
    – সৃজিতা ধর

     

     

    আন্তর্জাতিক আর্ট গ্যালারিতে একটা ছবি আজ‌ জায়গা করে নিয়েছে। প্রদর্শনীতে আগত প্রায় প্রত্যেকটা লোক ছবিটার সামনে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে শিল্পীর সৃষ্টি দেখে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা বড়ো স্টেডিয়াম, হ্যালোজেন, অগণিত মানুষ, একজন ফুটবলারের পা আর পায়ের সামনে একটা ফুটবল। কি অদ্ভুত সুন্দর ভাবে আঁকা হয়েছে সেই ছবিটা…যেন জীবন্ত!
    আজ প্রদর্শনীতে স্থান প্রাপ্ত সকল চিত্রের চিত্রশিল্পীদের উত্তরীয় পরিয়ে সন্মান জানানো হচ্ছে। সেই ফুটবলারের ছবিটার শিল্পীর নাম ঘোষণা করার পর স্টেজের সামনে এগিয়ে আসছে হুইলচেয়ারে বসে থাকা অতীন্দ্র সেন। একটা পা ওনার নেই। আসলে যার নেই শুধু সেইই বোঝে। জীবনের সবথেকে বড় আঘাতটা ওনাকে যেন নতুন করে পথ দেখিয়েছে। এটাই হয়তো সেই হার না মানা প্রবৃত্তি। হাততালির আওয়াজটা ক্রমশঃ জোরালো হয়ে উঠছে।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- এক ফালি

    এক ফালি

    -রীণা চ্যাটার্জী

    ছেলের বিয়ের ঠিক হয়েছে। পাঁচ শরিকের বাড়িতে ঘরের বড়ো অভাব। চোখ পড়লো অসহায়, পঙ্গু, বাল্যবিধবা দিদির উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ঘরের দিকে। সাবেকি বাড়ির বড়ো বড়ো ঘর। দিদি একা বুড়ো মানুষ অত বড়ো ঘর একা থাকে। এক ফালি তো দিতেই পারে। মিষ্টি কথায়, ভালোবেসে দিদির আর্শীবাদী হাত মাথায় নিয়ে নেমে পড়লেন ছেলের ঘর তৈরী করতে। ছোট ভাইয়ের স্নেহে অন্ধ দিদি মেনে নিলেন, এক ফালি ভাগ দিতে বিনা শর্তে। মিস্ত্রী এলো, ঘর ভাগ হলো- একটা এক ফালি ঘর তৈরী হলো। তবে সেটা বিধবা দিদির জন্য। হতবাক পঙ্গু দিদি ছোটো ভাইয়ের কাছে প্রশ্ন করলেন, তুই যে বললি এক ফালি জায়গা দাও, ছেলেটাকে নাহলে বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। আজ ঘরটাকে ভাগ করে আমাকেই এক ফালি দিলি! এ তোর কেমন হিসেব রে ভাই? তার থেকে সমান দু’ ভাগ করতে পারতিস তো..

    আর্শীবাদপুষ্ট ছোটো ভাই তখন রক্ত চক্ষু করে বললো, একা বিধবা মা*র কতো জায়গা লাগে। যা দিয়েছি ওতেই থাক চুপচাপ, নাহলে বাড়ি থেকে বের করে দেবো ঘাড় ধাক্কা মেরে।

    অসহায় বিধবার হয়ে বাকি শরিকরা কেউ কিছু বললো না। চোখের জলে দিদি বরাদ্দ এক ফালি মেনে নিলেন।

You cannot copy content of this page