চিঠি

  • চিঠি

    শ্রদ্ধেয় নেতাজী, তোমাকে খোলা চিঠি

    শ্রদ্ধেয় নেতাজী, তোমাকে খোলা চিঠি
    -তন্ময় সিংহ রায়

     

     

     

    প্রথমেই তোমাকে নত মস্তকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, শতকোটি প্রণাম ও হৃদয়ের গহিনের সবটুকু নিবেদিত ভালোবাসা। হে মান্যবর নেতা, স্বঘোষিত সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণটির প্রকৃতি এমন যে…. মানবরুপী ঈশ্বর দর্শনে আমার এ ক্ষুদ জীবন ধন্য। হে পরম পূজনীয় নেতা, তোমার দেওয়া উপহার তৎকালীন অখন্ড ভারতে, স্বপ্ন আজও সবাই দেখে কিন্তু সমস্ত জাতি-ধর্মমিশ্রিত দেশকে বর্বর ব্রিটিশদের শৃঙ্খল থেকে উদ্ধার করার যে একটাই স্বপ্ন তোমার সারাজীবনের রাতের শান্তির ঘুমটুকু পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিলো, এমন স্বপ্ন আজ আর কেউ দেখেনা। তোমার দেশে আজ বীরের মেলা, কিন্তু তোমার মত বীর আজ আর জন্মায়না। স্বার্থের অস্তিত্ব আজও তোমার সাধের দেশে জীবিত কিন্তু তোমার স্বার্থ আজ প্রাণ ত্যাগ করেছে। সমাজসংস্কারকে আজ পূর্ণ জোয়ার কিন্তু তোমার মতন সমাজসংস্কারক হওয়ার সাধ্যি কারো নেই। তুমি যে অদম্য তাই তো তোমার ছিলো এত শত্রু, তুমি যে অভেদ্য তাই তো পৃথিবীর সব শত্রুই ছিলো তোমার পদতলে। হে গর্বিত বঙ্গ মায়ের অপরাজেয় বীর সাধক, একজীবনের সবটুকু সুখকে ত্যাগ করে কি যন্ত্রণাময় জীবনকে তুমি উপেক্ষা করেছো, উপেক্ষা করেছো বর্ণচোরাদের, শুধু আমাদের জন্যে, তা আজ ঠিক কজনের গভীরে আঁচড় কাটে আমার জানার বাইরে। ত্যাগের প্রায় শেষ সীমায় তুমি পৌঁছেছো শুধু আমাদের-ই জন্যে, শত লাঞ্ছনা ও অপমানে প্রতি দিন তুমি রক্তাক্ত হয়েছো শুধু আমাদের-ই জন্যে। কিন্তু আজ……. ? তোমায় শুধু মুখস্থ করা হয় ডিগ্রী বাড়ানোর স্বার্থে ও মাঝে মধ্যে কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আদর্শের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে নিজেকে মহৎ প্রমাণ করার জন্যে। রং করা ফিল্মি হিরোয় বিশেষত নবপ্রজন্ম বুঁদ আর তুমি আজ আলেয়া। রাজমিস্ত্রি আজও দেওয়াল গাঁথে কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবক-ই আজ তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেওয়ালে তোমার আদর্শ গাঁথেনা তাই আজ ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক সন্তান। আজ তোমার খন্ড ভারতে সবাই নিজ নিজ সুখ শান্তির সংসার গড়তে উদ্যত শুধু সংসারটার সুখ শান্তি তোমার কপালে জুটলোনা। জেলে আজও যায় অনেকেই তবে তোমার মতন মহৎ উদ্দেশ্য সফলের স্বপ্ন নিয়ে নয়, দুর্নীতি করে। তোমার আবির্ভাব থেকে আজ অবধি কতবার যে তোমায় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে তা হিসাব বহির্ভূত, তবুও তুমি ছিলে অকুতোভয় ও অভঙ্গুর। হে আধিদৈবিক সিংহপুরুষ, ভীষন ভালো লাগে অনুভব করে যে জিলেটিনের প্রলেপযুক্ত কাগজের টুকরোতে তুমি অস্তিত্ববিহীন কারণ, ঈশ্বরের আসন কোনো কাগজের টুকরোতে নয়, ১২১ কোটির হৃদয়ে। আর যে পরিমান দুর্নীতি আজ ওই কাগজের টুকরোর বিনিময়ে চলছে তা বর্ণনাতীত। হে পরম পূজারী, আমি আপ্লুত, মন বলছে, ধামা চাপা বিকৃত ও মানুষ ভোলানো ইতিহাস নগ্ন হওয়ার সময় আসন্ন। কিছু বিশিষ্ট কৃতঘ্নদের মুখোশ-ও উন্মোচনের পথে কারণ, “শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়না।” মাঝে মধ্যেই এ প্রশ্ন মনের জরায়ুতে জন্ম নেয় যে তাহলে, ‘প্রকৃত বর্বর কারা?’…. যতদিন এ পৃথিবী জীবিত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমার সক্রিয় হৃদপিণ্ডে তুমিই আমার ভগবান। হে মানবরুপী ভগবান, স্বাধীন হয়েছি নিশ্চিত কিন্তু তোমার শিক্ষায় আজও শিক্ষিত হওয়ার যোগ্যতাটুকু তৈরী করতে পারিনি। ক্ষমা কোরো, এ লজ্জা একান্তই আমাদের। (ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য) ইতি……..লজ্জিত তন্ময়।

  • চিঠি

    ‘তুমি’ থেকে ‘তোমরা’

    • ‘তুমি’ থেকে ‘তোমরা’

      -রীণা চ্যাটার্জী

    প্রিয় নারী
    সমাজ বলেছে পোষাক দোষে দুষ্ট তুমি,তাই জন্য তুমি লাঞ্ছিতা, ধর্ষিতা। তোমার দোষেই পুরুষ হয়েছে বর্বর, তকমা গায়ে ধর্ষকের। উঠছে রব পোষাকে আনো শালীনতা। ওরা বলে দেবে তোমার কোন পোষাকে কেউ রিপু তাড়িত হবে না। কিন্তু প্রশ্ন এখানে তাতেও কি তুমি দোষী হবে না? সব বিধি নিষেধ মেনে নিলেও! উত্তর নেই- কারো কাছেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর বাড়ীতেও মেয়েদের শায়া,সেমিজ পরিধান অশ্লীলতা দায়ে দুষ্ট ছিল… যদিও নারী পোশাকের আধুনিকতার জন্ম ঠাকুর বাড়ীর দেউড়ী থেকেই জ্ঞানন্দানন্দিনীর রুচিশীলতার হাত ধরে। কিন্তু সেই পোশাক ও প্রাথমিক পর্যায়ে অশ্লীলতার দায়ে বহু আলোচিত সেই সময়ে। সীমা, সত্তা সব ওদের হাতে… তুমি কি ? সত্তাহীন পুতুল!
    দেখি কবিতা,গল্প সবতেই খুব সাবলীল ভাবে উঠে আসে নারীদের গোপনীয়তা,অঙ্গ … সব। ডাকবে তোমাকে অশ্লীল নামে, আধুনিক হচ্ছে সাহিত্য অঙ্গন, হাত ধরে তোমার শরীরি আবেদনের! তবে তোমার অবদান মানা হবে না। ওদের ইচ্ছে ওরা ছুঁয়ে যাবে যেভাবে খুশী যতবার খুশী তোমার শরীর। জানার তো দরকার নেই তুমি চাও কি না! কবিতা আধুনিক হবে তোমার গোপনীয়তা ছুঁয়ে… তুমি হতে পারবে না আধুনিক, হলেই তুমি বেহায়া। তাই তো বারবধূ বারবণিতা তোমার নামে লাগতে পারে, বারপুরুষ নাম এলো না সমাজে! প্রশ্ন উঠলো না কেন তোমার নাম বারবধূ,বারবণিতা হলো! জানে সবাই ,কিন্তু চুউউপ…. দোষ তোমার। ভাঙ্গা গড়া ওদের হাতে… তুমি কি? মাটির পুতুল!

    প্রতিবাদ হচ্ছে তোমার জন্য… কিসের প্রতিবাদ? কিভাবে প্রতিবাদ? প্রতিবাদের নামে কিছুটা আছে কৌতুহল,কতটা লাঞ্ছিতা তুমি? কতটা উন্মুক্ত করতে পেরেছে তোমাকে? কতটা ছিন্ন, ভিন্ন, রক্তাক্ত হয়েছ তুমি? শুধু মুখ আর নামটুকু আবরণ করে বারবার তুমি হবে খবরের শিরোনাম। আরো একটি ‘তুমি’ পাওয়ার অপেক্ষা, আবার পুরোনো চোখ নতুন শিরোনাম। ‘তুমি’ বিস্মৃতির অতলে। কেউ জানতে চাইবে না তুমি কি চাও। ওদের ইচ্ছায়, ওদের প্রয়োজনে তুমি বিখ্যাত… তারপর? ইচ্ছা, প্রয়োজন সব ওদের… তুমি কি? অন্তঃসারশূন্য পুতুল!,

    অসাড়, অন্তঃসারশূন্য, মাটির পুতুল চাই ওদের। প্রয়োজনে নামাবে, রাখবে, গোছাবে, ফেলে দেবে… সব সব নিজের ইচ্ছে মতো। মাঝে কিছু দরদী হাত ধূলো ছেড়ে তোমাকে তুলে রাখবে, কিংবা নিষ্ঠুরতার হাত তোমাকে জ্বালিয়ে কিংবা ছিঁড়ে দেবে.. ওদের ইচ্ছে।

    সময় হয়তো এসেছে ভাবার…’তুমি’ থেকে ‘তোমরা’ হবার। প্রতিবাদ হোক ‘তোমাদের’, ইচ্ছে থাকুক ‘তোমাদের’, স্বাধীনতা হোক ‘তোমাদের’। অনুগামী তো অনেক দিন ছিলে, আজ অধিকারী হতে হবে। সমবেত হবার সময়  এসেছে আগামীকাল সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে। হাতে হাত দিয়ে এগিয়ে দেখি না হয় ‘তুমি’ ছেড়ে ‘তোমরা’ হয়ে…।
    তোমাদের আহ্বানী

  • চিঠি

    আমার মমতাময়ী

    আমার মমতাময়ী

    -রীণা চ্যাটার্জী

     

    আমার মমতাময়ী,

    সম্বোধনের অধিকার আমার নেই,তার আগেই ছিন্ন হয়ে যাবে আমাদের নিবিড় বাঁধন। আজই তো সেই চরম দিন, পরীক্ষার ফল জানা যাবে। তোমার না কি আমার? বোধহয় আমার… এর ওপর আমার জীবন নির্ভর করে আছে যে! আমার আসার ঘোষণায় যে তোমার সফলতা আংশিক প্রমাণ হয়েছে- শুধু অপেক্ষা জানার তুমি সম্পূর্ণ হবে কি না?

    পারলাম না ‘মা’ তোমাকে বোধহয় সম্পূর্ণ করে যেতে,কারণ ফলপ্রকাশ হলেই আমার অস্তিত্ব মুছে দিতে তোমাকে বাধ্য করা হবে.. আমি যে ‘কন্যা ভ্রুণ’ মা! তোমার না দেখা, অজানা তোমারই দুহিতা। আমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তোমাকে আবার অবতীর্ণ হতে হবে নতুন পরীক্ষায় সফল হবার জন্য একটি ‘পুত্র-সন্তান’ এর প্রতীক্ষায়।

    আমার আসার ইচ্ছা,আশা তোমার কাছেও জানতে চাওয়া হয়নি… আমি তো জন্ম লগ্ন থেকেই বলি। এসেছিলাম হয়তো মিলনের আবেশে… কিভাবে ছিনিয়ে নেবে জানি না মা! অজানা ভয়ে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষায় অন্তিম মুহূর্তের। মাতৃস্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে আমাকে অভয় দেবে,সেই সৌভাগ্যের সময় যে ললাটে নেই। জানি মা তোমার ও কষ্ট হবে আমার জন্য শরীরে মনে…

    তবে জানো মা- এই বোধহয় ভালো… তোমার, তোমার সঙ্গে আরো অনেক নারীর অন্তরের নীরবে অশ্রুপাত দেখে মনে হচ্ছে শুরুতেই শেষ হয়ে যাওয়া ভালো। নাহলে সারাজীবনের সাথী তো ভয়, গ্লানি, পরাধীনতা, এই তো তোমাদের পাওনা। যদি এমন হতো আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে তুমি নির্বিঘ্নে, সকলের আনন্দের শরিক হয়ে আমি আসতাম… কতটা নিশ্চিত থাকতে পারতে আমাকে নিয়ে? ইচ্ছা থাকলেও মন সায় দিতো না… যেমন পারেন নি তোমার মা, তাঁর মা, অগুণতি কত শত সহস্র মা। ‘নখের আঁচড়’, ‘দাঁতের কামড়’ থেকে বাঁচতে তোমার নিরলস প্রয়াস তোমাকে আরো অশান্তির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করতো রোজ, স্বাধীন স্বাভাবিক ছন্দে বাঁচার যে অধিকার নেই আমাদের (ব্যতিক্রম অবশ্য আছে)। তাই অঙ্কুরে বিনাশ ই শ্রেয়।

    কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই মাগো এই অবোধ মনে… তুমি এলে, তোমার মা এলো,আরো কত মা এলো কত যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীতে… কিভাবে, কোন মহানুভবতায় তোমরা বেঁচে গেলে,বড়ো হলে… সে সব বিভিন্ন চিন্তাধারা, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি, পরিবেশ। কেউ তোমরা সফল হলে,কেউ বিফল, কেউ প্রতিবাদী,কেউ মুখ বুজে মেনে নিলে সব। কত যুগ তো কেটে গেল– তোমরা সবাই কেন এক হয়ে ভয়হীন,ক্লেদহীন এক পৃথিবী গড়ে তুলতে পারলে না, যেখানে তোমাদের মতামত, আশা , আকাঙ্খা সমান অধিকার পেত। আমাদের ও চলে যেতে হতো না এইভাবে..! তোমরা সমবেত হতে পারলে না কেন? আজো যদি তোমাদের ইচ্ছার প্রতিফলন পরনির্ভরশীল হয়– জন্মের বাঁধনে ডেকো না মা। তাই বা বলি কি করে! সেই স্বাধীনতা তো তোমরা পাও নি …। একটি কথা মনে বারবার আসছে, অপরাধ নিও না,”নারী শূন্য হোক এই ধরিত্রী”। ভালো থেকো বলবোনা বিদায় ক্ষণে… শুধু বলি সবলা হোও, স্বাধীন হোও, স্বীকৃতি নিয়ন্ত্রণে রেখো। সময় আসন্ন,আমাকে  নিশ্চিহ্ন করে দেবার সব আয়োজন সম্পূর্ণ… ফলাফল ঘোষিত যে সবার সামনে। আমাকে চিরতরে মুছে দিয়ে ইচ্ছা সফলের জয়টীকা পড়বে সবাই… তোমার নীরব অশ্রু, এইটুকুই আমার এই ক্ষুদ্র অস্তিত্বের পাওনা।আসি, বিদায়..

    তোমার অনাগতা।

  • চিঠি

    ‘ভালোবাসা’ তোমার অপেক্ষা

    ‘ভালোবাসা’ তোমার অপেক্ষা
    -রীণা চ্যাটার্জী

     

    প্রিয় ভালোবাসা

    কেমন তুমি ‘ভালোবাসা’? খুব জানতে ইচ্ছে করে। শতরূপে দেখি তোমাকেই বারেবার। তোমাকে অনুভবে খুঁজে নিতে হয়? না কি তুমি নিজেই ধরা দাও? অনুভূতি, স্পর্শ, চাহনি ঘিরে তোমার অবয়ব? যুগল হৃদয়ের আকুতিতে তোমার অস্তিত্ব? মনে হয় অপেক্ষা,অছিলা, বিরহ, স্বপ্ন,জাগরণের স্বমূর্ত প্রকাশ তুমি।
    প্রিয়কে দেখার, কাছে পাওয়ার অপেক্ষা সে তো তুমি ‘ভালোবাসা’। তোমাকে পাওয়ার আছিলায় কত কথা,কত অভিমান,কত অনুনয়,অনুযোগ! বিরহের আকুল আবেদনে তুমি যেন ভীষণ অসহায় ‘ভালোবাসা’। স্বপ্নে তুমি ধরা দাও অতৃপ্তি মিটিয়ে দিতে , ভীষণ আপন হয়ে। আর জাগরণে? ‘…. ভিতরে বাইরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’।
    কত কলমে কত কথামালা শুধু তোমার জন্য। অনুভূতিরা এঁকে দেয় পাতায় পাতায় হৃদয়ের আল্পনা শুধুই তোমার ছোঁয়ায়। তোমাকে পেতে কত গান হয়ে ওঠে কলতান। মনে পড়ে কবিগুরুর অনেক গান, সেখানেও অপূর্ব সুললিত তোমার অবয়ব, অকৃপণ হয়ে তুমি ধরা দিয়েছো কবির কল্পনায়। নীরব চাহনি বাঙ্ময় হয়ে ওঠে, দু’টি হৃদয়ের না বলা অনেক কথা ধরা দেয়… সে তো শুধু তোমায় উপলব্ধি করে।
    এক প্রেমিক মনের কথা-‘যখন বালুকাবেলায় একা হেঁটে যাই মনে হয় ধরার মতো হাত যদি হাতে থাকতো..’ কি গভীর উপলব্ধি তুমি! থেকে আছো, না থেকে ও আছো, মনের গহীন গভীরে সূক্ষ অনুভূতিতে তুমি বিরাজিত। জানি না সে তোমাকে ভোরের রবির উষ্ণতায়, নাকি জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতায় চেয়েছিলো, কিন্তু তার স্বরে ছিলো অব্যক্ত আকুতি। তার সেই কথায় ছিলো না কোনো লিপ্সা, লালসা,কোনো অশালীনতা। তোমাকে কাছে না পেয়েও, সাথে না পেয়েও তোমাকে সাথে নিয়ে চলার দুরন্ত ইচ্ছা.. কি শুদ্ধ, অমোঘ তোমার উপস্থিতি! আলোড়িত করে গেছিল আমায়। প্রার্থনা করেছিলাম ওই প্রেমিক মনের জন্য “ভালোবাসা ধরা দাও।”
    তোমার আর এক রূপ বিরহ। তোমাকে চেনা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় বিরহ ছাড়া। বিচ্ছেদের আকুল সেই মুহূর্ত শুধুই অপেক্ষা করে থাকে অসীম অধীরতায় প্রিয় মিলনের। বিরহের অসহায়ত্ব নিয়েও বেঁচে থাকার অবলম্বন যে শুধু তুমি ‘ভালোবাসা’। অপরূপ তোমার রূপ, অপরিসীম তোমার শক্তি, স্নিগ্ধ, শান্ত, শুদ্ধতায় অনন্য তোমার অস্তিত্ব। এসো ভালোবাসা তুমি সবার জীবনে। সবার যে তোমাকে চাই। তাই তোমার তরে সবার আহ্বান চিরন্তনী,চিরকালীন।
    আলিঙ্গন নিও ভালোবাসা।
    ‌                                            অপেক্ষা

  • চিঠি

    শুভ জন্মদিনের বিনম্র প্রণাম গুরুদেব

    শুভ জন্মদিনের বিনম্র প্রণাম গুরুদেব
    -রীণা চ্যাটার্জী

     

     

    শ্রদ্ধেয় কবিগুরু,

    শুভ জন্মদিন, গুরুদেব আপনার জন্মক্ষণ আমাদের কাছে শুধু গর্বের নয়, বিশাল প্রাপ্তির। আপনার অজস্র রচনা সম্ভারের প্রাপ্তির পরিপূর্ণতায় কৃতজ্ঞ আমরা জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

    আমাদের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই,প্রতি ক্ষণের অনুভূতি আপনার লিপিমালা। জনমে-মরণে, সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায়, ভালোবাসায়-বিরহে সকল আবহে আপনার অজস্র লিপি, প্রকাশ পায় আমাদের অভিব্যক্তি নির্দ্বিধায়। জনমের আহ্বান, মরণের মুক্তি,সুখের শান্তি,দুখের শ্রান্তি, বেদনার ভার, হাসির ঝংকার, ভালোবাসার উদ্বেলতা, বিরহের ক্লান্তি, সবখানেই আপনার লিপি আমাদের বুলি- আমাদের আত্মার আত্মীয়। ঋতু বরণ, প্রকৃতির অনুধাবন, প্রভাতী সূর্য, নিশির শশী সব আপনার লেখায় জীবন্ত। আমরা নিজের মতো ভাবতে বসলেও মনে এসে যায় আপনার লিখে যাওয়া সুর ছন্দ , মনে হয় আমাদের/আমার বলা, অনুভব, প্রকাশ ঠিক হলো না, আপনি যে অনেক মূর্ত করে বলে গেছেন-ছবির মতো গেঁথে আছে আমাদের চেতনায়। প্রভাতী গুনগুনে, ব্যস্ত ক্ষণে, ক্লান্ত মনে, নিশির নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী আপনার গান, আপনার ছন্দ।

    আপনার বিদ্রোহ ধ্বনি, মৈত্রী বাণী, পূজার নিবেদন, জীবন দর্শন সব সব অনন্য প্রকাশ, অনন্ত অনুভূতি। বীজমন্ত্র হয়ে বিরাজিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আজ শতাধিক বর্ষ পার করে এসেও। আপনার রচিত সাহিত্য সৌধের অনায়াস গঠন আমাদের পরিপূর্ণতায় ভরিয়ে রেখেছে।আজো জ্ঞানে-অজ্ঞানে, চেতনে-অচেতনে আমরা আপনার স্মরণে, আপনার গঠনে। আফশোষ একটাই আপনার রচিত সাহিত্য সৌধের প্রতিটি অলিন্দে উঁকি দেওয়াও আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে প্রায় অসম্ভব।

    পূজা,প্রেম একাকার হয়ে গেছে আপনার লেখায়,অনন্য সেই অনুভূতি আমাদের কাছে। সেই কোন ছোটবেলায় আমরা যখন আপনাকে না জেনেই আপনার বুলিতেই মাকে বলতে চেয়েছি,’মাগো আমায় ছুটি দিতে বল, সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা’ কখনো বা ছোট শিশুর বড়ো হতে চাওয়া আপনার হাত ধরে, ‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।’ কিছুটা পরে কৈশোরে আপনাকে কিছু জানার ফাঁকে কিছু সুরের হাত ধরা “সখী ভাবনা কাহারে বলে,সখী যাতনা কাহারে বলে’,’ ভালোবাসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’, ‘আমি তোমার প্রেমে হবো সবার কলঙ্কভাগী’, …. গানের মূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়া। আরো কিছু পরে মন চিনলো আপনাকে আরো গভীরে (?)’সোনার পিঞ্জর ভাঙিয়ে আমার, প্রাণের পাখীটি উড়িয়া যাক’, ‘এ কী হর্ষ হেরি কাননে।প্রাণ আকুল,স্বপন বিকশিত মোহমদিরাময় নয়নে।’, ‘কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া,’। সময়ের সরণী বেয়ে নতুন উপলব্ধি আপনার লেখায়, ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও,’ ‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা প্রভু, তোমার পানে তোমার পানে,’ সব অনুভূতি সব স্মৃতি আপনার দেওয়া। আর একটা বড়ো দুঃসাহসী দুরাশা আছে মনে, পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবার পর কেউ আমার ছবির সামনে যদি বলে,’তুমি কি কেবলি ছবি, শুধু পটে লিখা,’ ওই ডাকে বোধহয় আবার ফিরে আসবো এইখানে…. ভীষণ আকুতি যে ছাত্র ছত্রে। এই আকুলতা আমাদের সঙ্গী নিভৃত শেষ বেলার।

    আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আপনার লেখনী নিয়ে জানাই আপনাকে সশ্রদ্ধ বিনম্র প্রণাম,

    “এই গীতিপথপ্রান্তে হে মানব তোমার মন্দিরে
    দিনান্তে এসেছি আমি নিশীথের নৈঃশব্দের তীরে,
    আরতি সান্ধ্যক্ষণে, একের চরণে রাখিলাম
    বিচিত্রের নর্মবাঁশি,এই মোর রহিল প্রণাম।”

  • চিঠি

    শরৎবাবু তোমাকে

    শরৎবাবু তোমাকে

    -রীণা চ্যাটার্জী

    শ্রদ্ধেয়

    কেমন আছো শরৎবাবু? কোথায় আছো? আজ তোমার কথা বড়ো বেশী মনে পড়ছে, সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বড়ো হওয়া। তোমার লেখা প্রতিটি নারী চরিত্রের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে বারবার। মনে হয়েছে আমি হয়তো এই রকম কিংবা যদি হতে পারতাম ঐরকম, বড়ো মূর্ত চরিত্র যে সেই চরিত্রগুলি। নারীদের মনসমুদ্রে তুমি যে অনায়াস ডুবুরি,ডুব দিয়ে তুলে এনেছো সুখ-দুঃখের শুক্তি। নারী মনের গোপন চাওয়া-পাওয়া জানতে পেরেছি তোমার লেখনী বেয়ে…কি করে বুঝতে তুমি?তোমার কলমের বিশ্লেষণে আমাদের লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমান, স্নেহ, ধৈর্য্য সব তুলে ধরেছো…আমাদের মনের গোপন গভীর ভালোবাসা ও তোমার কলমে পরিচিত হয়েছে। যদি তুমি আজ থাকতে কলম কি ধরতে আজকের নির্ভয়া,তাপসী…এদের জন্য। বলতে কত শত অপমানের পরেও কেন নাম কলঙ্কিনী ?বলতে নারী মন শুধু স্বীকৃতি চায়? হ্যাঁ তুমি ঠিক বলতে … নাহলে তোমার রাজলক্ষ্মী, পার্বতী, চন্দ্রমুখী, সাবিত্রী,অভয়া সবাই ভালোবাসার অমরাবতীতে অমর হয়ে থাকতো না। আমাদের আজ তোমাকে বড়ো দরকার শরৎবাবু–আর যে কেউ বোঝে না তোমার মতো করে। আজো আমরা বেদনা বিধুর, ভালোবাসা আজো স্বীকৃতি পায় নি, ঘরে ঘরে আজো আছে পার্বতী,অভয়ারা। অনুভূতি দূর, অস্তিত্বের স্বীকৃতিও এখনো ভঙ্গুর!!

    আমরা বড়ো অসহায় তোমার কলমের ছোঁয়ায় জীবন্ত হলো না আমাদের কথা, তোমার ভাবনার প্রকাশে লিপিবদ্ধ হলোনা আজকের নারীদের অনুভূতি। ফিরে এসো আর একবার, আমরা ডানা মেলি তোমার লেখনীতে, ফিরে এসো।

    ভালো থেকো, প্রণাম নিও

  • চিঠি

    বসন্ত! আমার গঙ্গাজল (বসন্তকে ) 

    বসন্ত! আমার গঙ্গাজল (বসন্তকে ) 

    -শিবানী গুপ্ত

    ওগো, চিরসখা বসন্ত, সেই মেয়েবেলার সন্ধিক্ষণ হতেই তুমি আমার সই—-আমার গঙ্গাজল! মনে পড়ে কি.তোমার! সেদিনের শুভলগ্নের শুভ—- মুহূর্তের অনুরাগময় একান্ত নিভৃত আলাপচারিতার কথা! বিচিত্র রঙবাহারী ফুলে বাগানটা যেন হেসে হেসে আমায় ইশারা করে ডাকছিলো আমি কাছে যেতেই তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি আমায় বিমুগ্ধ করে। কি সুন্দর কস্তুরী সুবাসে ছেয়ে আছে ফুলেরা, তোমার কবোষ্ণ স্পর্শে। ফুলেরা বললো, তুমি যখনই আসে, এমনি করেই ওরা সুশোভিত, সুবাসিত হয়ে ওঠে,তোমার অমলিন সৌহার্দ্যে——– আমার মনেও কেমন একটা অনুরণন! তুমি মিষ্টি মিষ্টি হেসে দুষ্টুমি করে আমার চুলগুলো একটু নাড়িয়ে দিলে, ‘কিগো, মিতা হবে আমার ‘? আমি তো আহ্লাদে একপায়ে খাড়া—‘হ্যাঁ, হ্যা, হবো ,আজ হতে তুমি কিন্তু আমার গঙ্গাজল! সত্যি, কি দারুণ চনমনেই না ছিলো মেয়েবেলার শাপলা্ – শালুক দিনগুলি! আমরা দু’জনে আপনমনের উচ্ছলতায় পার করেছি দিন-মাস–বছরের মধুমাখা অপরূপ দিনগুলো -কৈশোর–যৌবনের কৃষ্ণচূড়ার সুরভিতদিনগুলো- জীবনখাতার পরতে পরতে কতোনা স্মৃতির পশরা– তোমার অনুরাগের ছোঁয়ায় প্রাণমন ভরে উঠেছে পুলকে— শুধু কি আমি ! তোমার অনাবিল স্নিগ্ধপরশে বিশ্বজগৎ জুড়েইতো তোমার বন্দনাগীতি গো! কতো কতো কাব্য–কবিতা—-নাটক,আর -গীতিমালাসৃজিত হয়েছে -তোমাকে ঘিরে ,তোমারি আলোক। অনবদ্য, অনুপম লাবনীসুধায় সকলকে আকর্ষণ করেছো। ভ্রমর যেমন ফুলের মধুর আশে উন্মত্ত হয়ে ছুটে আসে, তেমনি আকুলতা জাগে সবার প্রাণে-, তোমাকে ঘিরে, তোমার স্পর্শে সঞ্জীবিত হয়ে শুকনোগাছেও কুঁড়ির ইশারা জাগে! এমনি মোহময়,প্রাণময়,প্রেমিক স্পর্শ তোমার গো সখা! ওইযে, কবি বলেন—- ‘ ‘সবারে বাসরে ভালো নইলে,মনের কালো ঘুচবেনা রে আছে তোর যাহা ভালো ফুলে মতো দে সবারে–‘ সখা বসন্ত! তুমি যে তাই গো! ভালবাসারঅমিয় ধারা সুরধুনী হয়ে বইছে তোমার উদার হৃদয়ে—-তাইতো, সবার মাঝে ,সবকিছুর মাঝে তুমি স্বরূপে উদ্ভাসিত। প্রকৃতি অপরূপ সাজে মনোলোভা হয়ে ওঠে তোমারই অকৃপণ অনুরাগে। গঙ্গাজল! সখা বসন্ত আমার! তোমার মনে পড়ছে কি সেদিনের কিশোরীটিকে? যার সাথে ফুলেরা তোমাকে সখ্যতায় বেঁধেছিল! হ্যাঁ,সেই কিশোরীতার অবোঝ সরল মনের ঊচ্ছাসটুকু তোমাকে জানাতে ব্যাকুল হয়ে হৃদয়ের সবটুকু সৌরভ ঢেলে চিঠি লিখে জানিয়েছিল তার কুমারীমনের ভালবাসার কথা—প্রথমঅনুরাগের প্রথম কদম ফুলের নির্য্যাসে——- চিত্র আষ্টেপৃষ্ঠে গম সেঁটে ফুলেদের দিয়েছিল, তোমাকে দেবার জন্য। ফুলেরা তো চিত্র বাইরের লেখা পড়ে হেসে কুটি কুটি– ‘ওমা, কি লিখেছিস এসব! –‘সাগুর দানা, বেলের পানা মালিক ছাড়া খুলতে মানা যে খুলবে তার চক্ষু কানা তবুও, যে খুলতে যাবে তিনসত্যি, চক্ষুকানা হবে’— ওদের হাসি দেখে আমি লজ্জায় ছুটে পালাই। গঙ্গাজল! সখাবসন্ত! তুমি কিন্তু চিঠিটা পেয়ে ফুলেদের মতো হাসোনি। বরং আবেগে আমায় জড়িয়েধরে সর্বাঙ্গে এঁকে দিয়েছিলে মধুর সোহাগচুম্বন! কি অপরূপ মাদকতার ছোঁয়া ছিল তোমার সেবা আলিঙ্গনে! আমি ভেসে গিয়েছিলাম গো! আর, চিঠি! সেতো আমি শুধু তোমাকেই লিখিগো, প্রতিদিন–মনেমনে! আর, সত্যি বলতে কি, বয়সের এই পড়ন্ত বিকেলে এসেও তোমার প্রতি আমার সভ্যতা, অনুরাগ, প্রীতিময়তা, ঠিক আগেরমতোই সতেজ, গাঢ়। তোমার উপস্থিতিই যে এমন, যাকে কেউ কখনো অবহেলা করতে পারে না। তাইতো তুমি বিশ্ববন্দিত !চির-ইপ্সিত, চির-আকাঙ্খিত, চিরসবুজ——-চিরসুন্দর ! যদিও, আমি এতোসব কঠিন কথা বুঝতে পারিনে সখা। আমি শুধু জানি, তুমি আমার বেঁচে থাকার অমূল্য রসদ! আমার সুহৃদ, আমার মিতা। আমার কলমকে তুমিই করো উজ্জীবিত–অনুরাগে,প্রীতিতে- ভালবাসায়— বসন্ত সখা! তুমি যে আমার গঙ্গাজল!

     

    ইতি–তোমার গঙ্গাজল।

  • চিঠি

    অনিমেষ

    অনিমেষ,

    -বিদিশা বসু 

     

    আমি মাধবী লতা বলছি,,,তোমার মাধবীলতা।অনেকদিন তোমায় কিছু লিখিনা,,,আজ যেন ইচ্ছেরা একটু উতলা,,,,,আমার মতোই।তোমার নামের মতোই অনিমেষ তুমি আমার কাছে,,,আর আমারও অভ্যেস হয়ে গেছে তোমাকে লতার মতো জড়িয়ে থাকার, অভ্যেস বলো,,,ইচ্ছে বলো,,,আর লতিয়ে থাকার স্বভাই বলো,,,,,।
    তোমার মনে পড়ে,,,এই তো সেদিন কেমন তরতর করে তোমাকে জড়িয়ে উঠে গেছিলাম চারতলার,
    ছাদটায়,,,,,,তোমার সময় অসময়ের উদাস গৈরিক মাঠ,, 
    আর তুমি আমার উদাস বাউল,,,,আপন মনে বাংলা,,হিন্দি গানের সুর তুলতে তোমার ঠোঁটে,,,,,না বলতেই গান শোনাতে,,আর আমি তোমায় জড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তোমার গান,,,মনে পড়ে,,,? কতোদিন আমি
    শুনিনি তোমার গান,,,,,।বসন্তের খাঁ খাঁ রোদে, তোমার চারতলার রোদে বড় আরাম হতো আমার তোমার প্রসারিত দৃষ্টি ছুটে যেত তোমার গ্রামে,,,,ফেলে আসা ভালো লাগা ভালোবাসায়,,,,,আমি রোদের গন্ধ মেখে নিয়ে তোমার হাতটা ধরতাম,,,তুমি বলতে,,,,, পাগলী,,,
    তোমার উসাদী দৃষ্টির চমক ভাঙতো ইহলোকের নিয়মের তাড়নায়,,,,, বলতাম আর একটু বোসো,,,,,সত্যি আমার তো কাজই নেই তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া,,,,তোমাকে আঁকড়ে ধরে তোমার বুকে মাথা রাখার পরম সুখ ছাড়া,,,,,।
    অনিমেষ কবে তোমার ছুটি হবে,,,,,? আমাকে নিয়ে যাবে কবে সমুদ্র দেখাতে,,,হাতে হাত রেখে গরম তপ্ত বালিয়াড়ির পথ পেরিয়ে নীল রঙা সমুদ্রের কোলে,,,
    এলোমেলো হাওয়া উড়ে যাওয়া সাপের ফণার মতো ঘোর লাগা আমার এ চুল ছুঁয়ে যাবে তোমার কাঁধ পিঠ,,,
    খোঁপা খুলে দেবে তুমি নিজের হাতে,,,,,আমার মুক্তো চুলের অবাধ্যতার সংগে তুমি গুছিয়েও দেবে এই এলোমেলো আমি টাকেও,,,,
    আমাকে একটা নীল রঙা শাড়ী কিনে দেবে,,,,? আমি তোমার কবিতার প্রিয়তমা হতে চাই,,,সেই
    নীল রঙা শাড়ী পরে,,,,আমি আজও জানতে পারিনি,, চিনতে পারিনি তোমার প্রিয়তমাকে,,,,,আকাশনীল,,,,সাগর নীল,,,অপরাজিতা নীল কোন রঙ আমায় মানাবে অনিমেষ,,,,আমি কি হতে পারবো তোমার কল্পনার প্রিয়তমা সে নীল রঙে,,,,,সে নীল আবরণে নিজেকে সাজিয়ে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ধুয়ে দেবো তোমার বুক,,,,সেখানেই লুকোবো আমার মুখ,,,,শক্ত করে জড়িয়ে বলবে পাগলী একটা,,,,,,,,অনিমেষ,,,, তুমি কেমন আছো,,,,? জানো ঐ একটা শব্দ শোনার জন্য আমি জন্মান্তর অপেক্ষা করেছি
    তুমি জানো না,,,,কতবার বেঁচেছি,,,,কতবার মরেছি,,,,,,,
    আজও কি হল জন্মান্তর ব্যবধান,,,,,,আজ সব কিছু বড় অজানা লাগে,,,অচেনা লাগে,,,,,তবুও আগলে রাখি,,আঁকড়ে রাখি তোমায় আত্মার প্রচন্ড প্রবল টানে,,,,
    সব কিছু চেনা অভ্যেস,,,,পরিচিত সংলাপে ধুলো পড়ছে,,,,,তবু দেহ ছেড়ে তোমার রক্ত,,,,রক্ত স্রোতে
    শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে যাচ্ছি আমি। 

    -তোমার মাধবী লতা।

     

You cannot copy content of this page