অণু গল্প

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- সহচরী

    “সহচরী”
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    কোম্পানির উচ্চপদে থাকায় ইয়ার এন্ডিং-এর মিটিংটা শেষ হতে রাত বারোটা বাজলো। অয়নের বাড়ি ফিরছে নিজে ড্রাইভ করে। হালকা বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তায় দেখে একটি অষ্টাদশী মেয়ে দাঁড়িয়ে লিফট চাইছে। অয়ন গাড়ি থামিয়ে গাড়ির জানালার কাঁচ নামালে, মেয়েটি কাছে এসে বলে আমাকে নিয়ে যাবেন? যা দেবেন তাতেই হবে, আমার খুব বিপদ, বড্ড সমস্যায় পড়েছি।

    মেয়েটির মুখের সঙ্গে অনিশার অনেক মিল। পুরনো দিনের কিছু স্মৃতি এক পলকে চোখের সামনে ভেসে উঠলো অয়নের। অয়ন ও অনিশা খুব ভালো বন্ধু ছিল। কলেজে তারা ছিল প্রেমের লিজেন্ড। বিগত কয়েক বছর অয়ন নেশাগ্রস্ত। তার ছন্দহীন জীবন নিয়ে তাঁর বাবা-মা চিন্তিত। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আজ নিজেকে শেষ করার লড়াইয়ে নেমেছে, যেন নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ। পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়েছে অয়ন। আর অনিশা বাবা-মার ইচ্ছেতে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ করে। এক কন্যার মা, স্বামী একটা প্রাইভেট ফার্মে কর্মচারী ছিল। আজ ২৫ বছর কোন যোগাযোগ নেই।

    অয়ন ওই বয়সী একটা মেয়েকে একাকী রাস্তায় দেখে, তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে। মেয়েটি বিছানায় আমন্ত্রণ জানায়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একটি সিগারেট ধরায়। মেয়েটির সিগারেটের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়। রাত গভীর হয়। মেয়েটি প্রশ্ন করে আপনি আসবেন না? অয়ন গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির কাছে যায় তার মুখখানা দেখে তার জীবনের গল্প জানতে চায়।

    মেয়েটি কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় ওর মা খুব অসুস্থ। বাইরে নিয়ে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য কিন্তু খরচ যোগাতে পারছেনা। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার অচল। মায়ের চিকিৎসার জন্য আজকে সে বাধ্য হয়ে এই এসকট সার্ভিসে নেমেছে। অয়ন পকেট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেয়।

    অয়ন তাকে পরের দিন আবার আসতে বলে। মেয়েটি এলে অয়ন তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। কিন্তু একি দেখে অয়ন? হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার প্রাক্তন প্রেমিকা, একসময়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু। ডাক্তারকে প্রশ্ন করলে জানতে পারে সময় শেষের দিকে। অয়ন অনিশার চিকিৎসার যথাসাধ্য চেষ্টা করে কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানে।

    অয়নকে অনিশা অনুরোধ করেছিলো মেয়েটির দেখাশোনার জন্য । অয়ন মেয়েটিকে আরো লেখাপড়া শেখায়। উচ্চশিক্ষিত করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠা করে। হয়তো এভাবেই অয়ন অনিশার প্রেমকে ও একজন নারীকে সম্মান জানায়, সমাজের কথায় চিন্তা না করে।”সমাজ প্রশ্ন করবে- সহচরী? শেষ ভালো যার, সব ভালো তার… ” অয়ন মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়…

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ভোরের ফুল

    ভোরের ফুল
      -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    কি করলে মা,চমকে বুম্বা!
    বাচ্চাটা ফুল কুড়াচ্ছে তাবলে জ্বলন্ত চ্যালাকাঠ ছুঁড়বে?

    ঝি পুতুল কঁকিয়ে ওঠা ফুলকিকে নিয়ে দৌড়ালো।  রত্না রেগে অস্থির,এমন মানুষ নিয়ে সংসার সম্ভব ? নিজের নাতনি মালা গাঁথবে তাতেও গজ গজ।

    পুতুল ভয়ে মেয়েকে আনে না।আজ দুর্ভাগ্য।খেলছিল উঠোনে হঠাৎ ঠাকুমার চিৎকার,মেয়ের কান্না!

    ছেলে-বৌ  থাকতেও কাঠের জ্বালে নিজের রান্না করে অবিশ্বাসী শাশুড়ি। ফুলকি ফুল কুড়াতেই জ্বলন্ত কাঠ ছুঁড়েছে!বুম্বা ভাবে মা কি সাইকো!

    হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে ফুলকিকে।গাড়ি বের করে স্টার্ট দিলো বুম্বা।শুধু হাত পুড়েছে তাই নয়,কানের নিচে জোর আঘাতে এখনো অজ্ঞান।

    তিন রাত্রি যমে মানুষে টানাটানি শেষে মৃতদেহ গ্রামে এলো রাত্রে।কান্নার রোল আর গোটা গ্রাম ফুঁসছে ঘেন্নায় রাগে।কেউ বলছে জ্বালিয়ে দাও বুড়িকে,ও ডাইনি।

    সবাইকে অবাক করে ধীর পায়ে ঠাকুমা হেঁটে এলো-এক আঁচল ভোরের ফুল ঢেলে দিলো মৃত ফুলকির শরীরে,ঢলে পড়লো নিজেও। স্তব্ধতা! লুকানো ছুরি নিজের বুকে সজোরে বিঁধেছে বুড়ি!সাদা ফুল গুলো রক্তে ভাসছে।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- নীরব প্রেম

    নীরব প্রেম
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    কতকাল কেটে গেছে … তবু কেন ছবিগুলো এত স্পষ্ট! রাতের আকাশে তাকিয়ে থাকতে বড় ভালো লাগে কবিতার। এই সময়টা কারো সাথে ভাগ করতে পারেনা সে। সময়টা শুধু নিজের- যত ভাবনার, যত স্মৃতির।
    কেউই সেদিন বলে উঠতে পারেনি ‘ভালোবাসি’ এই ছোট্ট কথাটা। কী লাভ হল তাতে! একজন একাই জীবন কাটাচ্ছে, আর একজন- অনেক মানুষের মধ্যেও একা।
    প্রতি মুহূর্তে সেদিন যার প্রতি টান অনুভব করতো, কারণে অকারণে ছুটে যেত- কতকাল হয়ে গেল তার সাথে দেখাই হয়নি। কবিতা বুঝতে পারতো- সৌমদার সাথে কোথাও যেন একটা যোগসূত্র ছিল সেদিন। সৌমদা সব কথা তার সাথেই শেয়ার করত। অঙ্ক করানোর ফাঁকে ফাঁকে গল্প, কথা, হাসি- ঠাট্টা কত কী …
    তবু ফাঁকি ছিল না তাতে। অসম্ভব এক ভালোলাগা কাজ করতো মনের মাঝে।

    না……বলা হয়নি কিছুই সেদিন।
    মনের ভাবাবেগগুলো মনের বাইরে আসেনি। চাকরি পেয়ে চলে গেল সৌমদা উত্তরবঙ্গের এক কলেজে। বলেও গেল না কিছু।
    কবিতারও বিয়ে হয়ে গেল, সংসার আষ্টে পৃষ্ঠে ঘিরে ধরল তাকে। সময়গুলো কীভাবে যেন পেরিয়ে গেল।
    রবীন্দ্র সদনে “কবিতা ও গানে গানে”র অনেকগুলো পাস পাওয়া গেছে। আজ অনেকদিন পর ভালো লাগছে খুব। দুই মেয়ে, স্বামী, দেওর সবাই একসাথে যাচ্ছে বাড়ির গাড়িতে। তবে …
    চমক তখনো বাকি ছিল। সঞ্চালকের গলা কানে আসতেই বিস্ময়ে হতবাক কবিতা।
    -” এরপর কবি সৌম সরকারের নতুন কাব্য ‘নীরব প্রেম’এর মোড়ক উন্মোচন হবে, আমরা তাঁকে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করছি।”

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ছুটির ঘন্টা

    ছুটির ঘন্টা
    – অঞ্জনা গোড়িয়া

    ঢং ঢং! মা ওইতো শুনতে পাচ্ছি স্কুলের ঘন্টা। স্কুলে যাবো মা। ওমা! বড্ড দেরি হয়ে গেছে। নিয়ে চলো মা স্কুলে। স্কুলের ঘন্টা বাজছে মা। আমি বেশ দেখছি পাচ্ছি, সবাই স্কুলে আসছে। কত দিন স্কুলে যাই নি। আমায় ছেড়ে দাও। একবার যেতে দাও স্কুলে।
    বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না আর। আবার বাজলো ঘন্টা। স্কুলে যাবো মা।
    লক্ষ্মী মেয়ে আমার। একটু শান্ত হোও সোনা। তুই যে অসুস্থ। জ্বরটা একটু কমলেই আবার স্কুলে যাবি।
    ওগো শুনছো, কোথায় গেলে? জ্বরটা যে বড্ড বেড়েছে। মেয়ে আমার ভুল বকছে জ্বরের ঘোরে। একবার যাও না গো, রতন ডাক্তারকে ডেকে আনো।
    এত জল পটি দিচ্ছি। মাথায় জল দিচ্ছি। তবু কমছে না। সোনা যে বড্ড কষ্ট পাচ্ছে।
    বল না মা, কোথায় কষ্ট হচ্ছে? মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিই। ঘুমিয়ে পড় সোনা।
    কি গো, শুনছো। মেয়ের যে খুব জ্বর। কত কি ভুল বলছে। যাও না গো তাড়াতাড়ি। একবার ডেকে আনো ডাক্তার বাবুকে।
    সোনা মেয়ে — জানো মা, কত দিন দেখিনি রহিম, সুমনা বাবলুকে। মাঠে ছুটিনি। প্রার্থনা করিনি। যেদিন শেষ স্কুলে গেলাম। সুমনা একটা নতুন পুতুল আনবে বলে ছিল। মাটির পুতুল। ওর মা বানিয়েছে। আমার জন্য। আমরা রোজ টিফিনে পুতুল খেলতাম। স্কুলের পিছনে একটা বড় বট গাছ। তার তলায় বসে পুতুল পুতুল খেলি। টিফিনে মিড ডে মিল খেয়ে পুতুল খেলি।
    সেই যে স্কুলটা বন্ধ হলো। আর খোলে নি।
    আর কি স্কুলে যাবো না? আমায় একটু তুলে ধরো মা। এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আমার কি আর স্কুল যাওয়া হবে না?
    মা—
    একটু দিন ভালো হলেই আবার স্কুল যাবে সোনা। তুই যে আমার সোনা মেয়ে।
    নতুন ব্যাগ কাঁধে ছুটতে ছুটতে যাবি। একবার সেরে ওঠ সোনা। আর বকবো না। যা ইচ্ছে তাই করিস। বাবা ডাক্তার আনতে গিয়েছে। এখুনি এসে পড়বে। ভালো ভালো ওষুধ খেলেই সেরে যাবি মা।
    আমার কাছে এসো না মা। আমি আর ভালো হবো না। ডাক্তার কাকু আসবে না। কেউ আসবে না। আমি জানি।
    ওই যে আবার টিফিনের ঘন্টা বাজলো। মিড ডে মিল দিচ্ছে রাঁধুনিদি।
    ঘন্টা দিতে খুব ইচ্ছে করছে। একবার নিয়ে চলো মা। স্কুলের ঘন্টার ঢং ঢং শব্দ শুনতে বেশ লাগে মা। নিয়ে চলো মা। খুব ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাই।
    কি হলো সোনা? সাড়া দিচ্ছিস না কেন? নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিস কেন?
    ওগো তাড়াতাড়ি এসো। আমার খুকি আর সাড়া দেয় না।
    চেঁচিয়ে ওঠে মা।
    -চোখ খুলে তাকা মা? স্কুলে যাবি না? স্কুলের ঘন্টা বাজছে।
    একবার সাড়া দে সোনা।
    ঢংঢং ঘন্টা বাজছে সোনা। ছুটির ঘন্টা।
    বাজলো ছুটির ঘন্টা।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ত্রাণ

    ত্রাণ
    -বিশ্বদীপ মুখার্জী

    লাইনটা বেশ লম্বা। কতক্ষণে শেষ হবে তার নেই ঠিক। আকাশের রোদটাও বেশ কড়া হয়েছে ইতিমধ্যে। গত সপ্তাহের এক বিশাল ঝড়ের তাণ্ডবে নিজের প্রায় সর্বস্ব খুইয়ে দেওয়া কিছু লোকেদের ত্রাণ সামগ্রী বিলি করতে এখানে আমার আসা। কিছু বন্ধুদের সাথে এসেছি। সাহায্যের জন্য সাথে আছে লোকাল পুলিশ। আমি প্রায় দেখছি লাইনের পিছন দিকে দাঁড়ানো এক গরীব বৃদ্ধ লোক সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে বলা হচ্ছে – ‘আপনি লাইনে দাঁড়ান। আপনাকেও দেওয়া হবে। আমরা এখানে আপনাদের সাহায্য করতেই এসেছি। কেউ বাদ যাবে না।’
    কথা শুনে সেই বৃদ্ধ লোকটি আবার পিছনে চলে যায়। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আবার সে এগিয়ে আসে। প্রায় দু’ তিনবার এমন করার পর আমার এক বন্ধু একটু চড়া কন্ঠস্বরেই তাকে বলল – ‘আপনার অসুবিধেটা কী? আপনাকে বারবার বলছি আপনি কি বুঝতে পারছেন না? যদি আবার এমন করেন তাহলে কিন্তু আপনাকে কিছু দেওয়া হবে না।’
    সেই বৃদ্ধ লোকটি শান্ত কন্ঠে বলল – ‘বাবা, আমি কিছু নিতে আসেনি, দিতে এসেছি।’
    একথা বলে সে নিজের কোমরের কাছের ভাঁজ করা ধুতি থেকে বেশ কিছু কয়েন বের করে সামনের টেবিলে রাখলো।
    ‘গুনে নিও বাবা। পুরো দেড়শো টাকা হবে। এবার চলি। তোমরা ভালো থেকো। ঈশ্বর তোমাদের আশীর্বাদ দিক।’
    লোকটি এই বলে চলে গেল। আমরা অবাক হয়ে সে দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঈশ্বরদর্শন কি এটাকেই বলে?

    *সমাপ্ত।*

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- ফেরা

    “ফেরা”
    – উজ্জ্বল সামন্ত

    অভিক অল্প বয়সে পিতৃহারা। বিধবা মা ও বড় বোনকে নিয়ে মধ্যবিত্ত সংসার। দারিদ্রতা সঙ্গে লড়াই করতে করতে একসময় বড় হয়ে ওঠে অভীক। আত্মীয়-স্বজন নাম মাত্রেই আছে। অভিক বুঝতে শেখে তার বাবা নেই, জীবনে সংগ্রাম করে দাঁড়াতে হবে। কলেজ পাশ করে জীবন সংগ্রামের পথে নামে। স্পষ্টবাদী হওয়ায় বড় কোম্পানিতে চাকরি করলেও হেনস্থার শিকার হতে হয়। অদম্য জেদ ও লড়াইয়ে ব্যর্থ হতে হতে একসময় সরকারি চাকরিও জুটে যায়। অভিকের দিদি রেনুর বিবাহের পনেরো বছর অতিক্রান্ত। একমাত্র ভাগ্নে তেরো বছরে ওপেন হার্ট সার্জারির পর হঠাৎ হৃদরোগে মারা যায়। বছর তিন‌ পরে একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয়। অভীক বিবাহের জন্য অনলাইন ম্যাট্রিমনিতে আবেদন করে। দু-এক মাসের মধ্যে সুন্দরী শিক্ষিতা মধ্যবিত্ত পরিবারে বিবাহ হয়। অভিক মনে মনে খুব খুশি। কিন্তু তাঁর সুখ স্থায়ী হয়নি, বিবাহের এক দুই মাসের মধ্যে সংসারের চরম অশান্তিতে তাসের ঘরের মতো স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়। অকারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন চূড়ান্ত অপমান ও লাঞ্ছনা গঞ্জনায় মান সম্মানে আঘাত আনে কয়েকবার অভীকের পরিবারে। অভীক ও তার মায়ের কিন্তু এতে কোন দোষ ছিলনা। তারা বহুবার বুঝিয়ে বিফল হয়েছিল। অভীক তার স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছিল। সাধ্যমত তার আবদার ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করতো। স্ত্রীর আচার-আচরণ খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। মানসিক অসুস্থতা ছিল নন্দিতার। সন্দেহবাতিক, বদমেজাজী, স্বার্থপর, লোভী, কোন বিশেষণই যথেষ্ট ছিল না নন্দিতার জন্য। একসময় সম্পর্কের কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ পায় নন্দিতার কটূ কথায়। অভিকের সম্মানহানি ও তাকে বিপদে ফেলতে শ্বশুর বাড়ির লোক সব রকম চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এক সময় সম্পর্ক কাঠগড়ায় ওঠে। অভীক এখন ব্লাড প্রেসারের পেশেন্ট। এই মিথ্যা সম্পর্কের ইতি টানতে ডিভোর্সের আবেদন করে। অভিক মন থেকে নন্দিতাকে ভালবেসে ছিল, নন্দিতা ছিল তার স্ত্রীর থেকেও বেশি কিছু। এই সমাজে নারীদের উপর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের ঘটনা অনেক শোনা যায়, কিন্তু এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেখানে নিরীহ শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর স্ত্রী অত্যাচার করে স্বামীকে বাধ্য করে সম্পর্কের ইতি টানতে। খোরপোষ নিয়ে হয়তো কিছু অর্থ আদায় হয় ঠিকই কিন্তু সম্পর্ক? সম্পর্কে কি আর ফিরে আসা যায়?
    কখন যেন অচেনা হয় আইনের চোখে…

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ডঃ সেন- জীবন্ত ভগবান

    ডঃ সেন- জীবন্ত ভগবান
    – রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    “দেখুন ম্যাডাম আপনাকে বহুবার বলেছি আপনার ছেলের শরীরের কন্ডিশন ভীষণ খারাপ, icu তে আছে, ওভাবে প্রত্যেক ঘন্টায় ‘কেমন আছে’ জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করবেন না, বাইরে বসুন।”
    মৃদু ধমক খেয়ে নিজেকে সামলাতে পারল না রজনী, হাপুস নয়নে কেঁদে ফেললো। রাত জাগা ক্লান্ত ক্ষীণ শরীরে সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের বাইরে সারারাত প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছে মা। কত কি যে বাজে স্বপ্ন এসেছে সঙ্গে তন্ময়ের শৈশব, হামাগুড়ি, অন্নপ্রাশন, স্কুল যাওয়া সব ভিড় করে আসছিল জলের ধারায়।

    কাল সন্ধ্যায় বাড়ির সামনের ঠেকে অন্য দিনের মতোই আড্ডা দিচ্ছিল তন্ময়। সেই পুরনো অভ্যাসে বাইক স্ট্যান্ড করে তাতে বসে ঘন্টাখানেক আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফেরে।সন্ধ্যা নামলেই সুনসান শহর রাস্তা ঘাট কিন্তু কাল আচমকা সবাইকে চমকে পাথর বোঝাই ভারী ট্রাক এসে ব্রেক ফেলে ধাক্কা মারে সরাসরি। অল্পের জন্য বাকিরা বাঁচলেও ছিটকে পড়ে তন্ময়, মাথা ফেটে রক্তপাত।বন্ধুরা ঘাবড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনলে ব্যান্ডেজ চিকিৎসা, বাড়ি পৌঁছে দিয়ে স্বস্তি। দু’বছর আগে স্বামী হারিয়ে সময়ের গর্ভে তলিয়ে যাওয়া পরিবারটা যখন সন্তানের মুখ চেয়ে দাঁড় করাচ্ছিলো রজনী, আচমকা দুঃসময়ের কড়া নাড়া!

    “একি রে রক্ত যে থামছে না, বালিশ ভিজে চুঁইয়ে”-কেঁপে উঠল মা। কাল বিলম্ব না করে পাড়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হলো চল্লিশ কিমি দূরে একমাত্র ভরসার বড় হসপিটালে।ভর্তি করিয়ে অপেক্ষার রাত জাগরণ এই বুঝি সুস্থতার খবর, কিন্তু কোথায় কি!

    কে যেন একজন হেঁটে আসছেন করিডোর দিয়ে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সাদা ড্রেস দীর্ঘ বলিষ্ঠ, হাতে স্টেথো! পাশে দু-চার জন নার্স, ওয়ার্ড বয়, গাড়ির ড্রাইভার ব্যাগ হাতে উদ্বিগ্ন।ম্যানেজার দৌড়ে এসে বললেন, “স্যর এমন মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় আপনার সন্তানের আজ ভোরে স্পট ডেথের খবরে আমরা ব্যথিত, মর্মাহত, জাস্ট ভাবতে পারছি না স্যর। কদিন বাড়িতেই থাকুন স্যর, আমরা সামলে নেব”।

    এই হসপিটালের জীবন্ত ভগবান ডক্টর সেনের ছেলে দুর্ঘটনায় মৃত-ছড়িয়ে পড়ল খবর। অভাগী মা হাতজোড়ে সামনে চলে আসতেই থমকালেন ডাক্তার বাবু। খবর নিয়ে জানলেন রাতে ভর্তি হওয়া এনার ছেলের অপারেশন তিনিই আজ সকালে করতেন, দুর্ঘটনার খবর কেউ জানাতে সাহস করে নি। বিরক্ত মুখে গতিমুখ পাল্টে ভেতরে গেলেন। ওই ভেঙে পড়া মা’কে ভেতরে বসানোর নির্দেশ দিয়ে দেড় ঘন্টার অপারেশনে সফল হয়ে বেরিয়ে এলেন।বললেন “মা আপনার সন্তান দীর্ঘজীবী হোক!” চোখের কোল দুটো ডক্টর সেনের অশ্রু বিন্দুতে ভিজেছে এক সন্তান বাঁচিয়ে নিশ্চয় মনে পড়ছে নিজের ছেলের মুখটা।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ফুলমনি সরেন

    ফুলমনি সরেন
    – শান্তনু ব্যানার্জি

     

     

    ফুলমনির জন্ম কোলকাতায়। ধীরেন বাবুর হাত ধরে ফুলমনির বাবা- মার কোলকাতায় আসা। নিজের মশলা তৈরীর কারখানা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। শুধু প্রয়োজন ছিল বিশ্বস্ত লোকের। সাঁওতাল পরিবারের স্বামী স্ত্রী দুজনকেই চাকরি দেন। থাকার ব্যবস্থা করেন। সেই দুয়ারসিনির সাঁওতাল গ্রাম থেকে ওদের নিয়ে আসেন। ভুল কিছু করেন নি। ওরা ধীরেন বাবুর মান রেখেছেন। ফুলমনির বড় হওয়ার সাথে স্কুলেও ভর্তি করেছেন। উপরন্তু ওর মা বাবার কাজের গুরুত্বও বাড়িয়ে দিলেন। একটু বড় হতেই দেখা গেল যে মেয়েটির মধ্যে এমন একটা শক্তি আছে যা সহপাঠীরা সহজেই মেনে নেয়। তা ওইটুকু মেয়ে হলে কি হবে? স্বভাবে সুন্দর, বক্তব্যে স্পষ্ট।
    ধীরেন বাবুর বাবা ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। নিজে দর্শনে MA পাশ করেও ব্যাবসা শুরু করেন। মেয়েটিকে যত দেখেন তত বেশী ভালো লাগে। মনে এসে যায় বিতর্কিত হলেও আর্য -অনার্যদের সংঘাতের কথা। মনে পড়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীল কর আদায়ের কালে অত্যাচারে জর্জরিত সাঁওতাল বিদ্রোহের কথা। তাছাড়া যেটুকু গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডাসের বিবরণ থেকে জানা যায় সিন্ধু ও বালুচিস্তানের কুটির শিল্পীদের বলা হতো সান্তাল। নিজেদের বিভিন্ন সময়ের গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে এরা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ও পূর্ব ভারতে। তারপর বসবাস শুরু করে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে। দীর্ঘ দিন ধরে নগর সভ্যতার সাথে সম্পর্কহীন থাকায় এরা অরণ্যচারী আদিবাসীতে পরিণত হয়। এখনকার সাঁওতালরা তাদেরই উত্তরপুরুষ। এক সময় সিন্ধু প্রদেশের নাম ছিল চাম্পা। এই অঞ্চলে ছিল সান্তালদের চোদ্দটি গোষ্ঠীর চোদ্দটি কেল্লা বা গড়। চায়গড়ে থাকতো সরেন গোষ্ঠী।
    এর মধ্যে কলকাতার নব্য কালচারে প্রাইমারি ক্লাস শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করাতে যোগাযোগ শুরু করে। দেদার খরচ, ডোনেশন, টেনশন, নিজের বাচ্চাদের মগজ ধোলাই, একে ধরা ওকে ধরা এবং সর্বোপরি অনিশ্চয়তা ।
    ফুলমনির অন্য স্কুলে যাবার প্রশ্নই নেই। তা ছাড়া বাংলা ভাষাকেও খুব ভালোবেসে ফেলেছে। চারজন ছেলে আর ফুলমনি একই বেঞ্চে বসে। যেমন অসিত, তারক, বরুণ আর রঞ্জন। সকলের মন খারাপ। সবাই যে ওকে খুব ভালোবাসে আর ওর কথা মেনে চলে। বাড়িতে বললেও বকুনি খাবে। এখন ফুলমনির বুদ্ধিই ভরসা। ফুলমনি বললো, একটু ভাবতে হবে।
    পরদিন সোজা হেডমাষ্টার মশাই-এর কাছে একা একাই কিছু বলে এল। এরপর উনি বাকি চার অভিভাবককে ডেকে পাঠালেন। বললেন, পঞ্চাশ মিটার দৌড়ে যে প্রথম হবে তাকেই একমাত্র এই স্কুলে রাখা হবে। বাকিরা অন্য স্কুলে যাবার ট্রান্সফার সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে। ফুলমনি এত জোরে দৌড়তে পারে যে কেউ ওর সাথে পেরে উঠত না। কাজেই অভিভাবকরা খুব খুশি। ফুলমনি ফার্স্ট হবে। আর বাকিরা অন্য স্কুলে চলে যাবে।
    কিন্তু অন্তিম সময়ে দেখা গেল সকলে একই সময়ে পৌঁছেছে। পাঁচ জনেরই একই সময় লেগেছে। অর্থাৎ প্রত্যেকেই প্রথম। সবাই চেঁচিয়ে উঠল হিপ হিপ হুররে। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব। জয় বন্ধুত্বের জয়। জয় বাংলা ভাষার জয়।
    ফুলমনির মুখে একটা তৃপ্তির হাসি।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- “ভালোবাসা ডট কম”

    “ভালোবাসা ডট কম”
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    সদ্য কলেজে পাস করা আবিরের উড়ু উড়ু ভাব। কলেজের সোস্যালে মন জয় করে নেয় তার শিল্পকলায়, গানে। গান গেয়ে তার অনেক ফ্যান হয়েছে। আবির ব্যস্ত থাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, অ্যপে। ইউটিউব চ্যানেলে তার অনেক ফ্যান ফলোয়ার্স। ফেসবুকে ও তার বন্ধুর সংখ্যাও বাড়ছে।

    বাবার দৌলতে একটি সরকারি চাকরি জুটে যায় আর্ট কলেজে। কিছু মাস পর আবিরের বিবাহ হয়। বিবাহ এক বছর অতিক্রান্ত। অবসর সময়ে বাড়িতে থাকাকালীন আবির ফোন, চ্যাট এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্ত্রীর বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে এক সময়। স্ত্রী’র (প্রিয়া) মনে হয় স্বামীর কাছে সে কি পুরনো হয়ে গেছে? কিন্তু কিছু মুখে বলে না।

    ফেসবুকের মেসেঞ্জারে একদিন একটি ছোট্ট বার্তা আসে। কেমন আছো? চিনতে পারছো? প্রোফাইলে ডিপি নেই। আবির রেসপন্স করে না। দিনের-পর-দিন মেসেজটি আসতে থাকে। এবার সত্যিই আবির চিন্তায় পড়ে, কে? প্রোফাইলে নাম লেখা প্রেয়সী ! এই নামে তো কাউকে চেনে না আবির। এবার একদিন মেসেঞ্জার কল, আবির রিসিভ করে দু’একটি কথা বলে, কিন্তু গলাটা?

    চেনা চেনা লাগছে না। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার আদান-প্রদান হয় নি। প্রেয়সী মাঝে মাঝে মেসেঞ্জার কল করে, ছয় মাস অতিক্রান্ত হতে চললো আবির বহুবার জিজ্ঞেস করে মেয়েটি তার আসল নাম ঠিকানা জানায় নি। প্রেমালাপে আবির আস্তে আস্তে মেয়েটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।

    সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আবার প্রেম হয় নাকি? আবির বিবাহিত, মনে মনে হাসতে থাকে। মেসেঞ্জারে হঠাৎ নিজের খেয়ালে প্রেম নিবেদন করে। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চায়। মেয়েটি তখন বাইরে তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। একদিন সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে আবির অপেক্ষা করে। স্ত্রীকে ফোনে বলে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে আছে, দেরি হবে বাড়ি ফিরতে।

    সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে, দু’কাপ কফি অর্ডার করে খেয়ে ফেলেছে একা আবির। হরেক রঙের গোলাপের তোড়াটা পাশে রাখা। কিন্তু প্রেয়সীর দেখা নেই। হঠাৎ পিছন থেকে হাত দিয়ে আবিরকে কেউ যেন চোখ ঢাকে। স্পর্শে চকিত হয়ে, আবির জিজ্ঞেস করে প্রেয়সী? তখন মেয়েটি হাসে। এই হাসি যেন তার চেনা। আবির দেখে টেবিলে তার স্ত্রী বসে আছে…

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- জন্মদিন

    জন্মদিন
    – শান্তনু ব্যানার্জী

     

     

    জন্মদিন কোনো দিন উদযাপন করি নি । না তেমন কোনো কারণ নেই, তবে কোনো দিনই এ ব্যাপারে উৎসাহ ছিল না। বলতে গেলে আমার কিন্তু তিনটে জন্মদিন। একটু অদ্ভুত লাগছে তাই তো! খুলেই বলা যাক। সবার মতো আমার তো একটা জন্মদিন আছেই। তাছাড়া আরও দু’টো তারিখ।
    প্রথমটা সাঁইত্রিশ বছর আগের কথা। সকাল দশটাতেই আমার গৌহাটি অফিসে খবর এল যে আমার মৃত্যু হয়েছে। অন্যত্র কাজ সেরে অফিসে পৌছতে বেলা তিনটে হয়ে গেল । আমাকে দেখে সকলেই চমকে উঠলো যেন সাক্ষাত ভূত দেখছে। চারদিকে কেমন বিমর্ষ ভাব। কাজকর্ম বন্ধ করে চারদিকে গুঞ্জন চলছে। এবার আমি হাঁক মারতেই সকলের সম্বিত ফিরে এলো। কি ব্যাপার বলুন তো! অফিস খুলতে খুলতেই মুম্বই ( তখন বলা হত বোম্বে) হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে ট্রেন দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা অফিস থেকেও ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। আমরা খালি আপনার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল না। তখন তো আর মোবাইল ছিল না, তাই অপারেটরকে হেড অফিসে হট লাইনে কানেক্ট করতে বললাম। কিছু বাদে লাইন পেলাম। বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজিত ভাবে কথাবার্তা চললো। লাইন ছাড়তে সবাই ঘিরে ধরল ব্যাপারটা বোঝার জন্য। হেসে বললাম যে কিছুদিন আগে একটি অল্প বয়সী ছেলে মুম্বই যাচ্ছিল ইন্টারভিউ দিতে কোনো একটা কোম্পানিতে। আমার কাছে দু’দিন যাবৎ ইন্টারভিউ সংক্রান্ত আলোচনা করেছিল। ওকে আমার কার্ড সমেত কিছু প্রস্তুতি বিষয়ে কাগজপত্র দিয়ে ছিলাম। ইন্টারভিউ দিয়ে ফেরার পথে ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট হয়। যদিও ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তবু আমার দেওয়া কাগজপত্র রেল লাইনের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। পুলিশ সেগুলো সংগ্রহ করে হেড অফিসের ঠিকানা আর ফোন নম্বর দেখে যোগাযোগ করে।

    দ্বিতীয়টা সাতাশ / আঠাশ বছর আগেই হবে। চিরকালই খুব আড্ডা মারতে ভালোবাসতাম। নিয়মিত যাতায়াতের জন্য ট্রেনের অনেক যাত্রীই চিনতো। ভেস্টিবিউল কোচের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। খুব মার্জিন টাইম নিয়ে যাতায়াতের বদ অভ্যাসের জন্য অনেকেই একটা করে জায়গা আমার জন্য রেখে দিত । একদিন বিকেল পাঁচটার সময় শেষ মূহূর্তে ট্রেনের শেষ বগিতে উঠে পড়লাম। শীতের সন্ধ্যা। উঠে দেখি ওটা একমাত্র বগি ছিল সেদিন ভেস্টিবিউল থেকে আলাদা। পরের স্টেশন আড়াই ঘণ্টা বাদে। বসার জায়গা পরের কথা। আড্ডা মারবো কিভাবে! দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। যদি কোনো স্টেশনে একটু দাঁড়িয়ে পড়ে তবে কামরা পাল্টে নেবো। আধঘণ্টার মধ্যে সুযোগ এসে গেলো। কিন্তু একি? আমি প্লাটফর্মের লোকজনের মাঝে পড়ে আছি। লোকজন আমাকে ধরে নিয়ে বেঞ্চে বসালো। আমার ব্রিফকেস লাইন থেকে তুলে আনলো।আর ট্রেনটা বেরিয়ে গেল। পুলিশ এলো। ভাবলো আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে চলে গেল।
    সেদিন কিন্তু ট্রেনটা স্টেশনে দাঁড়িয়ে গিয়ে ছিল মনে হয়ে ছিল। এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি জানিনা। তবে এটা আমার দ্বিতীয় নবজন্ম।

You cannot copy content of this page