নাটক

  • নাটক

    দৃষ্টিভঙ্গি

    দৃষ্টিভঙ্গি
    -রাখী চক্রবর্তী

     

     

    (দু’টো চরিত্র )

    পুরুষ— ওগো বধু সুন্দরী, ,,,

    নারী— থাক, হয়েছে। রাত্রি বেলায় যত ঢং। সারা সকাল থেকে সেজে গুজে রইলাম, ফিরে ও তাকালে না।

    পু —- বাড়ি ভর্তি লোকজন, কি করি

    নারী—টেরিয়ে টেরিয়ে দাসবাবুর শালীকে তো খুব দেখছিলে। আমি কি কিছু ই দেখিনি।বলি চোখের পলক তো পড়ছিল না।

    পু– আরে ও সব ছাড়ো। সব নজর কি প্রেমিকাই হতে হবে? মা, বোন এ সব সম্পর্ক ও তো হতে পারে। একটা পুরুষ একটা নারীর দিকে তাকালেই সেটা প্রেম হয় না।

    নারী— ও সব ভুয়ো কথা। ভদ্র লোকেরা এক দৃষ্টিতে অপরিচিত কোন মেয়ের দিকে তাকাতেই পারে না। যা তুমি করেছো।

    পু — তুমি জানো, অপেক্ষার প্রহর মানুষ কি ভাবে গোনে? স্মৃতির যন্ত্রণা তুমি বোঝ কি?
    আমার আকাশের রঙ আজ ফিকে হয়ে গেছে। মনটাও আর সবুজ নেই।
    তখন ওর বয়স ছিল কুড়ি বছর। বাতাসের মতো ফুরফুর করত ও। পাখির কলরবের মতো কিচির মিচির করে ভরিয়ে রাখত আমাদের বাড়ি। তখন আমাদের বাড়ির ছাদের ওপরের আকাশটাও নীল ছিল। আজ ধুসর মেঘে সব ঢাকা পড়ে গেছে ।

    নারী— কার কথা বলছো তুমি? আমাদের বিয়ে পাঁচ বছরের হতে চলল। আর আমি রহস্যের জালে এখনও আটকে আছি। কি হয়েছে বলো আমাকে!

    পু– রেশমি আমার একমাত্র বোন। বছর আট হল ওর চলে যাওয়া। না ফেরার দেশে চলে গেল।
    ঐ তো-সেদিন আমাকে ফোন করে বলল,”দাভাই আমি বিয়ে করেছি মন্দিরে।শোভনকে তো তুমি চেনো। শোভনকে ছাড়া আমি বাঁচব না দাভাই”
    তুই তো এমনিতেই মরলি বোন। কত করে বলেছিলাম শোভন একটা ফর্ড। বিয়ের তিনমাসও গেল না রেশমিকে ওরা মেরে ফেলল।
    দাসদার শালীকে পুরো আমার রেশমির মতো দেখতে। আমি কিছুতেই নজর অন্য দিকে করতে পারছিলাম না। পুরো আট বছর পর বোনকে দেখলাম। প্রথম প্রথম স্বপ্নে আসত। ভারি দুষ্টু মেয়ে এখন স্বপ্নেও আসে না।
    নারী—- আমি বুঝতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার বুঝতে ভুল হয়ে ছিল।সত্যি তো মানুষের নজর বা তাকানোর দৃষ্টি ভঙ্গি সব সময় সঠিক বার্তা বহন করে না।রেশমিকে কাল আমাদের বাড়ি নেমন্তন্ন করব। না, মানে দাসবাবুর শালীকে। নাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো কাল সকালে অনেক কাজ।
    আর একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি আর কিন্তু কারোর দিকে তাকাবে না।”ওগো বধু সুন্দরী “আর একবার বলো না
    পু –হা হা হা, ওগো বধু সুন্দরী

  • নাটক,  প্রথম বর্ষ - ২০১৯,  বর্ষপূর্তি কলম

    অলীক স্বপ্ন

    অলীক স্বপ্ন 
    -রাখী চক্রবর্তী

     

    তৃষা–অনীক–মিলি  চরিত্র (তিন)

    তৃষা— শুধু কি স্বপ্নেই তোমার আনাগোনা
    বাস্তব এ বুঝি তুমি শুধুই কল্পনা

    অনীক— বান্দা হাজির

    তৃষা— আ..আ..রে তুমি, না না আপনি

    অনীক— তুমিটাই ঠিক ছিল। আবার আপনি কেন? তা এই ভর দুপুরে, দীঘির পাড়ে, যদি ভুতে ধরে? ভুতে ভয় পাও না। হা হা হা

    তৃষা—আমি বাচ্চা মেয়ে না কি যে ভুতে ভয় পাব।আর দিনের বেলায় ভুত কোথা থেকে আসবে ।

    অনীক–তা না,,কিন্তু একা একা এখানে থাকাটা ঠিক না। তা বসে বসে বুঝি আমার কথা ভাবছিলে? হুম,, প্রেমে পড়তেই পারো আমার। গায়ের রঙটা যা একটু কালো। এমনিতে তো সুন্দর। আর ওই মাথার চুলগুলো না হয় কম। দু’দিন পর টাক পড়ে যাবে। তাতে কি, তোমার আর আমার মধ্যে চুলোচুলিটা হবে না। হা হা হা

    তৃষা— খুব মজার মানুষ তো তুমি। তোমার কোন দুঃখ নেই তাই না।

    অনীক— আমার জীবনে কে থাকবে না থাকবে সেটা আমি ঠিক করব। তাই দুঃখ আউট।

    তৃষা— জানো ফেসবুকে তোমার ছবিটা জীবন্ত ছিল। আমি কথা বলতাম তোমার ছবির সাথে।মনে হত তুমি আমার জন্যই ফেসবুকে ছবিটা দিয়েছো

    অনীক— ওহ তাই বলো।আমি ভাবলাম তুমি বলবে যে “আমার জন্যই তুমি জন্মেছো, আমাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না”

    তৃষা— দূর, সবেতেই তোমার ইয়ার্কি

    অনীক— ঐ, ঐ দ্যাখো দু’টো কবুতর কি সুন্দর গম খাচ্ছে। দ্যাখো, দ্যাখো

    তৃষা— গম কেন? ধান ও তো হতে পারে।
    অনীক— তুমি বললে না তো আমাকে ভালবাসো কি না?

    তৃষা— বাসি তো

    অনীক— না,না তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টা করো না। আমি তোমার যোগ্য না। আমি নিজেকে ঠকাতে পারব কিন্তু তোমাকে না। তুমি খুব ভালো মেয়ে তৃষা। সন্ধ্যা নেমে এল। ঘরে যাও। দেখো পাখীরা নিজেদের ঘরে ফিরছে। আপনজনদের কাছে। তুমি ও যাও

    তৃষা— না অনীক একবার বলো তুমি আমাকে ভালবাসো।

    অনীক— আমি কাউকে ভালবাসতে পারি না।আমি কে তুমি তা জানো না। জানলে তুমি আমাকে ঘেন্না করবে।

    তৃষা— তুমি খুব ভালো। তুমি ভদ্র সমাজে বাস করো। ভালো চাকরি করো। মানুষ হিসাবে তুমি ভালো। আর কিছু চাই না তো আমি।

    অনীক— সব ফেক। সব ভুয়ো। ফেসবুকে সবসময় সত্য কথা চলে না তৃষা। আমি খুনি ।জেল থেকে জামিন পেলাম আজি। তাই তো…

    তৃষার বন্ধু মিলি—

    -এই তৃষা, কি একা একা বকবক করছিস। চল, বাড়ি চল। আমরা সবাই পুরো বাগানটা ভালো করে ঘুরলাম। আর তুই দীঘির জল দেখছিস। পারিস ও বটে। চল ওঠ

    তৃষা—এই, অ…নীক কোথায় গেল? এইখানেই তো ছিল।
    মিলি— এখানে কেউ নেই। তুই একাই বকবক করছিলিস। হয়তো অলীক স্বপ্ন দেখছিলিস তুই।নে ওঠ..বাড়ি যেতে হবে তো
    তৃষা— মিলি দ্যাখ, ঐ যে পুলিশের ভ্যানটা যাচ্ছে,ওতে কি সবাই আসামি-খুনি,ডাকাত-চোর!

    মিলি— তোর তাতে কি? তুই গাড়িতে ওঠ।

    তৃষা গাড়িতে বসে জানলা দিয়ে দেখছে, একটা পুলিশের ভ্যানে অনীক বসে। ভ্যানটা একটু আস্তেই চলছে। অনীক…অনীক..
    মিলি ঐ দ্যাখ অনীককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ‘অনীক’ ‘অনীক’ পুলিশ ভ্যান আস্তে আস্তে তার গতি বাড়ালো তৃষা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রাখল ধীরে ধীরে ভ্যানটা রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
    অনীক আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্য। তোমাকে ফিরতেই হবে। আমি যে তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসি,বড্ড বেশি।

You cannot copy content of this page