নাটক

  • নাটক

    শ্রুতি নাটিকা -সম্বোর্ধনা

    শ্রুতি নাটিকা – সম্বোর্ধনা 

    – অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ

    ঘরের পাশে চেয়ারে বসে পেন খাতা নিয়ে বিষ্টু মাস্টার–

    বিষ্টু স্যার—(মাথায় মুখে হাত দিয়ে) বলি শুনছ, আমার চশমাটা দেখেছ? কোথায় যে রেখেছি? খুঁজে দাও তো গিন্নি। খুব দরকার।
    গিন্নী —— চশমা? ভালো করে খুঁজে দেখো। তোমার কাছেই আছে। কি যে ভুলো মন হয়েছে তোমার?
    বিষ্টুস্যার– আমার কাছে? কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না তো?
    বিষ্টু স্যার—-পকেটে কী শুনি? পাঞ্জাবির পকেটে রেখে আর চারিদিকে চশমা খুঁজছো।
    স্যার — ও তাই তো। খেয়াল করিনি গো গিন্নী। মন দিয়ে ভাবছি তো। কত কথা। কত স্মৃতি। তারপর লেখাটি শেষ করব।
    গিন্নী —বলি কী এত লিখছ? যেদিন থেকে স্কুল থেকে অবসর নিলে, সেদিন থেকে লিখেই যাচ্ছো।
    স্যার– তুমি বুঝবে না গো গিন্নী। এসব দরদের কথা, আবেগের কথা কিচ্ছু বুঝবে না। বড্ড কষ্ট হয় গো। বাড়িতে একা একা থাকতে, খুব মন কেমন করে।
    গিন্নী— তাই বুঝি? বলি কাকে নিয়ে এত ভাবছ? বুড়ো বয়সে আবার প্রেমে পড়লে নাকি?
    বিষ্টু স্যার— কী যে বলো গিন্নী। এসব হেঁয়ালি করার এখন সময় আছে? যখন তখন ফাজলামি ভালো লাগে না।

    গিন্নী — তা,বেশ। আর বলব না।
    এবার বলো তো কী এত লিখছ?
    বিষ্টু স্যার— একটা বক্তৃতা। একটা বক্তব্য। বুঝলে গিন্নী বিদায়ী সম্ভাষণ লিখছি।
    দীর্ঘ ৩০ বছরের স্কুল জীবনের ভালো -মন্দ, সুখ দুঃখ,হাসি কান্না সব লিখছি এই খাতায়।
    গিন্নী— বক্তৃতা?
    স্যার—স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মনে পড়ে যাচ্ছে প্রথম দিনের সব কথা।
    .গিন্নী — — তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বসে বসে যত এসব মনে করবে, শরীর খারাপ হবে। আর এত বড় লেখা কেউ এখন শুনবে বলে মনে হয়?
    স্যার– কেন শুনবে না ? আমাদের জন্যই তো অনুষ্ঠানটা হচ্ছে। কত ভালোবাসে সবাই।
    আর আমার বক্তব্য শুনবে না। তা হয়?

    গিন্নী—- সবার জীবনের কাহিনিই বড়ো করুণ । শুধু কি তুমি একা? দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা সবাই যদি লিখতে বসো, একটা ইতিহাস হয়ে যাবে।
    স্যার– (আপন মনে) জানো গিন্নী, সময়টা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। স্কুলটা নিয়ে কত কিছু ভেবে ছিলাম। দুবছর লকডাউনে কিছুই করতে পারি নি শেষ সময়টা। স্কুলের ঘন্টা ধ্বনি এখনো কানে বাজে। ১১ টা বাজলেই মন ছুটে যায় স্কুলে।
    মেয়ে— —–
    তুমি তো যেতেই পারো স্কুলে। সুজয় কাকু তো বলেছে, একদিন করে স্কুলে যেতে। এখন তো উনিই ইনচার্জ।

    স্যার– তা বলেছে বটে। তবু কোথাও যেন একটা অধিকার হারিয়ে ফেলেছি। দাবী আর করতে পারি না।
    মেয়ে—
    ও বাবা, তুমি এখনো এসব নিয়ে ভাবছ? এই তো সেদিন আমাদের বড়দি অবসর নিলেন। আমরাও প্রণাম করলাম। বড়দিকে জড়িয়ে ধরে কত মন খারাপ করলাম। বড়দি যত কাঁদে,আমরাও তত কেঁদে ফেলি। কী করব বলো। সময় হলে চলে যেতেই হবে। নতুনদের জন্য পদ ছেড়ে দিতে হবে বাবা। তুমি আর মন খারাপ করো না। শরীর খারাপ করবে।
    স্যার— দূর, বোকা। মন খারাপ করবে কেন? আমি বেশ ভালো আছি। শুধু মাঝে মাঝে —
    জানিস তো মা, যেদিন চলে এলাম স্কুল থেকে। ক্লাস ওয়ানের রিতিশা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। আর মুখে বলছে, তুমি যাবে না স্যার। তুমি চলে গেলে কে গল্প শোনাবে? ভুতের গল্প, বাঘের গল্প, আর মজার মজার ছড়া।
    সব ছেলে গুলো গেট আটকে দাঁড়িয়ে ছিল। কী করে ভুলি রে মা? চোখের সামনে ভেসে উঠছে সব।
    মেয়ে— জানি বাবা। সব বুঝতে পারছি। এত কষ্ট পেলে তোমার প্রেসার আবার বেড়ে যাবে। তাড়াতাড়ি লেখা শেষ করে ঘুমাও।

    গিন্নী — অনেক হয়েছে। এবার লেখা বন্ধ করো। বেশি রাত না করে ঘুমাও।
    স্যার— তোমরা যাও তো বাপু। বিরক্ত কর না এখন । আমার হাতে অনেক সময়। লেখাটি শেষ করে তবে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব।
    আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি গিন্নী।
    সামনেই ৫ই সেপ্টেম্বর। শিক্ষক দিবস। ওই দিনই আমাদের বিদায় সম্বোর্ধন।
    মন দিয়ে লিখতে দাও। এখন যাও তো।

    দ্বিতীয় দৃশ্য —-

    অনুষ্ঠান শুরু- হচ্ছে।

    অনুষ্ঠান পরিচালক -/সঞ্চালক
    আজ ৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। সেই উপলক্ষে একটি সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
    উপস্থিত বিদায়ী শিক্ষক শিক্ষিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হচ্ছে।

    স্যার– (বারবার কাগজটা বের করে একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। ভালো করে বলতে হবে।) কখন যে আমাকে ডাকবে? তার আগে আরও একবার পড়ে ফেলি।
    সঞ্চালক——
    প্রথমেই একটা সমবেত উদ্বোধন সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করছি।
    পরবর্তী সংগীত শিল্পী প্রস্তুত থাকুন।
    শিল্পী — রমা চৌধুরী।
    তারপর আছে সমবেত নৃত্য। আপনারা শুনতে থাকুন আমাদের অনুষ্ঠান।
    স্যার—- এখন বাজে ১টা। নিশ্চয় একজনের নাচের পরই আমাকে ডাকা হবে। এত ঘাবড়ে যাচ্ছি কেন? না না আমাকে ঘাবড়ালে চলবে না। আমাকে সব বলতে হবে স্কুলের কথা।মন খারাপের কথা। স—— ব।
    সঞ্চালক– পরবর্তী কর্মসূচি এখুনি জানানো হবে। এখন পাঁচ মিনিটের টিফিন ব্রেক নেব। তারপর আবার অনুষ্ঠান শুরু হবে।

    স্যার– আবার ব্রেক!
    একে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কী যে করে এরা? বুঝি না। আমার যে আর তর সইছে না।

    সঞ্চালক—- আবার শুরু হচ্ছে অনুষ্ঠান। এখন আবৃত্তি করবেন– স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা।
    এছাড়া শিক্ষক – আরোহন বন্দোপাধ্যায়।
    স্যার– আর কত দেরী হবে? বুঝতে পারছি না। বেলা হয়ে যাচ্ছে।
    সঞ্চালক– এবার পরপর ডাকা হচ্ছে বিদায়ী শিক্ষক মহাশয়দের। প্রত্যেকের নাম ঘোষণা করছি। আপনারা প্রস্তুত থাকুন।
    স্যার– এই তো ঘোষণা হয়েছে। এবার আমার পালা। ঠিক বলতে পারব তো বলতে? চোখের পাতা মোটা হয়ে আসছে কেন? এরা তো সবাই আমার চেনা। তবু কেন এত কান্না পাচ্ছে?
    সঞ্চালক– প্রথমে ডেকে নেব মানপত্রের লেখাটি পাঠ করতে শিক্ষিকা নাজিমা খাতুন মহাশয়াকে।
    তারপর আরও একটা সমবেত সংগীত। তারপর চলে আসবেন পরপর।

    স্যার– হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে। বেলা ৩ টে বাজে।
    দেখি কখন ডাকে আমায়?
    সঞ্চালক — দুঃখিত। সময় আর বেশি হাতে নেই। এবার বিদায়ী শিক্ষকদের উপহার ও বক্তব্য শুনবো আমরা। তারপরই অনুষ্ঠান শেষ করব।আপনারা একটু ধৈয্য ধরে বসুন। কেউ চলে যাবেন না। ওনাদের সম্মানিত করতে হবে। আপনাদের উপস্থিতিটা খুব দরকার।
    স্যার– একি সবাই চলে যাচ্ছে কেন? একটু থাকুন সবাই। আমার বক্তব্য আপনারা না শুনেই চলে যাবেন।
    সঞ্চালক– মঞ্চে ডেকে নিচ্ছি বিদায়ী স্যার — মনোতোষ মন্ডল মহাশয়কে।
    স্যারের কানে কানে — একটু ছোট করবেন বক্তৃতা। বুঝতে পারছেন সময় হয়ে যাচ্ছে। পরপর চলে আসুন সবাই।
    পরবর্তী ও শেষ বিদায়ী শিক্ষক মহাশয় বিষ্টুপদ মল্লিক মহাশয়। আসুন স্যার স্টেজে আসুন।
    স্যার– থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলেন। সবে মাত্র পকেট থেকে কাগজটা বের করে পড়তে যাবেন। সঞ্চালক কাছে এলেন।
    সঞ্চালক– স্যার,কিছু মনে করবেন না। বুঝতে পারছেন তো। সময় খুব কম হাতে।
    ৪ টে বেজে গেছে। সবাই উঠে পড়ছে। আর সবার কাহিনি একই। এসব শুনলে সবাই ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। তার চেয়ে মানপত্র আর উপহার তুলে দিই। কী বলেন স্যার?
    স্যার — (অবাক হয়ে) আমি কিছু বলব না? কেউ শুনবে না আমার কথা? আমি যে এত লিখে আনলাম । কেউ শুনবে না?
    বেশ। তাই হোক।
    কি—চ্ছু বলব না।
    সঞ্চালক — দুঃখিত স্যার। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এখন স্যারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মানপত্র সহ উপহার। স্যার খুব ভালো থাকুন। এভাবেই তো সবাইকে চলে যেতে হবে। দুঃখ পাবেন না। চলুন স্যার আপনাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিই।
    স্যার– (মুচকি হেসে) থাক। আমি একাই যেতে পারব। এখনো বুড়ো হয় নি। তোমরা অনুষ্ঠান শেষ করো।
    কাগজের টুকরো টা পকেটে গুজে নিয়ে হল ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
    স্যার — কাগজটা ছিঁড়ে ফেলি। কী আর হবে রেখে? কেউ শুনল না আমার কথা। গিন্নী ঠিকই বলেছিল,কথাটা শুনলেই ভালো হতো।
    ছাত্রীরা—– স্যার স্যার ভালো আছেন? কত দিন পর দেখছি আপনাকে। আপনার কথা শুনবো বলে স্কুল ছুটি হতেই চলে এসেছি।
    আমি ময়না, মনে আছে স্যার। দশবছর আগে আপনার কাছে পড়েছি। এখন হাইস্কুলে পড়ি। আমি আপনার সেই দুষ্টু ছাত্রী ময়না।
    রাখি— আর আমি রাখি। এখন ক্লাস নাইনে পড়ি। চিনতে পারছেন স্যার।
    স্যার– ও তাই তো।
    চোখে তেমন দেখি না তো?
    চোখটা আবছা হয়ে আসছে।তবু তোমাদের ঠিক মনে রেখেছি।
    ময়না— কী করে দেখবেন স্যার? চোখে যে জল ভর্তি। কাঁদবেন না স্যার।
    চলুন স্যার, ওখানে বসি।
    আমরা শুনবো আপনার কথা। কাগজটা ছিঁড়বেন না স্যার।আমরা সব শুনবো। আপনি পড়ুন।
    রাখি —- আমাদের পক্ষ থেকে আপনার প্রিয় বকুল ফুল। আমাদের বাগানে ফুটে ছিল শুধু আপনার জন্য।
    পছন্দ হয়েছে স্যার?

    রাখি— আর আমার আঁকা ছবি “রবীন্দ্রনাথ “আপনার জন্য। সারা রাত ধরে এঁকেছি। ভালো হয়েছে স্যার?
    স্যার– (বুকে জড়িয়ে ধরে) খুব খুব পছন্দ হয়েছে। আজ বড্ড খুশিরে। তোরাই তো আমার সব কিছু। তোরাই আমার শ্রেষ্ঠ উপহার। আয় আমার বুকে আয়।

  • নাটক

    নাটক- “তিন কন্যা”

    তিন কন্যা”
    -রাখী চক্রবর্তী

    (চরিত্র:– অবন্তী চৌধুরি, শুভময় চৌধুরি, দোয়েল,
    টিয়া, ময়না, গৌতম নাগ, পুলিশ অফিসার এস রায়,চার্চের বাগানের মালি মধু,ফাদার ও কিছু লোকজন। একটি বিশেষ চরিত্রে পরমা ডিসুজা)

    প্রথম দৃশ্য
    ***********
    সময় সকাল সাতটা
    (আবহে পাখিদের কলতানে ভরে উঠবে।
    টিয়া, ময়না, দোয়েলের কিচির মিচির শুনে ঘুম ভেঙে যাবে অবন্তীর)

    অবন্তী- (বিছানায় বসে হাই তুলে) এতো ঝগড়া কিসের ওদের। সকাল হতে না হতেই কিচির মিচির শুরু করে দিয়েছে।

    শুভময়- (অবন্তীর গাল টিপে ) মনের কথা বলছে ওরা। ঝগড়া কেন করবে!সবাইকে নিজের মতো কেন ভাবো সোনা?

    অবন্তী- সকাল সকাল মাথা গরম করো না।
    মেয়েরা কি করছে দেখো। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গেছে আমার। ওদের ঘরে গিয়ে দেখি, তিনটের একটাও ঘরে নেই। রবিবার বলে কি হাতির পাঁচ পা দেখেছে সব!

    শুভময়- হাতির পাঁচ পা, না কি সাপের পাঁচ পা?

    অবন্তী-ধুর, মুডটাই খারাপ হয়ে গেল। সাপের কথা আমার সামনে বলবে না, বলেছি তো অনেকবার। উঠি এখন। বাজার যাও ওঠো। কে কি খাবে তার লিস্ট জেনে নিও।

    অবন্তী ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় পাখিদের খাঁচার সামনে আসবে।

    অবন্তী- (পাখিদের খাঁচা ধরে) এতো ভালোবাসি তোদের, তবুও তোরা সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দিস। কিসের শত্রুতা তোদের আমার সাথে?

    টিয়া- মা জল দে। এই মা জল দে
    ময়না- মা তোমাকে ছেড়ে কোনদিন যাব না

    অবন্তী- আচ্ছা, জলের জন্য এতো হাঁকডাক। দাঁড়া দিচ্ছি।
    ময়না- এত্তো ভালবাসি মা
    টিয়া- আই লাভ ইউ…

    অবন্তী- শোনো ওদের কথা, জল আনছি, কিচির মিচির ‌করিস না,
    (অবন্তী জল নিয়ে ‌প্রবেশ করে পাখিদের জল দিয়ে বারান্দা থেকে প্রস্থান করে।)

    দ্বিতীয় দৃশ্য
    **********
    সকাল ন’টা
    (শুভময় স্নান সেরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মঞ্চে প্রবেশ করবে)

    শুভময়- টিয়া, ময়লা, দোয়েল আয় তোরা। কোথায় রে সব। বাজারে যাব। লিস্টি দিবি না তো, আজ তাহলে চারাপোনার ঝোল ভাত খা সব। আমি চললাম।

    (টিয়া, ময়না,দোয়েল ছুটে মঞ্চে প্রবেশ করবে)
    টিয়া ,ময়লা, দোয়েল-(একসঙ্গে বলবে)
    চিকেন খাব আজ। বাজারে যাও তাড়াতাড়ি।

    শুভময়- ও এই ব্যাপার। চিকেন আনতেই হবে তাহলে।

    টিয়া- হ্যাঁ, যাও। ডিম টোস্ট খাব বাবা
    দোয়েল- আমি ঘুগনি খাবো বাবা।
    শুভময়- ময়না, তুমি বলে ফেলো কি খাবে?
    ময়না- যেটা খেতে দেবে তাই খাবো মামা।

    (শুভময় ময়নার গাল টিপে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করবে। টিয়া, ময়না, দোয়েল খেলতে থাকবে। দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে)

    তৃতীয় দৃশ্য
    **********
    বিকেল বেলার দৃশ্য- ময়না, টিয়া, দোয়েল ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখবে। অবন্তী, শুভময় ব্যালকনিতে বসে গল্প করবে।

    শুভময়- বোনের ছবিতে একটা মালাও দিতে পারলাম না। সদ্য মারা গেল। ভাবতেই পারি না, আমার একমাত্র বোন আর নেই। ভাবছি বোনের শ্রাদ্ধ গঙ্গার ঘাটে করে নেব।

    অবন্তী- ভাবাভাবির কিছু নেই। গঙ্গার ঘাটেই করতে হবে দিদিভাইয়ের কাজ। ময়নাকে কিছুতেই জানানো যাবে না যে ওর মা নেই।

    শুভময়- হ্যাঁ, সে তো ঠিক। ময়না তো জানলোই না ওর মা আর নেই। টিয়া, দোয়েলকে পেয়ে আনন্দে আছে। রোজ একবার করে জিজ্ঞাসা করে কিন্তু মা কেমন আছে মামা…

    অবন্তী- সে তো করবেই। কিন্তু কতদিন চেপে রাখবো কথাটা সেটাই ভাবি। টিয়া, দোয়েল ওদেরকে তো বলিনি। ওরাও জানে ওদের পিসি হসপিটালে ভর্তি আছে।

    শুভময়- আর বলবেও না। ওরাও ছোটো কখন মুখ ফসকে বলে দেবে। ঠাকুরের অশেষ দয়া যে তোমার মতো জীবন সঙ্গী পেয়েছি। তা না হলে কী অবস্থা হতো ময়নার ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    অবন্তী- ময়নাকে কোনো না কোনো দিন জানাতে হবে তো। তখন কি হবে আমি সেটাই ভাবি। রোজ রাতে ওর মা’র ছবি নিয়ে ঘুমাতে যায় ময়না-
    খুব ভয় লাগে আমার।

    শুভময়-তু মি সব সময় বলতে মেয়ে ঘরের লক্ষ্মী। তোমার মেয়েই চাই। তাই ভগবান তোমাকে যমজ মেয়ে সন্তান দিল। আবার ময়না’কেও দিলো।

    অবন্তী- ময়না আমার ছোট মেয়ে। তিন কন্যার জননী আমি। ওদের ভালো রাখুক ভগবান। আমি তো ছেলে কোনোদিন চাইনি। কিন্তু ‌এখন ভয় লাগে, ওদের ‌মানুষ করতে পারব তো। একটা ছেলে যদি হতো বোনদের আগলে রাখতো, আমাদের জীবনের কোন ভরসা আছে, আজ আছি, কাল নেই, দিদিভাইয়ের মতো আমারও যদি এমন মৃত্যু হয়, তুমি কাউকে না কাউকে বিয়ে করবে তখন আমার তিন কন্যার কি হবে! জলে ভাসবে যে ওরা…

    শুভময়- পাগল না কি তুমি! আমার ঘরে একটা আস্ত পাগল আছে দেখে যাও সবাই…

    অবন্তী- হেলাফেলার কথা না এটা। ভাবো বসে বসে। আমি মেয়েদের কাছে যাচ্ছি।

    (অবন্তী প্রস্থান করবে, শুভময় ফোন করে কথা বলবে। দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে)

    চতুর্থ দৃশ্য
    ********
    (সময় রাত দুটো- বাড়ির সবাই ঘুমাবে। ময়না ওর মা’র ছবি নিয়ে দোতলার সিঁড়িতে বসে থাকবে।)

    ময়না-(মা’র ছবি কোলে রেখে) দু’দিন হয়ে গেল, এলে না তো মা। তোমার খুব দুঃখ তাই না মা। হসপিটালে তোমাকে বুঝি কেউ ভালোবাসে না!

    পরমা- এই তো এসেছি।

    ময়না- এই তো মা এসেছে। মা…মা

    পরমা- তোকে নিয়ে যাব আমি। আমারও তোকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না।

    ময়না- খুব ভালো হবে মা। তুমি কিছু খাবে?

    পরমা- এই খেলাম সোনা। তোকে সবাই খুব ভালোবাসে, তাই না ময়না?

    ময়না -হ্যাঁ মা, মামা মামাইয়া দিদিরা খুব ভালোবাসে আমাকে। কিন্তু তুমি নেই বলে আমার ভালো লাগে না। রাত্রি বেলা ছাড়া তুমি তো আসো না।

    পরমা- কাউকে বলবি না কিন্তু আমি রাত্রি বেলায় আসি।

    ময়না- না মা কাউকে বলি নি।

    পরমা- এবার ঘরে যা। ঘুমিয়ে পড় সোনা।

    ময়না- ঘুম আসে না মা।

    পরমা- আয় আমার কোলে আয়।

    (হাল্কা আলো জ্বলছে, পরমা ময়নাকে কোলে শুইয়ে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে।)

    পঞ্চম দৃশ্য
    **********
    (তিন দিন পরের ঘটনা দৃশ্যায়িত হবে)

    দোয়েল- জানো মা, ময়না কেমন মনমরা হয়ে থাকে রাত্রি বেলায়। কিন্তু সকাল বিকেল কত হৈ হৈ করে আমাদের সাথে।

    অবন্তী- সে তো হবেই। রাতেই যে ওর মাকে চাই। এটুকু মেয়ে ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    দোয়েল- পিসিমনি কবে বাড়ি ফিরবে মা?

    অবন্তী- ফিরবে খুব শিগগির। যাও ময়না কি করছে দেখো। বোনুকে একা রেখো না। বোনু যেন কোন কিছুতেই কষ্ট না পায় দেখো।

    (দোয়েল প্রস্থান করবে, শুভময় প্রবেশ করবে)

    শুভময়-গালে হাত দিয়ে কি ভাবছো?

    অবন্তী- দিদিভাইয়ের শেষ দেখাটা দেখতে পেলাম না। খুব খারাপ লাগছে।

    শুভময় –সে তো লাগবেই, তুমি যদি শ্মশানে যেতে তাহলে বাচ্চাদের কে দেখতো।

    অবন্তী- দিদিভাইয়ের ঘরটা খুলে দিও।পরিষ্কার করবো।

    শুভময়- বোনের ঘরে ঢোকার কোন দরকার নেই। ময়না শেষে বায়না ধরবে ঐ ঘরে ঢোকার।

    অবন্তী- তা কেন? ময়না বিকেলে খেলতে যায়, তখন করবো। তুমি ও সব নিয়ে ভেবো না।

    শুভময়- আমাদের ছোট্ট ভুলে ময়লা যেন কষ্ট না পায়। এখন ওসব পরিষ্কার টরিষ্কারের কোনো দরকার নেই ।

    (ময়না প্রবেশ করবে)

    ময়না- মামাইয়া আমি তোমার কাছে বসবো?

    অবন্তী- আয় (ময়নাকে আদর করে) কিছু বলবি?

    ময়না- (চুমু খেয়ে) তুমি খুব ভালো

    অবন্তী- ও এই কথা। কি খাবি দুপুরে বললি না তো

    (ময়না ছুটে পালাবে)

    অবন্তী- দেখো ময়নাকে আজ কতো হাসিখুশি দেখাচ্ছে। খুব ভালো লাগলো ওকে দেখে। তিন দিন পর মেয়েটা হাসলো।

    শুভময়- হ্যাঁ ওর যত্নের যেন কোনো ত্রুটি না হয়, সাবধানে রেখো, কিডন্যাপাররা কিন্তু সব জায়গায় হানা‌ দেয়, জানো আমার খুব ভয় হয়, ময়নাকে যদি কেউ তুলে নিয়ে যায়!

    অবন্তী- টিয়া,দোয়েল ময়না সব সময় একসঙ্গে থাকে, এ সব নিয়ে ‌ভেবো না।

    শুভময়- যদির কথা বলছি

    অবন্তী- যদির কথা তুমি বললে ঠিক, আমি বললে পাগল, ঠিক বললাম তো?
    শুভময়- হুম বুঝলাম, ম্যডাম, এবার বাজার যাই তাহলে।
    অবন্তী- যাও
    (শুভময় বাজারের ব্যাগ নিয়ে ‌প্রস্থান করবে)

    ষষ্ঠ দৃশ্য
    **********
    (সময় রাত এগারোটা- শুভময় ও অবন্তী শোওয়ার ঘরে প্রবেশ করবে)

    অবন্তী- তুমি একটু বসো। আমি বিছানাটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

    শুভময়- হ্যাঁ, ঠিক আছে।
    ( স্বগতোক্তি: ময়না আজ এতো খুশি কিসের জন্য! কালও তো মন মরা হয়ে বসেছিল। আজ সব পাল্টে গেল। তিনদিন হলো ওর মা ওর কাছে নেই। না, না আজ নিয়ে চার দিন হল। খটকা লাগছে ভীষণ। ময়নাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবো। না, না ওটা করা ঠিক হবে না। আমি বরঞ্চ আজ রাতে ঘুমাবো না। আর তা না হলে ময়নাকে আজ আমার কাছে শুতে বলবো)

    অবন্তী- (মশারি টাঙিয়ে ) কি গো, কি ভাবনা চিন্তা করছো। শুতে এসো। রাত হয়নি মনে হচ্ছে।

    শুভময়- যাচ্ছি যাচ্ছি। আমি ময়নাকে নিয়ে আসছি। ময়না আজ আমাদের সাথে শোবে

    অবন্তী- আমি কতবার বলেছি। এলো না। দেখ তুমি বলে, যদি আসে

    (শুভময় প্রস্থান করবে)

    (ময়না, টিয়া, দোয়েল বিছানায় শুয়ে থাকবে
    শুভময় প্রবেশ করে ওদের ঘরে)

    শুভময়- ময়না আমার কাছে শুবি সোনা। চল মামাইয়া ডাকছে তোকে।

    ময়না- (চোখ ডলতে ডলতে) আমি এখানে শোব। তুমি যাও মামা। আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছি।

    দোয়েল- গুড নাইট বাবা। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
    (শুভময় প্রস্থান করবে)

    সপ্তম দৃশ্য
    *********
    (রাত এক’টা: ময়না শোওয়ার ঘরে দরজা খুলে দোতলার সিঁড়ির চাতালে এসে বসবে, চারদিকে অন্ধকার)

    ময়না- মা আমি এসেছি(আস্তে আস্তে) তুমি কোথায়?

    পরমা- এই তো আমি।

    ময়না- তুমি সিঁড়ির ওখান দিয়ে আসো কেন মা? তুমি তো হসপিটালে আছো

    পরমা- কে বলেছে আমি হসপিটালে আছি?

    ময়না- মামাইয়া, মামা বলেছে।

    পরমা- আর নয় বেশি দিন। তোকে নিয়ে অনেক দুর চলে যাব। তোকে ছেড়ে থাকতে যে ভালো লাগে না।

    ময়না- তোমার কোলে শোবো মা।

    পরমা- আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দি।

    (ময়না ঘুমিয়ে পড়বে ওর মায়ের কোলে।
    শুভময় সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে সবটা দেখবে)

    শুভময়- দরজা খুললি কিভাবে?

    পরমা- (চমকে উঠে) দাদা তোমার পায়ে পড়ি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ময়নাকে নিয়ে চলে যাব। কোনো দিন তোমার এখানে আসবো না। কেউ জানতে পারবে না আমি বেঁচে আছি।

    শুভময়- ঘরে চল। তোকে আবার তালা দিয়ে রাখবো। চল
    (শুভময় পরমাকে টানতে টানতে ওপরে নিয়ে যাবে।)

    শুভময়- ঘরে তো তালা দেওয়া। কি করে বের হলি? ও পেছনের দরজা দিয়ে। ঢোক ঘরের ভেতরে।

    (পরমাকে ঘরে ধাক্কা দিয়ে ঢোকাবে শুভময়।
    শুভময় পরমার গলা টিপবে)

    পরমা- দাদা লাগছে। ছাড়ো।

    শুভময়- ময়নাকেও শেষ করবো। পাঁচ বছরের জন্মদিনে ময়না থাকবে না পৃথিৱীত, কিছু দিন যেতে দে। ডিসুজাকে পিষে দিলাম কেউ টের পেলো না। তুই মৃত, সেটাও প্রমাণ হয়ে গেছে। তোর বডি ডিসুজার পাশেই কফন দেবো। সবাই তো জেনেছে তোকে দাহ করেছি। কিন্তু না, তুই আমাদের বাড়ির মান সম্মান নষ্ট করেছিস। তোর জন্য মা আত্মহত্যা করেছে। বাবা নিরুদ্দেশ, সব তোর জন্য। তুই সুখে থাকবি এটা আমি দেখতে পারবো না। তাই তোর বর ডিসুজাকে গাড়ি আ্যক্সিডেন্টে মরতে হলো। তোকেও তাই মরতে হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য তোর সহায় ছিল, বেঁচে গেলি। তাই তোকে বাক্সতে করে এনে এই ঘরে রেখে দিয়েছিলাম। আজ আবার তোর ডেড বডি বাক্স করে নিয়ে তোকে পুঁতে দেবো।

    পরমা- গলা ছাড়ো দাদা। মা আত্মহত্যা করেছে তোমার জন্য। তুমি মেয়ে পাচারের লিডার ছিলে, মা সেটা জানতে পেরেছিল। বাবাকে তুমি খুন করে বাবার বডি লোপাট করে দিয়েছো। আমাকেও ছাড়নি। দুবাইয়ে আমাকে বেচতে গেছিলে। ডিসুজা আমাকে উদ্ধার করেছে। বৌদি যেদিন সব জানতে পারবে তোমাকে ঘেন্না করবে, তোমার মুখে থুতু দেবে বৌদি। ঠিক এমনি করে, আমি যেমন দিচ্ছি- থু থু

    শুভময়-তাই! আমাকে থুতু দিচ্ছিস। মর এবার।

    পরমা- দ ম বন্ধ হ য়ে আ স ছে ,গ লা ছা…

    (পরমা লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। শুভময় পরমার মৃতদেহ বাক্সতে রেখে দেবে। দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে)

    অষ্টম দৃশ্য
    ********
    (সকাল ছ’টা- শুভময় বাক্স নিয়ে বের হবে, টিয়া দোলনায় বসে দোল খাবে)

    টিয়া- বাবা কোথায় যাচ্ছ?

    শুভময়- আসছি সোনা।

    টিয়া- আমার জন্য চকলেট এনো কিন্তু

    (শুভময় প্রস্থান করে, সকাল সাতটা- অবন্তী ঘুম থেকে উঠে ঠাকুর নমস্কার করবে। শুভময়কে বিছানায় দেখতে পায় না)

    অবন্তী- শুভময় কোথায় গেল? বাজার তো আজ যাবে না। অফিসে বের হবে তো দশটায়। বাথরুমে বোধহয়। যাই চা করে আনি। রান্নার মাসি আর একটু পর চলে আসবে।

    (অবন্তী সকালের চা নিয়ে বারান্দায় বসবে। ময়না বারান্দায় পুতুল নিয়ে বসে থাকবে।)

    অবন্তী- ময়না, মামাকে ডাক তো চা খাবে।

    ময়না- মামা নেই, বাক্স নিয়ে বেরিয়ে গেল।

    অবন্তী- বাক্স! বাক্স কোথা থেকে এলো!

    ময়না- আমি জানি বাক্সতে কি আছে।

    পরমা- তুই জানিস কি আছে বাক্সতে, বল?

    ময়না- বলবো না, তুমি দেখতে চাইলে দেখাতে পারি।

    ময়না- ও মা এতো কথা শিখলি কখন! এখন দেখা, কি দেখাবি।

    ময়না- মামাইয়া চলো।

    অবন্তী- কোথায় যাব?

    ময়না- লর্ড-এর কাছে। চলো না।ঐ তো সামনেই চার্চ।

    অবন্তী- প্রভুর কাছে যাবি।

    ময়না- হ্যাঁ, চলো মামাইয়া। তুমি খুব ভালো। প্রে দা লর্ড

    অবন্তী- ও মা। কী সুইট সোনা মা। চল
    (অবন্তী ও ময়না প্রস্থান করবে)

    শেষ দৃশ্য
    *********
    (সকাল আটটা:- শুভময় চার্চে বাগানের মালির সঙ্গে কথা বলবে)

    শুভময়- বাক্সটা দিলাম। যেখানে পোঁতার পুঁতে দিবি। দু লাখ আছে। আর দুই কাজের শেষে পাবি। ফাদার যেন টের না পায়।

    মধু- একটাই তো?

    শুভময়- দুটো

    মধু- মানে।কথার খেলাপ করলেন কেন?

    শুভময়- বাচ্চাটা সব জেনে গেল। তাই

    মধু- আর একটু যোগ করে দেবেন।

    শুভময়- তাই দেবো। তিন দিয়ে দেবো।
    (ময়না ও অবন্তী চার্চের বাগানে প্রবেশ করবে)

    ময়না- মামাইয়া ওই বাক্সে আমি আর মা আছি।

    অবন্তী- কি বললি তুই তোর মা মানে! কোথায় গেলি ময়না, ময়না…

    অবন্তী- আমি ফাদারকে ডেকে আনি।
    (ফাদারকে নিয়ে অবন্তী বাগানে আসবে। শুভময় ফাদারকে দেখে পালাতে যাবে, চার্চের লোকজন মধু ও শুভময়কে ধরে ফেলবে)

    শুভময়- অবন্তী তুমি এখানে?

    অবন্তী- ময়না আমাকে নিয়ে এল এখানে।

    শুভময়- ময়না!
    অবন্তী- হ্যাঁ, ময়না। ফাদার বাক্সটা খুলতে বলুন।
    (ফাদারের ইশারায় চার্চের লোকজন বাক্স খুলবে)

    অবন্তী-(চিৎকার করে) এই তো ময়না, এই তো দিদিভাই। কি করে সম্ভব হলো, দিদিভাইয়ের মৃতদেহ তো দাহ করা হয়েছিল, ময়না তো আমার সঙ্গে এল, তবে কি!

    (পুলিশ ভ্যানের হর্ন বাজবে। পুলিশ অফিসার চার্চের বাগানে প্রবেশ করবে)

    পুলিশ অফিসার এস রায়- আমাদের টিম অনেক দিন ধরেই মেয়ে পাচারের লিডারকে খুঁজছে, তবে কাল মধ্য রাতে সিআইডি গৌতম নাগ পুরো‌ ব্যাপারটা সামনে আনেন, চার্চের বাগানের মালি মধু অনেকটাই সহয়তা করেছেন,গতকাল ‌রাত‌ তিনটের সময় শুভময় ‌ওরফে লাল্টু মধুকে ফোন করে। ফোন কল ট্যাপ করা হয়েছিল, তিন মাস ধরে‌ চার্চের ওপর নজর ছিল গৌতম নাগের।
    মধুকে সন্দেহ হয় ওনার, ঘনঘন আসেন‌ শুভময় মধুর সঙ্গে দেখা করতে। শুভময় ও মধুকে এ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে চলুন।

    অবন্তী- আমার ছোট মেয়ে ‌নেই, ভগবান তুমি এতো নিষ্ঠুর!

    ফাদার- আপনি বসুন মা,আমি আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসবো।

    (পুলিশের ভ্যানে শুভময় উঠবে। অবন্তী থুতু ফেলবে শুভময়ের দিকে তাকিয়ে। অবন্তী সব শুনবে কিভাবে পরমা, ডিসুজা ও ময়নাকে খুন করেছে শুভময়)

    অবন্তী- ফাদার আমি বাড়ি যাব আমার ‌মেয়েরা একা আছে বাড়িতে।

    ফাদার- কয়টি কন্যা মা তোমার।
    অবন্তী- তিন কন্যা ফাদার। তিন কন্যার জননী আমি।

    ফাদার- তোমার তিন কন্যার জন্য অনেক আশীর্বাদ রইলো, ওরা অনেক বড় হবে, তোমার মুখ উজ্বল করবে।

    অবন্তী- (স্বগতোক্তি- আমি টিয়া, ময়না, দোয়েলের মা, ওদের কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে। ময়না আমার অন্তরের আত্মা হয়ে আমার কাছে থাকবে।
    দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে।
    অবন্তী বাড়ি ফিরবে)

    টিয়া, দোয়েল ছুটে আসবে
    টিয়া দোয়েল-(মা’কে জড়িয়ে) মা তুমি কোথায় ছিলে, আমাদের ছেড়ে যাবে না তো মা?
    (ময়না বাড়ির মেইন দরজায় দাড়িয়ে থাকবে)
    অবন্তী-(দু’হাত বাড়িয়ে) আমার তিন কন্যার জন্য আমাকে বাঁচতে হবে, শত শত জনম ধরে বাঁচব, আমার প্রাণে তোদের বাস যে।
    (খাঁচা থেকে ‌ময়না, টিয়া, দোয়েল,কিচির মিচির শুরু কবে দেবে)

    ময়না- মা এসেছে খুব মজা
    অবন্তী- এই তো ময়না, ময়না আবার মা বলে ডাক।
    ময়না- মা, মা, মা..
    (অবন্তী মেয়েদের নিয়ে পাখিদের খাঁচার সামনে ‌যাবে)
    অবন্তী-(সবাইকে জড়িয়ে ধরে) আমি আছি তোদের সবার জন্য আমি আছি।
    (দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে
    মঞ্চের পর্দা ধীরে ধীরে পড়বে।)

  • নাটক

    নাটক-“শুধু তোমারি ‌জন্যে”

    “শুধু তোমারি ‌জন্যে”
    -রাখী চক্রবর্তী

     

     

    চরিত্র — ‌ডাক্তার ভোলা নাথ,
    কৃষ্ণ নাথ (ভোলা ডাক্তারের ভাই)
    উমা দেবী (ভোলা ডাক্তার ও‌ কৃষ্ণ’র মা )

    কবিতা একটি বিশেষ চরিত্রে
    কেশব নাগ ( কবিতার বাবা)
    ললিতা নাগ ( কবিতার মা )
    কম্পাউন্ডার মদন

    ডাক্তারের চেম্বারের আদলে। চেম্বারের সামনে একটা ওষুধের দোকান। চেম্বারের দরজার ওপরে বড় একটা সাইনবোর্ডে লেখা,
    “ভোলা নাথ ক্লিনিক “

    (প্রথম দৃশ্য)
    **********

    ভোলা নাথ ডাক্তার চেম্বারে চেয়ারের ওপর বসে দু’ পা তুলে কান খোঁচাচ্ছে দেশলাই এর কাঠি দিয়ে।
    কম্পাউন্ডার মদন বেঞ্চে বসে ঝিমোচ্ছে।

    কেশব নাগ মেয়ে কবিতাকে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলেন।

    কেশব- ডাক্তার বাবু বাড়ি আছেন?
    মদন- (চোখ রগড়ে) এটা বাড়ি মনে হচ্ছে আপনার। বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে “ভোলা নাথ ক্লিনিক” অক্ষর জ্ঞান আছে তো আপনার। তা না হলে ঠিক আছে।

    কেশব-এই ছোকরা, তুমি কে হে! আমাকে অক্ষর জ্ঞান শেখাতে এসেছো। আমি হলাম কেশব নাগ।

    মদন-দুধ গোয়ালে, কলা দোকানে, কি মনে করে এখানে?
    কেশব- মস্করা হচ্ছে আমার সাথে। আমার মেয়ে কবিতাকে দেখাতে এসেছি ডাক্তার বাবুর কাছে।

    মদন- সিমটম বলুন আপনার মেয়ের..
    কেশব-এই হতোছাড়া, ডাক্তার কে? যে স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে কান খোঁচাচ্ছে সে, না তুমি?
    মদন-ডাক্তার বিশ্রাম নিচ্ছেন। হাফ বেলা হল তাই। দশ মিনিট পর রুগী দেখবেন। আমি সব শুনে রাখছি তাই।

    কবিতা-ও বাবা চুলকাচ্ছে তো,
    কেশব-এই তো মা পাঁচ মিনিট আর..
    মদন-অপেক্ষা করতে হয়। যে সে ডাক্তার নয় এ ভোলা নাথ ডাক্তারের ক্লিনিক। বসুন আপনারা।

    (বেঞ্চে বসে কবিতা ও ওর বাবা
    পাঁচ মিনিট পর বিশাল একটা হাই তুলে ভোলা ডাক্তার চেয়ার থেকে পা নামিয়ে ঠিকঠাক করে চেয়ারে বসে)

    ভোলা ডাক্তার-পেশেন্টকে ডাক মদন।
    মদন-পেশেন্ট হাজির হো
    ভোলা ডাক্তার-এই যমের অরুচি এটা আদালত না। ডাক্তারের ক্লিনিক।
    মদন-(মাথা চুলকিয়ে) ধ্যাত, আদালতে পেয়াদার কাজ করতে করতে অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। পেশেন্ট আসুন ভেতরে।

    (মেয়েকে নিয়ে কেশবের ভেতরে প্রবেশ)

    ভোলা ডাক্তার-সমস্যা কি?
    কেশব-ডাক্তার বাবু মেয়ের চুলকানির রোগ হয়েছে।
    ভোলা ডাক্তার-নাম কি তোমার?
    কবিতা-কবিতা নাগ
    ভোলা ডাক্তার-দেখি হাতটা দাও
    কবিতা-(হাত বাড়িয়ে ) হাতে না পায়ে চুলকায় খুব।
    ভোলা ডাক্তার-হুম।চোখটা দেখি। (চোখ পরীক্ষা করার পর) এই মলমটা পায়ে লাগাবে দিনে রাতে দু’ বার। এই মিশ্রণটা এক কাপ গরম জলে দিয়ে দু’ চামচ খেয়ে বাকীটা ফেলে দেবে। আর একটা কথা বর্ষার জল যেন গায়ে না লাগে। তাই থেকে চুলকানি বাড়তে পারে।
    কবিতা-বর্ষায় ভিজবো না তাই বোলে। কতো প্রিয় বর্ষা ঋতু। ইস্কুলের পরীক্ষাতে “প্রিয় ঋতু” রচনা এলেই আমি বর্ষা কালের রচনা লিখতাম। বেশ বৃষ্টির জলে ভিজবো, গান গাইবো।
    ভোলা ডাক্তার-ঐ বৃষ্টির জলে ভিজেই তো চুলকানির সৃষ্টি হয়েছে।
    (স্বগতোক্তি- যত ভিজবে তত আমার ভালো।তোমাকে নিয়ে ভাবতে পারবো, তোমাকে দেখতে পারবো। কয়েক বছরের জন্য নিশ্চিন্ত।)

    কবিতা- ও ডাক্তার বাবু কি ভাবছেন? ভালো হয়ে যাব তো ডাক্তার বাবু, আপনার ওষুধ খেয়ে?
    ভোলা ডাক্তার-রুগী যদি ভালো হয়ে যায়।তবে আমাদের চলবে কিসে। প্রতি সপ্তাহে এসে পুরিয়া নিয়ে যাবে।
    কেশব-ডাক্তার বাবু কতো দেবো?
    ভোলা ডাক্তার-মিশ্রণ, মলম সব নিয়ে একশো টাকা।
    (কেশব নাগ ডাক্তারকে টাকা দিয়ে কবিতাকে নিয়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করেন)

    মদন-দুশো টাকা হলো তো। একশো বললেন কেন? এইভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা গেল।
    ভোলা ডাক্তার- এই যমের অরুচি আমি ব্যবসা করছি। দাঁড়া আজ তোকে তাড়িয়ে ছাড়বো।

    (ভোলা ডাক্তার লাঠি নিয়ে তাড়া করে মদনকে। মদন দৌড়ে পালায়।)

    (দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে।
    মঞ্চের সব আলো নিভে যাবে )

    দ্বিতীয় দৃশ্য
    ************
    (পরের দিনের ঘটনা- কৃষ্ণ ও উমা দেবীর কথোপকথন।)
    (কৃষ্ণ রঙ তুলি নিয়ে আর্ট পেপারে আঁকছে আর নিজের মনে বকবক করছে।)

    কৃষ্ণ- সব শালা বদমাশ। ভালো না কেউ ভালো না।
    উমা দেবি-কতবার বলবো, শালা বলতে নেই।
    কৃষ্ণ-কবিতার ভাই আমার শালা তো। শালা শালা শালা, বদমাশ শালা।

    উমা দেবী-ভুলতে শেখ বাবা। সব ভুলে যা।নতুন করে সব শুরু কর। তোকে আর ছবি আঁকতে হবে না। দাদার সাথে চেম্বারে বস।রুগী দেখ। ডাক্তার তো তুইও। দাদা কতো কষ্ট করে সার্জেন বানিয়েছে তোকে। প্রেম ভালবাসা করে পুরো কেরিয়ারটা নষ্ট করে দিলি। এখন পাগলামি করে একবছর কাটিয়ে দিলি। আর না..

    (ভোলা ডাক্তারের মঞ্চে প্রবেশ)

    ভোলা-(জামার, হাতের বোতাম, টাই খুলতে খুলতে) কি হয়েছে মা? এত বকবক করছো
    কেন?
    উমা দেবী-বকবক কি এমনি করি। তোর ভাইয়ের জন্য করি। দিনরাত শালা শালা বলে মাথা খারাপ করে দেয়। কি করি বলতো ভোলা?
    ভোলা-ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দাও। তবে এ পাগলামি থামবে।
    উমা দেবী- আধ পাগল ছেলেকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে? কোনও মা বাবা চাইবে পাগল ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে। তুই বল?

    ভোলা-কৃষ্ণ বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে মা। অতীত ভুললেই এ রোগ সারে মা। উন্মাদ পাগল তো ভাই না। সব দিকেই তো জ্ঞান আছে। কবিতাকে ভুললেই ও ঠিক হয়ে যাবে। ওর মন থেকে কবিতার স্মৃতি চিরতরে মোছাতে হবে। তা না হলে ওর জীবন থেমে যাবে মা। ওর মতো আর্টিস্ট হয় না মা, ডাক্তার হলো, কত হাসিখুশী ছিল ও। শেষে আধ পাগল হয়ে ঘরের এক কোনে পড়ে আছে।
    উমা দেবী-সবই বুঝি কিন্তু..
    কৃষ্ণ-কবিতা আসবে মা আজ। রান্না করে রেখো ওর জন্য। দেখো, আকাশটা ছাই রঙে ভরে গেছে। বৃষ্টি হলেই ও আসবে। এবার আর ওকে যেতে দেবো না। কবিতা, কবিতা
    তোমার জন্য আমার বেঁচে থাকা
    আমি আছি শুধ তোমারি জন্যে..

    (কৃষ্ণ ‌নিজের মনে বকবক করতে থাকে। মঞ্চে সব আলো নিভে যাবে)

    তৃতীয় দৃশ্য
    ************

    (দুদিন পরের ঘটনা দৃশ্যায়িত হবে)

    ভোলা ডাক্তার খবরের কাগজ পড়ছে ব্যালকনিতে বসে,
    ভোলা-মা এক কাপ চা নিয়ে এসো কথা আছে।
    উমা দেবী-যাই ভোলা (নেপথ্যে )
    (উমা দেবী চায়ের কাপ নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করবে)
    উমা দেবী- চা নে। বল কি বলবি?

    ভোলা-দু’ দিন আগে ক্লিনিকে কবিতা নামের একটি মেয়ে এসেছিল। চুলকানি রোগ নিয়ে।
    আমি আমাদের কবিতার ছায়া দেখতে পেলাম এই কবিতা মেয়েটির মধ্যে। বেশ শিশুসুলভ কথাবার্তা। হাত নাড়তে নাড়তে কথা বলে। খুব ভালো লাগলো মেয়েটিকে।
    তুমি যদি মত দাও কৃষ্ণর জন্য,..

    উমা দেবী-আমি কাউকে ঠকাতে পারবো না।কি পাপ করেছি কে জানে বিয়ের দু’ বছরের মধ্যে তোর বাবাকে হারালাম। কৃষ্ণ তখন ছয় মাসের শিশু। তুই পনেরো বছরের তখন। মনে পড়ে ভোলা তোর, আমি যখন বৌ হয়ে এলাম তুই তখন তোর মা’র ছবি নিয়ে এসে আমার কাছে এসে বললি,”এটা আমার প্রথম মা। তুমি আমার শেষ মা।” আমি তখন তোকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছিলাম।

    ভোলা-হ্যাঁ মা। মনে আছে। সব মনে আছে।তুমি ভাবো মা, যা বললাম।

    উমা দেবী-তোর বিয়ে না দিয়ে আমি কৃষ্ণর বিয়ে কিছুতেই দেবো না।

    ভোলা-আমি বিয়ে করবো না মা। সংসার করলে ওদের দেখবো কি করে। ডাক্তার কাকু, ডাক্তার কাকু বলে গলা ফাটায় ওরা।দেশের সেবা দশের সেবা করে দিন কেটে যাবে আমার। তুমি যতদিন আছো তোমারও তো সেবা করতে হবে। বৌ এলে যদি আমার কাজে বাঁধা দেয়। মা-ছেলেকে আলাদা করে দেয়, তখন কি হবে। আর আমার বয়সের কথাটা ভাবো।

    উমা দেবী-আমার দুই ছেলে, কেউ কি আমায় নাতি নাতনির মুখ দেখাবে না, কৃঞ্চ পাগল ওর কথা ছেড়েই দিলাম, কিন্তু তুই..
    (মা ও ছেলের কথোপোকথনের মধ্যেই
    ঘরের ভেতর থেকে ভাঙচুর এর শব্দ আসে)
    ভোলা- মা ভাই আবার শুরু করলো, ওষুধটা খাইয়ে দাও।

    (উমা দেবী ওষুধের শিশি নিয়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করলেন।
    ভোলা জানলার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
    মঞ্চে আলো নিভে যাবে)

    চতুর্থ দৃশ্য
    **********
    দুদিন পরের ঘটনা-
    (বিদ্যুৎ চমকাবে, ঘন ঘন বাজ্ পড়বে কড়াৎ কড়াৎ। বৃষ্টি পড়বে। মঞ্চের আলো জ্বলবে নিভবে। আবহ সঙ্গীত বাজবে, কৃষ্ণ পেন্টিং করতে করতে কবিতা বলে চিৎকার করে উঠবে)

    উমা দেবী-আবার শুরু হল কৃষ্ণর পাগলামি ।ভোলা আয় একবার।
    (ভোলার মঞ্চে প্রবেশ)

    ভোলা-কৃষ্ণ এমন করে না ভাই। আমি কবিতাকে ফিরিয়ে আনবো। এমন করে না।সোনা ভাই আমার।

    কৃষ্ণ-ঐ তো কবিতা, দাদা তুমি দেখতে পাচ্ছো না। ঐ তো কবিতার পিঠে চাবুকের দাগ। দগদগে ঘা দেখো। রক্ত জমাট হয়ে গেছে। ওর ভাই খুব মেরেছে, কবিতার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। আমিও শেষ করবো নিজেকে।
    (কৃষ্ণ নিজেই নিজেকে মারতে থাকে চাবুক দিয়ে।)

    উমা দেবী-(কৃষ্ণকে ধরে) ছাড় বলছি চাবুক, কবিতা নেই। মারা গেছে, ওর সব যন্ত্রণা ভগবান নিয়ে নিয়েছে। তুই ভালো থাকলে কবিতার আত্মা শান্তি পাবে। তুই চাস না কবিতা ভালো থাকুক-বল!

    (কৃষ্ণ চাবুকটা ফেলে দিয়ে আর্ট পেপারে আবার ছবি আঁকতে বসে। ঘরের মেঝেতে কৃষ্ণের আঁকা সব ছবি ছড়িয়ে পড়ে..ভোলা একটা একটা করে ছবিগুলো তোলে। নেপথ্যে, আবহ সঙ্গীত )

    পঞ্চম দৃশ্য
    ***********
    এক সপ্তাহ পরের ঘটনা মঞ্চে-
    (“ভোলা নাথ ক্লিনিক” এর সেট- ভোলা ডাক্তার চেম্বারে বসে থাকবে। মদন চেয়ার টেবিল মুছবে। কবিতা মঞ্চে প্রবেশ করবে)

    কবিতা-ডাক্তার বাবু আমার মলম ফুরিয়ে গেছে।
    ভোলা ডাক্তার-(কবিতার দিকে তাকিয়ে
    স্বগতোক্তি- চেহারার এতো মিল। কবিতা এখানে না আসলে আমাদের কবিতার আর দেখাই পেতাম না। কৃষ্ণকে যদি দেখাতে পারতাম..)

    কবিতা-ও ডাক্তার বাবু। কিছু তো বলুন।

    ভোলা ডাক্তার-হ্যাঁ, হ্যাঁ বলছি বলছি। বাবা আসেনি আজ?

    কবিতা-না ডাক্তার বাবু, বাবা কাজে গেছে।সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি থাকবো না তাই দুপুরে এলাম।

    ভোলা ডাক্তার-ভালো, ভালো করেছো।কোথায় থাকো? কে কে আছে বাড়িতে?

    কবিতা-সামনের পেট্রল পাম্পের পিছনের বাড়িটা আমাদের। আমি মা,বাবা থাকি।

    ভোলা ডাক্তার-বেশ বেশ।এই নাও মলম।

    কবিতা-(মলম হাতে নিয়ে ) কত দেবো ডাক্তার বাবু?

    ভোলা ডাক্তার-যাও বাড়ি যাও। তোমার থেকে এক পয়সা নিতে পারবো না। যখনই ওষুধের দরকার হবে আসবে এখানে। আমি না থাকলেও মদনকে বলবে ও দিয়ে দেবে।

    কবিতা-আপনি তো শিব মন্দিরে বসেন। বিনা পয়সায় রুগী দেখেন। এখানে কেন পয়সা নেবেন না?

    ভোলা ডাক্তার-সব কিছু কি পয়সা দিয়ে পাওয়া যায়।

    কবিতা- (কিছুক্ষণ ভেবে) চলি ডাক্তার বাবু।

    (মঞ্চ থেকে কবিতার প্রস্থান। ভোলা ডাক্তার মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।
    মঞ্চে সব আলো নিভে যাবে ।)

    ষষ্ঠ দৃশ্য

    ************

    এক মাস পরের ঘটনা মঞ্চে-
    (কেশব নাগ ব্যালকনিতে বসে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে চা খাবেন।
    ভোলা ডাক্তার মঞ্চে প্রবেশ।)

    ভোলা ডাক্তার-কবিতা, বাড়ি আছো।

    কেশব-ডাক্তার বাবু আপনি, আসুন ভেতরে আসুন। বসুন।(চিৎকার করে) কবিতা আয় দেখে যা কে এসেছেন..

    (কবিতা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে মঞ্চে প্রবেশ করে)

    কবিতা-বাবা ডাকছো? (ভোলা ডাক্তারকে দেখে) ডাক্তার বাবু আপনি!

    ভোলা ডাক্তার-কেমন আছো বলো। একমাস হয়ে গেল তোমার দেখা নেই। তাই তোমার সাথে দেখা করতে চলে এলাম।

    কবিতা-আমি ভালো আছি। আপনি বাবার সাথে কথা বলুন আমি চা করে আনছি।

    ভোলা ডাক্তার-আমার ভাইয়ের জন্য কবিতাকে পছন্দ করেছি। আমার ভাই কৃষ্ণ নাথ।ডাক্তার, তবে হোমিওপ্যাথি না।

    কেশব-কি বলছেন ডাক্তার বাবু। এ তো খুব ভালো কথা। ললিতা ললিতা একবার এদিকে এসো।

    (ললিতা চা ও জলখাবারের ট্রে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে)

    কেশব- পরিচয় করিয়ে দি। কবিতার মা।
    আর ইনি ভোলা ডাক্তার। কবিতার ট্রিটমেন্ট করছেন ইনি।

    ললিতা-নমস্কার ডাক্তার বাবু।

    কেশব- ললিতা, ডাক্তার বাবু নিজের ভাইয়ের সঙ্গে কবিতার সম্বন্ধ ঠিক করেছেন। কিছু বলো,

    ললিতা-ও মা। এতো খুব ভালো খবর।কবিতার জন্য পাত্র দেখছিলাম তো আমরা।

    কেশব-যাও যাও, মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে এসো।

    ভোলা ডাক্তার-সে সব পরে হবে। কবিতাকে এখন আমার বাড়ি নিয়ে যাব। যদি অনুমতি দেন। সত্য নারায়ণের পুজো হয়েছে। মা দেখতে চাইল কবিতাকে। আর কবিতা দেখে আসুক নিজের ঘর বাড়ি কেমন। আপনারাও একদিন আসুন।

    ললিতা-আপনি বসুন। আমি কবিতাকে নিয়ে আসছি।

    (ভোলা ডাক্তার ও কেশব নাগ কথাবর্তার মাঝে ললিতা মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে)

    লাল তাঁতের শাড়ি কপালে ছোট্ট একটা টিপ, ভোলা ডাক্তার কবিতাকে দেখেই অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
    কেশব- ডাক্তার বাবু, কবিতা..

    ভোলা ডাক্তার-হ্যাঁ হ্যাঁ চলো। আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি সময় মতো দিয়ে যাব কবিতাকে।

    (মঞ্চ থেকে প্রস্থান ভোলা ডাক্তার ও কবিতার। ললিতা ও কেশব দুজনে মিলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে কথাবর্তা বলতে থাকবে। সানাই এর সুরে মঞ্চ ভরে যাবে।
    আস্তে আস্তে সব আলো নিভে যাবে)

    সপ্তম দৃশ্য
    **************

    সত্য নারায়ণ পুজোর সামগ্রী ফুল ফল সাজানো, প্রদীপ, ধূপ জ্বলবে।
    কৃষ্ণ ঠাকুর ঘরের এককোনে বসে। উমা দেবী ঠাকুরের সামনে বসে চোখ বুজে প্রার্থনারত)

    কৃষ্ণ-(স্বগতোক্তি )আজকের দিনের কথা মনে আছে তোমার। তুমি প্রথম আমাদের বাড়ি এসেছিলে। লাল টিপ লাল রঙের শাড়ি পড়ে। তুমি আমাদের ঘরে এলে ওমনি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টি আর হয় না জানো।আমার দুচোখে যে বরিষ ধারা বহে সর্বক্ষণ।আকাশ পানে চাইতে পারি না।ৎতুমি আসবে বলে সেদিন আসোনি। দেখ আমার হাতের শিরায় এখনও ক্ষত আছে। কবিতা এখুনি চলে যেও না। থাকো আরও কিছুক্ষণ। যেও না কবিতা ।
    (একটা ছায়া মূর্তি আস্তে আস্তে ঠাকুর ঘরের দেওয়ালে মিশে যাবে। সেই মূহুর্তে কবিতা মঞ্চে করবে ভোলা ডাক্তার এর সাথে)

    কৃষ্ণ-কবিতা যেও না (চিৎকার করে ) আজ সত্য নারায়ণের পুজো হবে, প্রসাদ খাবে না?

    কবিতা-হ্যাঁ ,খাবো তো প্রসাদ। নারায়ণের সিন্নি খুব ভালোবাসি খেতে।

    (কৃষ্ণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কবিতার দিকে। লাল শাড়ি লাল টিপ। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। সেই চেনা মিষ্টি কন্ঠস্বর। কবিতা!)

    কবিতা-কবিতা, তোমার কবিতা।চিনতে পারলে না? এবার তুমি উঠে দাঁড়াও। আর কোনও কথা নয়। জেন্টলম্যান হয়ে ঠাকুর ঘরে এসো। পুরোহিত এখুনি আসবে পুজো করতে।
    কৃষ্ণ-(চোখে মুখে খুশির ঝলক) আমি জানতাম তুমি আসবেই।
    (কৃষ্ণ ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে। উমা দেবী কবিতার কথা শুনে প্রার্থনা থামিয়ে চোখ খুলে কবিতাকে দেখে অবাক হয়ে যান)

    উমা দেবী-কে মা তুমি? আমার অন্ধকার ঘরে আলো হয়ে এলে..

    কবিতা-কবিতা
    উমা দেবী-কবিতা! কবিতা সে তো..

    কবিতা-আমি আছি, আমি থাকবো মা।

    ভোলা ডাক্তার-(কবিতার মাথায় হাত রেখে )
    তোমার অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। আমার কথা রেখেছো। তোমাকে আমার প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে মা। এতো শক্তি তোমার মধ্যে আছে মা। কৃষ্ণ তোমার কথা শুনে ওর ঘরে চলে গেল। বেঁচে থাকো মা।

    উমা দেবী-ভোলা ও কি সেই মেয়ে? কবিতার সাথে ওর এতো মিল। নামও কবিতা!

    ভোলা-কৃষ্ণ ভালো হয়ে যাবে এবার। চেম্বারে বসবে রুগী দেখবে। কবিতার জন্য সব সম্ভব হবে মা দেখে নিও মা।
    (উমা দেবী ঠাকুরের চরণে মাথা রাখে।
    দৃশ্যান্তসূচক আবহ সঙ্গীত বাজবে মঞ্চে সব আলো নিভে যাবে।)

    শেষ দৃশ্য
    ************

    কিছুক্ষণ পরের ঘটনা মঞ্চে-
    (সত্য নারায়ণ পুজো শেষ হবে।
    কবিতা উমা দেবীর সাথে গল্প করবে
    কৃষ্ণ মঞ্চে প্রবেশ করবে জেন্টেলম্যান হয়ে)

    উমা দেবী-এ আমি কাকে দেখছি। ভোলা, শিগগির আয় দেখ তোর ভাইকে..

    ভোলা-(নেপথ্যে, যাই মা। ভোলা মঞ্চে প্রবেশ করে)
    ভোলা-(ভাইকে দেখে ) এই তো ডাক্তার কৃষ্ণ নাথ ।(কৃষ্ণ’র পিঠ চাপড়ে) লড়াই করে বেঁচে থাকার নাম জীবন। কবিতা তোর সাথে আছে ভাই।

    কৃষ্ণ- সে তো জানি, কবিতা আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতেই পারে না, অনেক দিন পর কবিতা আমার সামনে এল,পরীক্ষা করছিল আমাকে আমি ওকে ভুলে যাই কিনা।

    ভোলা- কবিতা ভাই ঘোরে আছে, এই ঘোর কেটে গেলে ও ঠিক তোমাকে আপন করে নেবে।

    কবিতা-আপন তো করে নিয়েছে দাদা, দেখুন ওর চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি, আমি না হয় ওর কবিতার ভরসা হয়েই থাকব।

    কৃষ্ণ-(আকাশের দিকে তাকিয়ে) কবিতা দেখো মেঘের ঘনঘটা‌, ছাই রঙে ভরে গেছে আকাশটা, মনে আছে তোমার এই রকম মেঘলা দিনে তুমি আমার ‌বাড়িতে প্রথম এসেছিলে।

    কবিতা- হ্যাঁ, আকাশও তো কথা দিয়েছিল, আমি তোমার সাথে যতবার দেখা করবো ততবারি আকাশ ছাই রঙা মেঘে সেজে উঠবে।
    (কৃষ্ণ কবিতার প্রেমালাপ চলতে থাকবে।)

    উমা দেবী-ভোলা,কতদিন‌ কৃষ্ণ কবিতাকে মেনে নেবে? যদি ও জেনে যায় এই‌ মেয়ে ওর কবিতা ‌না, তখন!

    ভোলা-দেখো মা,ভালো করে দেখো ভাইয়ের হাসি মুখ, এই হাসি কখনওই ভগবান ছিনিয়ে নিতে পারে না‌। সময় দাও মা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
    (কৃষ্ণ কবিতার কাঁধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ‌থাকে,একটা ছায়ামূর্তি মেঘের ভেতরে গিয়ে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়)

    কৃষ্ণ-(কবিতার হাত ধরে) তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো?
    কবিতা- (কৃষ্ণর হাত ধরে) তোমার ঘোর যেদিন কাটবে, আমাকে অবহেলা করা শুরু করবে সেদিন তোমার প্রিয় ছাই রঙা আকাশ আমাকে ভালবেসে নিজের কাছে নিয়ে নেবে,
    কৃষ্ণ-(কবিতাকে জড়িয়ে) আমি আছি শুধু তোমারি জন্যে,

    কবিতা-তোমার কবিতা এক বছর হলো‌ মারা গেছে। আমার নামও কবিতা।
    (কৃষ্ণর সামনে কবিতার আর্তনাদ ভেসে উঠবে “বাঁচাও কৃষ্ণ আমাকে বাঁচাও, আমার ভাই আমাকে মেরে ফেললো,কৃষ্ণ, আমি আছি শুধু ‌তোমারি জন্যে” কিছুক্ষণ পরে কৃষ্ণ চোখ খুলে দেখবে কবিতার কোলে ও শুয়ে আছে।)

    কৃষ্ণ-(চোখ ডলতে ডলতে) মা…মা দাদা,

    (উমা দেবী ও ভোলার মঞ্চে প্রবেশ)
    কৃষ্ণ-কবিতা, মা এসেছিল ও, কবিতা নেই আর..

    উমা দেবী-জানি তো, কবিতা নেই, কবিতা তোর জন্য উপহার পাঠিয়েছে, নিবি না?

    কৃষ্ণ-হ্যাঁ নেবো তো, কি উপহার মা?
    উমা দেবী-(কবিতার হাত কৃষ্ণ’র হাতে দিয়ে) যত্নে রাখিস, ভালোবাসিস।
    (কবিতার হাসিমুখ দেখে কৃষ্ণ হাসবে, মাথা নিচু করে লাজুক স্বরে কৃষ্ণ বলবে, দাদা কাল থেকে চেম্বারে বসবো। উমা দেবী ও ভোলা, কৃষ্ণ ও কবিতার চারহাত এক করে দেবে।)
    ব্যাক গ্রাউন্ডে সানাইয়ের সুর বাজবে
    “যদিদং হৃদয়ং মম,তদস্তু হৃদয়ং তব”

    (মঞ্চে সব আলো জ্বলে উঠবে
    মঞ্চের পর্দা পড়বে ধীরে ধীরে।)
    যবনিকা

  • নাটক

    শ্রুতি নাটক- গাছ লাগাও

    গাছ লাগাও
    -পায়েল সাহু

     

     

    (চরিত্র- ভীষণ গাছ পাগল ব্যানার্জী বাড়ির ছেলে শুভ্র, শুভ্র’র মা, শুভ্র’র বাবা, শুভ্র’র ঠাকুমা)

    মা: শুভ্র.. এই শুভ্র… কি ব্যাপারটা কি হ্যাঁ তোর? আমাকে লুকিয়ে ছাদে উঠে যাওয়া? হ্যাঁআআ.. দাঁড়া দাঁড়া…

    ঠাকুমা: আহ্ বৌমা ছাড়ো তো, সকাল সকাল ছেলের পেছনে না পড়লেই নয়?

    মা: আপনি থামুন মা, বাজারে গেলে সবজি, মাছ না কিনে খানকতক গাছ, গাছের চারা কিনে এনে হাজির করে, আর যত ফরমাশ আমাকে, এই সবজির খোসা ফেলবে না, ডিমের খোসা ফেলবে না, অফিস থেকে ফিরে কারো সঙ্গে কথা নেই, ছাদে উঠে গাছের সেবা করবে.. এসব চলবে না আর..

    বাবা: সত্যি ছাদে পা রাখার জায়গা নেই আর।

    ঠাকুমা: ওওওও তাই বুঝি? আর সেই ছাদের গাছে যখন ফল, ফুল হয় তখন তো পেড়ে আনতে বেশ ভালোলাগে, তখন তো কই লজ্জা করে না?
    মা: এই দেখো তোমার মা সকাল হতে না হতেই পায়ে পা দিয়ে কেমন ঝগড়া শুরু করলো দেখো, আমার ছেলের গাছ আর আমি ফল, ফুল পাড়তে পারবো না?

    বাবা: উফফফ মা তোমরা কি শুরু করলে কি? থামো না…

    শুভ্র: কি হলো ঠাম্মা? এতো রাগারাগি কিসের? মা কি হয়েছে বলো?
    মা: তোর ঠাম্মা বলেছে আমি তোর গাছের ফল ফুল পাড়তে পারবো না।
    ঠাকুমা: না রে শুভ্র, কি মিথ্যে কথা বলছে দেখ!
    বাবা: তা হ্যাঁ রে শুভ্র, জানিস যখন তোর মা রাগ করে কেন আজ আবার এতো গাছ কিনে আনলি?
    শুভ্র: আজ 5th জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বাবা।তাই ভাবলাম কয়েকটা গাছ কিনে নিয়ে যাই।
    মা: এটা আবার কেমন দিবস? কবে থেকে শুরু হলো রে?
    বাবা: হুম আমি জানি কিছুটা, প্রতি বছর 5th জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়, 1974 সালে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়, পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা এবং নতুন পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে রাষ্ট্রসংঘ পালন করে। এই বছর পরিবেশ দিবসের থিম “বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার” এই যে অতিমারী, এই যে সুপার সাইক্লোন, কেন হচ্ছে বলো তো? আসলে ভীষণ ভাবে বৃক্ষচ্ছেদন, প্রকৃতির প্রতি অসম্ভব অবহেলায় আজ এই পরিণতি। তবুও মানুষের হুঁশ নেই..
    শুভ্র: হ্যাঁ বাবা তুমি ঠিকই জানো, তবে এর সূত্রপাত হয়েছিলো 1730 সালে। রাজস্থানের প্রত্যন্ত অঞ্চল খেজরিলি গ্রামে একটি রাজপ্রাসাদ গড়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন মেওয়ারের রাজা অভয় সিং-এর আদেশে শুরু হয় গাছকাটা, সেই সময় বিষ্ণই সম্প্রদায়ের মানুষ তার প্রতিবাদ করেন তিন সন্তানের জননী অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে।তাঁদের উদ্দেশ্যে, যে করেই হোক খেজরি গাছগুলোকে বাঁচাতেই হবে তাঁদের। গাছের সঙ্গে নিজেদের বেঁধে রেখে শুরু হয় প্রতিবাদ। আর এই গাছকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থাতেই রাজার সৈন্যদের হাতে মৃত্যু হয় তাঁদের।

    ঠাকুমা: আহা রে! কি নির্মম পরিণতি…

    শুভ্র: হ্যাঁ ঠাম্মা, তবে এই প্রতিবাদ ওখানেই শেষ হয়ে যায়নি, 1963 সালে চিন ভারত যুদ্ধের পর ভারতের উত্তরাখন্ডে এই আন্দোলন শুরু হয়। উত্তর প্রদেশের করাতকল মালিকদের গাছ কাটার অনুমতি দেয় তৎকালীন উত্তরপ্রদেশে সরকার অথচ জীবনধারণের জন্য 10% বনজ সম্পদ ভোগ করতে দেওয়া হতোনা গ্রামবাসীকে। এদিকে অত্যাধিক গাছ কাটার ফলে কৃষির ফলন কমে যাচ্ছিলো, মাটি ক্ষয়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিলো সমগ্র অঞ্চলটির ওপর।

    মা: তারপর? গ্রামের মানুষদের প্রতিবাদ সফল হয়?

    শুভ্র: করাতকলের সদস্যরা গাছ কাটতে এলে সেখানে রুখে দাঁড়ান গওরা দেবী ও তার সঙ্গী মহিলা মঙ্গল মন্ডল। গাছকে জড়িয়ে ধরে প্রতিবাদে সরব হন জঙ্গলের বাসিন্দারা। গাছের সঙ্গে মানবিক অস্তিত্বকে আটকে রাখার এই লড়াইয়ের নাম চিপকো।
    বহু লড়াইয়ের পর তাঁরা জিতেও যান।

    মা: চোখে জল এসে গেছিলো রে, তবু ভালো মানুষ বাঁচাতে পারলো গাছগুলোকে।

    শুভ্র:কিন্তু সেই জয় সাময়িক মা, বিভিন্ন সময়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলি, চোরাশিকারিরা তো আছেই, অজস্র বাড়ি ঘর, রাস্তা, ব্রীজ তৈরি হচ্ছে আর কাটা পড়ছে অজস্র গাছ। জঙ্গলে পশুপাখিদের থাকার জায়গাতেও আমরা হাত বাড়িয়েছি, ঘন জঙ্গলের গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে রিসর্ট।
    আর গাছের সংখ্যা আজ এতো কমে গেছে যে আমাদের পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে অক্সিজেন।

    ঠাকুমা: সত্যি মানুষ আর কবে যে সচেতন হবে!

    বাবা; হুম আচ্ছা আজ একটা কাজ করলে হয় না!

    শুভ্র: কি কাজ বাবা?

    বাবা: আজ যদি সারা পাড়ার সমস্ত বাড়িতে একটা করে অন্তত গাছ আমরা বিলি করতে পারি, কেমন হয়?
    শুভ্র: খুব ভালো ভেবেছো সত্যি..
    ঠাকুমা: এই শুভ্র, তাড়াতাড়ি বাজারে যা, দেখ দেরি করলে গাছওলা আবার চলে না যায়, শিগগিরই যা, আর যেতে যেতে হিসেব করে নিস কতগুলো গাছ আনবি, কেমন?
    মা: হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি যা..

    শুভ্র: আর আজ আমাদের স্লোগান হবে
    “বিশ্ব জোড়া আজ প্রাণের আমন্ত্রণ
    এসো করি সবাই সবুজের সংরক্ষণ।”

  • নাটক

    নাটক- “বাপ বাপই হয়”

    “বাপ বাপই হয়”
    -রাখী চক্রবর্তী

     

     

    শশীভূষণ– গঙ্গার ‌পারে বসলে মনটা হু হু করে ওঠে। তোমারও হয় নিশিকান্ত?

    নিশিকান্ত- হয় সব হয়, নিরিবিলি জায়গা, পাখীদের..

    শশীভূষণ– রাত হলো কি পাখীগুলো কিচির মিচির করা শুরু করে দিল। বটগাছের কি বিশ্রাম নিতে নেই?

    নিশিকান্ত- না না শশীভূষণ, পাখীগুলো ক্যাঁচর ম্যাচর করে। আর বটগাছই তো ওদের আশ্রয় দিয়েছে। তা না হলে ওরা থাকতো কোথায়।তোমার ঝাঁকড়া চুলের মধ্যে!

    শশীভূষণ– রসিকতা করছো। তবে জানো আগে বেশ লাগত পাখিদের ঝগড়া শুনতে। তারপর যখন গিন্নি এল, তখন থেকে পাখিরাই আমাদের ঝগড়া শুনতো।

    নিশিকান্ত– হা হা, ভালো বলেছো শশীভূষণ।
    এখন পরম শান্তিতে আছো কি বলো?

    শশীভূষণ– শান্তি আর কোথায় ! চিন্তা যে পিছু ছাড়ে না। বলি তুমি কতোটা শান্তিতে আছো নিশিকান্ত?
    নিশিকান্ত– আমি! দিনে চোখের পাতা এক করতে পারি না। ছবি সন্তানসম্ভবা। বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত টেনশন থাকবে। তবে তোমার সাথে দু’দণ্ড কথা বলে যেটুকু শান্তি পাই, তাই নিয়ে দিব্য আছি।কেমন ফুলে ফেঁপে গেছি দেখো।

    শশীভূষণ — ও ও, আমার ঘরটা কেমন ফুলে ফেঁপে উঠেছে ।

    নিশিকান্ত –মানে! ঘর আবার ফুলে ফেঁপে ওঠে নাকি ?

    শশীভূষণ- যত কাচরা সব এখন আমার ঘরে রাখে বৌমা। ট্রাঙ্ক, ব্যাগ ,পুরনো খাতা বই। পরত এর ওপর পরত জুতো। আগে এই ঘর আমার কাছে মন্দির ছিল।

    নিশিকান্ত– ও তাই বলো। আমরাই তো আবর্জনা, তা আমাদের ঘর কি করে মন্দির হবে?

    শশীভূষণ — ঐ ছেলে মেয়েটা গঙ্গার ধারে ঘুরঘুর করছে দেখছো তো। মনে হয় বসার জায়গা ঠিক যুত্সই হচ্ছে না।

    নিশিকান্ত– তাই হবে। গাছের তলায় সিমেন্টর বেঞ্চ তো পাখিদের টয়লেট করার জায়গা। কতো এ্যা লেগে আছে। সাদা হলুদ, কালো।
    আমরা বেশ ভালো বসার জায়গা পেয়েছি।

    শশীভূষণ– ওদের দেখে আমার যৌবনের উন্মাদনা ফিরে এল।

    নিশিকান্ত– মরণ দশা। তোমার ছেলের বয়সী।ভালো করে দেখো।

    শশীভূষণ– এই নিশিকান্ত ছেলেটার চুলের কাটিংটা রজতাভ’র মতো না! হ্যাঁ গো ও আমার ছেলে রজতাভ!

    নিশিকান্ত– দাঁড়াও ভালো করে দেখি। অন্ধকার তো..

    শশীভূষণ– হা হা হা। তোমার আমার আবার অন্ধকার। আমাদের জীবনে কখনও আলো ছিলো?
    নিশিকান্ত– হ্যাঁ ও রজতাভ, চলো আমরা উঠে যাই ওদের বসতে দিই। বকবকম্ করুক ওরা। ঐ দেখো ওরা এখানেই আসছে।

    শশীভূষণ– পুলিশের ভ্যান এখন এখানে কেন?দেখো নিশিকান্ত। আমার রজতাভ’র কোন বিপদ হবে না তো।

    নিশিকান্ত– মেয়েটার সাথে পুলিশ কি কথা বলছে। ওহ আচ্ছা, পুলিশ মেয়েটিকে ধরতে এসেছে। রজতাভ মেয়েটির সাথে আছে। বিপদ হলেও হতে পারে রজতাভ’র। কোথায় গেলে শশীভূষণ? শশীভূষণ…শশীভূষণ

    শশীভূষণ– ছেলেকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে গেছিলাম, পুলিশ চোখে ধাঁধা দেখছে এখন। দেখো, কেমন করে রজতাভকে খুঁজছে..

    নিশিকান্ত –তাই তো। কিন্তু রজতাভ কোথায়?

    শশীভূষণ– ঐ দেখো, গঙ্গার ঘাটে যে নৌকাটা বাঁধা আছে। ওই নৌকাতেই আছে রজতাভ আমার ছেলে।

    নিশিকান্ত — বাপ বাপই হয়। কি বলো। যে ছেলে তোমার গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারলো। সেই ছেলেকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচালে..

    শশীভূষণ –তুমি বা কম কিসে যাও। ছবি’ও তোমার সব সম্পত্তি নিয়ে তোমাকে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছিল। এমন মেয়ের জন্য চিন্তাতে তোমার দুপুরে ঘুম আসে না। আসলে বাপ বাপই হয়।
    চলো নিশিকান্ত তাল গাছে চড়ে বসি, তা‌ না হলে থাকার জায়গা পাবো না, আজ সকালে চারটে বাবার আমাদের মতো ভয়ানক মৃত্যু হয়েছে।

    নিশিকান্ত– ওই বাপরাও কি আমাদের মতো ছেলেমেয়েদের জন্য ভাববে?
    শশীভূষণ– হ্যাঁ, হ্যাঁ‌ বাপ বাপই হয়।

  • নাটক

    নাটক- শান্তির বার্তা

    শান্তির বার্তা
    – রাখী চক্রবর্তী

     

     

    চরিত্রায়ণে– যোগীরাজ,
    ডিমপি ও তার মা বাবা এবং
    আম্রপালী

    আবহ সংগীত

    আম্রপালী: সকাল থেকে হরিদ্বারের পথে পথে ঘুরছি “প্রেম নগর” আশ্রম তো চোখে পড়লো না, নতুন বাবু তো বলেছিলেন এই আশ্রমে থাকার ব্যাবস্থা আছে, আর একটু এগিয়ে যাই, তেষ্টাতে গলা ফেটে যাচ্ছে..যে ভাবে বেরিয়ে এসেছি ওদের কবল থেকে, এখনও ভাবলে গায়ে কাটা দিচ্ছে। ঐ তো, বড় বড় অক্ষরে লেখা “প্রেম নগর আশ্রম”।
    যাই ভেতরে যাই, বাহ্ মন জুড়িয়ে গেল। যোগীবাবার এত মধুর কণ্ঠ স্বর

    যোগীরাজ: হরি ওমঃ হরি ওমঃ গোবিন্দা, শান্তি, শান্তি ,শান্তি
    শান্তি পাবে সবখানে
    মনটা যদি পবিত্র রাখো
    ভক্তি শ্রদ্ধা যদি করো গুরুজনে
    লোভ, হিংসা, লালসা
    বাদ দিয়ে স্মরণ করো পরমেশ্বরকে
    তবেই শান্তি পাবে।

    আম্রপালী: বাবা আমার মন অশান্ত থাকে সবসময়। পারিনা অতীতকে ভুলতে। তোমার চরণে ঠাঁই দাও বাবা।

    যোগীরাজ: আমার না, ভগবানের চরণে ঠাঁই নে। সব ব্যথা ভুলে যাবি। ঐ যে গঙ্গার ঘাট দেখছিস। কতো মানুষ দেখতে পারছিস,
    ওরা শান্তির খোঁজে এসেছে এখানে, গঙ্গায় ডুব দিয়ে দেহ মন শুদ্ধ করছে, যা একবার যা.. গঙ্গায় ডুব দিয়ে আয়। দেখ, মনটা কি বলে তোর, যা যা।

    আম্রপালী: গঙ্গায় ডুব দিলেই কি মনে শান্তি ফিরে আসবে বাবা। ওরা সবাই শান্তি পাবে কি? যারা এখন গঙ্গায় ডুব দিচ্ছে।

    যোগীরাজ: আমার আশ্রমে যারা প্রথম আসে তাদের সবাইকে গঙ্গায় ডুব দিয়ে আসতে বলি, শুধু তুই না মা।

    আম্রপালী: বাবা তোমার আশ্রয়ে যারা আসে তারা সবাই নাকি শান্তি পায়। তবে আমি কেন কষ্ট পাই। নাচে গানে প্রতিটা সন্ধ্যা, রাত আমি মাতিয়ে রাখি ওদের।আম্রপালীর কোঠায় যখন খদ্দেররা টাকার বৃষ্টি ওড়ায় আমার মন তখন চঞ্চল হয়ে ওঠে। টাকার নেশায় তো আমি নাচনেবালী হইনি। আমি তো লেখা পড়া শিখে সমাজে মাথা উঁচু করে মা বাপিকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছি। তোমার ভগবান সেটাও মঞ্জুর করলো না বাবা।

    যোগীরাজ: অনেক কিছু হারিয়েছিস তাই না মা..

    আম্রপালী: বাপিকে হারিয়েছি, স্বপ্নগুলো হারিয়েছি। বাপির সাথে সাথে সুখ শান্তিকেও হারিয়েছি। অর্থ অনেক উপার্জন করলাম।আলমারি ভর্তি টাকা গয়না, কিন্তু মনটা খালি আছে বাবা। আজ আমি অর্থ-ঐশ্বর্য সব ছেড়ে তোমার আশ্রয়ে এসেছি। নতুন জীবন শুরু করবো বাবা।

    যোগীরাজ: তবে যা গঙ্গায় ডুব দিয়ে আয়।

    আম্রপালী: না, না বাবা কিছুতেই আমি গঙ্গায় ডুব দিতে পারবো না। দম বন্ধ হয়ে আসবে আমার। সেবার বাপির সাথে গঙ্গায় স্নান করতে গেছিলাম। বাপি আর ফেরেনি আমার সাথে। আমি বাপির হাত ধরে এক ডুব দিলাম, দুই ডুব দিলাম তারপর তিন ডুব দেওয়ার সময় বাপি আমার হাত ছেড়ে দিল দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। জল থেকে মাথা তুলে দেখি বাপি নেই। কতো খুঁজলাম.. কোথাও পেলাম না বাপিকে! তারপর পনেরো বছর কেটে গেল। খুঁজে চলেছি আজও বাপিকে।

    যোগীরাজ: তোর মার কথা কিছু বললি না তো?

    আম্রপালী: আমার মার জীবন যাত্রা অন্য রকম ছিল। পার্টি করে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতো মা। বাপি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত। ঘুমের ভান করে আমি চোখ বুঝে বিছানায় শুয়ে থাকতাম। মা নেশা করে খুব গালিগালাজ করতো বাপিকে। সারা রাত বাপি সোফায় বসে থাকত। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। ভোর বেলায় চোখ খুলে দেখি বাপি সোফায় ঘুমিয়ে আছে। টাকাপয়সা সম্পত্তি বাড়ি গাড়ি সব ছিল আমাদের। শুধু শান্তি ছিল না।
    একদিন মা বাপিকে বললো, ডিমপিকে নিয়ে গঙ্গায় স্নান করে এসো তারপর কালীঘাটের মন্দিরে যাবো আমরা সবাই।
    বাপি বললো তুমিও চলো। একসঙ্গে স্নান করবো গঙ্গায়।
    মা বললো, আমার খুব ভয় লাগে গঙ্গায় স্নান করতে। তোমরা যাও।
    আমার তখন চোদ্দ বছর বয়স। খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন আমার আর বাপির।
    সকাল দশটার সময় গঙ্গার ঘাটে গেলাম আমি আর বাপি। খুব বেশি লোকজন ছিল না গঙ্গার ঘাটে। বাপি আমার হাত শক্ত করে ধরে গঙ্গার জলে নামালো। আমি সেদিন প্রথম গঙ্গার জলে নামলাম। খুব ভয় করছিল আবার আনন্দও হচ্ছিল, মা ভালো হয়ে গেছে এই ভেবে। কতো স্বপ্ন দেখছিলাম সেই মুহূর্তে। আমি, বাপি আর মার হাত ধরে ঘুরছি, আনন্দ করছি। কত্তো ভালোলাগা আমার চারপাশে। আমি দু’চোখ ভরে দেখছি। জল উচলাচ্ছি দু’হাতে। এমন সময় বাপি বললো, চল মা এবার ডুবকি লাগাই। আমি বললাম, না বাপি আমার খুব ভয় করছে। বাপি বললো, আরে মা আমি আছি তো। ভয় কি মা..তখন মনে হল তাই তো বাপি আছে ভয় কিসের।
    প্রথম ডুব, দ্বিতীয় ডুব দিলাম তারপর ডুব দিতেই বাপি আমার হাত ছেড়ে দিল। দম বন্ধ হয়ে গেছিল আমার। বাপি বাপি করে কত্তো ডাকলাম। বাপি ফিরলো না।
    অনেক খোঁজ চললো গঙ্গার জলে। বাপির দেহ পুলিশ পেল না। মা বললো বাপি নাকি গঙ্গার জলে তলিয়ে গেছে। আমি একা হয়ে গেলাম, খুব একা!
    এই ঘটনার এক মাসের মধ্যে মা আরো পাল্টে গেল। নানান রকম লোকজন জমায়েত হতে লাগল আমাদের বাড়িতে।তিন মাস এভাবেই চললো। তারপর এক রাতে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম অজানা অচেনা বিছানায় শুয়ে আছি এক পুরুষের সাথে। আমি অবাক হয়ে গেলাম, কি করে সম্ভব হল এটা! আমি তো মার কাছে শুয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারলাম মা নাকি বিক্রি করে দিয়েছে আমাকে। যেই বাড়িতে ছিলাম ওরাই বলছিলো। ডিমপি থেকে আম্রপালী হলাম। পড়ুয়া থেকে নাচনেবালী হলাম। মা থাকতে অনাথ হলাম।টাকা পয়সা সম্পত্তি হল তবে শান্তি পেলাম না। অনেক কষ্টে আম্রপালী কোঠা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আর ফিরবো না ওখানে।তোমার আশ্রয়ে থাকবো। থাকতে দেবে তো বাবা?

    যোগীরাজ: আমি আজ খুব খুশি মা তোকে পেয়ে..চল মা আমার সাথে আশ্রমটা ঘুরে দেখবি।

    আম্রপালী: বাবা ঐ মহিলা কে? মাটির পুতুল গড়ছে আর ভাঙছে।

    যোগীরাজ: দেখতো মা ভালো করে। চিনতে পারছিস কি?

    আম্রপালী: খুব চেনা চেনা লাগছে। মাথা ভর্তি লাল চুল। কিন্তু মুখটা লালচে হয়ে গেছে। চোখ দু’টো তো খুব চেনা। ঠিক আমার মায়ের মতো। টানা টানা চোখ। না..না মা কি করে হবে। মা তো টাকার পাহাড়ে বসে আছে। সে কেন এই আশ্রমে আসবে!

    যোগীরাজ: ঝড় বৃষ্টির একরাতে আমার শিষ্যরা ওনাকে নিয়ে আসে, রাস্তায় বসে কাতরা ছিলেন উনি, আমি দেখেই চিনতে পেরেছিলাম তোর মাকে।

    আম্রপালী: আমার মা! তুমি কে বাবা?

    যোগীরাজ: জানিস মা, আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ের খোঁজ পেতে আমি এই আশ্রমে আগত সব মায়েদের মেয়েদের বলি গঙ্গায় ডুব দিয়ে এসো আগে।
    আমার মেয়ে হলে ঠিক ভয় পাবে জলে নামতে। আজ আমি পরম শান্তি পেলাম ডিমপি মা আমার..

    আম্রপালী: বাপি,তুমি আমার বাপি! কিন্তু তোমার একি অবস্থা হয়েছে! কি হয়েছিল বাপি সেদিন?

    যোগীরাজ: তিনবার ডুব দিয়ে যখন উঠতে যাব ঠিক তখনি তোর মার পাঠানো ছেলেটা আমার গলা টিপে ডুব সাঁতার দিয়ে আমাকে নিয়ে গেল। তারপর যখন আমার জ্ঞান ফিরলো দেখি এক পরিত্যক্ত গঙ্গার ঘাটে আমি পড়ে আছি। মাটিতে সারা শরীর ভর্তি।সারা রাত ঐ ভাবেই পড়ে ছিলাম ।ভোর বেলায় এক সন্ন্যাসী আমাকে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ওনার লোকেরা আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। দৃষ্টি শক্তি আমার লোপ পেয়েছিল। চোখের ডাক্তার বললেন বাম চোখ ক্ষতি হয়েছে। বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে আমার। কালো চশমা পড়ে থাকি দিনের বেলায়। চশমা খুললাম। দেখতো মা চিনতে পারিস কিনা?

    আম্রপালী: হ্যাঁ, তুমি আমার বাপি। এই তো আমার বাপি, কিন্তু ওই মহিলা কি আমার মা? মাকে কি ওরা ঠকিয়ে ছিল, মার সব কিছু নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে পথে বের করে দিয়ে ছিল ওরা?

    যোগীরাজ: সে সব জানি না মা, তবে দশ বছর ধরে তোর মা এখানে আছে। আমাকে চিনতে পারে না। বোধ শক্তি লোপ পেয়েছে।কুকর্ম ফলের ফল ভোগ করছে তোর মা।আমি তোর জন্য উতলা হয়ে ছিলাম মা। কত চেষ্টা করেছি আমাদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তোর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য।কিন্তু পাই নি মা তোর কোনও খবর। কত্তো বড় হয়ে গেছিস মা। আমিও তোকে চিনতে পারিনি।

    আম্রপালী: বাপি আজ আমি খুব খুশি, তোমাকে পেলাম, শান্তি পেল আমার মন।

    যোগীরাজ: আমি আর তুই আজ থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে হরিদ্বারের পথে পথে ঘুরবো, মানুষের মনে শান্তির বার্তা পৌঁছাবো।

    আম্রপালী: মাকে সুস্থ করতে হবে বাপি, মার স্মৃতি শক্তি ফেরাতে হবে।

    যোগীরাজ: হরি ওম, হরি ওম, গোবিন্দা,
    শান্তি, শান্তি, শান্তি

  • নাটক

    নাটক- অভিমান

    অভিমান
    – রাখী চক্রবর্তী

     

     

    চরিত্র-মনিকা ও ওর বাবা-মা
    রাজ ও রাজের মা

    প্রথম দৃশ্য

    (মঞ্চের পর্দা উঠল। মঞ্চের ওপর লাল আলো পড়েছে। ঘড়িতে রাত এগারোটা,
    মনিকা বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে)

    মা -চুপিচুপি কাঁদতে নেই রে।আমাকে বল? কোথায় কষ্ট হচ্ছে মা বল। আমাকে বল। আমি যে তোর মা..

    (মনিকা উঠে বসলো)

    মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবলো, মা কোথা থেকে এল? আমি তো মাকে না বলে চিরকালের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।অসহ্য লাগছিল মাকে। দিনের পর দিন একই নাটক,পাগলামি, কতদিন সহ্য করবো! আফটার অল আমিও একজন রক্ত মাংসের মানুষ। শখ আহ্লাদ সব আছে আমার।
    মৃত ছেলেকে নিয়ে তার এত ভাবনা, জীবিত মেয়ের প্রতি তার কোনও দায় নেই। তাই আমিও ভাববো না তার কথা। সেই ছোট্ট থেকে হাসির পাত্রী হয়ে বেঁচে আছি, আর না। স্কুলে যেতাম বন্ধুরা বলতো তোর মা একটুও তোকে ভালবাসে না। শুধু বিতান বিতান করে। তোর দাদা মরেও তোকে ভালোবাসা পেতে দেবে না। কপাল দেখ তোর দাদার। ছবিও কত আদর পায়, আর তুই, মাথা নিচু করে ওদের সব কথা শুনতাম, ছোট তো আমিও ছিলাম, তারপর সকাল সন্ধ্যায় যখন তখন রাস্তায় বেরিয়ে পড়তো মা,ছোট ছোট ছেলেগুলো ইট ছুঁড়ে মারতো মাকে, আমার বাচ্চা মন কি করে এত কিছু সহ্য করতো তা আমিই জানি, তাই মনটা আমার গুমরে থাকত সব সময়। কলেজে পড়ার সময়-ও মা ওই একই কাজ করতো।
    দাদার টিফিন, ব্যাগ সব নিয়ে আমার কলেজে হাজির হয়ে যেত। নতুন নতুন বন্ধু- কতজনকে বলবো আমার মা পাগল, মানসিক ভারসাম্য হীন, বিতান ছাড়া কিছু জানে না সে, আমি মেয়ে হয়েও কেউ না মা’র, তোরা কিছু মনে করিস না। অনেক ডাক্তারকে দেখিয়েছে বাবা। সব ডাক্তারদের এক মত পুত্র সন্তান জন্ম দিলেই মার পাগলামি সেরে যাবে। কেন ডাক্তাররা বললো না, মেয়েকেই ছেলে ভাবুন মনিকাই আপনার ছেলের মতো কাজ করবে। বৃদ্ধ বয়সে ওই দেখবে আপনাকে। না, এসব ফালতু কথা ওনাদের কাছে। তাই আমি গত পরশু দিন বাবা মা’কে কিছু না বলেই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। মুম্বাইতে পেয়িং গেস্ট হয়ে আছি। চাকরি পেয়েছি ভালো কোম্পানিতে। কোম্পানির মালিক আমার থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। বাঁচবো.. প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেবো। কোনো দুঃখকে কাছে ঘেঁষতে দেব না। আমি একা–একাই বাঁচবো।

    বিছানা থেকে নেমে টিউব লাইটটা জ্বালালো মনিকা। এক গ্লাস জল খেল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখছে মনিকা।
    (স্বগোতক্তি)
    হ্যাঁ, কপালে মা হাত দিয়েছে। গালটাও ধরলো। চোখের কোনে জলটা এখনও আছে। কিন্তু আমি কাদঁছিলাম কেন! আমি তো স্ব-ইচ্ছায় এই ডিসিশনটা নিয়েছি। আর মা তো আমার জন্য কোনদিন চোখের জল ফেলেনি। আদরও করেনি, ক্লাস এইটে পড়ার সময় একদিন আমি রিক্সা থেকে পড়ে গেছিলাম। পাড়ার ছেলেরা আমাকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে এল। মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো, বিতানের খুব লেগেছে না। আহারে, ছেলে আমার কত কষ্ট পেয়েছে বলেই দাদার ছবিতে হাত বুলাতে লাগলো।
    আমি চিত্কার করে কেঁদে বললাম, মা আমার লেগেছে আমার। একটু আদর করো মা আমাকে। মা আমার কোনও কথা শোনেনি সেদিন। আজ এত বছর পর, সব ফালতু-স্বপ্ন, ইমোশন।
    মনিকা বিছানায় শুতে চলে গেল।

    (দ্বিতীয় দৃশ্য )

    মনিকা সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা
    করে শপিং করতে যাবে এমন সময় বস্ রাজ রায় এসে হাজির।
    হুকুম দিলেন বস্ ওনার সাথে যেতে হবে।
    রাজ – চলুন একবার আমার সাথে বেরোতে হবে।
    {স্বগোতক্তি- অগত্যা কিছু করার নেই। চাকরিটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে তো।}

    মনিকা সেজেগুজে বস্এর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল। রেস্তারাঁয় খাওয়া হল। শপিংও করলো টুকটাক। এবার অনুরোধ করলেন,

    রাজ- কাছেই আমার বাড়ি একটু ঘুরে আসবেন চলুন।
    মনিকা আমতা আমতা করেও চললো বস্ এর বাড়িতে। রাজ রায় মানুষটা কি চায়। ভাবতে ভাবতে রাজ রায়ের বাড়িতে পৌছে গেল মনিকা।

    দরজা বরাবর বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে বছর পঞ্চাশের এক মহিলা পরিচয় করিয়ে বললেন,
    রাজ- ইনি আমার মা।
    (বস্ এর মার দিকে তাকিয়ে)
    মণিকা- স্যার আপনি যে বলছিলেন আপনার বাবা নেই‌। তাহলে শাঁখা সিঁদুর.. আপনার মা…

    রাজ -আমার বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়, আমি তখন দশ বছরের। বাবার ডেড বডি দেখে মা অজ্ঞান হয়ে যায়। চারদিন পর জ্ঞান ফিরল মা’র। কিন্তু মা তখন থেকে জানে বাবা বেঁচে আছে। বাবার মঙ্গল কামনায় রোজ সিঁদুর পড়ে মা। মার মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই বলে আমি হাল ছাড়িনি। ভালবাসার পরশ দিয়ে মাকে আগলে রেখেছি। সবাই বলে আমার মা পাগল তবে এখনও আশা রাখি মা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। মায়ের আদর পেলাম না। সেই যে দশ বছর বয়সে যা পেয়েছি তাই নিয়ে আজও হাসিমুখে মার যত্ন করি। একদিন মা ঠিক আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে, “আয় বাবা খেয়ে নে”।
    (মনিকার দু’চোখ জলে ভরে গেল। রাজের প্রতিটা কথা তীরের মতো বিধছে ওর বুকে,
    অভিমান করে মার কাছ থেকে দুরে দুরে থেকে গেছি। একবারও ভালবেসে মাকে জড়িয়ে ধরিনি। কেন কেন!
    মনিকা মাথা নিচু করে ভাবলো মাকে বঞ্চিত করেছে ও। একটু ভালবাসার হাত যদি মা’র মাথায় বুলিয়ে দিত তাহলে মাও নিশ্চয়ই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসত। মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা পাগলামি সব তো ভালবাসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে হয়, এই ছোট কথা বুঝতে আমার এতো দেরি হলো,
    মনিকা বিড়বিড় করে বললো, এখনও সময় আছে যা ছুটে যা ।)
    মণিকা- স্যার আজ আমি যাই। অন্য একদিন আসবো। আন্টিকে প্রণাম জানাই। দেখবেন আন্টি ঠিক ভালো হয়ে যাবে।

    রাজ- মিস মনিকা কালই জয়েনিং ডেট। মনে আছে তো।
    মনিকা- স্যরি স্যার, আজকের ফ্লাইটে কলকাতায় যেতে হবে আমাকে।
    রাজ -এনি প্রবলেম?

    মণিকা- স্যার,আমার মাকে সারিয়ে তুলতে হবে। বাই স্যার..টেক কেয়ার।

    তৃতীয় দৃশ্য

    (মঞ্চ আলোয় আলোকিত)

    {রাজ রায় ওর মাকে জড়িয়ে ধরে}
    রাজ- ব্যাস..এইটুকুইতেই শান্তি তাই না মা?
    মা দেখো মিস মনিকার মা এবার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
    রাজের মা- হ্যাঁ রে, মনিকা ভেতর থেকে একা রে। ভগবান ওর সহায় হোক।
    মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের খুব কষ্ট রে।

    রাজ- হ্যাঁ মা,মনিকার সমস্ত ঘটনা শুনলাম কোলকাতার দীপকের মুখে, মনে আছে তো দীপককে তোমার?

    রাজের মা- হ্যাঁ রে, মনে নেই আবার, তোর কলকাতার ব্যবসা পত্র তো ঐ দেখে।
    রাজ- তারপরই আমাদের নাটক জমে ক্ষীর হয়ে গেল মা হা হা হা..
    রাজের মা -আমার সোনা ছেলে,উমমমা..

    চতুর্থ দৃশ্য

    {মনিকা বাড়ি ফিরে দেখল ওর মা বিতানের ছবিতে ভাত খাওয়াচ্ছে। আর ওর বাবা মাথায় হাত দিয়ে বারান্দায় বসে আছে।
    মনিকা বাবার দিকে এগিয়ে এসে হাত ধরে)

    মণিকা- বড় ভুল করেছি বাবা, আর না.. বলেই মনিকা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ওমা আমাকে খাইয়ে দাও। যেমন করে দাদাকে খাইয়ে দিচ্ছ।
    মণিকার মা -তোকে খাইয়ে দেব? কিন্তু ওর যে এখনও খেতে অনেক সময় লাগবে,
    মণিকা -হ্যাঁ মা, দুই ছেলে মেয়েকে একসাথে খাওয়ায় আজ, কতদিন খাইনি তোমার হাতে ভাত মাখা।
    মণিকার মা -চোখে জল কেন তোর!
    মণিকা – তুমি তো আমাকে ভালবাসো না..
    মণিকার মা -পাগল মেয়ে দাদা যে কতদিন না খেয়ে আছে সেটা ভাব।

    {স্বগোতক্তি: মণিকা মা’র করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিজ্ঞা করলো, তোমাকে কেউ আর পাগলি বলে ক্ষেপাবে না মা। আমি তোমাকে সারিয়ে তুলবো। মনিকা ওর ডান হাত মা’র হাতে দিয়ে বললো}
    মণিকা- এটা বিতান আর বাম হাত দিয়ে বললো, এটা মনি। তোমার দুই সন্তান ভালবাসা পাবে আজ থেকে।

    শেষ দৃশ্য

    {মণিকা গান শুরু করলো, মাকে জড়িয়ে}

    “তোমার সুখ যে আমার সুখ মা
    বুঝিনি তো আগে
    দুরে গিয়ে পেলাম ফিরে
    আমার সোনা মাকে
    তোমার এক চোখেতে দাদার বাস
    অন্য চেখে আমি
    তোমার নিশ্বাসে আমি বাঁচি
    মাগো তোমায় পেয়ে ধন্য আমি”।

    (এক এক করে সব আলো জ্বলে উঠলো মঞ্চে)

    মণিকার এক কাঁধে ওর বাবার মাথা আর অন্য কাঁধে ওর মার মাথা, নতুন জীবন ফিরে পেল মণিকার মা বাবা এবং মণিকা নিজে।

  • নাটক

    নাটক-“বাটি চচ্চড়ি”

    “বাটি চচ্চড়ি”
    – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়

     

     

    চরিত্র লিপি:
    * গোবিন্দ নস্কর
    * অলোক
    * শ্রাবনী

    [ একটি সাধারন ঘর। আসবাব আরও সাধারণ। কটি চেয়ার, একটি টেবিল, একটি চৌকি, পাশে আর একটি টেবিলে একটি স্টোভ, কিছু বাসন ও কটি কৌটো। আলো জ্বলে, নেপথ‍্যে শোনা যায়] নেপথ‍্যে—ঘরটি শ্রীযুক্ত গোবিন্দ নস্করের। ব‍্যাক্তিটি আসপাশের সাত দশটি গ্রামে কৃপণ হিসাবে যথেষ্ঠ সুনাম অর্জন করেছেন। আজীবন অকৃতদার থেকে অর্থ নামক দেবীকে ব্যয় না করে কেবলমাত্র সঞ্চয় করার ব্রতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। পাছে কেউ তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে তাঁর অন্ন ধ্বংস করে, সেই ভয়ে তিনি কোনো আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। বন্ধু বান্ধব বাড়িতে এলে চা খাওয়ানোর রেওয়াজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন‍্য বন্ধুত্বের পাপচক্র থেকে নিজেকে শত হস্ত দূরে রাখেন। এ হেন ব‍্যাক্তির বাড়িতে এক রাতে দুই অতিথির আগমন ঘটলো। (বাইরে ঝড় বৃষ্টির আওয়াজ, তার মধ‍্যে দরজায় করাঘাত। ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসেন গোবিন্দ নস্কর।)
    গোবিন্দ– কেউ কি দরজায় কড়া নাড়লো, নাকি ঝড়ে আওয়াজ হচ্ছে? (আবার কড়াঘাত) নাহ্, এতো কড়া নাড়ারই আওয়াজ। বোঝো! এই ঝড় বৃষ্টির মধ‍্যে এত রাতে আবার কে এলো? নিশ্চই ব‍্যাটা হারু মুদি। সকালে দোকান আনতে গিয়ে দু-টাকা বাকি রেখে এসেছিলাম সেইটা চাইতে এসেছে। বলিহারী হিসেবি লোক বটে। কেন রে ব‍্যাটা আমি কি তোর দুটাকা মেরে দেব? এই ঝড়বৃষ্টির মধ‍্যেই ওই দুটো টাকার জন‍্য লোকের বাড়িতে হানা দিতে হবে! তোর কী প্রাণের ভয়ও নেই, ব‍্যাটা চামার? (ঘন ঘন করাঘাত) ওঃ দরজাটা যেন ভেঙেই ফেলবে। দেবো না, আজ তোর দুটাকা আমি দেবো না। যতই তুই ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে আয়, কাল যখন দেবো বলেছি তখন কালই দেবো, আজ নয়। (দরজা খুলে চমকে ওঠে) কে!(প্রবেশ করে দুই যুবক যুবতী। বেশ ধোপদুরস্ত মাথা থেকে জল টপকাচ্ছে।) কাকে চাই?
    অলোক– আজ্ঞে আমার নাম অলোক মুখার্জ্জী আর এ আমার স্ত্রী শ্রাবনী।
    গোবিন্দ– সে তো বুঝলাম, কিন্তু এখানে কি চাই?
    অলোক– আজ্ঞে আশ্রয়।
    গোবিন্দ– আশ্রয়! মানে?
    অলোক- দেখুন না আমরা যাচ্ছিলাম মহেশপুর, আমার দিদির বাড়ি।
    গোবিন্দ– হ‍্যাঁ আরো কুড়ি কিলোমিটার, তো?
    অলোক– বেড়োতে একটু দেরিই হয়ে গেল, তারপর নামলো এই ঝড়বৃষ্টি, আর তার মধ‍্যে বলা নেই কওয়া নেই…ঠিক আপনার বাড়ির সামনেই দেহ রখলো।
    গোবিন্দ– (চমকে) অ‍্যাঁ দেহ রেখেছে! কে?
    অলোক– আমার গাড়িটা।
    গোবিন্দ– ও, তারপর।
    অলোক– আশেপাশে কোন গ‍্যারেজও নেই যে এই ঝড়বৃষ্টির মধ‍্যে সারিয়ে নেব, তাই বলছিলাম কি…
    গোবিন্দ– হবে না—
    অলোক– অ‍্যাঁ!
    গোবিন্দ– এখানে রাতের আশ্রয় হবেনা।আপনারা আসুন।
    অলোক– কাকাবাবু, কাকাবাবু-
    গোবিন্দ– কোন কাকাবাবু নয়, হবে না তো হবে না।
    অলোক– কাকাবাবু দেখুন আমি আপনার ছেলের মতো।
    গোবিন্দ– আমার ছেলে নেই।
    শ্রাবনী– কাকাবাবু, তাহলে আমি নিশ্চয়ই আপনার মেয়ের মতো।
    গোবিন্দ– আমার মেয়েও নেই।
    অলোক– ও, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে আর ছেলে বাইরে থাকে।
    গোবিন্দ– না-আমার ছেলে মেয়ে নেই।
    শ্রাবনী– তারমানে কাকীমা..আহারে।
    গোবিন্দ– কাকিমাও নেই।
    অলোক– ইস্,তার মানে কাকীমা অনেক দিনই চলে গেছেন।
    গোবিন্দ– কাকীমা এ বাড়িতে কোনোদিন আসেই নি।
    অলোক– অ‍্যাঁ,বিয়ের রাতেই ডিভোর্স!
    গোবিন্দ– দুর, আমি বিয়েই করিনি।
    অলোক– অ‍্যাঁ!
    গোবিন্দ– হলো তো? এবার আসুন।
    শ্রাবনী– (কাঁদো কাঁদো) ওরকম বলবেন না কাকাবাবু, আমি যুবতী নারী, এই ঝড় বৃষ্টির রাতে বাঘে খাবে কি ঘোগে ছোঁবে তার কী কোনো ঠিক আছে বলুন? একটু দয়া করুন কাকাবাবু, কথা দিচ্ছি ভোরের আলো ফুটলেই চলে যাব। অন্তত আমার মুখ চেয়ে একটু দয়া করুন। আপনার পায়ে ধরছি।
    গোবিন্দ– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে থাকো। তবে একটা কথা, শোবার জন‍্য বিছানা দিতে পারবো না। এই চেয়ারে বসেই রাত কাটাতে হবে।
    শ্রাবনী– না না, বিছানা বালিশ কিছু চাই না, দু’টো চেয়ার হলেই হবে, কঘন্টার তো ব‍্যাপার। (বসতে যায়।)
    গোবিন্দ– দাঁড়াও, চেয়ারের আসনটা সরিয়ে নিই, তোমাদের জামা কাপড়ে জল কাদা লেগে আছে, ওগুলো নোংরা হবে, কাচতে গেলে সাবান খরচা হবে। (ঢাকা সরিয়ে নেয়।) হ‍্যাঁ, এইবার বসো।
    অলোক– আপনাকে যে কী বলে ধন‍্যবাদ দেবো কাকাবাবু?
    গোবিন্দ– ধন‍্যবাদ দিতে হবেনা। ভোর হলেই চলে যেও।
    অলোক– কাকাবাবু বলছিলাম, বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডায় হাত পাগুলো জমে গেছে, যদি একটু..
    গোবিন্দ– পাবে না।
    অলোক– অ‍্যাঁ!
    গোবিন্দ– চা পাবে না, আমি চা খাই না।
    অলোক– ও—-
    গোবিন্দ– হ‍্যাঁ। আর একটা কথা, রাতের খাবার কিছু আশা কোরো না,কেন না আমার ঘরে কিছু নেই। রাতে আমি উপোষ করি, আর দিনে পাঁচ টাকার মুড়ি রোজ দোকান থেকে কিনে এনে খাই।
    অলোক– বুঝলাম, তা কাকাবাবু, একটু জল পেতে পারি, না কি সেও রাস্তার কলে?
    গোবিন্দ– না, জল পাবে, যদিও জল আমাকেই রাস্তার কল থেকে বয়ে আনতে হয়, কেন না আমার কোনো কাজের লোক নেই। বসো দিচ্ছি। (প্রস্থান।)
    অলোক– ব‍্যাটা, মহা কঞ্জুস তো!
    শ্রাবনী– হুঁ, না হলে বিপদে পড়ে বাড়িতে আসা অতিথিকে কেউ এভাবে বলতে পারে!
    অলোক– অথচ দেখ, ঘরের কোনে স্টোভ, হাঁড়ি কড়া, সব রয়েছে।
    শ্রাবনী– হ‍্যাঁ, আর কৌটো গুলো দেখছো না? ওগুলোতে নিশ্চয় চাল, ডাল আছে।
    অলোক– হুঁ তাইতো মনে হচ্ছে। দাঁড়াও দেখতে হবে। (জলের গ্লাস হাতে গোবিন্দর প্রবেশ।)
    গোবিন্দ– এই নাও জল।
    অলোক– বাঁচালেন কাকাবাবু, গলাটা একেবারে শুকিয়ে গেছিল।
    শ্রাবনী– কাকাবাবু, আমিও একটু জল খাবো।
    গোবিন্দ– হ‍্যাঁ দিচ্ছি।(গোবিন্দ বেড়িয়ে যায় অলোক চট করে উঠে গিয়ে কৌটোগুলো খুলে দেখে আবার এসে বসে।)
    অলোক– সব আছে। চাল,ডাল, তেল, নুন, মশলা সব। হাড় খোসটে বুড়ো খেতে দেবে না বলে মিথ‍্যে বলছে। দাঁড়াও ওর মজা দেখাচ্ছি। (গোবিন্দর প্রবেশ।)
    শ্রাবনী– (জল খেয়ে)আঃ! জল খেয়ে শান্তি হলো। আসলে সেই দুপুরে খেয়ে বেড়িয়েছি তো, পেটে যেন ছুঁচোয় ডন মারছে, কি আর করা যাবে, জল দিয়েই পেটের ছুঁচো ঠান্ডা করি।
    অলোক– শ্রাবনী, কাকাবাবু কে সেইটা দেখাবো?
    শ্রাবনী– কোনটা?
    অলোক– সেই যে কেদার যাওয়ার পথে।
    শ্রাবনী– কেদার! (অলোক ইশারা করে) ও হ‍্যাঁ কেদার। কেদার বুঝলেন কাকাবাবু।
    গোবিন্দ– কি কেদার?
    অলোক– রাতের খাবার..
    গোবিন্দ– বললাম তো কিছুই নেই, রাতের খাবার হবে না।
    আলোক– কিচ্ছু লাগবে না। সে এক গল্প কাকাবাবু, আমি আর শ্রাবনী কেদার যাচ্ছি।(ইশারা করে।)
    শ্রাবনী– হ্যাঁ, কেদার।
    অলোক– পথে তুষার ঝড়ে আটকে পড়লাম এক গুহায়।
    শ্রাবনী– (নাটকীয় ভাবে) গুহার মধ‍্যে বাঘ।
    অলোক– ছিল না।
    শ্রাবনী– অ‍্যাঁ! হ‍্যাঁ ছিলনা, বাঘ ছিল না।
    অলোক– ছিলেন এক সাধুবাবা।
    গোবিন্দ– সাধুবাবা!
    অলোক– তো সেই সাধুবাবা, রাতে আমাদের বাটি চচ্চড়ি করে খাওয়ালেন।
    শ্রাবনী– বাটি চচ্চড়ি! বাটি চচ্চড়ি।
    গোবিন্দ– সাধুবাবা বাটি চচ্চড়ি করে খাওয়ালেন!
    অলোক– হ‍্যাঁ কাকাবাবু, তবে আর বলছি কি। কি তার অপূর্ব স্বাদ, এখনো জিভে লেগে আছে।
    গোবিন্দ– তা তোমরা কি আশা করছো আমি তোমাদের বাটি চচ্চড়ি রেঁধে খাওয়াবো?
    অলোক– হ‍্যাঁ- মানে না, আপনি রাঁধবেন কেন? আমি রাঁধবো।
    গোবিন্দ– ইয়ার্কি করছো? বললাম ঘরে কিছু নেই শুনতে পাওনি!
    অলোক– কিচ্ছু লাগবে না তো।
    গোবিন্দ– মানে!
    অলোক– কিচ্ছু লাগবে না। তবে আর বলছি কী? এ হলো হিমালয়ের সাধুবাবার বাটি চচ্চড়ি। কিচ্ছু লাগবে না, শুধু একটা কড়া, একটু জল, একটা বাটি, একটু আগুন, আর একটা মন্ত্র।
    গোবিন্দ– মন্ত্র!
    অলোক– হ‍্যাঁ মন্ত্র। ওই মন্ত্রটাই তো আসল ওই মন্ত্রের জোরেই তো বাটি থেকে বাটি চচ্চড়ি হলো, আর আমরা দু’জন পেট ভরে খেলাম। বলো শ্রাবনী?
    শ্রাবনী– হ্যাঁ, খেলাম।
    অলোক– আর পরদিন সকালে আসার সময় সাধুবাবা মন্ত্রটা আমায় শিখিয়ে দিলেন।
    গোবিন্দ– বলো কি কিছু না দিয়ে বাটি চচ্চড়ি!
    অলোক– শুধু বাটি, কড়া, আগুন, জল।
    গোবিন্দ– আর মন্ত্র?
    অলোক– হ্যাঁ, মন্ত্র-
    গোবিন্দ– তুমি জানো মন্ত্রটা?
    অলোক– জানি তো, সাধুবাবা শিখিয়ে ছিলেন।
    গোবিন্দ– তার মানে তুমি এখন রাঁধতে পারবে ওই বাটি ছাড়া, মানে কিছু ছাড়া-
    অলোক– বাটি দিয়ে বাটি চচ্চড়ি।
    গোবিন্দ– আমি বিশ্বাস করি না।
    অলোক– অবিশ্বাস করবেন না কাকাবাবু, হিমালয়ের সাধুবাবা।
    গোবিন্দ– বেশ তবে রেঁধে দেখাও দেখি জল ছাড়া,
    অলোক– বাটি দিয়ে বাটি চচ্চড়ি।
    গোবিন্দ– হ‍্যাঁ বাটি চচ্চড়ি। ওখানে স্টোভ, কড়া, বাটি সব আছে জল আমি দিচ্ছি।(যেতে গিয়ে স্বগত) এটা যদি সত‍্যি হয়! তাহলে মন্ত্রটা শিখে নিতে হবে, বাকি জীবন খাওয়া খরচাটাও বেঁচে যাবে। (প্রস্থান।)
    শ্রবনী– কি করলে গো! তুমি তো ফেঁসে যাবে!
    অলোক- কিচ্ছু ফাঁসবো না, দেখোই না মজাটা। (গোবিন্দর প্রবেশ)
    গোবিন্দ– এই নাও জল। দেখি তোমার কেরামতি।
    অলোক– এখুনি দেখাচ্ছি কাকাবাবু।(অলোক উঠে গিয়ে স্টোভ জ্বেলে কড়া বসিয়ে তার মধ‍্যে জল আর বাটি দিয়ে খুব নাড়তে থাকে। গোবিন্দ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।)
    শ্রাবনী– কাকাবাবু..
    গোবিন্দ– আঃ চুপ করো,
    শ্রাবনী– আপনার নামটাই তো জানা হয়নি ককাবাবু।
    গোবিন্দ– গোবিন্দ নস্কর।
    শ্রাবনী– এই বাড়ি…
    গোবিন্দ– আমার ঠাকুর্দা তৈরী করেছিলেন একশ বছর আগে। (অলোক কড়ায় খুন্তি দিয়ে খুব নাড়ছে আর মাঝে মাঝে চামচে করে চেখে আঃ-বলছে।)
    শ্রাবনী– না বলছিলাম এই বাড়িতে আপনি একা থাকেন?
    গোবিন্দ– একা, আমার বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই, বোন নেই, বৌ নেই, ছেলে নেই, মেয়ে নেই কেউ নেই, আমি একা।
    অলোক– (স্বগত) আর টাকা..
    গোবিন্দ– অ‍্যাঁ কিছু বললে?
    অলোক– না বলছিলাম এর স্বাদটা যা হয়েছে না.. শুধু যদি দু’ ফোঁটা ঘি পরতো তাহলে আর দেখতে হতো না….সাধুবাবাও দিয়েছিলেন আর কি।
    গোবিন্দ– হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ ঘি বোধহয় একটু হতে পারে। (ঘি দেয়। অলোক ঘি দিয়ে নাড়তে থাকে আর আহা আহা করতে থাকে।)
    শ্রাবনী– কাকাবাবু আপনি রাঁধতে জানেন?
    গোবিন্দ– হ‍্যাঁ ওই পারি এক রকম।
    অলোক– (স্বগত) কিপটে লোকের আবার রান্না..
    গোবিন্দ– কিছু বললে?
    অলোক– বলছিলাম রান্নাটা এতো সুন্দর হয়েছে, সাধুবাবার থেকেও ভালো, শুধু যদি একমুঠো চাল পড়তো এতে। সাধুবাবাও দিয়েছিলেন আর কি।
    গোবিন্দ– দাঁড়াও দাঁড়াও চাল বোধহয় একটু আছে, (চাল দেয় অলোক কড়ায় চাল দিয়ে নাড়তে থাকে, আর চেখে আহা আহা করতে থাকে।)
    শ্রাবনী– কাকাবাবু আপনি সংসার করেন নি কেন?
    গোবিন্দ– ওই হয়ে ওঠেনি আর কি–
    অলোক– (স্বগত) অন‍্য কেউ ওনার অন‍্য ধ্বংস করবে সেটা কি কিপটে বুড়োর সহ‍্য হতো?
    গোবিন্দ– কিছু বললে?
    অলোক– না বলছিলাম রান্নাটা যা হয়েছে পরমান্নও হার মেনে যাবে, শুধু নামাবার আগে একটু ডাল আর এক চিমটে নুন দেওয়া গেলে পুরো রাজকীয় হয়ে যেত।
    গোবিন্দ– আছে আছে, ডাল, নুন দুই আছে। (ডাল নুন দেয় অলোক যথারীতি নাড়তে থাকে আর আহা আহাহা করতে থাকে। একটু বাদে তিনটি থালায় খিচুড়ি এনে পরিবেশন করে।)
    অলোক– নিন কাকাবাবু খান, সাধুবাবার বাটিচচ্চড়ি। শ্রাবনী তুমি খেয়ে বলো দেখি সাধুবাবার মতো হলো কিনা।
    গোবিন্দ– (খেয়ে) অসাধারণ,আমি তো ভাবতেই পারিনি যে শুধু বাটি দিয়ে এতসুন্দর বাটিচচ্চড়ি রাঁধা যায়। বাবা অলোক আমার একটা উপকার করতে হবে।
    অলোক– বলুন কাকাবাবু?
    গোবিন্দ– দেখো বাবা তোমাদের আমি ঝড়ের রাতে আশ্রয় দিলাম বলে বলছি না, মানে তুমি যদি খুশি হয়ে ওই বাটি চচ্চড়ির মন্ত্রটা আমায় শিখিয়ে দাও বাবা।
    অলোক– নিশ্চয় কাকাবাবু কেন দেব না? আপনি আমাদের এতবড় উপকার করলেন আর আপনার জন‍্য এটুকু করবো না?
    গোবিন্দ– বাঁচালে বাবা—(অলোক খেতে খেতে এগিয়ে যায়)
    অলোক– (স্বগত) মন্ত্র শিখে কি আর পয়সা বাঁচবে কাকাবাবু? মন্ত্রটা যে খুব সহজ কাকাবাবু, ইলি গিলি হোকাস ফোকাস বাটিচচ্চড়ি, কিপটে বুড়ো বুঝলো না তার খসলো কতো কড়ি। (আলো নেভে)
    (সমাপ্ত)

  • নাটক

    নাটক- আনন্দ আশ্রম

    “আনন্দ আশ্রম “
    – রাখী চক্রবর্তী

     

     

    চরিত্রায়ণে ****

    * ডক্টর দেবনাথ
    * সিস্টার ফরিদা
    * চঞ্চল রায়,
    * মধুমিতা রায়
    *সবিতা দেবী (চঞ্চল রায়ের মা )
    * পাঁচটা বাচ্চা ছেলে

    ***************

    হুম হু হু হু হু হুম আবহ সংগীত

    সিস্টার ফরিদা — ডক্টর,, পেশেন্টের আঙুলটা কেঁপে উঠল।ইয়েস ডক্টর পেশেন্টের জ্ঞান ফিরবে ।

    —ডক্টর তমাল দেবনাথ পেশেন্টের মাথায় হাত রেখে বললেন, এমন মিরাকেল হয় না বলেই চলে ।ভগবান আমাদের সহায় আছেন তা না হলে পেশেন্টকে বাচানো তো যেত না ,, ।
    আচ্ছা সিস্টার মিউজিক থেরাপির কথা আপনাকে কে বলেছে আই মিন আপনার মাথায় কিভাবে এলো।আপনার জন্যই তো আজ পেশেন্ট সাড়া দিল।
    —ডক্টর দেবনাথ আমি পেশেন্টের মার মুখে শুনেছি চঞ্চল বাবু গানের জগতে থাকতে ভালবাসেন।গান ছাড়া তিনি নাকি কিছু ভাবতেই পারেন না,সুমধুর কণ্ঠস্বর ভগবান ওনাকে দিয়েছেন,
    তাই আমি একবার শেষ চেষ্টা করে দেখলাম ।গানের সুর টা শুনেই চঞ্চল বাবুর হাত কেঁপে উঠল। উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন তাই না ডক্টর দেবনাথ ।
    — হ্যা ,
    তবে একটা রিস্ক আছে ।জ্ঞান ফিরে যদি সেই মর্মান্তিক ঘটনা আবার মনে করেন তবে হার্ট ফেল হবার সম্ভাবনা আছে ।আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি ।আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হবে ।

    — ডক্টর চঞ্চল বাবুকে বাঁচতে হবে ওনার মার জন্য, আমার জন্য !

    —মানে ! কি বলছেন সিস্টার ?

    –হ্যা ডক্টর, আমার ভাইয়ের ছায়া দেখেছি ওনার মধ্যে তিন দিন ধরে আমি ঘুমোতে পারিনি ।আজ ঘুমাবো ডক্টর ,আজ ঘুমাবো।

    আবহ সংগীত

    সিস্টার ফরিদা — মাসীমা আপনার ছেলের জ্ঞান ফিরবে আর কোন চিন্তা নেই ।এবার বাড়ি যান মাসিমা ।আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে তো ছেলের জন্য ।

    সবিতা দেবী—- হ্যা মা ,আমি বাচতে চাই বাবুর জন্য ।
    কতো হাসিখুশি ছেলে ছিল আমার ।

    সিস্টার ফরিদা —-কি এমন হয়ে ছিল মাসিমা যে আপনার ছেলের এই পরিণতি হল।

    সবিতা দেবী–
    সুখের সংসার ছিল আমাদের ।বৌমার খুনসুটি আবদার দিয়ে সকাল শুরু হতো আমাদের ,

    (অতীতের দৃশ্যায়ন)

    মধুমিতা রায় — ও মা,, কি বলছে শোন তোমার ছেলে
    সবিতা দেবী—-বাবু তুই আবার বৌমার পেছনে লাগছিস

    চঞ্চল রায় — কোথায় মা।তোমার বৌমা বলল এবারের জন্ম দিনে হীরের লকেট দিতে হবে ওকে ।তাই বললাম ,রাতে বাড়ির সমস্ত আলো নিভিয়ে রাখব।লাইটের বিলে কম টাকা দিতে লাগবে আমার টাকা বাচবে । আর হীরে তো ঝলমল করবে অন্ধকার হলে । হা হা হা ।

    সবিতা দেবী —পাগল ছেলে ।

    সকাল থেকেই শুরু হতো ওদের খুনসুটি । ওদের বিয়ের
    একবছর ভালো ভাবেই কাটল।নিজেরা দেখেশুনে বিয়ে করেছিল ওরা।
    হঠাত্ করে বৌমা পাল্টাতে শুরু করল।টাকা ,পয়সা গয়না এছাড়া আর কিছু জানতো না বৌমা ।অফিসে লোন নিয়ে একটার পর একটা জমি কিনছে বাবু।সব কিছুই হচ্ছে বৌমার নামে ।আমি সবটা জানতে পেরে বাবুকে বলেছিলাম নিজের নামেও কিছু রাখ ।
    বাবু বলেছিল ,আমার তুমি আছো তো মা

    সিস্টার ফরিদা— তারপর কি হল মাসিমা ?

    সবিতা দেবী—- বৌমা একদিন এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেল বাপের বাড়িতে।প্রথম প্রথম কিছু টের পাইনি । ভেবেছিলাম বাবুর সাথে বোধহয় মনোমালিন্য হয়েছে ,পরে ঠিক হয়ে যাবে
    হঠাত্
    বৌমা একদিন এ বাড়িতে এল ডিভোর্সের ফর্ম নিয়ে। বাবুকে সই করতে বলল।বাবু সই করল না।সব সম্পত্তি বৌমার নামে যে।শুধু এই ভিটে টা ছাড়া ।বাবু
    ভেতর ভেতর খোজ নিয়ে জানতে পারল বৌমা অন্য ছেলের সাথে মেলামেশা করছে ।বৌমা তখন বাপের বাড়িতেই থাকত।
    যেদিন মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটেছিল সেদিন বাবুর জন্ম দিন ছিল ।আমি পায়েস করলাম ।তারপর মন্দির যাব বলে তৈরি হচ্ছি এমন সময় ফোন এল বৌমা নাকি খুব অসুস্থ ।বাবু অস্থির হয়ে উঠল এ খবরে।কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।তারপর রওনা দিল বৌমার বাপের বাড়ি উদ্দেশ্যে ।তারপর যা হল তা তো সব জানোই মা।পায়েস বাবুর মুখে তুলতে পারিনি মা।বাবুকে বাইক নিয়ে যেতে বারণ করেছিলাম,শুনল না আমার কথা,

    আবহ সংগীত

    চঞ্চল রায়. –মা মা
    সবিতা দেবী –এই তো বাবু আমি।
    চঞ্চল রায়—আমি বাঁচতে চাই না। ও বিশ্বাসঘাতক । আমাকে মিথ্যে কথা বলে ডেকেছিল ও,সই করার জন্য ডেকেছিল,

    সবিতা দেবী — শান্ত হ বাবা ,চোখ খুলে চেয়ে দেখ বাবা ,তোর জন্ম দিনে ওরা এসেছিল কিন্তু তখন তো তুই,,

    চঞ্চল রায়. –মা আমি কোথায় ? আমি বেঁচে আছি ! আমাকে ও মরে যেতে বলেছিল
    সবিতা দেবী–ষাঠ বালাই, তুই বাচবি বাবা।
    চঞ্চল রায়–কারা এসেছে মা
    সবিতা দেবী–ঐ দেখ ।

    বাচ্চা ছেলে—-শুভ জন্ম দিনের শুভেচ্ছা দিলাম দাদা

    চঞ্চল রায়–আরে তোরা আয় আয়।
    তোদের মুখে হাসি নেই কেন? চোখে জল তোদের,কেন রে, কি হয়েছে আমার?
    বাচ্চাদের মধ্যে একজন— তোমার জন্য তো আমাদের মতো অনাথ গুলো বেঁচে আছে এখনও,তুমি ভালো হয়ে যাবে,আমাদের প্রার্থনা ভগবান শুনবে দেখো,

    আবহ সংগীত

    চঞ্চল রায়—
    মা, আমি বাঁচার রাস্তা পেয়ে গেছি মা।এদের নিয়ে আমি নতুন করে জীবন শুরু করবো তুমি থাকবে তো আমার পাশে ।আমি এই অনাথ শিশুদের নিয়ে আমার বাড়ি টাকেই আশ্রম বানাব। নাম দেবো “আনন্দ আশ্রম” ।ওদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবো।আমি পারবো তো মা।
    সবিতা দেবী—ভগবান তোর সহায় আছে তুই পারবি বাবা,
    ব্যাক গ্রাউন্ডে গান,,

    “তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন সত্যম শিবম সুন্দরম দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম “
    এক বছর পর,

    চঞ্চল রায়— মা আজকের খবরের কাগজে” আনন্দ আশ্রম” নিয়ে আরটিকেল বেরিয়েছে।এক বছর পূর্ণ হল। আমি ভাবতে পারিনি আমার আশ্রম পাঁচ জন শিশু থেকে এক বছরে সত্তর জন হবে ।সব তোমার ভালবাসা ও যত্নতে হয়েছে মা।

    জনৈকা মহিলা –গ্রিলের গেট ধরে ,মা মা
    সবিতা দেবী—কে ডাকলো রে বাবু আমাকে ।গলার আওয়াজ টা চেনা চেনা লাগল।

    চঞ্চল রায়— বাচ্চা কোলে নিয়ে এক মহিলা এসেছেন মা।
    যাও মা দরজা টা খুলে ভেতরে নিয়ে এসো ওনাকে
    —জনৈকা মহিলা—মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
    সবিতা দেবী—কে কে তুমি ?ঘোমটা খোল ।কে !

    —-আমি মা।মধুমিতা
    এই তোমার বংশধর ।
    আমি থাকতে আসেনি ।ওকে ফেলে দিও না মা।ওর কষ্ট আমি দেখতে পারব না।ভুল আমি করেছি। তার শাস্তি পাচ্ছি আমি,
    চঞ্চল রায়—কে এসেছে মা?
    চলে যেতে বলো মা।
    আমি সহ্য করতে পারছি না।
    মধুমিতা—আমি থাকতে আসেনি ।এ আমাদের সন্তান ।
    ওকে গ্রহন করো।
    আমি বাধ্য হয়ে এখান থেকে চলে গেছিলাম ।তোমাকে ভালবাসার আগে অন্য একজনের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ।আমাকে ভয় দেখিয়ে ও সব কাজ করিয়েছে।তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় আমাদের সন্তান আমার গর্ভে বড় হচ্ছিল ।ওই রাসকেল টা আমার সব সম্পত্তি নিয়ে আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে ।আমি আজ অনুতপ্ত ।জানি এ ভুলের কোন ক্ষমা নেই ।আনন্দকে গ্রহন করবে না?ও তোমার সন্তান ।
    সবিতা দেবী–আনন্দ আশ্রমে আনন্দ এসেছে বাবা কোলে নে একবার সব দুঃখ ভুলে যাবি, নে কোলে নে।
    চঞ্চল রায় আনন্দকে কোলে নিয়ে আদর করছে
    আর ব্যাক গ্রাউন্ডে গান হচ্ছে
    “তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন সত্যম শিবম সুন্দরম দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম”
    সমাপ্ত

  • নাটক

    আবীরের দোলা

     

    আবীরের দোলা (শ্রুতি নাটক)
    -রাখী চক্রবর্তী

     

    তিনটে চরিত্র

    দোলা, দোলার মা, আবীর

    আবীর—আরে,, তাড়াতাড়ি বাইরে এসো দোলা, রঙ খেলা যে শুরু হয়ে গেল।আর কত দেরি করবে ।কি এত সাজছো বিয়ে বাড়ি যাবে বুঝি,,

    দোলা—এই তো,, এই তো ,,,হয়ে গেছে ।আমার
    খোঁপা তে গেদা ফুলের মালা টা লাগিয়ে দাও না।

    আবির—এ কি রঙের শাড়ি পড়েছো দোলা।আমি বললাম না,তুমি সাদা রঙের শাড়ি পড়বে আজ।শুভ্র বসনে সিক্ত হয়ে রঙ খেলবে তুমি আমার সাথে ।

    দোলা—না,, না, সাদা আমার ভালো লাগে না।লাল রঙের শাড়ি আমার বেশি পছন্দ । ঐ দেখো,কৃষ্ণচূড়া পলাশ কেমন নিজেদের কে রাঙিয়ে দিয়েছে আমাদের জন্য ।
    আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো ।

    আবীর —মন তো তোমার রঙিন আছে দোলা,তবে সাদা তে আপত্তি কেন?

    দোলা—- ও তুমি বুঝবে না।আমি আজ আমার কৃষ্ণ কে প্রাণ ভরে রঙ মাখাব ।ভুত বানিয়ে ছাড়বো তোমাকে ।হা হা হা

    দোলার মা —-দোলা ,দোলা ওঠ মা ।আজকের দিন টা অনন্ত রেহাই দে মা। লোকজন আসতে শুরু করেছে মা।দরজা টা খোল না।ঘরে কার সাথে কথা বলছিস?

    দোলা —-মা , মা আবীর এসেছে মা।দেখো, ,,,আবীর আমার সিঁথি কেমন লাল করে দিয়েছে। রঙে ,আবীরে মাখামাখি আমার মুখ।আমি বলে ছিলাম না ও আসবে ।ওকে আসতেই হবে ।
    ও , মা,, আমি সাদা শাড়ি পড়ে কেন।এ কেমন আমি।আবীর আমাকে সাদা শাড়ি পড়তে বলল।কেন মা?বলো না মা চুপ করে আছো কেন? আমি তো লাল রঙের শাড়ি পড়ে ছিলাম ।
    আজ তো দোল উত্সব ।এই দেখো আমার সিঁথি তো ফাঁকা ।গেদা ফুলের মালা কোথায় গেল?আবীর যে আমার খোঁপা তে লাগিয়ে দিল।আমাদের বিয়ের প্রথম দোল।কত ধুমধাম করে দোল খেলব। আর দেখো আমার অবস্থা টা ।আবীর কোথায় গেল আবার ।আ,,বীর,
    একি,,, আমাদের বাড়ি তে এত লোকজন কেন?এত রজনী গন্ধা র মালা কে নিয়ে এল?
    বলো না মা ?
    আবীরে ছবিতে চন্দন দিয়ে কে সাজালো? নিশ্চই ঝিমলি, খুব দুষ্টু মেয়ে তো ঝিমলি ।এ,,,সব কি , ইয়ার্কি ফাজলামি ,আমার একদম ভালো লাগে না।আবীর যে কোথায় গেল?আ বী র,,,আ বী র।কোথায় গেলে তুমি

    দোলার মা——দো,,,লা বাস্তবে ফিরে আয় মা।আজ তো আবীরের কাজ মা।ও আর ফিরবে না।ঠাকুর মশাই তোকে ডাকছেন।কাজে বসতে হবে তো তোকে মা।
    আমাদের হাতে কিছু নেই নে রে মা।মেনে নে মা।আর তোকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই যে আমার ।

    দোলা—- তবে আবীর যে বলেছিল দোল পূর্ণিমার দিনে ও আমার কাছে আসবে। আমরা একসাথে রঙিন স্বপনো দেখেছিলাম তার কি হবে মা।
    ওই,,, তো,,,ওই তো দরজার সামনে আবীর দাঁড়িয়ে । ,বলেছিলাম না মা আবীর আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।আবীর,,আবীর চলো আমিও তোমার সঙ্গে যাব সেই অচিনপুরের দেশে সেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব আর কেউ না,কেউ না।আমি আজ নিজেকে শেষ করে দিলাম আবীর ।খুশি এবার আমি।খুব খুশি ।চলো আবীর এখানে আর নয়,,,

    দোলার মা—দোলার মা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, এ কি করলি দোলা,তুই চেয়ে ছিলিস আজ লাল শাড়ি পড়তে। তাই তোর সাদা শাড়ি তোরই রক্তে লাল করে দিলি।নিজেকে কেন শেষ করলি মা?জবাব দে মা জবাব দে,,,,

You cannot copy content of this page